জাফরানের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

জাফরান হল একধরনের মশলা যা জাফরান ফুলের শুষ্ক গর্ভমুন্ড থেকে পাওয়া যায়। আনুমানিক ৩৫০০ বছর ধরে মানুষ জাফরান চাষ ও ব্যবহার করে আসছে,[১][২] যা ঔষধ, রং, সুগন্ধি ও মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মিনোয়ান ফ্রেস্কোছবিটিতে লাল ফুলের গুচ্ছগুলি জাফরান, যা দুই নারী সংগ্রহ করছে। ছবিটি এজিয়ান দ্বীপ সান্টোরিনির আক্রোতিরি খননের সময়ে পাওয়া যায়।

জাফরান ক্রোকাস একরকমের নির্বীজ ট্রাইপ্লোয়ড। বিশেষ ধরনের নীতিভ্রষ্ট মিয়োসিস দ্বারা এর বংশবৃদ্ধি ঘটে।

ব্যুৎপত্তি

ইংরেজিতে 'স্যাফরন'শব্দটির ব্যুৎপত্তি খানিকটা জাফরান ফুলের মতোই - সহজে নির্ধারণ করা যায় না। লাতিন শব্দ স্যাফরানাম ও দ্বাদশ শতাবদীর ফরাসী শব্দ সাফরান-এর থেকে শব্দটি এসে থাকতে পারে। ফরাসী শব্দটি এসেছে আরবি زَعْفَرَان (‍‍জ়াফারান) ও আক্কাদীয় আজ়ুপিরানু থেকে। লাতিন ক্কাস শব্দটির উৎপত্তি সেমিটিক ভাষা থেকে।[৩] আরমীয় কুরকেমা, আরবি কুরকুম ও গ্রীক ক্রোকোস - এই সব শব্দগুলিই "হলুদ রং" বা "হলদে" বোঝায়।[৪][৫] সংস্কৃত কুমকুমম্-এর সঙ্গে হয়তো কোনওক্রমে সেমিটিক শব্দটির সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে।[৩]

মিনোয়ান ও গ্রেকো-রোমান

pp=48–49}}[৬]

জাফরানের প্রথম চিত্রটি পাওয়া যায় প্রাক্-গ্রীক সংস্কৃতির ব্রোঞ্জ যুগের। ক্রীটের নোসোস প্রাসাদে পাওয়া জাফরান চাষের চিত্রে দেখা যায় মেয়েরা ও বাঁদররা জাফরান তুলছে। এজিয়ান দ্বীপ সান্টোরিনির আক্রোতিরি খননের সময়ে "জ়েস্ট-৩" ভবনে পাওয়া যায় ফ্রেস্কোচিত্রের নিদর্শন - গ্রীকরা একে "থেরে[৭]" বলত।[৮] এই চিত্রগুলি সম্ভবত খ্রীষ্টপূর্ব ষোড়শ বা সপ্তাদশ শতাব্দীর। চিত্রগুলিতে এক মিনোয়ান দেবীকে দেখা যায় যিনি ঔষধ তৈরী করার জন্য জাফরান ফুল তুলছেন ও গর্ভমুন্ড পরিষ্কার করছেন। এইস্থানের আরেকটি ফ্রেস্কোচিত্রে জাফরান দিয়ে নিজের রক্তাক্ত পায়ের শুশ্রূষা করতে দেখা যায় এক নারীকে। এই ফ্রেস্কোগুলিই প্রথম যেখানে জাফরানের ওষধিগুণের উদ্ভিদ্বিদ্যাসম্মত যথার্থ দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে। তবে জাফরান চাষীদের এই মিনোয়ান উপনিবেশটি খ্রীষ্টপূর্ব ১৬৪৫-১৫০০-এর মধ্যে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ধ্বংস হয় যায়।

আদি গ্রীকদের উপকথায় শোনা যায় বহু দুঃসাহসী নাবিক সুদূর সিলিসিয়া অঞ্চলে পাড়ি দিয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান জাফরান আমদানি করার জন্য।[৯] হেলেনীয় রূপকথার ক্রোকাস ও স্মাইলাক্সের কাহিনী সবচেয়ে জনপ্রিয়। জলপরী স্মাইলাক্সকে ভালো লাগে সুদর্শন যুবক ক্রোকাসের। পরীকে সে যতই কাছে পেতে চায় না কেন, স্মাইলাক্স ধরা দেয় না। অ্যাথেন্সের নিকটবর্তী অরণ্যে তার প্রেমের সারল্যে অভিভূত হয় স্মাইলাক্স।

ক্রোকাস স্যাটিভাস.

আদি গ্রীকদের উপকথায় শোনা যায় বহু দুঃসাহসী নাবিক সুদূর সিলিসিয়া অঞ্চলে পাড়ি দিয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান জাফরান আমদানি করার জন্য। হেলেনীয় রূপকথার ক্রোকাস ও স্মাইলাক্সের কাহিনী সবচেয়ে জনপ্রিয়। জলপরী স্মাইলাক্সকে ভালো লাগে সুদর্শন যুবক ক্রোকাসের। পরীকে সে যতই কাছে পেতে চায় না কেন, স্মাইলাক্স ধরা দেয় না। অ্যাথেন্সের নিকটবর্তী অরণ্যে তার প্রেমের সারল্যে অভিভূত হয় স্মাইলাক্স। তবে ক্রোকাসের ভালোবাসা ফিরিয়ে না দিতে সে ক্রোকাসকে একটি গেরুয়া রঙের ফুলে পরিণত করে দেয়। গেরুয়া রং হল অনন্ত ও অস্বীকৃত প্রেমের প্রতীক :

ক্রোকাস ও স্মাইলাক্স পুষ্পে পরিণত হয়,
ঘন বর্ষণে কিউরেটিস জন্মায়
এমন কয়েকশো রূপকথা পার হই আমি,
এই চিত্তের মাধুর্যে যদি খুশি হও তুমি।

— ওভিড, মেটামর্ফোসেস্.।

টলেমি পরবর্তী যুগে, মিশরে ক্লিওপেট্রা জাফরান মিশ্রিত উত্তপ্ত জলে স্নান করেন। প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করতেন জাফরান। মিশরীয় চিকিৎসাবিদরা অন্ত্রের অসুখ ও রক্তস্রাবের চিকিৎসা করতেন।

প্রাচীন গ্রীক ও রোমানরা মূলত সুগন্ধি হিসেবে জাফরান ব্যবহার করতেন। যখন নেরো এসেছিলেন রোমে, সমৃদ্ধশালী রোমানরা রোজ জাফরান মিশ্রিত জলে স্নান করতেন ও দেবতার কাছে অর্পণ করতেন; মাস্কারা, সুরা ও সাজসজ্জাতেও তারা জাফরান ব্যবহার করতেন। দক্ষিণ রোমান সাম্রাজ্যের গলদেশে ২৭১ খ্রীষ্টাব্দের ইতালি আক্রমণের আগে অবধি জাফরান চাষ করা হয়েছিল। অন্যান্য তত্ত্ব থেকে জানা যায় যে অষ্টম শতকের মুর্সের সাথে ফ্রান্সে বা চতুর্দশ শতকে আভিগ্নন পাপাসির সাথে জাফরান আসে।

মধ্য-এশীয় ও পারস্য

সাফরানবোলু, তুরস্ক।

৫০,০০০ বছর আগেকার প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রে জাফরান-রঙে রঙিন পশুদের ছবি পাওয়া গেছে বর্তমান ইরাকে, পারস্য সাম্রাজ্যের উত্তরপূর্বে। সুমেরীয়রা তাদের ওষুধ ও জাদুবিদ্যায় জাফরান ব্যবহার করে। তারা জাফরান চাষ করত না। বন্য ফুলের থেকে জাফরান সংগ্রহ করত তারা আর বিশ্বাস করত দৈবমহিমাই জাফরানের ওষধিগুনের কারণ। খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে ক্রীটের মিনোয়ান রাজদরবারের সংস্কারের পূর্বেও দূর-দূরান্তে জাফরানের রপ্তানি করা হত। তিন হাজার বছর আগেকার ইহুদিদের তনখে কেশর বা জাফরানকে একটি সুগন্ধি মশলা বলা হয়েছে :

তোমার ওষ্ঠে মৌচাকের মতো মধু ঝরে, হে প্রিয়, জিহ্বাতলে ভাসে মিষ্টত্বের দুগ্ধ, আর লেবাননের সুবাস আছে তোমার বস্ত্রে। গাল যেন তোমার ডালিম ফলের বাগানের মতো, যেই বাগানে দুর্লভ ফল, ওষধি বৃক্ষ আর জাফরান, মিষ্ট ইক্ষু আর দারুচিনি পাওয়া যায়।

— সোলোমনের গীতিমালা (সংস্ অফ সোলোমন).।

সুদূর অতীতের পারস্যে, খ্রীষ্টপূর্ব দশম শতকে, জাফরান (ক্রোকাস স্যাটিভাস 'হস্ক্নেচি', Crocus sativus 'Hausknechtii') চাষ করা হত দের্বেনা আর ইস্ফাহান অঞ্চলে। এখানে পাওয়া পারস্য কার্পেট ও শেষকৃত্যের কাপড় বুননে জাফরান সুতো ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। দেবতাদের পূজায় অর্পিত হওয়া ছাড়াও জাফরান তার অসাধারণ হলুদ রং, সুগন্ধ ও ওষধিগুনের জন্য ব্যবহার করা হয়। মানসিক অবসাদ দূরীকরণের জন্য জাফরান মেশানো হয় চা'য়ে। এমনকী, ভিনদেশী পর্যটকরা জাফরানের সুতোকে মাদক ভেবে ভুল করত। এই কারণে তারা জাফরান মিশ্রিত পারস্য খাদ্যও গ্রহণ করত না। চন্দনের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে তা স্নানের জলেও ব্যবহার করা হত। এশীয় মহাদেশে যুদ্ধে এসে সম্রাট আলেকজান্ডার ও তার সৈন্যবাহিনী বহুল পরিমাণে জাফরান ব্যবহার করেন। জাফরান মিশ্রিত চা ও ভাত ছাড়াও, সাইরাস দ্য গ্রেট-কে অনুসরণ করে আলেকজান্ডার স্বয়ং কেশর ছড়ানো জলে স্নান করতেন। সাইরাসের মতোই তিনিও জাফরানের ওষধিগুনে বিশ্বাসী ছিলেন। ম্যাসিডোনিয়ায় ফিরে যাওয়ার পরেও গ্রীকরা এই স্নানের রীতি বজায় রেখেছিল।

পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া

গোমতেশ্বরের বুদ্ধ মূর্তিকে প্রতি বারো বছর অন্তর মহামস্তকাভিষেকের সময়ে জাফরান সিক্ত জলে স্নান করানো হয়

পারসি নথিপত্র অনুযায়ী, অন্যান্য মশলার মতো জাফরানও পারস্য দেশ থেকে ভারতবর্ষে আমদানি করা হয়েছিল। পারস্য সাম্রাজ্যে নতুন উদ্যান ও পার্কে জাফরান গাছের ফলনের পরিচর্যা করাতে শুরু করেন এইস্থানের সম্রাটরা। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ফিনিসীয়রা নতুন কাশ্মিরী জাফরানের ব্যবসা শুরু করে বেশ লাভবান হয়। প্রধানত, রঙের কাজে ব্যবহৃত হয় জাফরান।

আরেকদিকে, কাশ্মীরি লোককথা অনুযায়ী, দুই সুফি সন্ত - খাজা মসুদ ওয়ালি ও হজরত শেখ শরিফুদ্দিন একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে কাশ্মীরে এসে জাফরান চাষ ও ব্যবহার প্রচলিত করেছিলেন। দুই ভিনদেশী ব্যক্তিই অসুস্থ হয়ে পড়ে এক উপজাতির নেতার কাছ থেকে জাফরানের বদলে ঔষধ গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করেন। বর্তমানে শরৎকালে জাফরান চাষের মরশুমে এই দুই সন্তের উদ্দেশ্যে পূজার্চনা করা হয়। ভারতের জাফরান-ব্যবসায়ী পাম্পোর গ্রামে তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি সোনালী স্তম্ভ নির্মিত আছে। তবে কাশ্মীরি কবি ও শিক্ষাবিদ মহম্মদ ইউসুফ তেং এই উৎস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, প্রায় দু'হাজার বছর ধরে জাফরানের ফসল ফলিয়ে আসছে কাশ্মীরিরা। হিন্দুধর্ম মতে, শ্রী কৃষ্ণ জাফরানের গেরুয়া তিলক কাটতেন কপালে।

আদি চাইনিজ় বৌদ্ধধর্মে মূল-সর্বাষ্টিবাদীন্ মনাস্টিক স্তর (বা বিনয়) ভারতে জাফরানের আগমনের আরেক কাহিনী প্রদান করে। খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এক ভারতীয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মধ্যন্তিকা (বা মজ্ঝন্তিকা) কাশ্মীরে যাত্রা করেন। তিনিই কাশ্মীরি জাফরানের প্রথম শস্যদানাটি বপন করেন ও সেখান থেকেই ভারত উপমহাদেশে জাফরান বিস্তার লাভ করে। খাদ্যে ব্যবহার ছাড়াও, জলে সিক্ত জাফরান গর্ভমুন্ড ব্যবহৃত হয় কাপড়ে সোনালী রং করার জন্য।

কয়েকজন ইতিহাসবিদদের মতে, মঙ্গোল আক্রমণকারীরা পারস্যদেশ হয়ে চিনদেশে জাফরান নিয়ে আসে। খ্রীষ্টপূর্ব ষোড়শ শতকে সম্রাট শেন-উং -এর পৃষ্ঠপোষকতায় "বেঙ্কাও গাঙ্মু" ("অসাধারণ ভেষজ")-এ জাফরানের ওষধিগুনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে খ্রীষ্টপূর্ব আনুমানিক তৃতীয় শতাব্দীতে চাইনিজ়রাই জাফরানের কাশ্মীরি উৎস স্বীকার করে। চাইনিজ় চিকিৎসাবিদ ওয়ান জ়েন লিখেছেন, "জাফরানের মূল উৎসস্থল হল কাশ্মীর - বুদ্ধদেবের পূজারীতির জন্য সেখানে এটি ফলানো হয়।" এছাড়াও তখন জাফরান কীভাবে ব্যবহার করা হত, তাও বলেছেন ওয়াং : "জাফরান ক্রোকাস ফুলটি কিছুদিনের মধ্যে শুষ্ক হয়ে কুঞ্চিত হয়ে যায় ও তারপর, এর থেকে কেশর পাওয়া যায়। এর সমান হলুদ রঙের জন্য কেশরের খুব কদর আছে। সুরার গন্ধেও জাফরান ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও গ্রেট ব্রিটেনের উদ্যোগে আফগানিস্তানে আবার জাফরান চাষ চালু হয়েছে। হতদরিদ্র ও কপর্দকশূন্য আফগান চাষীদের তারা লোভনীয় পোস্ত চাষের বদলে জাফরান ফলাতে উৎসাহিত করে।

পোস্ট-ক্ল্যাসিকাল ইউরোপ

মধ্যযুগের ইউরোপের কিছু পুঁথি, যেমন ত্রয়োদশ শতকের ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ থমাস বেকেটের হত্যা - এখানে জাফরানের রং দিয়ে হলুদ ও কমলা আভা আনা হয়েছে।

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে জাফরান চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কয়েক শতাব্দী ইউরোপে কেশর খুবই বিরল ছিল। তবে মুরীয় সভ্যতা বিস্তারের সাথে সাথে তা পুনরুজ্জীবিত হয় স্পেনে।

চতুর্দশ শতক ফ্রান্সের রাজার রাঁধুনি দ্বারা রচিত "লা ভিয়েন্দে দ টেইলেভেন্ত"-এ খাদ্যে জাফরানের ব্যবহার বর্ণিত আছে। পঞ্চদশ শতকে জাফরান চাষের অপর কর ধার্য কারা হয়।

১৩৪৭-১৩৫০-র প্লেগ মহামারীর "ব্ল্যাক ডেথ"-এ সারা ইউরোপ ছেয়ে যায়। এর সঙ্গে ভেষজগুনসম্পন্ন জাফরানের মূল্যও হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। অভিজাত বংশের ইউরোপীয়রা জাফরান বেআইনিভাবে নিয়ে নেয়, "জাফরান যুদ্ধ" চলে চোদ্দো সপ্তাহ ধরে। বাসেল শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া সেই জাফরান (যার বর্ত্মান মূল্য হবে প্রায় ৫০০,০০০ ডলার) ফিরিয়ে দেওয়া হলেও সমুদ্রপথে জলদস্যুদের উৎপাত চলতেই থাকে। তা বন্ধ করার জন্য বাসেল শহরবাসীরাই জফরান চাষ করতে শুরু করে ও কড়া পাহারার ব্যবস্থা রাখে। তবে দশ বছরের মধ্যে জাফরানের দামের পতন হলে চাষের হারও কমে যায় ও বাসেল এই ফসল পরিত্যাগ করে।

এরপর ইংল্যান্ডে জাফরানের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে ন্যুরেম্বার্গ। ভেনিসের ব্যাবসায়ীরাই ভূমধ্যসাগরের জলপথ নিয়ন্ত্রণ করে - সিসিলি, ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ক্রীট, গ্রীস ও ওটোমান সাম্রাজ্য়ের থেকে আসা জাফরান পাচারও করে দেয় তারা।

সপ্তদশ - অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্সে জাফরানের চাষ খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ততদিনে জাফরান চাষ নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে - আলবিজিয়স, আঙ্গুময়স, গাস্কোনি, গাতিনাইস, নর্মান্ডি, পেরিগর্ড, পয়তো, প্রোভেন্স ও কোয়ের্সি। দেশব্যাপী ছত্রাকের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় এই ফসল।

উত্তর এসেক্সের যথাযথ পরিমাণ জল-বায়ু সম্পন্ন মাটিতে জাফরান চাষ চলতে থাকে। এসেক্সের শহর স্যাফরন ওয়ালডেনের নামকরণ করা হয় সেখানকার জাফরান চাষ থেকেই। তবে মধ্যযুগবর্তী ইংল্যান্ডের সনাতন মনোভাব ও অন্যান্য দেশের দখলদারী বজায় রাখতে গিয়ে চাষের ক্খতি হয়। সনাতনধর্মীরা তেল-মশলাহীন খাদ্য গ্রহণ করতে শুরু করেন। এদিকে জাফরান ক্খেতমজুরদের পারিশ্রমিক বেড়ে যায় ও প্রাচ্য থেকে আমদানি করা স্বল্প-মূল্যের অতুলনীয় মশলা জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে।

জাফরানের এই উত্থান-পতনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন ম্যাঞ্চেস্টারের যাজক, রেভারেন্ড উইলিয়াম হার্বার্ট। জাফরানের বদলে আলু চাষ করতে আরম্ভ করে ইউরোপ। ধনী ব্যক্তিরা, যাঁরা ছিলেন জাফরান চাষের পৃষ্ঠপোষক, তারা এরপর চকোলেট, কফি, চা, ভ্যানিলা নিয়ে মেতে ওঠেন। তবু দক্ষিণ ফ্রান্স, ইতালি বা স্পেনে জাফরান চাষ চলতে থাকে।

উত্তর আমেরিকান

জাফরান ক্রোকাসের মাঠ.

নয়া বিশ্বে জাফরানের আবির্ভাব ঘটে আলাসাতিয়ান, জার্মান ও সুইস অ্যানাব্যাপ্টিস্ট ও ডানকার্ডের হাত ধরে, যারা ধর্মীয় নিগ্রহের কারণে ইউরোপ মহাদেশ থেকে পালিয়ে ছিল। উত্তর আমেরিকা মহাদেশে তারা বসবাস শুরু করে পূর্ব পেন্সিলভানিয়ার সাস্কুয়াহানা নদীর উপত্যকায়ে যেখানে শস্যকণা ট্রাঙ্কে করে নিয়ে আসার পরে ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তারা ব্যাপক ভাবে জাফরান চাষের কাজ শুরু করে দেয়। এদের বলা হত পেন্সিলভানিয়া ডাচ। জার্মান প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ শোয়েঙ্ক্ফেল্ডারের অনুগতদের কাছ থেকে ট্রাঙ্কটি নিয়ে আসা হয়। শোয়েঙ্ক্ফেল্ডারদের মধ্যে জাফরান খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে ও জার্মানিতে এর চাষ করতেন তারা। পেন্সিলভানিয়ার ডাচ জাফরানের রপ্তানি করে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের স্প্যানীয় ঔপনিবেশিকরা। ফিলাডেল্ফিয়া পণ্যদ্রব্য বিনিময়ে এর দাম নির্ধারিত হয় সোনার দামের সমান।

তবে ১৮১২-র যুদ্ধে আমেরিকান জাফরান ব্যাবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। পড়ে থাকে কেবল অতিরিক্ত জাফরান তবে ক্যারিবিয়ার সাথে ব্যাবসার পুনরুত্থান ঘটেনি। তা সত্ত্বেও পেন্সিলভানিয়ার ডাচ উৎপাদনকারীরা নিজেদের রান্নায় জাফরান ব্যবহার করতে শুরু করেন - কেক, নুডলস্, চিকেন ও ট্রাউটে। ল্যান্সেস্টার কাউন্টি ও পেন্সিলভানিয়ায় এখনো জাফরান চাষ করা হয়।

তথ্যসূত্র

উৎস

বই

প্রবন্ধ

বিবিধ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন