আমির খসরুর ধাঁধা
দিল্লি সালতানাতের সাতটিরও বেশি শাসকের রাজকীয় দরবারে আমির খসরুর ধাঁধা সুপরিচিত ছিল। তৎকালীন জনপ্রিয় কবি আমির খসরু ছিলেন বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী। শুধুমাত্র কবিতা রচনার মধ্যেই তার লেখনি সীমাবদ্ধ ছিলনা। তিনি বহুল কৌতুকপূর্ণ ধাঁধা, গান এবং কিংবদন্তিও রচনা করেছিলেন। তার এই সমস্ত লেখনি ও সাহিত্য চিরকালীন দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। তার রচিত অসংখ্য ধাঁধা, গান এবং কিংবদন্তি হিন্দুস্তানি ভাষার প্রাথমিক পর্যায়ের উদাহরন হিসাবে বিশেষভাবে বিবেচিত হয়।[১] তার ধাঁধায় লক্ষ্যনীয় হল বিভিন্ন মজার মজার বিশেষ শব্দের খেলা।[১] কবি আমির খসরুর অসংখ্য ধাঁধা বিগত সাত শতাব্দী ধরে মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে চর্চিত হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়েও এর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।[১] যাইহোক, তার নামভূমিকায় যেসকল পুরাতন ধাঁধার সংকলন করা হয়েছে তিনিই তাদের প্রকৃত লেখক কিনা তা নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে।[২] তৎকালীন রচিত কিছু কিছু ধাঁধা যা আমির খসরু দ্বারা রচিত বলে দাবী করা হয় সেইসকল ধাঁধায় এমন কিছু কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যেগুলি খসরুর নিজের সময়ে বিদ্যমান ছিল না। যেমন ধাঁধাতে বন্দুক এবং হুক্কার কথা আছে যা খসরুর সমসাময়িক নয়।[৩]
তার নামভূমিকায় রচিত ২৮৬টি ধাঁধার খোঁজ পাওয়া গেছে। সেই সকল ধাঁধাকে ছয়টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এই বিভাজন আপাতদৃষ্টিতে ধাঁধার গঠন এবং তার উত্তরের কাঠামোর ভিত্তিতে করা হয়েছে। এই বিখ্যাত ধাঁধাগুলির শৈলী তখনকার দিনের জনসাধারণের মধ্যেও প্রচলিত ছিল। বেশিরভাগ পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে এই রকম ধাঁধা বহুমুখী প্রতিভাধারী কবি আমির খুসরু নিজে রচনা করেছিলেন।[৪] এই ধাঁধাগুলির রচনায় বিশেষ শৈলী দেখা যায় যা মাত্রিকা ছন্দ হিসাবে পরিচিত।
উদাহরণ
এখানে আমির খসরু রচিত একটি বিশেষ ধাঁধার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। ধাঁধার একটি ক্রম জনৈক মহিলার একটি সংলাপ হিসাবে জাহির করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কিছু জাগতিক ঘটনা বর্ণনা করা করছে এবং একজন কথোপকথক যিনি কল্পনা করেন যে তিনি শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছেন। অতঃপর সেই ব্যাক্তি মহিলাকে জিজ্ঞাসা করছেন 'মেয়ে, কে তোমার সে নাগর?' নিম্নে লিখিত ধাঁধায় তারই বর্ণনা করা হয়েছে-[৫]
সে বছরে একবার আমার শহরে আসে।
সে আমার মুখমণ্ডল চুম্বন ও অমৃতে ভরে
আমার সমস্ত সম্পদ কেবল তারই জন্য ব্যায় করি
মেয়ে, কে তোমার সেই নাগর
না, সে হল আম!
সারারাত সে আমার সাথে থাকে।
কিন্তু ভোরবেলায় আমায় ছেড়ে চলে যায়।
তার যাওয়া আমার হৃদয়কে আহত করে।
মেয়ে, কে তোমার সেই নাগর?'
না সে একটি তেলের বাতি!
সংস্করণ ও অনুবাদ
- আমির খসরু দেহলভী, জওহর-ই-খুসরাভি, সংস্করণ। রশিদ আহমদ সেলিম দ্বারা (আলিগড়: মাজমুয়া-ই-রাসাইল ইনস্টিটিউট প্রেস, ১৯১৭)।
- ব্রজরত্ন দাস, খুসরো কি হিন্দি কবিতা (কাশী, ১৯২২)
- গোপী চাঁদ নারাং, আমির খসরু কা হিন্দবী কালাম (দিল্লি: ফটো অফসেট প্রিন্টার, ১৯৮৭)
- প্রেমের বাজারে: আমীর খসরু-এর নির্বাচিত কবিতা, ট্রান্স। পল ই. লোসেনস্কি এবং সুনীল শর্মা (নয়া দিল্লি: পেঙ্গুইন, ২০১১), পৃ. ১১৪-১৬ (নম্বর ৭৪-৭৮)
- অঙ্কিত চাড্ডা, আমির খসরু: দ্য ম্যান ইন রিডলস (গুরগাঁও: পেঙ্গুইন, ২০১৬) (শিশুদের জন্য বিশটি ধাঁধার জনপ্রিয় রূপান্তর)