ইস্টবেঙ্গল ক্লাব

কলকাতাস্থিত পূর্ববঙ্গীয় ঐতিহ্যবাহী ক্লাব
(ইস্টবেঙ্গল থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ভারতের কলকাতাস্থিত, শতবর্ষ প্রাচীন পেশাদার ফুটবল ক্লাব (প্রধানত), এছাড়াও অন্যান্য ক্রিয়া বিভাগে ক্লাবটি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পূর্ববঙ্গের বাঙালি জাতির ভাবাবেগকে প্রাধান্য দিয়ে ১৯২০ সালের ১লা আগষ্ট সুরেশচন্দ্র চৌধুরী জোড়াবাগানের নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের তার বাড়িতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২২ সালে ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ১৯২৪ সালে কলকাতা ফুটবল লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৯৪২ সালে সর্বপ্রথম লীগ জয় লাভ করে এবং বর্তমানে রেকর্ড সংখ্যক ৩৯টি লীগ জয় করে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। ইস্টবেঙ্গল জাতীয় লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং তিন বার জাতীয় লীগ জয় করেছে। এছাড়াও ৮ বার ফেডারেশন কাপ (ফেড কাপ), তিনবার সুপার কাপ, রেকর্ড সংখ্যক ২৯ বার আইএফএ শীল্ডরেকর্ড সংখ্যক ১৬ বার ডুরান্ড কাপ জয় করেছে।

ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব
পূর্ণ নামইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব[১]
ডাকনামলাল - হলুদ ব্রিগেড
সংক্ষিপ্ত নামইবি
প্রতিষ্ঠিত১ আগস্ট ১৯২০; ১০৩ বছর আগে (1920-08-01)
মাঠসল্টলেক স্টেডিয়াম
ইস্টবেঙ্গল মাঠ
ধারণক্ষমতাসল্টলেক স্টেডিয়াম: ৮৫,০০০
ইস্টবেঙ্গল মাঠ: ২৩,৫০০
মালিকইমামি ইস্টবেঙ্গল এফসি প্রা. লি.[২]
ইমামি গ্রুপ (৭৭%)
ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (২৩%)
প্রধান কোচকার্লেস কুয়াদ্রাত
২০২৩-২৪? (আইএসএল)
ওয়েবসাইটক্লাব ওয়েবসাইট

ইস্টবেঙ্গল ক্লাব মূলত ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনের প্রাক্কালে দেশ ভাগের সময় পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু বাঙ্গালী হিন্দুদের (মূলত বাঙ্গাল নামে অধিক পরিচিত) সমর্থিত ক্লাব। তাদের কাছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব পরিচিতি ও আশার প্রতীক। পূর্ববঙ্গের শরণার্থীরা দেশভাগ ও ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসলে পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিকতাতেও প্রভাব পরে। শরণার্থীরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ অধীনস্থ করলে এবং তাদের সন্তানেরা পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা মনক্ষুণ্ন হয় এবং সেখান থেকেই বাঙাল-ঘটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়, যা ফুটবল মাঠেও ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান প্রতিদ্বন্দ্বিতা (কলকাতা ডার্বি) বা বড় ম্যাচ হিসাবে প্রতিফলিত। কলকাতা ডার্বি এশিয়ার প্রাচীনতম ডার্বি এবং ইস্টবেঙ্গল জয়ের নিরিখে ১২৯টি ম্যাচে জয়লাভ করে মোহনবাগানের (১২১টি জয়) থেকে এগিয়ে রয়েছে। মোহনবাগান ছাড়াও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সমর্থিত মহামেডান ক্লাবের সাথেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। কলকাতার এই তিন ক্লাব তিন প্রধান নামে বেশি পরিচিত। ক্লাবের জার্সির লাল-হলুদ রঙের জন্য ইস্টবেঙ্গল ক্লাব লাল - হলুদ ব্রিগেড নামেও সমধিক পরিচিত।

ইতিহাস

সুরেশচন্দ্র চৌধুরী, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা
শৈলেশ বসু
সারদারঞ্জন রায়, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রথম সভাপতি

প্রতিষ্ঠা

২৮ শে জুলাই ১৯২০ সালে কোচবিহার কাপের একটি ম্যাচে মোহনবাগান ও জোড়াবাগান ক্লাব পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছিল। সেই ম্যাচে জোড়াবাগান অন্তিম দলে এক অজানা কারণে তাদের ডিফেন্ডার শৈলেশ বসুকে না নিয়েই মাঠে টিম নামায়। দলের তৎকালীন সহ-সভাপতি সুরেশ চৌধুরী দলের কর্মকর্তাদের কাছে শৈলেশ বসুকে দলে না নেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন এবং শৈলেশ বসুকে দলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তার কথা রাখা হয়নি। তিনি ও শৈলেশ বসু বুঝতে পারেন শৈলেশ বসু পূর্ববঙ্গীয় হওয়ার কারণেই বিদ্বেষ বসতই তাকে দলে নেওয়া হয় নি। এরপরই সুরেশ চৌধুরী, রাজা মন্মথ নাথ চৌধুরী, রমেশ চন্দ্র সেন, অরবিন্দ ঘোষকে নিয়ে ক্লাব ত্যাগ করেন এবং বাঙাল (পূর্ববঙ্গীয়) ভাবাবেগকে প্রাধান্য দিয়ে তিনদিনের মধ্যে ১লা আগষ্ট ১৯২০ সালে ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্লাব হিসাবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। [৩][৪][৫]

সারদারঞ্জন রায় নব প্রতিষ্ঠিত ক্লাবের প্রথম সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, অন্যদিকে সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী ও তড়িৎ ভূষণ রায় ক্লাবের প্রথম যুগ্ম-সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন।[৬] নগেন কালী, এম. তালুকদার, বি. সেন, এন. গোঁসাই, গোষ্ঠ পাল, পি. বর্ধন, এস. ঠাকুর, জে. মুখার্জী, রমেশ চন্দ্র সেন, এস. বসু, সি. বসু, এ. রায় এবং এ. ব্যানার্জী ক্লাবের প্রথম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। [৭]

১৯২০ – ১৯৪০

১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা

ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ওই মাসেই হারকিউলাস কাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১১ আগষ্ট ১৯২০ ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচে মেট্রোপলিটন কলেজের বিরুদ্ধে ৪-০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে যাত্রা শুরু করে এবং হারকিউলাস কাপ জয় করে। ১৯২১ সালে খগেন্দ্র শীল্ড প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়।

এরপরই ভারতীয় ফুটবল অ্যাসসিয়েশনের সদস্যতা পায় এবং আইএফএ-র দ্বিতীয় ডিভিশনে লীগ খেলার অধিকার অর্জন করে। তারা তাদের উদ্বোধনী লীগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে ১৯২১ সালে ৮ আগষ্ট কোচবিহার কাপের সেমি ফাইনালে প্রথম অনুনমোদীত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গোল শূণ্য ভাবে ড্র হয়।[৩][৮] ১৯২৪ সালে আইএফএ দ্বিতীয় ডিভিশনে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করলেও ইস্টবেঙ্গল আইএফএ প্রথম ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেয়ে যায়। ''ক্যামেরুন এ '' আগে থেকেই প্রথম ডিভিশনে থাকায় ''ক্যামেরুন বি '' প্রথম হয়েও প্রথম ডিভিশনে সুযোগ ছিল না, তাই ইস্টবেঙ্গলের কাছে প্রথম ডিভিশনে খেলার দরজা খুলে যায়।[৩][৯]

যদিও সেই সময় প্রথম ডিভিশনে খেলার ছাড়পত্র পাওয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। সেই সময় আইএফএ ব্রিটিশ সংস্থা ছিল। তৎকালীন আইএফএর নিয়মানুশারে আইএফএ প্রথম ডিভিশনে শুধুমাত্র দুটি ভারতীয় দল খেলতে পারতো। এই নিয়মানুসারে আগে ''কুমারটুলি '' ও ''টাউন ক্লাব '' প্রথম ডিভিশনে খেলার ছাড়পত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। আইএফএর পরিচালন কমিটির আলোচনায় নয়টি ব্রিটিশ ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ডিভিশনে খেলার প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। হাস্যকর ভাবে ''মোহনবাগান '' ও ''এরিয়ান ক্লাব '' ইষ্ট বেঙ্গলের খেলার প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছিল। ইস্টবেঙ্গলের জেদের কাছে প্রথম ডিভিশনে ভারতীয় ক্লাবের সীমিত সংখ্যক খেলার দমনমূলক নিয়মটি আইএফএকে অবলপন করতে বাধ্য করে।[৩][৯]

১৯২৫ সালে ইস্টবেঙ্গল প্রথমবার প্রথম ডিভিশনে আত্মপ্রকাশ করে। মনা দত্ত ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে প্রথম গোল করেন। ১৯২৫ সালের ২৮শে মে ইস্টবেঙ্গল প্রথমবার অফিসিয়ালি মোহনবাগানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে এবং নেপাল চক্রবর্তীর গোলে মোহনবাগান পরাজিত হয়।[৬][১০]

১৯৪০ – ১৯৭০

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের আইএফএ শিল্ড জেতার পর ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা

১৯৪২ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম আইএফএ শীল্ড জয় লাভ করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৪৩ সালে ইস্টবেঙ্গল প্রথম আইএফএ শীল্ড জয় লাভ করে। এরপর ১৯৪৫ সালে ইষ্ট বেঙ্গলের মাথায় দুটো মুকুট আসে। ওই বছর একই সাথে আইএফএ শীল্ড ও কলকাতা লীগ (CFL) জয় লাভ করে। ১৯৪৮ সালে চীনের অলিম্পিক একাদশকে ২ - ০ গোলে হারিয়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম দল হিসেবে ভারতের মাটিতে বিদেশি দলকে হারায়।[১১] ১৯৪৯ সালে ইস্টবেঙ্গল প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে ত্রিমুকুট অর্জন করে।[১২] ওই বছর একই সাথে আইএফএ শীল্ড, কলকাতা লীগ ও রোভার্স কাপ জয় লাভ করে।[১৩] ১৯৪৯ সালে রোভার্স কাপ ও ১৯৫১ সালে ডুরান্ড কাপে জয় দিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সোনালী যুগ শুরু হয়। এই সময় ''পঞ্চ পাণ্ডবের '' উত্থান হয়। পি বি এ শৈলেশ, আহমেদ খান, পি. ভেঙ্কটেশ, আপ্পা রাও, কে. পি. ধনরাজ একত্রে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে খেলেন। ১৯৫০ সালে প্রথমবার ডিসিএম ট্রফি জয় লাভ করে। ১৯৪৯, ১৯৫০, ১৯৫১ পর্যন্ত টানা তিনবার আইএফএ শীল্ড জয় লাভ করে। ইংলিশ ফুটবল অ্যাসসিয়েশন ১৯৫১-৫২ সালের বার্ষিক পঞ্জিকাতে সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল ক্লাব বলে অভিহিত করে।[১৪]

ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের সুপারিশে রোমানিয়া ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল কমিটি ১৯৫৩ সালে একটু ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার জন্য অভ্যর্থনা জানায়। ওই একই বছর ইস্টবেঙ্গল সোভিয়েত ইউনিয়নও পরিভ্রমণ করেন এবং সোভিয়েত দলকে ১৩ - ১ গোলে পর্যযুস্ত করে। ফুটবল ছাড়াও হকিতে ১৯৫৭ সালে বেইটন টুর্নামেন্ট এবং ১৯৬০ সালে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন লীগ জয়লাভ করে। এই সময় ১৯৬২, ১৯৬৭, ১৯৬৯, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৫ সালে রোভার্স কাপ ও ১৯৫২, ১৯৫৬, ১৯৬০, ১৯৬৭, ১৯৭০, ১৯৭২, এবং ১৯৭৮ সালে ডুরান্ড কাপ জয় লাভ করে।

১৯৬৮ সালে ইস্টবেঙ্গল প্রথমবার সইত নাগজী ফুটবল টুর্নামেন্ট ও বরদলৈ ট্রফি জয়লাভ করে।[১৫] ১৯৭০ সালের আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে কলকাতার ইডেন উদ্যানে ৬০,০০০ ফুটবলপ্রেমীর উপস্থিতিতে ইরানের শক্তিশালী দল, প্যাশ ক্লাবকে ১ - ০ গোলে হারিয়ে দর্শকদের স্তম্ভিত করে দেয়। এরপর ১৯৭৩ সালে উত্তর কোরিয়ার পয়ংযাঙ ক্লাবকে হারিয়ে আইএফএ শীল্ড জিতে নেয়। ১৯৭৮ সালে ইস্টবেঙ্গল প্রথমবার ফেডারেশন কাপ জয় লাভ করে।

ক্রিকেটে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের সাথে সিএবির সিনিয়র লীগসিনিয়র ডিভিশনের নকআউট প্রতিযোগিতায় যুগ্ম ভাবে জয় লাভ করে।[৫][১৬][১৭][৬]

ইস্টবেঙ্গল টানা ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত টানা ৬ বছর কলকাতা লীগ অপরাজিত ছিল।[১৬] ১৯৭০ সালের কলকাতা লীগে একটিও গোল হজম না করে লীগ জয় লাভ করে। এরমধ্যে ১৯৭৫ সালের কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানকে ডার্বির সর্বোচ্চ রেকর্ড ৫ - ০ গোলে হারিয়ে দেয়। এই ম্যাচটি ছাড়াও আরো কয়েকবার মোহনবাগানকে হারিয়ে দেয়। ১৯৭৫ সালের কলকাতা লীগে একটিও ম্যাচ না হেরে লীগ জয় লাভ করে। সত্তরের দশক ইষ্ট বেঙ্গলের ইতিহাসে সোনালী দশক নামে পরিচিত।[৬][১৮][১৩]

১৯৮০ – ১৯৯০

১৯৮০ সালে ফেডারেশন কাপ জয় দিয়ে শুরু করে ১৯৮৫ সালে আরো একবার ফেডারেশন কাপ জয় লাভ করে। এরপর ১৯৮৫-৮৬ সালে নব-প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়ানশীপে প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।[১৬] এরপর ১৯৯০ সালে নৈমুদ্দিনের প্রশিক্ষণে আইএফএ শীল্ড, রোভার্স কাপ ও ডুরান্ড কাপ জয় করে দ্বিতীয়বার ত্রিমুকুট জয়লাভ করে। ১৯৮৬ সালে স্ট্যাফোর্ড কাপ এবং ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে ম্যাকডুয়েল কাপ জয় লাভ করে।[১৯] ১৯৯৩ সালে ইস্টবেঙ্গল প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি হিসাবে নেপালে অনুষ্ঠিত ওয়াই ওয়াই কাপ জয় লাভ করে। নব্বইয়ের দশকে ইস্টবেঙ্গল অনেকবার করে ফেডারেশন কাপ, আই এফ এ শীল্ড, কলকাতা লীগ ডুরান্ড কাপ ও রোভার্স কাপ জয় করে। ১৯৯৬ সালে ভারতের সর্বপ্রথম অন্তরদেশীয় ফুটবল লীগ জাতীয় ফুটবল লীগ শুরু হয়, সেখানে ইস্টবেঙ্গল প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।[৬][১৪][২০]১৯৮৪ সালে দীপক দাস ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগদান করে ক্লাবের গঠনে আমূল পরিবর্তন করেন। তিনি ক্লাবটিকে পেশাদারী ক্লাবে উন্নীত করে প্রাইভেট লিমিটেড হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। স্থানীয় ব্র্যান্ড ও খাদিম কোম্পানীর স্পন্সরশীপ আদায় করে নেয় ইস্টবেঙ্গল। এরপর ১৯৯৮ সালে বিজয় মাল্যর ইউনাইটেড ব্রুইয়ার্স গ্রুপের সাথে ৫০ শতাংশ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রাইভেট কোম্পানী ইউনাইটেড ইস্টবেঙ্গল ফুটবল টিম প্রাইভেট লিমিটেড হিসাবে ভারতের প্রথম ভারতের প্রথম পেশাদারী ফুটবল টিম হিসাবে আবির্ভাব হয় এবং ফুটবল টিমের নাম রাখা হয় কিংফিশার ইস্টবেঙ্গল।[২১][১৭]

২০০০ – ২০১০

একবিংশ শতাব্দীতে ইস্টবেঙ্গল স্বভাবচিত ভাবে ২০০০-০১ সালের জাতীয় লীগ (NFL) জয়ের মাধ্যমে শুরু করে। এরপর ২০০২-০৩ সালে ও ২০০৩-০৪ সালে ভারতের সর্বপ্রথম দল হিসেবে পর পর দু'বছর জাতীয় লীগ জয় করে। এরপর ২০০৭, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১২ সালে ফেডারেশন কাপ ও ২০০৬ এবং ২০১১ সালে সুপার কাপ জয় করে।[২২] ২০০৩ সালে ইস্টবেঙ্গল তাদের তৃতীয় আন্তর্জাতিক ট্রফি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ের মাধ্যমে অর্জন করে। ইষ্ট বেঙ্গল ভারতের ক্লাব হিসাবে সব থেকে বেশি আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছে।[১৪][২৩] ইস্টবেঙ্গল ২০০৪ সালে নেপালে সান মিগুয়েল আন্তর্জাতিক কাপ দিয়ে শুরু করে। ওই বছর লেইসেস্টার সিটি তাদের ১২০ তম বর্ষ উদ্‌যাপন টুর্নামেন্টে আহ্বান জানায় এবং ইস্টবেঙ্গল ও লেইসেস্টার সিটি অংশীদার হয়।[২৪][২৫] ফিফা প্রেসিডেন্ট ২০০৭ সালে ইস্টবেঙ্গল তাঁবু পরিভ্রমণে আসে। এর পরের বছর প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে পশ্চিম এশীয় দলের (আল ওইহদ্যাত, জর্ডন) বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে জয় লাভ করে। ২০০৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল রেকর্ড সংখ্যক ৮ বার এএফসি কাপে যোগ্যতা অর্জন করে।[৬][১৯] East Bengal also made a record eight appearances, between 2004 and 2015, in the AFC Cup.[২৬][২৭] ২০১৩ সালের সেমি ফাইনালে তারা কুয়েতের কুয়েত সিটি দলের কাছে সেমিফাইনালে হেরে যায়।[২৮] ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত টানা ৮ বছর কলকাতা লীগ জয় করে তাদের সত্তরের দশকে করা টানা ৬ বছর জেতার রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করে।[১৬][২৯] ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ইস্টবেঙ্গল কুইস গ্রুপের সাথে ৭০%-৩০% এর নতুন অংশীদারিত্ব শুরু করে এবং ফুটবলটিম রিব্রান্ডেড হয়ে কুইস ইস্টবেঙ্গল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।[৩০][৩১] ১ আগষ্ট ২০১৯ সালে ইস্টবেঙ্গল শততম বর্ষে পদার্পন করে। ওই বছর শতবার্ষিকী লোগো উন্মোচন হয়। মশাল মিছিল থেকে শুরু করে প্রবীণ প্রাক্তনী ফুটবলার, কোচ, সভাপতি সহ বাংলার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান পালিত হয়। ১৯২৫-২৬ সালের জার্সির অনুকরণে শতবার্ষিকী জার্সি প্রকাশ করা হয়।[৩২] এই বছর আই-লীগ, ডুরান্ড কাপ ও কলকাতা লীগে ইস্টবেঙ্গল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। শতবার্ষিকী বছরের প্রথম ম্যাচে ডুরান্ড কাপে আর্মি রেডের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে।[৩৩][৩৪]

২০২০ – ২০২২

২০১৯ এর বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারীর জন্য ভারতের সকল ফুটবল প্রতিযোগিতা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।[৩৫] ইস্টবেঙ্গলের তৎকালীন বিনিয়োগকারী কুইস গ্রুপ তাদের বিনিয়োগের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে।[৩৬][৩৭] ১ আগষ্ট ২০২০তে তাদের শতবার্ষিকী পূর্ণ করে। সেপ্টেম্বর মাসে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গলে বিনিয়োগ করে[৩৮] এবং মোট ৭৬ শতাংশের অংশীদারিত্ত্ব লাভ করে এবং স্পোর্টিং ক্লাব ইস্টবেঙ্গল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।[১][৩৯] এরপরের মাসে সফল বিডিঙ্গের মাধ্যমে আইএসএলে খেলার ছাড়পত্র পায়।[৪০][৪১] ২০২২ সালের প্রাক্কালে শ্রী সিমেন্টের সাথে অংশীদরিত্ব ত্যাগ করে।

২০২২ - বর্তমান

২০২১ - ২০২২ সালের আইএসএল প্রতিযোগিতা সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে শ্রী সিমেন্টের সাথে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অংশীদারিত্বও শেষ হয়। ১২ এপ্রিল ২০২২ শ্রী সিমেন্ট কোম্পানী ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সাথে অংশীদারি পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া না হওয়ার ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাদের স্পোর্টিং রাইটস অর্থাৎ স্বত্ব ফিরে পায়।

২ আগষ্ট ২০২২ তারিখে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ইমামি গ্রুপের সাথে তাদের অংশীদারি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

সম্মান

বিশেষ দ্রষ্টব্য এখানে শুধু প্রধান টুর্নামেন্টেরই ফলাফল বর্ণিত হয়েছে।

ফুটবল

আন্তর্জাতিক

গ্রুপ পর্ব (২): ১৯৮৫/৮৬, ১৯৯৮/৯৯
  • এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপ
কোয়ার্টার-ফাইনাল (১): ১৯৯১/৯২
সেমি-ফাইনাল (১): ২০১৩
চ্যাম্পিয়ন (১): ২০০৩

জাতীয়

দ্বিতীয় (২): ২০১০-১১, ২০১৩-১৪, ২০১৮-১৯
বিজয়ী (৩): ২০০০-০১, ২০০২-০৩, ২০০৩-০৪
দ্বিতীয় (৩): ১৯৯৭-৯৮, ১৯৯৮-৯৯, ২০০৫-০৬
বিজয়ী (৭): ১৯৭৮, ১৯৮০, ১৯৮৫, ১৯৯৬, ২০০৭, ২০০৯, ২০১০
দ্বিতীয় (৬): ১৯৮৪, ১৯৮৬, ১৯৯২, ১৯৯৫, ১৯৯৮, ২০১১, ২০২৪
  • ভারতীয় সুপার কাপ
বিজয়ী (৩): ১৯৯৭, ২০০৬, ২০১১
দ্বিতীয় (৩): ২০০৩, ২০০৮, ২০১০
বিজয়ী (২৩): ১৯৬১, ১৯৬৫, ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৬, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৭, ২০০০, ২০০১, ২০০২
দ্বিতীয় (৪): ১৯৬৯, ১৯৭৭, ১৯৯৮, ২০০৩
বিজয়ী (১৫): ১৯৫১, ১৯৫২, ১৯৫৬, ১৯৬০, ১৯৬৭, ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩, ২০০২, ২০০৪

ক্রিকেট

  • সিএবি প্রথম ডিভিশন লিগ
বিজয়ী (১৬): ১৯৭৪-৭৫, ১৯৭৭-৭৮, ১৯৭৮-৭৯, ১৯৮০-৮১, ১৯৮৩-৮৪, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৪-৯৫, ১৯৯৮-৯৯, ২০০০-০১, ২০০১-০২, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭, ২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১৩-১৪, ২০১৬-১৭
  • সিএবি সুপার লিগ
বিজয়ী (১): ২০১৬-১৭
  • সিএবি সিনিয়র নকআউট
বিজয়ী (১৩): ১৯৭৫-৭৬, ১৯৭৭-৭৮, ১৯৭৯-৮০, ১৯৮২-৮৩, ১৯৮৫-৮৬, ১৯৮৭-৮৮, ১৯৯৭-৯৮, ২০০৩-০৪, ২০০৪-০৫, ২০১০-১১, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫

হকি

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন