আইনের সারণি

হিব্রু বাইবেল অনুসারে, আইনের সারণি (স্টোন ট্যাবলেট, টেবিলস অফ টেস্টিমনি নামেও পরিচিত; বাইবেলীয় হিব্রু: לוּחֹת הַבְּרִית "কোভেন্যান্টের সারণি", לֻחֹת הָאֶבֶן বা לֻחֹת אֶבֶן "পাথরের সারণি", এবং לֻחֹת הָעֵדֻת "সাক্ষ্যের সারণি") ছিল দশ আজ্ঞা সম্বলিত দুটি পাথরের সারণি। এক্সোডাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, যখন মোজেস সিনাই পর্বতে আরোহণ করেছিলেন তখন তিনি এই সারণিগুলি পেয়েছিলেন।[১]

বাইবেলীয় বর্ণনা অনুসারে, ঈশ্বরের আঙুল দ্বারা খোদাই করা প্রথম সারণিগুলি (এক্সোডাস 31:18) মোজেস ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যখন তিনি ইস্রায়েলের সন্তানদের সোনার বাছুরের পূজা করতে দেখে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন (এক্সোডাস 32:19)। পরে দ্বিতীয় সেট সারণি মোজেস  খোদাই করেন এবং সেখানে ঈশ্বর পুনরায় দশ আজ্ঞা লেখেন (এক্সোডাস 34:1)।

ইহুদিধর্মের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা অনুসারে, তালমুদে বর্ণিত হয়েছে যে পাথরগুলি নীল নীলকান্তমণি দিয়ে তৈরি হয়েছিল যা আকাশ, স্বর্গ এবং পরিশেষে ঈশ্বরের সিংহাসনের প্রতীকী স্মারক। তবে, অনেক টোরা পণ্ডিত মতামত দিয়েছেন যে বাইবেলীয় 'সফির' (নীলকান্তমণি) আসলে ছিল 'লাপিস লাজুলি' (এক্সোডাস 24:10; যেখানে নীলকান্তমণির পরিবর্তে লাপিস লাজুলি পাথরের ফুটপাতের বর্ণনা রয়েছে, যা ঈশ্বরের পায়ের নীচে ছিল যখন আইনের পাথরের সারণি তৈরির উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হয়েছিল - এক্সোডাস 24:12)।[২]

এক্সোডাস 25:10-22 অনুসারে, এই সারণিগুলি 'আর্ক অফ দ্য কোভেন্যান্ট'-এ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। অ্যালান মিলার্ড এবং ড্যানিয়েল আই. ব্লক এই ধারণাটিকে অন্যান্য প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের সংস্কৃতির সাথে সমান্তরালভাবে দেখেন যেখানে চুক্তির নথিগুলি তাদের মন্দিরে সংরক্ষণ করা হতো। অন্যদিকে, টমাস রোমার ২০১৫ সালে যুক্তি দিয়েছিলেন যে "স্পষ্টতই... আইনের সারণিগুলি অন্য কিছুর বিকল্প।" তিনি মনে করেন যে "আসল আর্কটিতে যিহোবার একটি মূর্তি [অর্থাৎ একটি ধর্মীয় মূর্তি] ছিল": 4 যা তিনি বিশেষভাবে "দুটি বেথেল (পবিত্র পাথর), বা যিহোবাকে চিহ্নিতকারী দুটি ধর্মীয় মূর্তি অথবা যিহোবা এবং তার স্ত্রী সংগী আশেরাকে চিহ্নিতকারী দুটি চিত্র-মূর্তি অথবা একা যিহোবাকে চিহ্নিতকারী একটি মূর্তি" রুপে চিহ্নিত করেছেন।[৩]

সারণির বৈশিষ্ট্য

জনপ্রিয় ধারণার সাথে মিল নেই: ট্যাবলেটগুলোকে যেভাবে গোলাকার প্রান্তবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্র হিসেবে দেখানো হয়, তার সাথে ধর্মীয় বিবরণের খুব বেশি মিল নেই। এই ক্ষেত্রে, দশ আদেশ হিব্রু বর্ণমালার প্রথম দশটি অক্ষর দ্বারা উপস্থাপিত হয়, যেগুলো সংখ্যা ১ থেকে ১০ এর বদলেও ব্যবহৃত হতে পারে।

গত কয়েক শতাব্দীতে, বৃত্তাকার-শীর্ষ আয়তক্ষেত্র হিসেবে বর্ণনা এবং চিত্রিত করা হয়েছে ট্যাবলেটগুলোকে। কিন্তু ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে এর খুব কমই মিল রয়েছে। র‍্যাবিনিক (ইহুদি পন্ডিতদের) ঐতিহ্য অনুসারে, সেগুলো আয়তক্ষেত্রাকার ছিল, তীক্ষ্ণ কোণযুক্ত। প্রথম সহস্রাব্দের খ্রিস্টান শিল্পে এবং ৩য় শতাব্দীর দুরা-ইউরোপোস সিনাগগের (ইহুদি উপাসনালয়) চিত্রগুলিতে ইহুদি প্রতীকের ঐতিহ্যকে চিত্রিত করার সময়েও এভাবেই সেগুলিকে দেখানো হয়েছে।

দশম শতাব্দীর বাইজেন্টাইন লিও বাইবেলে ঈশ্বরের হাত থেকে প্রাপ্ত আয়তক্ষেত্রাকার ফলক

মধ্যযুগে বৃত্তাকার-শীর্ষের ট্যাবলেটগুলির চিত্রণ দেখা যায়, যেগুলি তখনকার হিংসড নোট নেওয়ার ট্যাবলেটের (যার ভেতরের দিকে মোমের স্তরে স্টাইলাস দিয়ে চাপ দিয়ে লেখা হতো) আকারের মতোই ছিল। মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪) এবং আন্দ্রেয়া মানতেগনা (১৪৩১-১৫০৬) এর চিত্রগুলোতে এখনও সেগুলোর তীক্ষ্ণ কোণ রয়েছে (গ্যালারি দেখুন), এবং র‍্যাবিনিক ঐতিহ্যে পাওয়া মাপের কাছাকাছি। পরবর্তী শিল্পীরা, যেমন রেমব্র্যান্ড (১৬০৬-১৬৬৯), বড় আকারের সাথে গোলাকার আকৃতিকে একত্রীত করতে চেয়েছিলেন। যদিও, উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, র‍্যাবিনিক ঐতিহ্য শেখায় যে ট্যাবলেটগুলি বর্গাকার ছিল, কিছু কর্তৃপক্ষের মতে, র‍্যাবিরা (ইহুদি পন্ডিত) নিজেরাই প্রতিলিপিতে ট্যাবলেটগুলির গোলাকার চিত্রণকে অনুমোদন করেছিলেন - যাতে প্রতিলিপিগুলি ঐতিহাসিক ট্যাবলেটগুলির সাথে হুবহু মিলে না যায়।

তালমুদ অনুসারে, প্রতিটি ট্যাবলেট ছয় তেফাচিম (প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার বা ২০ ইঞ্চি) চওড়া এবং উঁচু বর্গাকার ছিল এবং ট্যাবলেটের চেয়ে বেশি পুরু ব্লকের মতো ছিল। তিন তেফাচিম (২৫ সেন্টিমিটার, ১০ ইঞ্চি) পুরু, যদিও এগুলিকে শিল্পকলায় বড় করে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। (অন্যান্য র‍্যাবিনিক সূত্রগুলো বলে যে সেগুলো বর্গাকার না হয়ে আয়তাকার ছিল, ছয় তেফাচিম উঁচু এবং তিনটি চওড়া এবং গভীর।) এছাড়াও ঐতিহ্য অনুসারে, শব্দগুলি পৃষ্ঠের উপর খোদাই করা ছিল না, বরং পাথরের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি বিদ্ধ করা হয়েছিল।

খ্রিস্টান রিপ্লিকা

ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চের অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ট্যাবলেটগুলির রিপ্লিকা, যা ট্যাবট বা সেলাট নামে পরিচিত। এই চার্চ দাবি করে যে মূল বিধানের সঙ্কেত Axum-এ অবস্থিত আমাদের লেডি মেরি অফ জায়ন চার্চে রক্ষিত রয়েছে।[৪]

কুরআন মাজিদে

কুরআন বর্ণনা করে যে, মুসা (আ.)- কে তাওরাত দেয়া হয়েছিল, যদিও এর বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবে উদ্ধৃত করা হয়নি:

“আর আমি লিখে দিয়েছিলাম তার জন্যে তক্তায় সব কিছুর উপদেশ ও সব বিষয়ের ব্যাখ্যা (এবং বলেছিলাম), ‘এগুলো দৃঢ়ভাবে গ্রহণ কর এবং তোমার সম্প্রদায়কে নির্দেশ দাও যেন তারা এর উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করে। অনতিবিলম্বে আমি তোমাকে অবাধ্যদের আবাস দেখাবো।” [সূরা আল-আরাফ (৭) : ১৪৫]

কুরআন মাজিদে এই তক্তাগুলি ভেঙে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়নি, বরং পরবর্তীতে যখন মুসা (আ.) তা তুলে নেন:

“আর যখন মূসা ক্রুদ্ধ ও দুঃখিত অবস্থায় নিজের সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করল, তখন বলল, ‘আমার চলে যাওয়ার পর তোমরা আমার স্থলাভিষিক্তদের দ্বারা আমাকে কত নিকৃষ্টভাবে বদলে দিয়েছিলে! তোমরা কি তোমাদের পালনকর্তার নির্দেশ সম্পর্কে ব্যস্ত ছিলে?’ আর সে তক্তাগুলো ছুড়ে ফেলে দিল এবং নিজের ভাইকে মাথার চুলের মুঠোয় ধরে আপনার দিকে টেনে নিল। সে (হারুন) বলল, ‘হে আমার মায়ের সন্তান, লোকেরা আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। অতএব শত্রুদেরকে আমার উপর আনন্দিত করো না এবং আমাকে অত্যাচারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না।” [সূরা আল-আরাফ (৭) : ১৫০]

“এরপর যখন মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলো, তখন সে তক্তাগুলো উঠিয়ে নিল। আর তাদের লেখনীতে ছিলো সেই সমস্ত লোকদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত, যারা নিজেদের পালনকর্তাকে ভয় করে।” [সূরা আল-আরাফ (৭) : ১৫৪]

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী