উমর সম্পর্কে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি
সুন্নি মুসলমানরা দ্বিতীয় রাশেদুন খলিফা উমর (৫৭৬-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ)-কে শিয়া মুসলিমদের চেয়ে অনেক বেশি প্রসন্ন দৃষ্টিতে দেখেন, শিয়ারা মনে করে যে তিনি, আবু বকর এবং উসমান মুহাম্মদের জামাতা আলীর কাছ থেকে মুসলমানদের উপর নেতৃত্ব দখল করেছিলেন।[১]
জীবনী
উমর ছিলেন মুহাম্মদ এর অন্যতম সাহাবা। উমরের ধর্মান্তরের সাথে সাথে ইসলাম শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করা শুরু করে। দশ বছরের ব্যবধানে উমর ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য গড়তে সফল হন। তার নেতৃত্বে আরবের মরুভূমি থেকে উদ্ভূত মুসলমানরা পূর্ব দিকের পারস্যের সাম্রাজ্যকে উৎখাত করে এবং পশ্চিমের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে ভেঙে দেয়।
তিনি বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন এবং তবুও তিনি একজন সাধারণ মানুষের ন্যায় জীবনযাপন করেন। অতিসাধারণ অভ্যাস, নিরলংকার এবং মিতব্যয়ী ছিলেন, তিনি সর্বদা তার বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন এবং তবুও তিনি অন্যায়কারীর জন্য আতঙ্ক ছিলেন। তিনি কোনও প্রহরী বা সহচর ছাড়াই মানুষের অবস্থা অনুসন্ধানের জন্য রাতের বেলা ঘুরে বেড়াতেন।
পরিবার
উমরের সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তবে সর্বসম্মত মত হলো উমর মক্কায় ৫৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেন। ওমর মক্কায় যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তা সাফা ও মারওয়াহর মাঝমাঝি অবস্থিত। তাঁর খেলাফতের সময়কালে উমর বাড়িটি ভেঙে ফেলেন এবং জায়গাটিতে একটি শিবিরে পরিণত করেন। তিনি ইসলামের নবী মুহাম্মদ এর চেয়ে প্রায় দশ বছর ছোট ছিলেন। মুহাম্মদ ও উমর এর নবম পূর্বপুরুষে যেয়ে তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসাবে কা'ব এ মিলিতি হয়।
উমরের পূর্বপুরুষদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন
- আদি, উমরের গোত্রের উপাধি বনু আদি এসেছে তার নাম থেকেই
- নুফায়েল, উমরের পিতামহ
- খাত্তাব ইবনে নুফায়েল, উমরের পিতা
- হানতামা, উমরের মাতা
- হিশাম ইবনে আল-মুগিরাহ, উমরের মাতামহ এবং জেনারেল খালিদ ইবনে আল-ওয়ালিদের পিতা ওলীদ ইবনে আল-মুগিরার ভাই। খালিদ এইভাবে উমরের মায়ের চাচাতো ভাই ছিল।
- আবু জেহেল যার ব্যক্তিগত নাম আমর ইবনে হিশাম ছিলেন উমরের মাতার ভাই এবং তাঁর মামা।
উমরের বেশ কয়েকজন ভাই-বোন ছিল। এর মধ্যে সর্বাধিক সুপরিচিত ছিলেন: যায়েদ ইবনুল খাত্তাব এবং ফাতিমাহ বিনতে আল-খাত্তাব । জায়েদ ও উমর সৎ ভাই ছিলেন, তাদের মাতা আলাদা ছিলেন। তা সত্ত্বেও দুই ভাই একে অপরের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। পরে জায়েদ যখন আবু বকরের খেলাফত চলাকালীন ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন, তখন উমর অত্যন্ত শোকে কাতর হন। তিনি বলতেন, "যখনই ইয়ামামার দিক থেকে বাতাস বয়ে আসে, তা আমার কাছে জায়েদের সুগন্ধ নিয়ে আসে"।
ফাতেমাহ হলেন উমরের আসল বোন। তিনি তার চাচাতো ভাই সাঈদ ইবনে যায়িদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি উমরের ইসলাম গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
খাত্তাবের ভাই আমর হলেন উমরের চাচা। আমরের পুত্র এবং উমরের চাচাত ভাই জায়েদ কুরাইশদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন, তিনি ইসলামের আগমনের পূর্বে মূর্তিপূজা ত্যাগ করেছিলেন এবং এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়েছিলেন। খাত্তব জায়েদকে তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য নির্যাতন করেছিলেন। খাত্তব জায়েদকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য নির্যাতন করেন। মুহাম্মদ তাঁর নবুওয়াতের ঘোষণার আগে জায়েদ মারা যান। মুহাম্মদ যখন তাঁর নবুওয়াত ঘোষণা করেন, তখন যায়েদের পুত্র সাঈদ যিনি উমরের বোন ফাতিমাহাকে বিয়ে করেছিলেন, তিনি প্রাথমিক কালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
৬৩৪ - ৬৪৪: উমর এর যুগ
পঞ্চদশ শতাব্দীর সুন্নি ইসলামী পণ্ডিত সুয়ুতী বলেন যে আন-নাবাবী তাঁর তাহধিবকে বলেছেন:
উমর প্রথম চাবুক গ্রহণ করেছিলেন। ইবনে সা'দ তাবাকাতে এটি উল্লেখ করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ তাঁর পরে বলা হত, ’উমরের চাবুক তোমার তরোয়াল থেকেও ভয়ংকর।’ তিনি (আন-নাবাবী) আরও বলেন: তিনিই প্রথম প্রদেশগুলিতে কাজী নিয়োগ করেন, তিনিই প্রথম কূফা, বসরা এবং মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া, কায়রো (মিশর) এবং মসুল প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।[২]
উত্তরাধিকার
সম্মান
সুন্নিরা নিম্নলিখিত ভাবে তাঁকে সম্মান করে:
- খুলাফায়ে রাশেদীনের একজন [৩]
- জীবদ্দশায় জান্নাতের প্রতিশ্রুতি পাওয়া দশজনের একজন
- মুহাম্মদ এর শ্বশুরবাড়ির মধ্যে একটি
- সাহাবায়ে কেরামের অন্যতম জ্ঞানবান মানুষ
- তাদের মধ্যে অন্যতম এক মিতাচারী মানুষ।
- ইজতিহাদের দরজা খুলাদের অন্যতম,[৪] যা পরবর্তীকালে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যায় মুসলিম ফকীহদের সহায়তা করেছিল।[৫]