আবদুর রহিম (বিচারক)
স্যার আবদুর রহিম কেসিএসআই (সেপ্টেম্বর ১৮৬৭ – ১৯৫২) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন বিচারক, রাজনীতিবিদ এবং নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অন্যতম প্রধান সদস্য। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন।
স্যার আবদুর রহিম কেসিএসআই | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দ |
মৃত্যু | ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ |
মাতৃশিক্ষায়তন | প্রেসিডেন্সি কলেজ, মিডল টেম্পল |
পেশা | আইনজীবী, বিচারক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | দ্য প্রিন্সিপলস অব মোহামেডান জুরিস্প্রুডেন্স একর্ডিং টু দ্য হানাফি, মালিকি, শাফি এন্ড হানবালি স্কুলস |
রাজনৈতিক দল | নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি, বেঙ্গল মুসলিম পার্টি |
আন্দোলন | পাকিস্তান আন্দোলন |
পিতা-মাতা | মৌলভি আবদুর রব (বাবা) |
জীবনী
আবদুর রহিম মেদিনীপুরের একটি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৌলভি আবদুর রব ছিলেন মেদিনীপুর জেলার একজন জমিদার।[১][২] আবদুর রহিম কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং লন্ডনের মিডল টেম্পলে লেখাপড়া করেছেন।[৩][৪] ১৮৯০ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে যোগ দেন। তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন।[৫][৬][৭]
পেশাগত জীবন ছাড়াও আবদুর রহিম শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।[৮] মৌলানা আজাদ কলেজের প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রয়েছে।[৯]
১৯০৮ সালের ২০ জুলাই আবদুর রহিম মাদ্রাজ হাইকোর্ট|মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারক নিযুক্ত হন।[১০] ১৯১২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ১৯১২ থেকে ১৯১৫ সালের ভারতের রাজকীয় সরকারি চাকরি কমিশনের সদস্য হন। কমিশনের অন্য সদস্যরা ছিলেন জন ডিকসন-পয়ন্ডার, লরেন্স ডুন্ডাস, হার্বার্ট ফিশার এবং অন্যান্য।[১১]
আবদুর রহিম মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।[৫] এছাড়া তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাগর প্রফেসর অব ল হন।[৬] ১৯১৯ সালে তিনি নাইটহুড খেতাব পান।[১২]
মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিক বক্তব্য প্রদান করেছেন যা পরবর্তীতে দ্য প্রিন্সিপলস অব মোহামেডার জুরিস্প্রুডেন্স একর্ডিং টু দ্য হানাফি, মালিকি, শাফি এন্ড হানবালি স্কুলস নামে প্রকাশিত হয়।[১৩][১৪]
রাজনীতিতে প্রবেশের পর তিনি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য হন এবং ১৯২১ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত প্রদেশের বিচারবিভাগের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।
১৯২৫ সালের ৩ জুন রাজার জন্মদিনের সম্মাননায় আবদুর রহিম নাইট কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য স্টার অব ইন্ডিয়া হন।[১৫][১৬]
১৯২৫ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে আলিগড়ে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ১৭তম অধিবেশনে সভাপতি ছিলেন। এই অধিবেশনে তিনি বলেন –
হিন্দু ও মুসলিমরা ইংল্যান্ডের প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিকদের মত দুইটি ধর্মীয় গোষ্ঠী না, বরং দুইটি দূরবর্তী মানব সম্প্রদায়, এবং তারা নিজেদেরকে এভাবে দেখে... সত্য হল যে তারা একই দেশে প্রায় ১,০০০ বছর বাস করে এক জাতিতে পরিণত হওয়ার মত তেমন কিছুতে অবদান রাখেনি... আমাদের ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে যে কেউ আফগানিস্তান, পারস্য, মধ্য এশিয়া, চীনা মুসলিম, আরব, তুর্কিদের মধ্যে সফর করলে নিজ বাড়ির মত ভাববে এবং আমরা অভ্যস্ত নই এমন কিছু খুজে পাবে না। এর বিপরীতে ভারতে যখন আমরা সড়ক অতিক্রম করি এবং শহরের সে এলাকায় প্রবেশ করি যেখানে আমাদের সঙ্গী শহরবাসীরা বসবাস করে তখন সকল সামাজিক ব্যাপারে আমরা নিজেদেরকে আগন্তুকের মত দেখতে পাই।[৫][১৭]
১৯২৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে অংশ নেন এবং ভারতের সকল মুসলিমের মধ্যে উর্দু ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হিন্দু নেতারা একারণে তার প্রতি বিরূপ হন। ১৯২৭ সালে বাংলার গভর্নর তাকে প্রাদেশিক সরকারে নিয়োগ করতে চাইলে হিন্দুরা তার সাথে কাজ করতে অস্বীকার করে।[৫]
১৯২৬ সালে আবদুর রহিম বেঙ্গল মুসলিম পার্টি গঠন করেন।[১৮]
১৯২৮ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সম্মেলনে সভাপতি হন। এই সম্মেলনে নেহরু রিপোর্টের বিরোধিতা করা হয়। ১৯৩০ সালে সম্মেলনে সাইমন কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়।[৫]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/d/d0/Sansad_Bhavan-2.jpg/220px-Sansad_Bhavan-2.jpg)
১৯২৯ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত আবদুর রহিম নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির সভাপতি ছলেন।[১৯]
১৯৩১ সালে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন।[৭]
ভারতীয় সামরিক কলেজ কমিটির সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ভারতের বাইরে থেকে সেনা নিয়োগের বিরোধিতা করেন। গুর্খাদের নিয়োগকে তিনি "ভারত বিরোধী নীতি" বলে উল্লেখ করেছিলেন।[২০]
১৯৩৯ সালের অক্টোবরে স্যার আবদুল্লাহ হারুনের সাথে আবদুর রহিম খাকসার নেতা আল্লামা মাশরিকি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার সাথে সাক্ষাত করেন।[২১]
১৯৪৬ সালে আবদুর রহিম তার সংগ্রহে থাকা ৩৩৩টি আরবি গ্রন্থ ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরিকে দান করেন। এর মধ্যে অধিকাংশ ধর্মীয় বই। এই সংগ্রহ স্যার আবদুর রহিম সংগ্রহ নামে পরিচিত।[২২]
তার মেয়ে বেগম নিয়াজ ফাতেমার সাথে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিয়ে হয়।
প্রকাশনা
- দ্য প্রিন্সিপলস অব মোহামেডান জুরিস্প্রুডেন্স একর্ডিং টু দ্য হানাফি, মালিকি, শাফি এন্ড হানবালি স্কুলস (পি. এল. ডি পাবলিশার্স, ৪৪৪পিপি.)[১৪]