জর্জ ইউলিট

ইংরেজ ক্রিকেটার

জর্জ ইউলিট (ইংরেজি: George Ulyett; জন্ম: ২১ অক্টোবর, ১৮৫১ - মৃত্যু: ১৮ জুন, ১৮৯৮) শেফিল্ডের পিটসমুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। বিশেষতঃ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় ব্যাটিংয়ে নামতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। ‘হ্যাপি জ্যাক’ নামে খ্যাত ইউলিট তার সুন্দর আচরণের জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।[১] এছাড়াও, ১৮৮২-৮৩ ও ১৮৮৩-৮৪ ফুটবল মৌসুমে শেফিল্ড ওয়েনসডে’র পক্ষে গোলরক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন।

জর্জ ইউলিট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জর্জ ইউলিট
জন্ম(১৮৫১-১০-২১)২১ অক্টোবর ১৮৫১
পিটসমুর, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৮ জুন ১৮৯৮(1898-06-18) (বয়স ৪৬)
পিটসমুর, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট (রাউন্ডআর্ম)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১১)
১৫ মার্চ ১৮৭৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২৩ জুলাই ১৮৯০ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৭৩-১৮৯৩ইয়র্কশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতাটেস্টএফসি
ম্যাচ সংখ্যা২৫৫৩৭
রানের সংখ্যা৯৪৯২০,৮২৩
ব্যাটিং গড়২৪.৩৩২৩.৪৪
১০০/৫০১/৭১৮/১০১
সর্বোচ্চ রান১৪৯১৯৯ *
বল করেছে২,৬২৭৩১,১৩৬
উইকেট৫০৬৫৩
বোলিং গড়২০.৪০২০.১৪
ইনিংসে ৫ উইকেট২৩
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং৭/৩৬৭/৩০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং১৯/–৩৬৮/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ৩০ মার্চ ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন

ষোল বছর বয়সে ১৮৭১ থেকে ১৮৭৩ সময়কালে স্থানীয় পিটসমুর ক্লাবে পেশাদারী পর্যায়ে যোগ দেন। ১৮৭৩ সালে ব্রামল লেনে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে আত্মপ্রকাশ ঘটান ও সাসেক্সের বিপক্ষে অংশ নেন। পরবর্তী বিশ বছর দলের মূল্যবান সদস্যরূপে থাকেন। এ সময়ে দশ মৌসুমে সহস্রাধিক রান ও তিন মৌসুমে পঞ্চাশোর্ধ্ব উইকেট পান। ১৮৮৩ সালে স্মরণীয় ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। ঐ মৌসুমে তিনি শীর্ষস্থান থেকে মাত্র ১১ রান কমে ১,৫৬২ রান তোলেন।[২] এ রান করাকালে তিনি কোন সেঞ্চুরিরও সন্ধান পাননি। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে চার্লস হ্যারিস ও ১৯৬৫ সালে ডেভিড গ্রীন - এ দুই ব্যাটসম্যানও কোন সেঞ্চুরি ছাড়াই হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান ও তার এ অনন্য রেকর্ডে ভাগ বসান।

১৮৭৮ সালে সারের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৭/৩০ গড়েন। এছাড়াও, ১৮৮৭ সালে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৯৯* রান তোলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া সফর

১৮৭৬-৭৭ মৌসুমে জেমস লিলিহোয়াইট জুনিয়র একাদশের অস্ট্রেলিয়া সফরে অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। নিউ সাউথ ওয়েলস পঞ্চদশের কাছে শুরুতেই পরাজিত হলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে, ‘প্রথমবারের মতো দূর্বলতম দলকে উপনিবেশগুলোয় দীর্ঘতম পথ পাড়ি দিতে হবে। ইংল্যান্ডের প্রথিতযশা বোলার শয়ের স্বভাববিরুদ্ধ বোলিংও এরজন্য দায়ী। ইউলিট, এমেট ও হিলের ন্যায় সেরা ফাস্ট বোলার থাকলেও আমরা সকলেই বলতে পারি হয় তাঁরা তাঁদের সেরা অবস্থানে নেই অথবা ব্রিটিশ বোলিংয়ের ধার কমে গেছে।’ তবে অল্প কিছুদিন পরই নিউ সাউথ ওয়েলস একাদশের বিপক্ষে ইউলিট দর্শনীয় ৯৪ রান তোলেন। ঐ খেলায় তার দল জয় পায়।

ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করার বিরল সুযোগ পান। ঐ সফরে এমসিজিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। জেমস সাউদার্টনের বলে বিলি মিডউইন্টারের দর্শনীয় ক্যাচ নেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে তেমন সফলতা পাননি। ন্যাট টমসনের বলে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে জন সেলবি’র সাথে উইকেটে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় কাটান। কিন্তু টম কেন্ডলের বলে ৩৯ রান নিয়ে তিনি আউট হলে ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যূহও নড়বড়ে হয়ে উঠে। ঐ খেলায় ইংল্যান্ড ৪৫ রানে হেরে যায়। বল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৩৯ পান। প্রথম ইনিংসে ১৬৫ রান সংগ্রহকারী চার্লস ব্যানারম্যান মাত্র নয় বল মোকাবেলা করে তার প্রথম শিকারে পরিণত হন।

জর্জ ইউলিট

মেলবোর্নের দ্বিতীয় খেলায় ইউলিট সত্যিকারের ব্যাটসম্যানরূপে হাজির হন তিনি। ৫২ ও ৬৩ রান তুলে ইংল্যান্ডকে চার উইকেটের জয় দেখান। ২ এপ্রিল, ১৮৭৭ তারিখে ঐ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৭২/৪ অবস্থায় এ গ্রীনউডের সাথে যোগ দেন। ঐ সময়ে তার এ সংগ্রহটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল। এরপর থেকেই তিনি ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে নিয়মিত খেলতেন। ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পাশাপাশি দর্শনীয় ফিল্ডিংও করতেন তিনি।

তার দীর্ঘ খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বমোট ২৫ টেস্টে অংশ নেন। উদ্বোধনী টেস্ট থেকে শুরু করে বেশ বিরতি দিয়ে টেস্টগুলো অনুষ্ঠিত হতো। ১৮৮১-৮২ মৌসুমে মেলবোর্নে তিনি তার একমাত্র শতক হাঁকান। ড্র হওয়া ঐ টেস্টে তিনি ১৪৯ রান তোলেন।

১৮৮৪ সালে লর্ডসের দ্বিতীয় ইনিংসে তৎকালীন সময়ে ৪ বলের সমন্বয়ে গড়া ওভারের খেলায় তার বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৩৯.১-২৩-৩৬-৭। এরফলে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৬০/১ থেকে ১৪৫-এ গুড়িয়ে যায়। খেলায় ইংল্যান্ড দল ইনিংসের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল।

অবসর

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে ইউলিটের বিদায় বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। ১৮৯০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে সংগৃহীত ১৭৩-এর মধ্যে তার সংগ্রহ ছিল ৭৪। ২০/৪ থাকাবস্থায় মরিস রিডকে সাথে নিয়ে মূল্যবান ৭২ রানের জুটি গড়েন। তাস্বত্ত্বেও তিন সপ্তাহ পর ওভাল টেস্টে অংশগ্রহণের প্রাক্কালে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেয়নি। ব্রাডফোর্ডে মিডলসেক্সের বিপক্ষে তাকে খেলাতে বাধ্য করালেও তিনি মাত্র ১১ রান তোলেন ও কোন বোলিং করেননি।

আরও কয়েক বছর পর ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেললেও তার বোলিংয়ের ধার ক্রমশঃই কমতে থাকে ও ১৮৯১ সালের পর কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। তার শেষ ১৮ শতক আসে মিডলসেক্সের বিপক্ষে। তবে, আগস্ট, ১৮৯৩ সালে ব্রামল লেনে প্রথম-শ্রেণীর শেষ খেলায় তার বিদায় সুখকর ছিল না। তিনি মাত্র নয় রান তোলেন।

দেহাবসান

খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর তার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি হতে থাকে। পাঁচ বছর পর ৪৬ বছর বয়সে পিটসমুরে তার দেহাবসান ঘটে শেফিল্ডে ইয়র্কশায়ারের খেলায় উপস্থিত থাকাকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি।[৩] শবানুষ্ঠানে চার সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতি তার জনপ্রিয়তার কথা জানান দেয়।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন