ফাযায়েলে আমল

মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি রচিত গ্রন্থ

ফাযায়েলে আমল (উর্দু: فضائل اعمال‎‎, Faz̤ā’il-i a‘māl [কর্মের পুণ্য] আমলের ফজীলত), যার মূল নাম তাবলীগী নিসাব (উর্দু: تبلیغی نصاب‎‎, Tablīg͟hī niṣāb [তাবলীগের পাঠ্যক্রম]), হল একটি ইসলামি সুফি ধর্মীয় গ্রন্থ, যা ভারতীয় মুসলিম সুফি সম্প্রদায়ের দেওবন্দি হাদিস পণ্ডিত মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি কর্তৃক তাবলীগ জামাতের সদস্যদের জন্য[৩] ভাল কাজের উপকারিতার উপর লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে প্রধানতম।[৪][৫] গ্রন্থটি সরল ও সহজবোধ্য উর্দু ভাষায় রচিত, যার অধিকাংশেরই ভিত্তি হল অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প। তাবলীগ জামাত গ্রন্থটিকে তাদের দৈনন্দিন কর্মতালিকায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, এবং তারা প্রতিদিন ফজর ও আসরের নামাজের পর প্রাত্যহিক বৈঠকে গ্রন্থটি পড়ে এবং অপরকে পড়তে উৎসাহিত করে।[৪][৬] এটি বিশ্বব্যাপী বহুল পঠিত বইয়ের মধ্যে অন্যতম।[৫] তাবলীগ জামাত সাধারণত তাদের অনারব সম্প্রদায়সমূহের কাছে বইটি প্রচার করে, যেখানে তাদের আরবিভাষী সম্প্রদায়গুলোকে তারা এর পরিবর্তে ইয়াহিয়া নববী রচিত রিয়াজুস সালিহিন পড়ার পরামর্শ দেয়।[৩][৭]

ফাযায়েলে আমল
তাবলীগী নিসাব
বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকমুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি
মূল শিরোনামفضائل اعمال‎
অনুবাদকমুহাম্মদ ছাখাওয়াত উল্লাহ (বাংলা),
মুফতি মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ (বাংলা),
আবদুর রশিদ এরশাদ (ইংরেজি),
মুফতি আফজল হোসাইন (ইংরেজি)
দেশভারত
ভাষাউর্দু(মূল)
মুক্তির সংখ্যা
১ খন্ড
বিষয়ইসলামী দাওয়াততাবলীগ
ধরনইসলামি, হাদীস, সুফি
পটভূমিদেওবন্দি আন্দোলন, তাবলিগ জামাত
প্রকাশিত১৯২৮ থেকে ১৯৪০ এর মাঝামাঝি[১] অথবা ১৯৫৫ (উর্দু)[২]
২০০১ (বাংলা)
প্রকাশকদারুল কিতাব (বাংলা)
তবলীগী কুতুবখানা (বাংলা)
মিডিয়া ধরন
পৃষ্ঠাসংখ্যা১০১৬
ওয়েবসাইটhttp://fazaileamaal.com

বিষয়বস্তু

গ্রন্থটি রচনার সময় ৬টি অংশে বিভক্ত ছিল। পরবর্তীতে আরেকটি অংশ [৮] যুক্ত করা হয়। যথাঃ

  • ফাযায়েলে তাবলীগ
  • ফাযায়েলে নামাজ
  • ফাযায়েলে কুরআন
  • ফাযায়েলে রমজান
  • ফাযায়েলে জিকির
  • হেকায়েতে সাহাবা
  • পস্তিকা ওয়াহেদ এলাজ[৯]

অনুবাদ

জম জম পাবলিশার্স এর, সংশোধীত ও তথ্যসূত্র সংযোজীত ২০১৫ ইংরেজী সংস্করণ

ইংরেজি

ফাযায়েলে আমলের ইংরেজি ভাষায় একাধিক সংস্করণ বের হয়েছে। ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার “ওয়াটারভাল ইসলামিক ইন্সটিটিউট” থেকে এর ইংরেজি অনুবাদ বের হয়। এর অনুবাদ করেছেন আবদুল রশিদ এরশাদ এবং এর ইংরেজি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান ইংরেজি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এর পাঁচটি সংস্করণ বের হয়। আধুনিক ইংরেজি ভাষায় ২০১৫ সালে জমজম পাবলিকেশন্স থেকে আরেকটি সংস্করণ বের হয়। উক্ত সংস্করণটি অনুবাদ করেন আফজল হোসাইন।[১০]

বাংলা

২০০১ সালের অক্টোবর মাসে দারুল কিতাব থেকে এর বঙ্গানুবাদ বের হয়। এই অনুবাদটি করেন মুফতি মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ। তবলীগী কুতুবখানা থেকে আরেকটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। মুহাম্মদ ছাখাওয়াত উল্লাহ উক্ত অনুবাদ করেন। এই দুটি অনুবাদ হল এর প্রাথমিকতম বাংলা অনুবাদ। পরবর্তীতে এর আরও একাধিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়।[১১][১২] বাংলাদেশের দারুল ফিকর প্রকাশনী থেকে এর একটি "তাহকিক-তাখরিজযুক্ত" বলে দাবিকৃত চলিত বাংলা ভাষায় অনূদিত সংস্করণ ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।[১৩] বাংলাদেশের সালাফি মতাদর্শীগণ উক্ত অনুবাদটিরও সমালোচনা করে তাকে ভূলত্রুটিযুক্ত বলে দাবি করেন।[১৪]

আরবি

২০০০ সালে মাকতাবাতুল ইয়াহিয়া থেকে ফাযায়েলে আমলের একটি আরবি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংস্করণটি ফাযায়েলে আমলের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। এর আরবি নাম দেওয়া হয়েছে “মিনহাজুল হায়াতিল ইমানিয়্যাহ ওয়াত তারবিয়্যাতুল দিনিয়্যাহ ফি দুয়িল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ ইয়ানি মাজমুয়া আর রাসঈল ফিল আমল ওয়াল আখলাখ”। উক্ত অনুবাদটি করেছেন মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির পুত্র মুহাম্মদ তালহা কান্ধলভি এবং তাহকীক করেছেন দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামার মুদাররিস আবদুর রশিদ আন নদভী।[১৫][১৬][১৭] এছাড়াও হিন্দি ও গুজরাটি ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে।[১৮] তুর্কী ভাষায়ও এর একটি অনুবাদ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়, তুর্কী ভাষায় যার নাম "আম্মেলেরিন ফাযিলেতলেরি" (Ammelerin Faziletleri)।

বিভিন্ন সংস্করণে পার্থক্য

কিছু উর্দু সংস্করণে আরও যুক্ত রয়েছে এহতেশামুল হাসান কান্ধালভি রচিত মুসালমানো কি মউজুদাহ পস্তি কা ওয়াহিদ ইলাজ (১৯৩৯) (উর্দু: مسلمانوں کی موجودہ پستی کا واحد علاج‎‎, মুসলিমদের বর্তমান অবক্ষয়ের একমাত্র প্রতিকার)।[৮] ইংরেজি সংস্করণগুলোতে আরও অন্যান্য লেখাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে Six Fundamentals বা ছয় মূলনীতি (আশিক ইলাহির ছে বাতেঁ (উর্দু: چھ باتیں‎‎, ছয়টি মূলকথা) এর অনুবাদ), A Call to Muslims বা মুসলিমদের প্রতি একটি আহ্বান (মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি রচিত ১৯৪৪ সালের একটি বক্তৃতার অনুবাদ), ও Muslim Degeneration and its Only Remedy বা মুসলিমদের বর্তমান অবক্ষয়ের একমাত্র প্রতিকার (এহতেশামুল হাসান কান্ধলভি রচিত মুসালমানো কি মউজুদাহ পস্তি কা ওয়াহিদ ইলাজ এর অনুবাদ)।[৯] ফাজায়েলে আমলের কিছু সংস্করণে জাকারিয়া কান্ধালভি রচিত ফাযায়েলে দুরুদ (১৯৬৫) (فضائل درود شریف, দরূদের উপকারিতা) সংযুক্ত করা হয় নি।

সমালোচনা

অভিযোগ রয়েছে যে বইটি ঐতিহাসিকভাবে সন্দেহজনকঅবিশুদ্ধ ঐতিহ্য (আছার, হাদিসের আরেকটি নাম) ও বাস্তবতানির্ভর শ্রুতিমধুর অনুগল্প।[৪][৬][১৯][১৯][২০][২১] আহলে হাদীস এবং সালাফি সম্প্রদায়গুলি অভিযোগ করে যে, এই ইসলামী বইটিতে অনেক ভিত্তিহীন হাদীসের উল্লেখ রয়েছে এবং তারা বইটি না পড়ার পরামর্শ দেয়। সালাফি আলেম সালিহ আল মুনাজজিদ বলেছেন, "আলেমরা তাবলীগী নিসাব গ্রন্থের বিরুদ্ধে সতর্ক করে চলেছেন, অন্যথায় ফাজায়িল আল-আমাল নামে পরিচিত। এটি কোন মুসলমানের পক্ষে পড়া বৈধ নয়; বরং তাদের ছহীহ সুন্নাহর বইয়ের লেখকদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত, যার লেখকরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আর পথ অনুসরণ করেন। বইগুলিতে যেহেতু কল্পকাহিনী ও মিথ্যা রয়েছে, তাই মুসলিমদের হৃদয়ে বা মনে এই বইগুলোর কোনও স্থান থাকা উচিত না।"[২২]

হামমুদ আত-তুওয়াইজরী লিখেছেন যে, তাবলীগ জামাত "এই বইটির প্রতি অনেক মনোযোগ দেয়, যাকে তারা আহলে সুন্নাহর সহীহাইন ও হাদীসের অন্যান্য বইয়ের সমপর্যায়ে সম্মান করে। তাবলীগ জামাত এই বইটিকে ভারতীয় ও অন্যান্য অনারব গোষ্ঠীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই বানিয়ে নিয়েছে। এতে ব্যাপক পরিমাণে শিরক, উদ্ভাবন (বিদআত), কল্পকাহিনী এবং মনগড়া (মাওজু ') এবং দুর্বল (জঈফ) হাদীস রয়েছে। বাস্তবে এটি একটি মন্দ, পথভ্রষ্টতা এবং বিভ্রান্তির (ফিতনা) বই। "[২৩]

শামস আদ-দ্বীন আল-আফগানী লিখেছেন, "দেওবন্দীদের শীর্ষস্থানীয় ইমামদের হাতে এমন বই রয়েছে, দেওবন্দীরা যে বইগুলোর আরাধনা করে, তবে সেগুলি সমাধি-উপাসক এবং সুফি ব্যক্তিপূজার কল্পকাহিনী দ্বারা পরিপূর্ণ, এবং উদাহরণস্বরূপ তিনি তাবলীগী নিসাবসহ বেশ কয়েকটি বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন, নিসাব আত-তাবলীগ, এবং মানহাজ আত-তাবলীগ। এই দেওবন্দীরা এই বইগুলি প্রকাশ্যে অস্বীকার করেনি বা তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করেনি এবং তারা এই বইগুলোর মুদ্রণ ও বিক্রয়ও বন্ধ করেনি। ভারত ও পাকিস্তান ও অন্যান্য স্থানের বাজার এই বইগুলো দ্বারা পরিপূর্ণ।"[২৪]

আল-মাউসূআআহ-আল-মুয়াসারাহ ফিল-আদায়ান ওয়াল-মাধাহিব ওয়াল-আহযাব আল-মুআসিরাহ-তে বলা হয়েছে যে, "আরব দেশে তাবলীগ জামায়াত তাদের সমাবেশে - রিয়াজুস সালিহীন থেকে পড়াতে মনোনিবেশ করে, তবে অনারব দেশগুলিতে তারা হায়াত আস-সাহাবা এবং তাবলীগী নিসাব (ফাজায়েলে আমল) থেকে পড়ার দিকে মনোনিবেশ করে; শেষোক্ত বইটি কল্পকাহিনী এবং জঈফ (দুর্বল) হাদীস দ্বারা পরিপূর্ণ।"[২৫]

সৌদি আরবে বইটি কট্টরভাবে সমালোচিত এবং তাবলীগ জামাত সেখানে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ[২৬][২৭][২৮] হওয়ার কারণে বইটিও সেখানে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ।[২৯]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী