আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন
আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশন।[২][৩]
আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন | |
---|---|
বাংলাদেশের জংশন রেলওয়ে স্টেশন | |
অবস্থান | আখাউড়া উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগ বাংলাদেশ |
মালিকানাধীন | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
পরিচালিত | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
লাইন | |
ট্রেন পরিচালক | পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে |
নির্মাণ | |
গঠনের ধরন | মানক |
পার্কিং | আছে |
সাইকেলের সুবিধা | আছে |
প্রতিবন্ধী প্রবেশাধিকার | আছে |
অন্য তথ্য | |
স্টেশন কোড | AKA [১] |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস | |
চালু | ১৮৯৬ |
অবস্থান | |
টঙ্গী–ভৈরব –আখাউড়া রেলপথ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
ইতিহাস
চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে একটি রেলপথ সংযোগের জন্য আসামের চা উৎপাদনকারীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বঙ্গের পূর্বাঞ্চলে একটি রেলওয়ে ট্রাক নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা)-এর একটি পথ ১৮৯৫ সালে চালু করা হয়। ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়।[৪]
এসময় কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের স্টেশন হিসেবে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইন তৈরি হলে এটি জংশন স্টেশনে পরিণত হয়।[৫]
রেলপথ
কুমিল্লা–আখাউড়া–কুলাউড়া–বদরপুর রেলপথ অংশ ১৮৯৬–৯৮-এ চালু করা হয় এবং ১৯০৩ সালে লামডিং পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।[৪][৬][৭]
কুলাউড়া–শাহবাজপুর ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়।[৪]
টঙ্গীা–আখাউড়া মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরের রেল ব্যবস্থার সাথে পূর্ব প্রান্তকে সংযোগ করার জন্য, ১৯১০ এবং ১৯১৪ সালের মধ্যে টঙ্গী-আখাউড়া লাইন নির্মাণ করা হয়। যাইহোক, ঐ সময়ে মেঘনা নদীর উপর কোন সেতু ছিলনা।[৪][৬][৭]
আখাউড়া–আগরতলা ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকার আগরতলার সঙ্গে আখাউড়ার মধ্যে রেল সংযোগ ঘটাতে ১৪ কিমি রেলপথ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেল যাবে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সিদ্ধিআশ্রম, বাধারঘাট, চাড়িপারা, নিশ্চিন্তপুর হয়ে বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন। সেখান থেকে যাবে আখাউড়া জংশন। নিশ্চিন্তিপুর হবে সীমান্ত রেল স্টেশন। নিশ্চিন্তিপুর থেকে গঙ্গাসাগর স্টেশনে নতুন করে পাতা হবে রেলপথ। সেখান থেকে আগের পথের পাশ ধরে রেল যাবে আখাউড়া জংশন পর্যন্ত।[৮][৯] কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব ১৬৫০ কিলোমিটার। আর এই রেলপথ গঠিত হলে আগরতলা ও কলকাতার দূরত্ব হবে ৫০০ কিমি। এই রেলপথ দ্বারা চট্টগ্রাম বন্দর ও আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্ব ভারত।
আখাউড়া–লাকসাম–চট্টগ্রাম আসাম থেকে চা চট্টগ্রাম বন্দরে পরিবহনের জন্য রেলপথ নির্মান শুরু হয় ১৮৯১ সালে। ১৮৯৫ সালে চট্টগ্রাম–কুমিল্লা অংশ চালু হয় এরপর ১৮৯৭–৯৮ সালে আখাউড়া হয়ে বদরপুর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয়। ১৯০৩ সালে লামডিং অংশ চালু হয়।[৪][৬][৭]
রেল ব্যবস্থা
একাধিক রেলপথের সমন্বয় থাকা আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথেরও অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে চারটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: উত্তর-পূর্বে আখাউড়া–শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথ, উত্তর-পশ্চিমে আখাউড়া–ভৈরব–টঙ্গী রেলপথ এবং দক্ষিণ-পূর্বে আখাউড়া–আগরতলা (ভারত সংযোগ) রেলপথ ও দক্ষিণে আখাউড়া–লাকসাম–চট্টগ্রাম রেলপথ।
পরিষেবা
আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:[১০]
- সূবর্ণ এক্সপ্রেস
- পাহাড়িকা এক্সপ্রেস
- মহানগর প্রভাতী\গোধুলী এক্সপ্রেস
- উদয়ন এক্সপ্রেস
- উপকূল এক্সপ্রেস
- মহানগর এক্সপ্রেস
- তূর্ণা এক্সপ্রেস
- বিজয় এক্সপ্রেস
- সোনার বাংলা এক্সপ্রেস
- ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস
- সুরমা এক্সপ্রেস
- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
- ঢাকা\চট্টগ্রাম মেইল
- ঢাকা\নোয়াখালী এক্সপ্রেস
- কুমিল্লা কমিউটার
- তিতাস এক্সপ্রেস
- চট্টলা এক্সপ্রেস
- সিলেট কমিউটার
- জালালাবাদ এক্সপ্রেস
- কুশিয়ারা এক্সপ্রেস ও
- লোকাল ট্রেন।
পরিষেবা তথ্য
আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর হচ্ছে।[১১] ২৩৯ কিলোমিটারের এ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। চীন সরকার এ প্রকল্পে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে। সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে পাঁচ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।[১১] বর্তমানে আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেললাইন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা না হলে ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হবে। ট্র্যাক কাঠামো, পাহাড়ি এলাকার আঁকাবাঁকা রেলপথ এবং পরিচালনা জটিলতার কারণে এ পথে বর্তমানে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে রেল চলাচল করে। ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা গেলে ব্রডগেজে ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটারগেজে গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এতে ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পৌঁছানোর সময় আড়াই ঘণ্টা কমে যাবে।[১১]
এ ছাড়া এর মাধ্যমে আসামের সঙ্গে রেল যোগাযোগের সুযোগও তৈরি হবে। এখন এ রুটে চলছে ১৩ জোড়া ট্রেন। প্রকল্প শেষ হলে ট্রেন চলবে ২৬ জোড়া, যা আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।[১১]
বাংলাদেশ রেলওয়ের সব মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজ বা ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে।[১১] প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে।[১১] এরপর প্রকল্পের প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) তৈরি করা হয়, যা ২০১৬ সালের ২১ মার্চ অনুমোদিত হয়।[১১] পরে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প বিবেচনা করে এটি সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়।[১১] জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।[১১] ঢাকায় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।[১১]
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অংশের ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে।[১১] আখাউড়া থেকে লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে।[১১] ঢাকা-চট্টগ্রামে রেললাইনের বাকি অংশ ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।[১১] ভারতীয় অনুদানে আগরতলা ও আখাউড়ার মধ্যে ১০ কিলোমিটার রুটে আরেকটি ডুয়েলগেজ লিংক স্থাপনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।[১১] বাংলাদেশ রেলওয়েকে একই গেজের রূপান্তরের অংশ হিসেবে আখাউড়া থেকে সিলেট রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়।[১১]
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে।[১২] পুনর্বাসন করা হবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে আখাউড়া সংলগ্ন শাহবাজপুর পর্যন্ত রেলপথ।[১২] এই দুই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।[১২] দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন।[১২] ভারতের ঋণে (এলওসি) প্রকল্প দুটি নির্মিত হচ্ছে।[১২] প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।[১২]