পেলহাম ওয়ার্নার

ইংরেজ ক্রিকেটার

স্যার পেলহাম ফ্রান্সিস ওয়ার্নার, এমবিই (ইংরেজি: Pelham Warner; জন্ম: ২ অক্টোবর, ১৮৭৩ - মৃত্যু: ৩০ জানুয়ারি, ১৯৬৩) ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক ছিলেন। তবে, ইংরেজ ক্রিকেটাঙ্গনে ‘দ্য গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান’ ও ‘প্লাম’ ডাকনামে পরিচিত প্লাম ওয়ার্নার নামেই অধিক পরিচিতি পেয়েছেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ডানহাতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত পেলহাম ওয়ার্নার ডানহাতে স্লো বোলিংয়েও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।

স্যার পেলহাম ওয়ার্নার
সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ সালে ভ্যানিটি ফেয়ারে স্পাই (লেসলি ওয়ার্ড) অঙ্কিত প্লামের প্রতিকৃতি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
পেলহাম ফ্রান্সিস ওয়ার্নার
জন্ম(১৮৭৩-১০-০২)২ অক্টোবর ১৮৭৩
পোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদ
মৃত্যু৩০ জানুয়ারি ১৯৬৩(1963-01-30) (বয়স ৮৯)
পশ্চিম লাভিংটন, সাসেক্স, ইংল্যান্ড
ডাকনামপ্লাম
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি স্লো
ভূমিকাব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
সম্পর্কসিডব্লিউপি ওয়ার্নার (ভ্রাতা), অচার ওয়ার্নার (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১১৮)
১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২৬ জুন ১৯১২ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৯৪-১৯২০মিডলসেক্স
১৮৯৪-৯৬অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতাটেস্টএফসি
ম্যাচ সংখ্যা১৫৫২১
রানের সংখ্যা৬২২২৯,০২৮
ব্যাটিং গড়২৩.৯২৩৬.২৮
১০০/৫০১/৩৬০/১৪৯
সর্বোচ্চ রান১৩২*২৪৪
বল করেছে১,১৩২
উইকেট১৫
বোলিং গড়৪২.৪০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং২/২৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং৩/–১৮৩/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন

ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে ওয়ার্নার জন্মগ্রহণ করেন। মা ‘রোজা কাদিজ’ স্পেনীয় বংশোদ্ভূত ও বাবা ইংরেজ উপনিবেশবাদী পরিবার থেকে এসেছেন।[১] বার্বাডোসের হারিসন কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর ইংল্যান্ডের রাগবি স্কুল ও অক্সফোর্ডের অরিয়েল কলেজে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটান। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মিডলসেক্স ও ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।

১৮৯৭ সালে তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড দল আমেরিকা সফরে যায়।[২]

খেলোয়াড়ী জীবন

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বমোট ১৫ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে ১০টিতেই দলের অধিনায়কত্ব করেন। ৪ জয়ের বিপরীতে ৬ টেস্টে পরাজয়বরণ করে তার দল।

১৯০৩-০৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজে জয়ের পাশাপাশি অ্যাশেজ সিরিজ অক্ষুণ্ণ রাখতে সমর্থ হয় ইংল্যান্ড দল। ঐ তুলনায় ১৯০৫-০৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকায় অধিনায়ক হিসেবে কম সফলতা পান। ঐ সিরিজে ১-৪ ব্যবধানে পরাজিত হয় ও প্রথমবারের মতো টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পরাজয়বরণ করে ইংল্যান্ড দল। ১৯০৫-০৬ মৌসুমের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনে ইংরেজ দলকে নেতৃত্বদানের প্রস্তাবনা পেলেও জ্যাক ম্যাসন তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। এরফলে, পেলহাম ওয়ার্নার ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করেছিলেন।[৩]

এছাড়াও ১৯১১-১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে অসুস্থতার কবলে পড়েন। সিরিজের কোন টেস্টেই অংশ নিতে পারেননি তিনি। ফলশ্রুতিতে জনি ডগলাসকে দল পরিচালনায় অগ্রসর হতে হয়।

অবসর

১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬ সালে স্পেশাল কনস্টেবল হিসেবে ছিলেন।[৪] ১৯২৬-২৭ মৌসুমের প্রথম-শ্রেণীর খেলা শুরুর পূর্ব-পর্যন্ত অন্য কোন খেলায় অংশ নেননি। আর্জেন্টিনা সফরে এমসিসি দলের নেতৃত্ব দেন। চারটি খেলায় স্বাগতিক দল প্রথম-শ্রেণীর খেলা হিসেবে মর্যাদা পায়। এমসিসি ২-১ ব্যবধানে জয় পায় ও একটিতে ড্র করে। ১৯২৯ সালে এমসিসি বনাম রয়্যাল নেভির মধ্যকার আরও একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

সম্মাননা

পেলহাম ওয়ার্নার

১৯০৪ ও ১৯২১ সালে তিনি দুইবার উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন।[৫] তিনজন খেলোয়াড়ের একজনরূপে একাকী এ সম্মাননা পান। বাদ-বাকি দুইজন হচ্ছেন - ১৮৯৬ সালে ডব্লিউ. জি. গ্রেস এবং ১৯২৬ সালে জ্যাক হবস। ১৯২০ সালের ইংরেজ মৌসুম শেষে কাউন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর দ্বিতীয় পুরস্কারটি পেয়েছিলেন। ঐ মৌসুমে মিডলসেক্সের অধিনায়ক হিসেবে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভ করেছিল তার দল।

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর সফরকারী দলের ম্যানেজারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অস্ট্রেলিয়া সফরে কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজে তার সম্পৃক্ততা। ১৯৩০-এর দশকে ইংল্যান্ডের টেস্ট নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে ক্রিকেট খেলায় অসামান্য অবদান রাখার প্রেক্ষিতে নাইট পদবীতে ভূষিত হন।

ব্যক্তিগত জীবন

পেলহাম ওয়ার্নার ব্যাপকভাবে ক্রিকেট বিষয়ে লিখে গেছেন। অংশগ্রহণকৃত অ্যাশেজ সিরিজের টেস্টে ও লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ‘দ্য ক্রিকেটার’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯২১ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত মর্নিং পোস্টের সংবাদদাতা ছিলেন। এরপর দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে এ দায়িত্ব পালন করেন।

১৯০৪ সালের গ্রীষ্মকালে আগ্নেস নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন তিনি। তাদের সংসারে এসমন্ড ও জন নামের দুই পুত্র এবং এলিজাবেথ নাম্নী এক কন্যা ছিল। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও পৌরাণিকী উপাখ্যান রচয়িতা ম্যারিনা ওয়ার্নার সম্পর্কে তার নাতনী।[১][৬]

তার ভাই অচার ওয়ার্নার ১৮৯৬-৯৭ মৌসুমে প্রথম সম্মিলিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়করূপে এ. এ. প্রিস্টলি একাদশ, লর্ড হকের সফরকারী দলের বিপক্ষে খেলেন। এতে পেলহাম ওয়ার্নারও খেলেছেন। এছাড়াও ১৯০০ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের সদস্যরূপে খেলেন অচার।[১]

৩০ জানুয়ারি ১৯৬৩ তারিখে পশ্চিম সাসেক্সের পশ্চিম লেভিংটন এলাকায় ৮৯ বছর বয়সে পেলহাম ওয়ার্নারের দেহাবসান ঘটে।

বিতর্ক

গুজব ছড়ায় যে, প্রথিতযশা ইংরেজ ক্রিকেটার গাবি অ্যালেনের প্রকৃত বাবা ছিলেন তিনি। অ্যালেনের দলীয় সঙ্গী বব ওয়াট ১৯৩০-এর দশকে গুজব ছড়ান যে, ওয়ার্নার তার প্রকৃত বাবা। ক্রিকেট ঐতিহাসিক ডেভিড ফ্রিদ মনে করেন যে, ১৯৮০-এর দশকে একই ধরনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু, ঐ গুজবগুলো প্রমাণের অভাবে বাতিল হয়ে যায়। ফ্রিদের ধারণা, অ্যালেনের শত্রুরা তাকে অপদস্থ করতেই তা করেছিল। তবে, অ্যালেনের খেলোয়াড়ী জীবনে বেশ কয়েকবার কাছে থেকে ওয়ার্নার সহায়তা করেছিলেন। ডেভিড ফ্রিদ বিশ্বাস করেন যে, তিনি ওয়াল্টার অ্যালেনের তুলনায় ওয়ার্নারকেই অধিক পছন্দ করতেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, ১৯০০-এর দশকের শুরুতে ওয়ার্নার পার্ল অ্যালেনের পাণিপ্রার্থী ছিলেন। ঠিক ঐ সময়েই তিনি সংক্ষিপ্তকালের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছিলেন। ফ্রিদের অভিমত, জেরাল্ড হাউয়েট কর্তৃক রচিত ওয়ার্নারের জীবনীমূলক গ্রন্থে ওয়ার্নারের স্ত্রী পার্লের বিষয়ে ঈর্ষাকাতর ছিলেন। ওয়ার্নার অ্যালেনকে ‘তাঁদের পরিবারের একজন সদস্যরূপে’ গণ্য করতেন। এছাড়াও হাউয়েট অ্যালেনকে ‘ওয়ার্নারের প্রিয়পুত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[৭][৮]

পেলহাম ওয়ার্নারের মতে, বল নিক্ষেপ বিতর্কে আর্থার মোল্ডকে সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক পন্থায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।[৯]

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

গ্রন্থপঞ্জী

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
আর্চি ম্যাকলারেন
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯০৩-০৪
উত্তরসূরী
স্ট্যানলি জ্যাকসন
পূর্বসূরী
স্ট্যানলি জ্যাকসন
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯০৫-০৬
উত্তরসূরী
টিপ ফস্টার
পূর্বসূরী
গ্রিগর ম্যাকগ্রিগর
মিডলসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯০৮-১৯২০
উত্তরসূরী
ফ্রাঙ্ক মান
🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন