ইকুয়েডরের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

ইকুয়েডরের ইতিহাস প্রায় ৮০০০ বছরের বেশি প্রাচীন ৷ এই বৃহৎ সময়কালের মাঝে, বহু রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির প্রভাবে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান গণপ্রজাতান্ত্রিক ইকুয়েডরের জন্ম হয়েছে ৷ এই ইতিহাসকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে : প্রাক-কলম্বিয়ান যুগ, স্পেন কর্তৃক আবিষ্কার ও জয়লাভ, স্প্যানিশ উপনিবেশিক যুগ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, বৃহত্তর কলম্বিয়া এবং সর্বশেষ সিমন বলিভারের নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে বর্তমান ইকুয়েডর ৷

প্রাক-কলম্বিয়ান ইকুয়েডর

ইনকা যুগের পূর্বে, উত্তরে বসবাসরত জনপদ নিয়ে কিছু বৃহৎ সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল ৷ এসব সম্প্রদায় একে অপরের সাথে একত্রিত হয়ে কিটো জনগোষ্ঠীর মত বেশকিছু প্রভাবশালী সংগঠিত জনগোষ্ঠী তৈরী হয়েছিল ৷ কিন্তু কোনো জনগোষ্ঠী শক্তিশালী ইনকা সাম্রাজ্যের আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারেনি ৷ ষোড়শ শতাব্দিতে ইনকাদের দ্বারা সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞ ইকুয়েডরের ইতিহাসের অন্যতম বেদনাদায়ক ও রক্তার্ত অধ্যায় ৷ কিটো দখলের পর, ইনকা শাসকেরা সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করে এবং প্বার্শবর্তী অঞ্চলগুলোতে উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করে ৷ প্রাক কলম্বিয়ান যুগকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে: পূর্ব সিরামিক যুগ, ক্রমবিকাশমান যুগ, প্রাদেশিক উন্নয়ন যুগ, সম্প্রদায়ের অন্তরীকরণ এবং ইনকাদের প্রত্যাবর্তন যুগ ৷

১ম বরফ যুগের সমাপ্তির পর পূর্ব সিরামিক যুগের সূচনা ঘটে এবং খ্রি:পূর্ব ৪২০০ সাল পর্যন্ত তা চলমান ছিল ৷ এই সময়ে লাস ভেগাস এবং ইনগা নামে দুটি সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ৷ লাস ভেগাস সংস্কৃতির লোকেরা খ্রি:পূর্ব ৯০০০- ৬০০০ সালে ইকুয়েডরের উপকূলবর্তী অঞ্চল সেন্ট এলিনাতে বসবাস করত ৷ এরা বেশিরভাগ শিকারী এবং জেলে ছিল ৷ প্রায় খ্রি:পূর্ব ৬০০০ সালে, এসব অঞ্চলের মানুষেরা চাষাবাদ শুরু করে ৷[১] অপরদিকে ইনগা সম্প্রদায়ের মানুষেরা খ্রি:পূর্ব ৯০০০- ৮০০০ সালে বর্তমান কিটো শহরের প্রাচীন বাণিজ্যিক রুটের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোতে বসবাস করত ৷ [২]

মর্টার, জাগুয়ার ভালদিভিয়া, দক্ষিণ কোস্ট (খ্রি:পূর্ব ৪০০০ থেকে খ্রি:পূর্ব ১৪০০ সাল)
সিরামিকের তৈরী নারী মূর্তি(খ্রি:পূর্ব ২৬০০– খ্রি:পূর্ব ১৫০০ সাল)

স্পেন কর্তৃক আবিষ্কার এবং জয়লাভ

যখন ইনকা সাম্রাজ্যের রাজ্যগুলোর মধ্যে আন্ত:কোন্দলের চলমান ছিল, তখন ১৫৩১ সালে ফ্রান্সিসকো পিজারোর নেতৃত্বে স্প্যানিশরা ইকুয়েডরে পদার্পণ করে ৷ পিরাজো জানতেন যে, রাজ্যের পারস্পারিক দ্বন্ধ ও কোনো মহামারী কোনো সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে পারে ৷[৩] একারণে ১৫৩২ খ্রি. সেপ্টেম্বরে তিনি অতিরিক্ত সৈন্য নিয়ে আটাহুআলপা রাজ্যে আক্রমণ করেন এবং জয়লাভ করেন ৷পিরাজোর নেতৃত্বে স্প্যানিশ বাহিনী পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ করতে শুরু করে এবং দখল করে ৷ [৪] যুদ্ধে স্প্যানিশ সৈন্যরা সংখ্যায় কম থাকলেও উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ও সঠিক যুদ্ধ কৌশলের নিকট ইনকা সৈন্যরা সহজেই পরাজিত হয় ৷ এভাবেই ইনকা সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে শুরু করে ৷অত:পর পিরাজোর সেনাধিপতি বেনালচেজার এবং স্প্যানিশ সৈন্যদের সাথে ইনকা সাম্রাজ্যের অন্যতম সেরা যোদ্ধা রুমিনাহুই এর যুদ্ধ সংগঠিত হয় ৷ এই যুদ্ধে স্প্যানিশ বাহিনীকে সহায়তা করে কানারি নামক এক সম্প্রদায় ৷ পরাজিত হয়ে রুমিনাহুই পিছু হটতে বাধ্য হন এবং কিটো শহরে ফিরে আসেন ৷ পরবর্তীতে বেনালচেজার কিটো আক্রমণ করলে, স্প্যানিশ সৈন্যদের দখল থেকে শহরকে রক্ষা করতে রুমিনাহুই কিটো শহরে আগুন লাগিয়ে দেন এবং প্রাচীন প্রি-হিসপেনিক শহর ধ্বংস করেন ৷১৫৩৪ সালে বেনালচেজার এবং ডিয়াগো দে আলমারগো অগ্নিদগ্ধ শহর পূণঃনির্মাণ করেন এবং পিজারোর সম্মানে শহরের নামকরণ করেন ফ্রান্সিসকো দে কিটো ৷

স্পেনিশ উপনিবেশিক যুগ

উপনিবেশিক অংশের চিত্র ৷ অ্যামাজনীয় অংশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না ৷

১৫৪৪ থেকে ১৫৬৩ সালের মধ্যে ইকুয়েডর স্পেনের উপনিবেশের একটি অংশে পরিণত হয় এবং পেরুকে এই অংশের সুবেদারিত্ব প্রদান করা হয় ৷ ১৭২০ সালের আগ পর্যন্ত পেরুই ইকুয়েডরের একমাত্র নিয়ন্ত্রক ছিল ৷ পরবর্তীতে নিউ গ্রানাডাকে নতুন সুবেদারিত্ব প্রদান করা হয় ৷ যাহোক, ১৫৬৩ সালে, ইকুয়েডরকে স্পেনিশ সাম্রাজ্যের নিজস্ব প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা হয় যার মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সরাসরি মাদ্রিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারত ৷বিভিন্ন উন্নয়ন ও সংস্কার সাধিত হলেও, স্থানীয় ইকুয়েডরীয়ানদেরকে কৃত্রিম দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেনি ৷ অষ্টাদশ শতাব্দির দিকে ইকুয়েডরের অর্থনীতি কিছুটা ভেঙ্গে পড়ে ৷ উৎপাদন কমে যায় ৷

স্বাধীনতার প্রচেষ্টা ও প্রজাতন্ত্রের উদ্ভব

১৮৩০ সালে ইকুয়েডর

অতঃপর কিটোতে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু হয় যা মূলত লাতিন আমেরিকান ক্রিয়োলোদের নেতৃত্বে সমগ্র স্পেনিশ আমেরিকায় শুরু হওয়া বিপ্লবিক আন্দোলনের অংশ ছিল ৷ উপনিবেশিক শক্তি একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে বেশি সুবিধা প্রদানের কারণে মূলত ক্রিয়োলোরা উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ৷ এই বিপ্লব আরো শক্কিশালী হয় যখন নেপলিয়ন স্পেনে আক্রমণ করে এবং কিং ফোরদিন্যান্ডকে ক্ষমতাচ্যুত করে ৷ [৫]এরপরই, কিটোর স্থানীয় প্রভাবশালীরা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদেরকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে ৷ কিটোর ক্রিয়োলো বিপ্লবীরা তেমন কোনো সমর্থন পায়নি ৷ এদিকে দখলদারী নাগরিকদের কাছ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে পুনরায় ক্রাউন কর্তৃপক্ষ ক্ষমতা ফিরে পায় ৷ স্পেনিশ কর্তৃপক্ষ ও শাসকেরা বিপ্লবীদেরকে কারাবন্দী করে, অত্যাচার করে ও নিরীহ জনগণের উপর নির্যাতন চালায় ৷ যার ফলশ্রুতিতে জনমনে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয় ৷ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদের পর স্থানীয় প্রশাসন আলোচনায় বসে এবং প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ৷

বৃহত্তর কলম্বিয়া

ইকুয়েডরের স্বাধীনতার জন্য পরবর্তী সংগ্রাম শুরু হয় যখন তারা ১৮২০ সালে স্পেনিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ৷ স্পেনিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও ইকুয়েডর বৃহত্তর কলম্বিয়ার একটি অংশে পরিণত হয় ৷

প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইকুয়েডর

১৮৩০ সালে লিমন বলিভারের মৃত্যুর পর বৃহত্তর কলম্বিয়ার পতন ঘটে ৷ জেনারেল জুয়ান জোস ফ্লোরে ইকুয়েডরের প্রসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৷ ১৮৩০-৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন ৷ পরবর্তীতে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন এবং ১৮৩৯ সালে পুনরায় তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান ৷ ১৮৪৫ সালে মার্চ বিপ্লবীদের দ্বারা তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন ৷ ফ্লোরেকে ইকুয়েডরের প্রজাতন্ত্রের জনক বলা হয় ৷

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন