টমাস হার্ভে
টমাস হার্ভে (১০ অক্টোবর ১৯১২ - ৫ এপ্রিল ২০০৭) একজন আমেরিকান প্যাথলজিস্ট ছিলেন যিনি ১৯৫৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের ময়নাতদন্ত পরিচালনা করেছিলেন। হার্ভে পরবর্তীতে কয়েক দশক ধরে আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিস্ক বিনা অনুমতিতে রেখে দেন।
টমাস হার্ভে | |
---|---|
জন্ম | ১০ অক্টোবর, ১৯১২ |
মৃত্যু | ৫ এপ্রিল, ২০০৭ (বয়স ৯৪) টিটাসভিল, নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
জাতীয়তা | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
পরিচিতির কারণ | আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ময়নাতদন্ত এবং সংরক্ষণ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রোগবিজ্ঞান |
প্রারম্ভিক কর্মজীবন
হার্ভে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং পরে ডাক্তার হ্যারি জিমারম্যানের অধীনে একজন মেডিকেল ছাত্র হিসেবে অধ্যয়ন করেন। মেডিকেল বিদ্যাপীঠের তৃতীয় বর্ষে পড়েন তখন তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন এবং পরের ১ বছর স্যানিটোরিয়ামে শয্যাশায়ী ছিলেন। তিনি দাবি করেন যে এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় হতাশাগুলির একটি।[১]
আলবার্ট আইনস্টাইনের ময়নাতদন্ত
১৮ এপ্রিল সকাল ৮:০০ টায় প্রিন্সটন হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন ছিল ১,২৩০ গ্রাম। ডাঃ হার্ভে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ল্যাবে সংরক্ষিত মস্তিষ্ককে ১৭০ টুকরোয় [২] ভাগ করেন। এটি সম্পূর্ণ করতে তিন মাস সময় লেগেছিল। সেই ১৭০টি টুকরোকে তারপর মাইক্রোস্কোপিক স্লাইভারে কাটা হয়েছিল এবং স্লাইডগুলিতে মাউন্ট করা হয়েছিল এবং দাগ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি সেটে শত শত স্লাইড করে মোট ১২ টি সেট তৈরি করা হয়েছিল। হার্ভে তার নিজের গবেষণার জন্য দুটি সম্পূর্ণ সেট ধরে রেখেছিলেন এবং বাকিগুলি সেই সময়ের নেতৃস্থানীয় প্যাথলজিস্টদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। মস্তিষ্কটি আইনস্টাইন বা তার পরিবারের দ্বারা অপসারণ এবং সংরক্ষণের জন্য কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরিবার যখন এই গবেষণা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল তখন গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যতক্ষণ না ফলাফলগুলি শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং চাঞ্চল্যকর না হয়। [৩]
আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরি
১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে নিউ জার্সির মাসিক রিপোর্টার স্টিভেন লেভি একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। যেটির নাম ছিল "আই ফাউন্ড আইনস্টাইন'স ব্রেইন"। স্টিফেন লেভি যখন হার্ভের সাথে উইচিটা, কানসাসে কাজ করছিলেন তখন তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এটি লেখেন। ১৯৮৮ সালে হার্ভে অবসর নেন এবং লরেন্স, কানসাসে চলে যান। ১৯৯৬ সালে হার্ভে ওয়েস্টন, মিসৌরি থেকে নিউ জার্সির মার্সার কাউন্টির হোপওয়েল টাউনশিপের টিটাসভিলে চলে আসেন। [৪] ১৯৯৪ ডকুমেন্টারি রিলিক্স: আইনস্টাইন্স ব্রেইনে কিনকি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুগিমোটো কেনজি হার্ভেকে মস্তিষ্কের একটি অংশ চেয়েছিলেন। যার জন্য হার্ভে সম্মতি দেন এবং মস্তিষ্কের স্টেমের একটি অংশ কেটে দেন। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে হার্ভে বিভক্ত করে একটি অংশ সুগিমোটোর হাতে তুলে দিচ্ছেন। [৫] ১৯৯৮ সালে হার্ভে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অবশিষ্ট কাটা অংশটি প্রিন্সটনের ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের প্যাথলজিস্ট এলিয়ট ক্রাউসের কাছে পৌঁছে দেন। মারিয়ান ডায়মন্ড এবং সহযোগীরা আবিষ্কার করেছেন যে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কিছু অংশে অন্যান্য পুরুষ মস্তিষ্কের তুলনায় গ্লিয়াল কোষের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। [৬]
২০০৫ সালে আইনস্টাইনের মৃত্যুর ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৯২ বছর বয়সী হার্ভে নিউ জার্সিতে তার বাড়ি থেকে মস্তিষ্কের ইতিহাস সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। [৭]
মৃত্যু
হার্ভে প্রিন্সটনের ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে ৫ এপ্রিল ২০০৭ সালে স্ট্রোকের জটিলতায় মারা যান। [৮]
মৃত্যুর পরবর্তী পর্ব
২০১০ সালে হার্ভের উত্তরাধিকারীরা আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অবশিষ্টাংশসহ অনেক কিছু ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন-এ স্থানান্তরিত করে। যার মধ্যে ছিল সমগ্র মস্তিষ্কের (যা এখন টুকরো টুকরো) ১৪টি ফটোগ্রাফ আগে কখনও জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হয়নি।[৯][১০]
সাংস্কৃতিক উল্লেখ
হার্ভের আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরির গল্প এবং এর পরবর্তী গবেষণা সায়েন্স চ্যানেল শো ডার্ক ম্যাটারস: টুইস্টেড বাট ট্রু এর একটি পর্বে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। এটি একটি ধারাবাহিক যা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্ধকার দিকটি অন্বেষণ করে। এটি ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছিল। প্রোগ্রাম সেগমেন্ট "দ্যা সিক্রেট অব আইনস্টাইন্স ব্রেইন" ৪ জুন, ২০১৬ সালে হিস্ট্রি চ্যানেলে পুনঃপ্রচারিত হয়।