ধারাবাহিক খুনি

এমন ব্যক্তি যিনি এক মাসের বেশি সময়ে তিন বা ততোধিক খুন করেছেন
(পেশাদার খুনি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

একজন ধারাবাহিক খুনি হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি তিন বা ততোধিক মানুষ হত্যা করেছেন।[১] সাধারণত অস্বাভাবিক মানসিক তৃপ্তি লাভের জন্য। হত্যাগুলো করা হয় একমাসের চেয়ে বেশি সময় ধরে এবং দুটো খুনের মধ্যবর্তী সময় বেশ দীর্ঘ হয়।[১][২] কোথাও কোথাও কর্তৃপক্ষ হত্যার সংখ্যা দুই বা চার হিসেবে ধরেন।[৩]

১৮২৯ সালের অঙ্কিত ছবি যেখানে ব্রিটিশ ধারাবাহিক খুনি উইলিয়াম বার্ক মারগারি ক্যামবেলকে হত্যা করছেন

পেশাদার খুনের কারন হিসেবে মানসিক তৃপ্তি লাভের বিষয়টি জড়িত এবং বেশির ভাগ খুনেই হত্যার শিকার ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের নজির পাওয়া যায়।[৪] কিন্তু এফবিআই উল্লেখ্য করে যে খুনের পেছনে রাগ, উত্তেজনার উৎস খোঁজা, আর্থিক লাভ, এবং মনোযোগ আর্কষনও জড়িত।[৫] হত্যাগুলো বা হত্যাচেষ্টাগুলো প্রায় একই ধাচেঁ করা হয়। হত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তিগুলোর সবারই কোন না কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেটা হতে পারে জায়গা, বেশভুষা, লিঙ্গ অথবা জাতি[৬]

যদিও একজন ধারাবাহিক খুনি গনহত্যাকারী, ঝোকের বশে হত্যাকারী অথবা চুক্তিভিত্তিক হত্যাকারীদের থেকে একটা আলাদা বিশেষ শ্রেনীতে পড়ে তবুও তাদের মধ্যকার আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরের সাথে জড়িত। এক্ষেত্রে বির্তক রয়েছে এদের আদৌ কোন আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে কিনা বিশেষত ঝোকের বশে হত্যাকারী এবং ক্রম হত্যাকারীর মধ্যে।[৭]

ইতিহাস

অবহেলার শত্রু: জ্যাক দ্য রিপারকে হোয়াইটচ্যাপেলকে ভুতুড়ে ভূত এবং সামাজিক অবহেলার মূর্তরূপ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল, যা পাঞ্চ ম্যাগাজিনের 1888 সংস্করণে ব্যঙ্গচিত্রিত হয়েছিল।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে ইতিহাসের পাতায় পাতায় ধারাবাহিক খুনিদের দেখতে পাওয়া যায়[৮] কেউ কেউ উয়ারউল্ফ এবং ভ্যামপায়ারের মত কল্প কাহিনীর পেছনে মধ্যযুগীয় ক্রমিক খুনিরা জড়িত বলে মনে করেন।[৯] আফ্রিকায় সিংহ এবং লেপার্ড-মানুষ নামে ধারাবাহিক খুনের চিত্র দেখা যায়।[১০]

হান রাজা জিংয়ের রাজত্বকালের ষষ্ঠ বছরে জিংয়ের এর ভাইয়ের ছেলে লিউ পেঙলিকে জিডং এর যুবরাজ করা হয় (১৪৪ বিসি)। সিমা কিয়ানের মতে (চায়নার ইতিহাসবিদ) "লিউ পেঙলি হত্যা বা অন্যের জিনিসপত্র কেড়ে নেবার উদ্দেশ্যে অভিযানে বের হত। তখন তার সাথে থাকত ২০ বা ৩০ জন দাস অথবা আইনের হাত থেকে পলাতক অপরাধী। এদের নিয়ে লিউ লোকজনের কাছ থেকে জিনিসপত্র কেড়ে নেয়া পূর্বক খুন করত এবং তা সে করত শুধুমাত্র আনন্দ লাভের জন্য". যদিও অনেকেই এই খুনগুলো সম্পর্কে জানত তবুও রাজত্বের ২৯ বছরে কোন এক হত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তির ছেলে অভিযোগ দায়েরের আগে পর্যন্ত এটা সম্পর্কে জিং জানত না। তারপর জানা যায় যে লিউ প্রায় ১০০ জন লোককে এভাবে হত্যা করেছে। বিচারিক সভা লিউকে শাস্তিসরূপ হত্যার বিষয়ে মত দেয় তবে জিং তা মানতে পারেন নি। তিনি লিউ পেঙলির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে সাধারণ নাগরিক করেন তারপর লিউর আর খোজ পাওয়া যায় নি।[১১]

১৫শ শতকে গিলেস ডি রেইস নামক একজন বিত্তবান লোক, যিনি জোয়ান অব আর্কের সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি গরিব শিশুদের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধরে তার প্রাসাদে নিয়ে আসতেন। এদের মধ্যে বিশেষত ছেলে শিশুদের যৌন লাঞ্ছনা করতেন এবং পরে হত্যা করতেন।[১২] ধারণা করা হয় তার হাতে প্রায় ১৪০ থেকে ৮০০ জন শিশু হত হয়।[১৩] হাঙ্গেরিয়ান অভিজাত শ্রেণীর এলিজাবেথ বেথোরি যিনি ট্রানসিলভ্যানিয়ার সবচেয়ে বিত্তবান পরিবারের একটিতে জন্মেছিলেন তিনি প্রায় ৬৫০ জনের মত মেয়ে ও যুবতীদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার করেছিলেন। পরে তাকে ১৬১০ সনে গ্রেপতার করা হয়।[১৪]

১৭৪০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে ভারতে থাগি সম্প্রদায়ের সদস্যরা দশ লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছিল।[১৫] থাগ বেহরাম প্রায় ৯৩১ জনকে হত্যা করেন।[১৬]

মনোবিদ রিচার্ড ভন ক্রাফট-ইবিং তার ১৮৮৬ সালের প্রকাশিত বই সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সয়ালিস এ একটি কেস উল্লেখ্য করেন যেখানে ১৮৭০ দশকে একজন ফ্রেঞ্চম্যান (যার নাম ইউসিবাস পিয়েডেগনেল) তার রক্ত সম্পর্কিত যৌন আকাঙ্খার কথা উল্লেখ করে ৬টি খুনের কথা স্বীকার করেন।[১৭]

জ্যাক দ্যা রিপার, যাকে আধুনিক ধারাবাহিক খুনি হিসেবে ধরা হয়[১৮] তিনি লন্ডনে ১৮৮৮তে কমপক্ষে ৫জন মহিলাকে খুন করেন এবং ধারণা করা হয় খুনের পরিমান আরো বেশি। মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্বারা কৃত সবচেয়ে বেশি তদন্ত হওয়া এবং অভিযান চালানো হয় তার বিরুদ্ধে। ঐ সময়ে আধুনিক অপরাধ বিজ্ঞানে অপরাধ শনাক্ত করার বিভিন্ন পদ্ধতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। বড় আকারের পুলিশের দল ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাত, ফরেনসিক জিনিসপত্র যোগাড় ও বিশ্লেষনের মাধ্যমে আসামি চিহ্নিত করা এবং ধৃত করা হত।[১৯] পুলিশ সার্জন থমাস বন্ড চারিত্রিক প্রোফাইল তৈরীর প্রচলন করেন।[২০]

বিশ শতকের নথিবদ্ধ করা বেশিরভাগ ধারাবাহিক খুনিরা আমেরিকান।[২১][২২]

বৈশিষ্ট্য

ক্রমিক খুনি অটিস টুলের মাগ শট যিনি নরখাদক এবং ন্যাক্রোফিলে ছিলেন

ক্রমিক খুনি'র সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, সেগুলো নিন্মরূপ:

  • তাদের সবার মধ্যেই মানসিক অসুস্থতা বা বিকারগ্রস্থতা দেখা যায়, যা তাদের হত্যা করতে উদ্ভুদ্ধ করে।[২৩]
    • উদাহরণ সরূপ, যারা এরূপ অসুস্থতার স্বীকার তারা কিছু সময়ের জন্য বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে আর সেই সময় তারা নিজেদেরকে অন্য একজন ব্যক্তি ভাবতে শুরু করে। অন্যক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বলছে, তাদের উপর অন্য কোন সত্ত্বা ভর করেছিল।[২৪]
    • বিকারগ্রস্থ মানসিক আচরণ করে এমন ক্রমিক খুনিদের মধ্যে সাধারণ কিছু আচরণ ধরা পড়ে যেমন তারা নতুন নতুন উত্তেজনার খোজ করে, তাদের খুনের বা অপরাধের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা থাকে না, হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে না এবং তাদের মধ্যে শিকার করার মানসিকতা দেখা যায়।[২৫] এরূপ বিকারগ্রস্থদের দেখতে সাধারণ মানুষের মতই মনে হয় এবং সাধারণত তাদের আকর্ষনীয়, দারুন ব্যক্তিত্ব রয়েছে এমন মনে হয়। মনোবিদ হার্ভে ক্লাকলে এই অবস্থাকে "মাস্ক অব স্যানিটি" বা "ভাল মানুষের মুখোশ" বলে উল্লেখ্য করেন।[২৬]
  • তারা হয়ত জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে নিকট আত্মীয় বা অন্য কারো দ্বারা অত্যাচারের স্বীকার হন সেটা হতে পারে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে অথবা যৌন বিচারে।[৬]
  • ক্রমিক খুনিরা কোন বস্তুর প্রতি শারীরিক আর্কষন বোধ করেন, যেন সেই বস্তু সামগ্রী যার, তার সাথে ক্রমিক খুনি মিলন করছেন বা যৌন কার্য করছেন এমন মনে করেন। যেটা প্যারাফিলিয়ার অর্ন্তগত ফেটিস (শরীরের বিশেষ কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে বা সেই অঙ্গে পরিহিত কাপড় নিয়ে কল্পনা করে যৌন উত্তেজনা হওয়া), পার্সিয়ালিজম (শরীরের কোন অংশকে বিভিন্নভাবে কল্পনা করে যৌন উত্তেজনা বোধ করা) এবং নেক্রোফিলিয়ার (শরীরের ঢেকে রাখা অংশগুলোকে এবং যৌনাঙ্গের প্রতি তীব্র আর্কষন) মত আচরণকে ইঙ্গিত করে। [২৭]
  • শিশু অবস্থায় তারা ব্যঙ্গাত্মক, অপমানজনক আচরণ পেত সবার কাছ থেকে অথবা সামাজিকভাবে মিশত না।[৬] উদাহরণসরূপ, হেনরি লি লুকাস শিশুকালে এমন আচরণ পেয়েছিলেন এবং বড় হবার পর ঘৃনার কারনে সবাই তাকে এড়িয়ে চলত। কেনেথ বিয়ানচি শিশুকালে বিছানায় প্রস্রাব করতেন বলে সবাই তাকে খেপাত এবং কৈশোরপ্রাপ্ত হবার পর সবাই তাকে অবজ্ঞা ও এড়িয়ে চলত।[৬]
  • কেউ কেউ আবার ছোটখাট অপরাধে জড়িত ছিল যেমন জালিয়াতি, চুরি, ভাঙচুরের মত আরো অনেক অপরাধ।[২৮]
  • প্রায়শই তাদের এক জীবিকা নির্বাহ করতে দেখা যায় না এবং তারা ভৃত্যের মত কাজগুলো করতে পছন্দ করে। অবশ্য এফবিআইয়ের মতে "ক্রমিক খুনিরা সাধারণ মানুষের মতই জীবনযাপন করে। তাদের পরিবার আছে, জীবিকা আছে।"[২৫] অন্যান্যদের মতে তাদের পরিবারগুলো সাধারণত অস্থায়ী হয়।[৬]
  • গবেষনায় দেখা গেছে ক্রমিক খুনিদের আইকিউ মাঝামাঝি পর্যায়ের বা তার কম হয়। যদিও তাদেরকে উচ্চ মানের আইকিউধারী বলে মনে হয়।[৬][২৫][২৯] ২০২ জন ক্রমিক খুনির উপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে তাদের গড় মিডিয়ান হল ৮৯।[৩০]

উপর্যুক্ত সকল বৈশিষ্ট্য ছাড়াও কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যা অন্য কোন ধাচে ফেলা যায় না। যেমন হেরল্ড শিপম্যান যিনি জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করতেন এবং ছিলেন সাফল্য অর্জনকারী পেশাদার লোক। তাকে স্থানীয় সমাজে একজন স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি এমনকি শিশুদের হাঁপানি হাসপাতালের কারনে পুরস্কারে ভূষিত করা হয় এবং এ বিষয়ে তার একটি ইন্টারভিউ নেয়া হয় গ্রানাডা টেলিভিশন কর্তৃক প্রচারিত ওয়াল্ড ইন একশন অনুষ্ঠানে।[৩১] ডেনিশ নিলসেন যিনি ছিলেন প্রাক্তন সেনা সদস্য পরে সিভিল সার্ভেন্ট এবং ব্যানিজ্য সমিতির বিশিষ্ট লোক হিসেবে বিবেচিত হন। উপরে বর্নিত কোন বৈশিষ্ট্যই তার মধ্যে দেখা যায় না বা প্রকাশ পায় নি এবং তার কোন পূর্ব অপরাধের রেকর্ডও নেই।[৩২] ভ্লাদো টানেস্কি ছিলেন একজন অপরাধ সংবাদিক। তাকে গ্রেফতার করা হয় তার রিপোর্টে প্রকাশিত অতি পুঙ্খানুপুঙ্খ হত্যার বর্ণনা থেকে। যা থেকে পরে তিনিই যে আসল অপরাধী তা বের হয়ে আসে।[৩৩] রাসেল উইলিয়ামস ছিলেন রয়াল কানাডিয়ান এয়ারফোর্সের সম্মানিত কর্নেল যিনি দুজন মহিলাকে হত্যা করেন সেই সাথে তাদের ধর্ষন ও জিনিসপত্র চুরি করেন।[৩৪]

বিকাশ

১৯২৪ সালে পুলিশের হাতে ধৃত জার্মান ক্রমিক খুনি ফ্রিটস হারমান

অনেক ক্রমিক খুনিরাই শিশুকালে একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল[৩৫] হিকি'স ট্রমা কন্ট্রোল মডেল ব্যাখ্যা করে কীভাবে শিশুকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ছাপ ফেলে। শিশুর বাবা-মা'র আচরণ বা সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বড় ধরনের প্রভাবক হিসেবে শিশুর মানসিক আচরণ নির্ধারণ করে দেয় যে সে খুনি হয়ে উঠবে কিনা।[৩৬]

শিশুর বিকাশের জন্য পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটির দ্বারাই শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে।[৩৭] "ক্রমিক খুনিরা অন্য ব্যক্তির মতই প্ররোচিত হয় যা হতে পারে বাব-মার থেকে, যৌন সঙ্গীর থেকে বা অন্য কোন ব্যক্তির থেকে।[৩৮] সামাজিক সম্পর্ক তৈরি (তা হোক পরিবার বা বন্ধুবান্ধব) নির্ভর করে গ্রহনযোগ্যতার উপর। পরিবারের কাছে বা বাবা-মা'র কাছে এই গ্রহণযোগ্যতাই নির্ধারণ করে কীভাবে একটি শিশু পরবর্তীতে সমাজকে কি দৃষ্টিতে দেখবে।[৩৯]

উইলসন এবং সীম্যান ১৯৯০ সালে একটি গবেষণা চালান ক্রমিক খুনিদের উপর এবং তারা কি কারনে খুনিরা উদ্ভুদ্ধ হয় তা প্রকাশ করেন।[৪০] তারা দেখেন যে ক্রমিক খুনিরা প্রায় সকলেই ছোট বেলায় পরিবেশগত সমস্যার শিকার ছিলেন যেমন ডিভোর্সের কারনে সংসার ভেঙ্গে যাওয়া, শিশুর কাছে কোন অভিভাবক না থাকা যিনি শিশুকে নিয়মানুবর্তীতা শেখাবেন ইত্যাদি। প্রায় অর্ধেকের বেশি ক্রমিক খুনিরা শারীরিক ও যৌন হেনস্তার শিকার হয় এবং মানসিক অবজ্ঞার শিকার হয়।[৩৯]

যখন কোন অভিভাবক নেশাগ্রস্থ সমস্যায় থাকেন তখন শিশুর প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এই মনোযোগ না থাকার কারনে শিশু কম আত্ম-কর্মস্পৃহায় ভুগতে থাকে যার ফলে তারা নিজেদের চারপাশে কল্পনার একটি জগত তৈরি করে যেখানে তারাই রাজা। হিকি'স ট্রমা কন্ট্রোল মডেলও এই কথা সমর্থন করে। মডেলটি ব্যাখ্যা দেয় যে কীভাবে অভিভাবকের অমনোযোগীতা শিশুর আচরণকে প্রভাবিত করে বিশেষত যখন অভিভাবকরা উদ্ধত, অত্যাচারিত এবং হিংসাত্মক আচরণ করে।[৪১] এর ফলে শিশুর সম্পর্ক তৈরিতে অসুবিধা দেখা দেয় যেটা পরে খুন করার মত আচরণকে উদ্ভুদ্ধ করে। কিন্তু যদি শিশুটি অন্য কোনভাবে কারো সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে পারে এবং গ্রহনযোগ্যতা পায় তবে সে ঐ সমস্যা কাটিয়ে উঠে। যদি একটি শিশু কারো কাছ থেকেই কোন সহযোগীতা না পায়, তবে কোনভাবেই তারা মনে দাগ কেটে যাওয়া আচরণ বা ঘটনাগুলো ভুলতে পারে না। ই ই ম্যাকোবি বলেন "সামাজিকতার জন্য পরিবার হল সবচেয়ে বড় আধার"[৪২]

ক্রোমজোমের ত্রুটি

ক্রোমজোমজনিত ত্রুটি কি ক্রমিক খুনি হবার কারন হতে পারে এমন ধারণা থেকে বেশ কিছু গবেষণা করা হয়।[৪৩] দুজন ক্রমিক খুনি ববি জো লং এবং রিচার্ড স্পেক হলেন এমন ব্যক্তি যাদের ক্রোমজোমজনিত ত্রুটি ছিল। ববির একটি অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম ছিল[৪৪] স্পেকের ওয়াই ক্রোমজোমটি ছিল অতিরিক্ত সঠিকতা নিরূপনে দুটি টেস্ট করা হয় দুটি কারিওটাইপেই তার ফলাফল একই আসে।[৪৫] এক্সএক্সওয়াই কারিওটাইপকে সহিংসতা, খুনের সাথে সম্পর্কিত করার কারন থাকলেও গবেষনায় দেখা গেছে এদের মধ্য খুব অল্প বা কোন সম্পর্কই নেই। বাড়তি ওয়াই ক্রোমোজম এবং ক্রমিক খুনের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।[৪৬]

কল্পনা

যে সকল শিশু তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কোন ব্যাখ্যা বা সংশোধনের কোন উপায় খুজে পায় না বরং এটি নিয়ে মানসিক কষ্টে থাকে তারা এই কষ্ট থেকে বাচতে এক সময় তাদের কল্পনার জগত তৈরী করে নেয়। কল্পনার জগতটিই তখন তাদের কাছে বাস্তব হয়ে উঠে যেখানে তারা সব কিছুর কর্তৃত্ব করে। এক সময়ে তা তাদের বেচে থাকার অংশ হয়ে যায়। এই কাল্পনিক জগতে তাদের মানসিক বিকাশ নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। গ্যারিসনের মতে ১৯৯৬ "শিশুর ভাল মন্দ বোঝার ধারণা এবং অপরের প্রতি সহমর্মিতা রুদ্ধ হয়ে শিশুটি একটি সোসিওপ্যাথে পরিণত হয় কারণ তার মানসিক এবং সামাজিক বিকাশ হয় তার মনের অভ্যন্তরে। কোন ব্যক্তি তার নিজের মনে ভুল করতে পারে না এবং অন্যের বেদনা, দুঃখ তার মনে প্রভাব ফেলে না কারণ কল্পনার জগতটি তার নিজের মানসিক তৃপ্তির জন্যই তৈরী করা। বাস্তব এবং কল্পনার দেয়াল হারিয়ে যায় এবং কল্পনাই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় চলে আসে। সেখানে যৌন বিজয় সম্ভব, সংঘাত সম্ভব হয় যা এক সময় খুনের মত ঘটনা ঘটায়। কল্পনাপ্রবণতা হল আলাদা হয়ে যাবার প্রথম পদক্ষেপ যেটি স্টেফেন জিনানগেলোর মতে "যা ক্রমিক খুনিকে চেতনার জগত থেকে আলাদা করে ফেলে এবং তাকে ভাল হচ্ছে এই মনোভাব জাগায়"[৪৭]

প্রকারভেদ

১৯৭৮ সালে পুলিশ হেফজতে থাকা টেড বান্ডি, ফ্লোরিডা, আমেরিকা।

এফবিআইয়ের অপরাধ শ্রেণীকরণের গাইড অনুসারে ক্রমিক খুনিদের তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় - সুসংহত, অগোছালো এবং দুটোর সমন্বয়ে মিশ্র শ্রেণীর।[৪৮][৪৯] কিছু অপরাধী প্রথমে সুসংহত পদ্ধতিতে খুন করলেও ধীরে ধীরে তা অগোছালো হতে থাকে[৫০]। অগোছালো পদ্ধতিতে যাবার কারন হিসেবে বলা যায় অপরাধ করে পালানোর পর ধরতে না পারায় তার মধ্যে কাজ করা অতিরিক্ত মাত্রায় আত্মবিশ্বাস কিংবা মানসিক ক্ষয় কিংবা দুটোই।

সুসংহত ধাঁচের খুনিরা তাদের খুনের পদ্ধতি বিশ্লেষন করে সাজায় সাধারণত অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া, এক জায়গায় খুন করে অন্য কোন স্থানে ফেলে দেওয়া। তারা প্রায়শই তাদের শিকারকে সহানুভূতির সুযোগে কাছে টেনে আনে। অন্যরা আবার বিশেষ কাউকে লক্ষ্যে রেখে খুন করে সেটা হতে পারে বিশেষ শ্রেণীর, পেশার মানুষ যেমন পতিতাবৃত্তিতে জড়িত নারী। এরা অপরাধ স্থলে তাদের ছাপ কম রাখে (ফরেনসিক তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি জ্ঞান রাখে যেমন খুনের পর লাশ ভারী কিছু সহকারে নদীতে তলিয়ে দেওয়া। তারা টিভি, রেডিওর মাধ্যমে তাদের অপরাধের খবর রাখে এবং প্রায়শই খুনের ব্যাপারে গর্ব অনুভব করে।[৫১]

প্রায়শই সুসংহত শ্রেণীর খুনিদের মধ্যে সামাজিক এবং আন্তসম্পর্কীয় গুনাবলী বিদ্যমান থাকে যার ফলে তার ব্যক্তিগত ও রোমান্টিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব এবং ভালবাসার মানুষ বেছে নেয়া সেই সাথে সামাজিকতা, বিয়ে এমকি সন্তানাদি নিয়েও থাকতে পারে। ক্রমিক খুনিদের মধ্যে এই শ্রেণীর খুনিদের তার কাছের লোকেরা শান্ত, দয়ালু এবং কাউকে আঘাত দিতে পারে না এমন বৈশিষ্ট্যের বলে জেনে থাকে। টেড বান্ডি এবং জন ওয়েন গ্যাসি হল সুসংহত শ্রেণীর ক্রমিক খুনির উদাহরণ।[৫১] সাধারণত এই শ্রেণীর খুনিদের আইকিউ স্বাভাবিক হয় গড়ে প্রায় ৯৮.৭।[৫২]

অগোছালো শ্রেণীর ক্রমিক খুনিরা প্রায়শই ঝোকপ্রবণ হয়, প্রায়ই তাদের খুনের হাতিয়ার বিভিন্ন রকমের হয় যা খুনের স্থানে পাওয়া যায়। তারা লাশ লুকানোর কোন চেষ্টা করে না। তাদের অন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হল জীবিকার জন্য কাজ না করা, একাকী থাকা অথবা দুটোই, কারো কারো কিছু বন্ধু থাকতে পারে। তাদের মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস রয়েছে এবং তাদের কর্ম পদ্ধতি বা পদ্ধতি না মানাটাকে অন্যভাবে প্রকাশ করা হয় যেমন অতিমাত্রায় সহিংসতা দেখানো কোন কোন সময় নেক্রোফিলিয়া ও যৌন সহিংসতা করা।[৫৩] সুসংহত খুনিদের তুলনায় অগোছালো খুনিদের আইকিউ কম হয় গড়ে ৮৯.৪।

মিশ্র শ্রেণীর ক্রমিক খুনিদের গড় আইকিউ হল ১০০.৯ অবশ্য এরূপ গড় অল্প কিছু স্যাম্পলের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে মাত্র।[৫২]

পেশাদার চিকিৎসক

প্যাথোলজিতে আগ্রহ আছে এমন কিছু ব্যক্তি মেডিকেল পেশায় আগ্রহী হয় কারন জীবন ও মৃত্যুর ক্ষমতা তার হাতে থাকবে এই চিন্তা থেকে তারা মেডিকেল পেশা বা এর সাথে জড়িত পেশাগুলোতে জড়িয়ে পড়ে।[৫৪] এ সমস্ত খুনিদেরকে "মৃত্যু দূত" বা "দয়ার দূত" হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়।[৫৫] মেডিকেল পেশাদাররা তাদের রোগীকে টাকার জন্য খুন করে সেই সাথে জড়িত থাকে ধর্ষকাম আনন্দ এবং অন্ধবিশ্বাস যে তারা রোগীর কষ্ট "লোপ" করছে অথবা সাধারণভাবে তারা "মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে" সে দৃষ্টিকোন থেকে।[৫৬] এই ধাঁচের খুনিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাম শোনা যায় ব্রিটিশ চিকিৎসক হেরল্ড শিপম্যানের। এরকম আরেকজন খুনি ছিলেন নার্স জেন টোপান, যিনি খুনের বিচারে স্বীকার করেন যে তিনি মৃত্যু থেকে যৌন উত্তেজনা/কামভাব জেগে ওঠার আনন্দ লাভ করতেন। [৫৭] তিনি মিশ্র ঔষধ প্রয়োগ করতেন তারপর রোগীর সাথে শুয়ে থাকতেন আর তাদের জড়িয়ে ধরতেন মৃত্যু না হওয়া অবধি।[৫৭]

আরেকজন এরূপ ক্রমিক খুনি হলেন জিনিনি জোনস। ধারণা করা হয় বেক্সার কাউন্টি মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে (সান এন্টোনিও, টেক্সাস, আমেরিকা) কর্মরত অবস্থায় তিনি ১১-৪৬ জন বাচ্চা মেরে ফেলেন। [৫৮] চেলসি মেকক্লিলানকে হত্যার দায়ে এবং রোনাল্ডো সান্টোসকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বর্তমানে সে ৯৯ বছরের জেল খাটছেন।[৫৮] ২০১৭ সালে টেক্সাসের জেলখানা অতিরিক্ত কয়েদির আইনে তিনি পেরোলের জন্য নির্বাচিত হন।[৫৮] ১৯৯১ সনে ব্রিটেনেও এধরনের একটি কেস দেখা যায় যেখানে নার্স বিভার্লি এলিট চারটি বাচ্চাকে মেরে ফেলে আরো তিনটি বাচ্চাকে হত্যার চেষ্টা করে এবং দুই মাসের মধ্যে আরো ছয় জনকে জখম করে।

একবিংশ শতাব্দির উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কানাডিয়ান নার্স এলিজাবেথ ওয়েটলফারের নাম যিনি তার কর্মক্ষেত্র নার্সিং হোমের বৃদ্ধদের খুন করেন।

কিশোর

কিশোর ক্রমিক খুনি কম পাওয়া যায়। কিশোর ক্রমিক খুনিদের তিন ভাগে ভাগ করা যায় - প্রাথমিক, পরিপক্ক এবং মাধ্যমিক স্তরের। এই তিন শ্রেণীর সাদৃশ্য, পার্থক্য, তুলনা প্রভৃতি বের করার জন্য গবেষণা হয়েছে।[৫৯] যদিও এরূপ ক্রমিক খুনিদের কম দেখা যায়, কিন্তু প্রায়শই দেখা যায় যারা ক্রমিক খুনি তাদের কৈশোরেও এধরনে খুনের নজির রয়েছে। আর তাদের উপর গবেষণা চালিয়ে জানার সুযোগ রয়েছে কেন তার এরূপ আচরণ করে। যদিও কম তবুও ফাসিতে চড়ানো হয়েছে এমন কিশোর অপরাধী ও ক্রমিক খুনি হল হার্ভি মিগুয়েল রবিনসন।[৬০]

অপরাধের প্রেরণা

মনোরোগ রিপোর্ট অনুসারে জুকা লিডলম (একজন ক্রমিক শ্বাসরোধকারী) তার কৈশোরকালীন আদিম উত্তেজনাপূর্ন ও সংঘর্ষপূর্ন সময়কে উপভোগ করতেন[৬১]

ক্রমিক খুনিদেরকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়: কল্পনাপ্রবণ, লক্ষ্য-ভিত্তিক, উত্তেজনাবাদী এবং ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীক। যদিও খুনির প্রেরণা হিসেবে শ্রেণীগুলোর বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ দেখা যায়।[৬২]

কল্পনাপ্রবণ

কল্পনাপ্রবণ ক্রমিক খুনিরা বাস্তবতাকে গুলিয়ে ফেলেন।[৬৩] কোন কোন সময় তারা বিশ্বাস করেন তিনি অন্য কোন ব্যক্তি বা সত্ত্বা অথবা তারা কোন শক্তিশালী সত্ত্বা যেমন ঈশ্বর বা শয়তান তাদের উপর ভর করেছে এমন দাবি করে।[৬৪] খুব সাধারণ দুটি উপদল আছে এমন আচরনের পেছনে একটি ঈশ্বর বাধ্য অন্যটি শয়তান বাধ্য দল।[২৪]

হার্বাট মুলিন বিশ্বাস করতেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান সেনাদের মৃত্যু ক্যালিফোর্নিয়াকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে। মুলিন দাবি করেন তার পিতা তাকে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে বলেছেন যে "প্রকৃতির কাছে যেন মানুষের বলিদান বাড়ানো হয়" তাহলে ক্যালিফোর্নয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাগরে পরিণত হবে না।[৬৫] ডেভিড বার্কউইটজও (সন অব স্যাম) কল্পনাপ্রবণ খুনির একটি উদাহরণ। তিনি দাবি করেন তার প্রতিবেশির কুকুরের মাধ্যমে শয়তান তাকে বার্তা পাঠাত খুন কীভাবে করতে হবে তা সম্পর্কে।[৬৬] মনোবিদ ডেভিড আব্রাহামসেন বলেন যে বারকোউইটজ পরে এই দাবিগুলিকে ফাঁকা বুলি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।[৬৭]

লক্ষ্য-ভিত্তিক

লক্ষ্য নির্দিষ্ট খুনিরা তাদের খুনের পেছনে উদ্দেশ্যকে বর্ণনা করেন পৃথিবী থেকে বিশেষ ধরনের মানুষকে শোধন করা। তারা বিশেষ ধরনের বা গোষ্ঠির ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য স্থির করে খুনগুলো করেন। সেই বিশেষ গোষ্ঠি হতে পারে ঘর বিহীন লোক, মাদকসেবী, পতিতা, সাবেক অপরাধী, সমকামী, কোন বিশেষ ধর্ম, বর্ণের লোক বা কোন নির্দিষ্ট জাতির লোক। এরা সেই সব লোক বেছে নেয় যাদের সমাজে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। তবে সাধারণত তারা মানসিক বিকারগ্রস্থ নয়, তারা একাজ কে সমাজ শুদ্ধ করার অংশ হিসেবে দেখে।[৬৮] তারা একে সামাজিক ব্যধি হিসেবে দেখে আর আইন হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে পরিবর্তন করতে চায়।[৬৯]

এরূপ খুনিদের উদাহরণ হল জোসেফ পল ফ্র্যাংকলিন যিনি আমেরিকান সাদা চামড়ার গর্বিত নাগরিক ছিলেন। তিনি বিশেষভাবে আফ্রিকান-আমেরিকান, ইহুদি এবং মিশ্র জাতিদেরকে তার জিগাংসার শিকার করেন, তিনি একে রেস ওয়ার বা জাতিগত যুদ্ধ হিসেবে বনর্ণা করেন।[৭০][৭১]

উত্তেজনাবাদী

এই ধরনের ক্রমিক খুনিরা রোমাঞ্চ এবং আনন্দ লাভ করে খুনের মাধ্যমে। এই উত্তেজনা ও আনন্দ লাভের নেশায় তারা মানুষ খুনকে তার উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম হিসেবে দেখে। এরূপ ক্রমিক খুনির আরো তিনটি উপভাগ বের করেছেন ফরেনসিক মনোবিদরা: "লালসা", "রোমাঞ্চ", এবং "আরাম-আয়েশ".[৭২]

লালসা

পল দুরোসিউ কমপক্ষে সাতজন তরুনীকে ধর্ষন ও খুন করেন

লালসাভিত্তিক ক্রমিক খুনিদের প্রেরণা যোগায় যৌনতা। ভিকটিম মৃত বা জীবিত হোক লালসা চরিতার্থ করতে তারা কল্পনার আশ্রয় নেয় আর খুন করে।[৭৩] তাদের যৌন তৃপ্তি লাভ হয় হত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তির উপর সে কতভাবে কতটুকু নির্যাতন এবং বিকৃত কার্য করেছে তার উপর। এরূপ খুনিদের মানসিক তৃপ্তি লাভের জন্য ভিকটিমের উপর পুরো নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য এবং ক্ষমতার প্রয়োগ জরুরী। তারা ভিকটিমকে দন্ড প্রদানসরূপ যে অত্যাচার, নির্যাতন, ব্যাথা প্রদান এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে খুন করে তার মাধ্যমে তারা মানসিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে।[৭৪] তারা ভিকটিমকে হত্যার জন্য কাছাকাছি যাবার প্রয়োজন হয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করে যেমন হাত, ছুরি। এরূপ খুনিরা তাদের খুনখারাবি চালিয়ে যেতে থাকলে এক সময় খুনের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান কমতে থাকে অথবা উদ্দীপনার মাত্রা বেড়ে যায় কিংবা দুটিই হয়।[৭৫]

কেনেথ বিয়ানচি যিনি হিলসাইড স্ট্রাংগলারদের একজন ছিলেন, তিনি বিভিন্ন বয়সের, জাতির এবং চেহারার মেয়েদের খুন করতেন কারন তার চাহিদা ছিল বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনা এবং বাড়তে থাকা উত্তেজনার আধিক্য।[৭৬] জেফরি ডামার তার কাল্পনিক সঠিক ভালবাসার মানুষ খুজত সুন্দরি, বাধ্য এবং শ্বাশত। তার চাহিদার মাত্রা বেড়ে গেলে সে মাদক, নেশা এবং দুর্বার যৌনতা নিয়ে পরিক্ষা করেন। তার উত্তেজনা উদ্দীপনা মেটাবার জন্য ভিকটিমকে টুকরো করে শুধুমাত্র মাথা এবং গোপনাঙ্গগুলি রেখে দিতেন। তিনি জীবনামৃত ব্যক্তি বানাতেন যাতে ভিকটিম তার নিয়ন্ত্রণে থাকে যেমনটি তিনি কল্পনা করতেন আর এর প্রচেষ্টায় তিনি ভিকটিমের অস্তিতে ড্রিল করে সেখানে এসিড ঢেলে দিতেন।[৭৭]

ডামার একবার বলেছিলেন "হত্যার পেছনে লালসাই ছিল বড় কারণ। নিয়ন্ত্রর এবং লালসা। প্রথম একবার হবার পরে মনে হল এটি আমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। হত্যাটা শুধু এই চাহিদা মেটানোর একটা মাধ্যম মাত্র। সেটা ছিল একেবারে কমের মধ্যে তৃপ্তিদায়ক অংশ। হত্যাকে আমি মোটেই উপভোগ করিনি। সেকারনেই আমি জম্বি বা জীবনামৃত বানানোর চেষ্টা করেছি ড্রিল এবং এসিডের মাধ্যমে"। তিনি আরো বর্ণনা করেন "আমি আসলে দেখতে চেয়েছি আবার মানুষ তৈরি করা যায় কিনা যদিও এটি শুনতে বিশ্রী শোনায় তবুও কিন্তু তাদের আসলে নিজস্ব কোন ইচ্ছা থাকে না ফলে তারা কোন বাধা ছাড়াই আমার কথা শুনবে। এর পরই আমি ড্রিলিং পদ্ধতিটি ব্যবহার শুরু করি।[৭৮] তিনি নরখাদকের পরীক্ষাও করেন যাতে তার ভিকটিমরা তার অংশ হয়ে থাকে সবসময়।[৭৯]

আরও দেখুন

  • ১৯০০ সালের পূর্বের ধারাবাহিক খুনির তালিকা
  • দেশ অনুযায়ী ধারাবাহিক খুনিদের তালিকা
  • List of serial killers by number of victims
  • List of songs about or referencing serial killers
  • Offender profiling
  • পেশাদার অপরাধ
  • Serial rapist
  • Son of Sam law

তথ্যসূত্র

গ্রন্থাগার

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন