বাহরাম শাহ
মালিকুল আমজাদ বাহরাম শাহ ১১৮২-১২৩০ (৫৭৮-৬২৭ হিজরি) মধ্যে বালবেকের আইয়ুবীয় আমির ছিলেন ।
বাহরাম শাহ | |
---|---|
মালিকুল আমজাদ | |
বালাবেকের আমির | |
রাজত্ব | ১১৮২-১২৩০ |
পূর্বসূরি | ফররুখ শাহ |
রাজবংশ | আইয়ুবীয় |
পিতা | ফররুখ শাহ |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
রাজত্ব
বাহরাম শাহ তার পিতা ফররুখ শাহের স্থলাভিষিক্ত হন বালাবেকের ক্ষুদ্র আমিরাতের শাসক হিসেবে এবং একজন আইয়ুবীয় শাসকের জন্য অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ রাজত্ব ছিল। ক্রুসেডের সময় বালাবেক ছিল একটি মার্চার ভূমি এবং বাহরাম শাহের প্রধান ভূমিকা ছিল ত্রিপোলি কাউন্টির যেকোনো হুমকির জন্য দ্রুত সামরিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করা।[১] সেইসাথে আলেপ্পোর জেনগিদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর অভিযানকে সমর্থন করা।[২]
আইয়ুবীয়দের জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক জগতে, বর্ধিত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক এবং স্বতন্ত্র আমিরাত এবং অন্যান্য, ছোট রাজ্যগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাহরাম শাহের দীর্ঘ শাসনের ভিত্তি ছিল তার বৃহত্তর এবং আরও শক্তিশালী প্রতিবেশী দামেস্কের সাথে ঘনিষ্ঠ মৈত্রী। ১২২৮ (৬২৫ হিজরি) এর কোনো এক সময়ে বাহরাম শাহের একজন ছেলে প্রথম আদিলের ছেলে বানিয়াসের আজিজ উসমান এবং বালাবেক গ্যারিসনের কিছু সদস্যের সাথে বাহরামশাহকে অপসারণ করে আজিজ উসমানকে প্রতিস্থাপন করার জন্য ষড়যন্ত্র করে। পরিকল্পনাটি ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়নি এবং বাহরাম শাহ দামেস্কের নাসির দাউদকে সমর্থনের জন্য ডাকতে সক্ষম হন। নাসির আজিজকে প্রত্যাহার করতে এবং বাহরাম শাহ শহরের নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য করেন।[৩]
মৃত্যু এবং পরবর্তী ঘটনা
মিশরের সুলতান কামিল এবং দামেস্কের নাসির দাউদের মধ্যে লড়াইয়ের ফলে ১২৩০ সালে বাহরাম শাহের রাজত্বের অবসান ঘটে। আজিজ উসমান বিনিময়ের আশায় এই যুদ্ধে কামিলকে সমর্থন করছিলেন এবং কামিল এবং আশরাফের মধ্যে তেলুল আজ্জুলে একটি চুক্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, নাসির পরাজিত হলে তাকে বালবেক গ্রহণ করতে দেয়া হবে। নাসির আত্মসমর্পণ করলে মিশরীয় সেনাবাহিনী দামেস্কে প্রবেশ করে। কামিল তার ভাই আশরাফকে দামেস্ক প্রদান করেন। বালবেক হেরে যাওয়া নাসিরকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু দামেস্কের সিংহাসনে থাকা আশরাফ আজিজকে বাহরামশাহ থেকে বালাবেক নেওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। এর পরিবর্তে তিনি তার অন্য ভাই সালিহ ইসমাইলকে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দিতে এবং বালাবেক দখল করার নির্দেশ দেন।[৪]
যদিও বাহরাম শাহ প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে শাসন করা শহরটি হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিলেন। শর্ত চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বালাবেক দশ মাস ধরে অবরোধ বজায় রেখেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত দামেস্কের কাছে একটি ছোট ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিনিময়ে বালবেক ছেড়ে যেতে রাজি হন। এই শর্তে তিনি আশরাফকে বালবেকের নতুন শাসক হিসাবে প্রত্যাহার করে দামেস্কে তার বাসভবনে অবসর নেন। একই বছর পরে তিনি একটি চুরি করা কালি নিয়ে বিবাদে তার নিজের মামলুকদের দ্বারা খুন হন, যা কিছু শাস্তির জন্য প্রতিশোধমূলক আক্রমণ বলে মনে হয়। বাহরাম শাহকে আইয়ুবীদের শ্রেষ্ঠ কবি বলা হয়।[৫] [৬]
বাহরাম শাহের মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র সাঈদ এবং মুজাফ্ফর তাকিউদ্দিনের কেউই তার আমিরাতের উত্তরাধিকারী হননি, যার ফলে এর পর থেকে সালাহুদ্দিনের ভাই নুরুদ্দিন শাহানশাহের বংশধরদের ক্ষমতাগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। বাহরাম শাহকে অপসারণের পর বালাবেককে প্রথমে আশরাফ, তারপর তার ভাই সালিহ ইসমাইল এবং তারপর কামিলের পুত্র সালিহ আইয়ুব দখলে রাখেন। তারপর দামেস্কের আইয়ুবীয় শাসক নাসির ইউসুফ বালাবেক শাসন করেছিলেন। এর ফলে সংক্ষিপ্তভাবেই আদিলের বংশধরদের থেকে সালাহুদ্দিনের বংশধরে ক্ষমতা ফিরে এসেছিল।