উম্মে সালামা
উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া আল-মাখজুমিয়া(আরবি: هند بنت أبي أمية) (৫৮০ - ৬৮০)[১] বা সংক্ষেপে উম্মে সালামা বা হিন্দ বিনতে সুহাইল[২][৩] (هِنْد ٱلْمَخْزُومِيَّة) ইসলামের নবী মুহাম্মাদ-এর একজন স্ত্রী। তার প্রকৃত নাম ছিল "হিন্দ আল-মাখজুমিয়া"। প্রথম সন্তান সালামার নামের অনুসরণে তাকে উম্মে সালামা নামে অভিহিত করা হয়।[৪] তার পিতার নাম আবি উমাইয়া বিন মুগীরা বিন আব্দুল্লাহ বিন আমের বিন মাখজুম এবং মাতার নাম আতিবাহ বিনতে রবিয়া বিন মালেক কানানী।
উম্মে সালামা আরবি: أم سلمة | |
---|---|
উপাধি: আল মাখজুমিয়াহ, উম্মুল মুমিনিন | |
জন্মস্থান | মক্কা, হেজাজ (বর্তমান সৌদি আরব) (৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ) |
জাতিসত্ত্বা | আরব |
প্রভাব | মুহাম্মদ |
মৃত্যু | ৬৪ হিজরি (৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ) |
দাফন | জান্নাতুল বাকি, মদিনা, হেজাজ (বর্তমান সৌদি আরব) |
ধর্ম | ইসলাম |
মুহাম্মাদের সাথে বিবাহের পূর্বে
উম্মে সালামার জন্মের নাম হিন্দ ছিল।[২][৩] তার পিতা আবু উমাইয়া ইবনে আল-মুগিরা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে মাখজুম ইবনে ইয়াকাযাহ সুহাইল। তিনি জাদ আর-রাকিব নামেও পরিচিত।[৫] তিনি তাঁর কুরাইশ গোত্রের অভিজাত সদস্য ছিলেন, বিশেষত ভ্রমণকারীদের কাছে তাঁর মহান উদারতার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন।[৬] তাঁর মা ছিলেন কিননা গোত্রের ফিরস ইবনে ঘানাম শাখার 'আতিকা বিনতে' আমির ইবনে রাবাহাহ।
আবু সালামার সাথে বিয়ে
হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর সাথে বিয়ের আগে উম্মে সালামার আবু সালামা আবদুল্লাহ ইবনে আবদ-আল-আসাদ আল-মাখজুমির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, যার মা ছিলেন বাররাহ বিনতে আবদুল মুত্তালিব। আবু সালামা মুহাম্মদের (স.) অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন।[৭] আবু সালামার চার সন্তান উম্মে সালামা গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন: সালামা, উমর, যয়নব ও রুকাইয়াহ।[৮][৯]
ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত
তিনি ও তার প্রথম স্বামী আবু সালামা ইবনে আবদ-আল আসাদ প্রথম যুগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম।[৬] মক্কার কাফিরদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে তারা আবেসিনিয়ায় হিজরত করেন। সেখানেই তাদের প্রথম পুত্র স্নতান সালামার জন্ম হয়। স্বাস্থানুকূল না-হওয়ায় তারা আবিসিনিয়া থেকে আরবে প্রত্যাবর্তন করেন এবং মদীনায় হিযরত করেন। হিযরত কালে তারা কাফিরদের হাতে বন্দী হন। তার স্বামী পালিয়ে মদীনা গমনে সক্ষম হলেও উম্মে সালামা সপুত্রক বৎসর বন্দী থাকেন।
স্বামীর ইন্তেকাল ও মুহাম্মাদ(সা.) এর সাথে বিবাহ
তারপর পালিয়ে মদীনা গমন করেন। ঊহুদের যুদ্ধে তার স্বামী মারাত্মকভাবে আহত হন এবং শেষাবধি সকল প্রকার চিকিৎসা ও পরিচর্যা সত্বেও ৪র্থ হিজরীর জমাদিউস সানি মাসের ৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩] এ সময় উম্মে সালামার সন্তান সংখ্যা চার্ এই অসহায অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে মুহাম্মাদ তাকেঁ বিবাহ করেন। এ সময় উম্মে সালামা বয়স ২৭ এবং রাসুলুল্লাহ'র(সা.)বয়স ৫৭ বৎসর
স্বামী আবু সালামার মৃত্যুর পরে অনেক মুহাম্মাদ(সা.)-এর সাহাবীই উম্মে সালামাকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন উম্মে সালামার দৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে।[৩] কিন্তু তিনি সবাইকেই প্রত্যাখ্যান করেন। অবশেষে উম্মে সালামাকে মুহাম্মাদ(সা.) আল্লাহর ইচ্ছায় প্রস্তাব করার পরে উম্মে সালামা প্রস্তাব গ্রহণে দ্বিধা প্রকাশ করেন নিচের তিনটি কারণ দেখিয়েঃ[১০]
- উম্মে সালামার বয়স অনেক
- তার নিজের ছেলেমেয়েরা আছে
- তিনি মুহাম্মাদের(সা.) অন্যান্য স্ত্রীদের উপস্থিতিতে হিংসা বোধ করতে পারেন।
মুহাম্মদ(সা.)সেগুলো খন্ডন করেন এভাবে:
- মুহাম্মাদের(সা.) বয়স উম্মে সালামার চেয়ে বেশি
- বিয়ে হলে উম্মে সালামার পরিবারের সদস্যেরা মুহাম্মদেরও(সা.) পরিবারের সদস্য।
- হিংসা কমার জন্য মুহাম্মাদ(সা.) করুনাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করবেন।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর
মুহাম্মদের(স.) মৃত্যুর পরেও উম্মে সালামার (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ইসলামে প্রভাব অব্যাহত ছিল। তাঁর অসংখ্য হাদীস বর্ণনা ধর্মের ভবিষ্যতের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।[১১] উম্মে সালামাসহ মুহাম্মদের অন্য স্ত্রী আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ইমাম হিসাবে ভূমিকা পালন করেন এবং অন্যান্য মহিলাদের উপাসনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।[১১]
উম্মে সালামা উটের যুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন, এতে আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা )ও আলীর দলগুলি সরাসরি বিরোধী ছিল। যুদ্ধে আয়েশাকে রাদিয়াল্লাহু আনহা) জড়িত করার বিষয়ে উম্মে সালামা প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। তিনি আলীর দলটিকে দৃঢ় ভাবে সমর্থন করেছিলেন।[১২]
রাসুলুল্লাহ'র স্ত্রী হিসাবে তার গর্ভে কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেনি। তিনি কত বছর বেঁচে ছিলেন তা সঠিকভাবে নিরূপিত হয় নি। ধারণা করা হয় মৃত্যুকালে তাৎর বয়স ছিল ৮৪ বৎসর। রাসুলুল্লাহ'র স্ত্রীদের মধ্যে তারই সর্বশেষে মৃত্যু হয়। মদীনায় জান্নাতুল বাকীতে তার কবর অবস্থিত।
আরও দেখুন
- ইসলাম
- মুহাম্মাদ
- মুহাম্মাদ-এর বৈবাহিক জীবন
- ওহুদ যুদ্ধ