মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম মন্ত্রিসভা
পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিপরিষদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সামগ্রিক সিদ্ধান্ত-গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী ও ৩৪ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী (প্রবীণতম সরকারি মন্ত্রী) নিয়ে এই মন্ত্রিপরিষদ গঠিত। প্রথাগত সাংবিধানিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান তত্ত্ব অনুযায়ী, ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের সরকার ব্যবস্থায় শাসনবিভাগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক অঙ্গটি হল ক্যাবিনেট।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বর্তমান মন্ত্রিপরিষদটি ২০১১ সালে ছয় দফায় অনুষ্ঠিত (১৮ এপ্রিল, ২৩ এপ্রিল, ২৭ এপ্রিল, ৩ মে, ৭ মে ও ১০ মে) বিধানসভা নির্বাচনের পর গঠিত হয়। ১৩ মে উক্ত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চদশ বিধানসভা গঠিত হয়। ২০ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের একাদশ মুখ্যমন্ত্রী রূপে শপথ গ্রহণ করেন এবং তার পরেই মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ শপথ নেন।
সাংবিধানিক বিধি
রাজ্যপালের সহায়ক ও পরামর্শদাতা রূপে মন্ত্রিপরিষদ
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, (অনুচ্ছেদ ১৬৩)
এর অর্থ মন্ত্রিগণ রাজ্যপালের সন্তোষের ভিত্তিতে কার্যনির্বাহ করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তিনি মন্ত্রিদের অপসারিতও করতে পারেন।
মন্ত্রিপরিষদ-সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যবস্থা
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, (অনুচ্ছেদ ১৬৪)
অর্থাৎ, ২০১১ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার সদস্য না হতে পারলে, তিনি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।
সরকার ও রাজনীতি
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সংসদীয় ব্যবস্থা দ্বারা শাসিত হয়। রাজ্যের সকল বাসিন্দার সার্বজনীন ভোটাধিকার রয়েছে। সরকারের দুটি শাখা রয়েছে। আইনসভা, অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা, নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বিশেষ আধিকারিক অর্থাৎ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্তকে নিয়ে গঠিত। উক্ত আধিকারিকদ্বয় প্রতিনিধিদের দ্বারাই নির্বাচিত হন। বিধানসভার অধিবেশনে পৌরোহিত্য করেন অধ্যক্ষ অথবা অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ। কলকাতা হাইকোর্ট ও একাধিক নিম্ন আদালত নিয়ে রাজ্যের বিচারবিভাগ গঠিত। রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ভোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। যদিও রাজ্যের নামসর্বস্ব প্রধান হলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ নিয়োগ করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিধানসভায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা এককক্ষীয়। বিধানসভার প্রতিনিধিদের বলে বিধায়ক। পশ্চিমবঙ্গে একজন মনোনীত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বিধায়ক সহ মোট বিধায়কের সংখ্যা ২৯৫।[১][২] বিধানসভা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভেঙে দেওয়া না হলে, বিধায়কদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। পঞ্চায়েত ইত্যাদি সহায়ক কর্তৃপক্ষগুলি স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসনের ভারপ্রাপ্ত। এগুলিতেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ৪২ জন ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ১৬ জন সদস্য নির্বাচিত হন।[৩]
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি হল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস-ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জোট বিধানসভায় ২২৫টি আসন দখল করে ক্ষমতা এসেছে।[৪] তার আগে ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট কর্তৃক শাসিত হয়। এই সরকার ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।[৫][৬]
মন্ত্রিপরিষদ
এই তালিকাটি ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর গঠিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের তালিকা। সকল মন্ত্রীই কলকাতায় নিজ নিজ দপ্তরে বসেন। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, সকল ক্যাবিনেট মন্ত্রীই রাজ্য বিধানসভার সদস্য। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও বিধানসভার সদস্য হননি।[৭]
ক্যাবিনেট মন্ত্রী
মন্ত্রীরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। ক্যাবিনেট পদমর্যাদার অধক্রম অনুযায়ী, এঁরা হলেন:
- ক্যাবিনেট মন্ত্রী – কোনো মন্ত্রকের প্রবীণ মন্ত্রী। অন্য কোনো মন্ত্রকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী নিযুক্ত না হলে, একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী সেই মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাতে পারেন।
ক্রম সংখ্যা | নাম | মন্ত্রক | বিধানসভা কেন্দ্র |
---|---|---|---|
১ | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী[৮] অতিরিক্ত দায়িত্ব:
| ভবানীপুর |
২ | সুব্রত বক্সী | পুর্ত মন্ত্রক পরিবহণ মন্ত্রক | ভবানীপুর |
৩ | পার্থ চট্টোপাধ্যায় | বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক সংসদীয়-বিষয়ক মন্ত্রক সরকারি উদ্যোগ মন্ত্রক শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রক তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক[৯][১০][১১] | বেহালা পশ্চিম |
৪ | অমিত মিত্র | অর্থ মন্ত্রক শুল্ক মন্ত্রক[৯][১০][১১] | খড়দহ |
৫ | মণীশ গুপ্ত | উন্নয়ন ও পরিকল্পনা মন্ত্রক[১১] | যাদবপুর |
৭ | সুব্রত মুখোপাধ্যায় | জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রক[১১] | বালিগঞ্জ |
৭ | আবদুল করিম চৌধুরী | জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রক[৯][১০] | ইসলামপুর |
৮ | সাধন পাণ্ডে | ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক | মানিকতলা |
৯ | উপেন বিশ্বাস | অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন মন্ত্রক | বাগদা |
১০ | জাভেদ খান | ত্রাণ মন্ত্রক দমকল ও জরুরি পরিষেবা মন্ত্রক অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক[৯][১০] | কসবা |
১১ | রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য | কৃষি মন্ত্রক[১১] | সিঙ্গুর |
১২ | সাবিত্রী মিত্র | নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রক[১১] | মানিকচক |
১৩ | জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক | খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রক[৯][১০] | হাবড়া |
১৪ | শান্তিরাম মাহাতো | স্বাবলম্বন ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রক | বলরামপুর |
১৫ | হায়দর আজিজ সফি | সমবায় মন্ত্রক অন্তর্দেশীয় জলপথ-পরিবহন মন্ত্রক[১১] | উলুবেড়িয়া পূর্ব |
১৬ | মলয় ঘটক | আইন মন্ত্রক বিচারবিভাগ-বিষয়ক মন্ত্রী | আসানসোল উত্তর |
১৭ | পূর্ণেন্দু বসু | শ্রম মন্ত্রক[১১] | রাজারহাট গোপালপুর |
১৮ | ব্রাত্য বসু | স্কুল ও উচ্চশিক্ষা মন্তক[১১] | দমদম |
১৯ | রচপাল সিং | পর্যটন মন্ত্রক[১১] | তারকেশ্বর |
২০ | হিতেন বর্মন | বন মন্ত্রক | শীতলকুচি |
২১ | গৌতম দেব | উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রক | ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি |
২২ | নুর আলম চৌধুরী | প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক | মুরারই |
২৩ | শঙ্কর চৌধুরী | অপ্রচলিত শক্তি উৎস মন্ত্রক সংশোধনাগার প্রশাসন মন্ত্রক | বালুরঘাট |
২৪ | রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় | কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক জৈবপ্রযুক্তি মন্ত্রক | বর্ধমান দক্ষিণ |
২৫ | সুদর্শন ঘোষদস্তিদাস | পরিবেশ মন্ত্রক[১১] | মহিষাদল |
২৬ | উজ্জ্বল বিশ্বাস | যুব পরিষেবা মন্ত্রক[১১] | কৃষ্ণনগর দক্ষিণ |
২৭ | শ্যাম মুখোপাধ্যায় | আবাসন মন্ত্রক | বিষ্ণুপুর |
২৮ | ফিরাদ হাকিম | পুর মন্ত্রক নগরোন্নয়ক মন্ত্রক[১১] | কলকাতা বন্দর |
২৯ | সুকুমার হাঁসদা | পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রক[১১] | ঝাড়গ্রাম |
৩০ | সৌমেন মহাপাত্র | জলসম্পদ সমীক্ষা ও উন্নয়ন মন্ত্রক | তমলুক |
৩১ | অরূপ রায় | কৃষি বিপণন মন্ত্রক | হাওড়া মধ্য |
৩২ | চন্দ্রনাথ সিংহ | পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক | বোলপুর |
৩৩ | মানস ভুঁইয়া | সেচ ও জলপথ মন্ত্রক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং বস্ত্র মন্ত্রক[১১] | সবং |
৩৪ | আবু হেনা | মৎস্য মন্ত্রক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যানপালন মন্ত্রক[১১] | লালগোলা |
প্রতিমন্ত্রী
মন্ত্রীরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। ক্যাবিনেট পদমর্যাদার অধক্রম অনুযায়ী, কনিষ্ঠরা হলেন প্রতিমন্ত্রী:
- প্রতিমন্ত্রী –কনিষ্ঠ মন্ত্রীরা ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের সঙ্গে কাজ করেন। সাধারণত তাঁদের কিছু নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ, অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীকে শুধুমাত্র কর বিভাগটি দেখতে হতে পারে।
ক্রম সংখ্যা | নাম | মন্ত্রক | বিধানসভা কেন্দ্র |
---|---|---|---|
৩৫ | মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর | শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রক (স্বাধীন দায়িত্ব) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং বস্ত্র মন্ত্রক | গাইঘাটা |
৩৬ | মদন মিত্র | ক্রীড়া মন্ত্রক (স্বাধীন দায়িত্ব)[৬] | কামারহাটি |
৩৭ | সুব্রত সাহা | পুর্ত মন্ত্রক | সাগরদিঘি |
৩৮ | শ্যামল মণ্ডল | সুন্দরবন মন্ত্রক (স্বাধীন দায়িত্ব) সেচ ও জলপথ মন্ত্রক | ক্যানিং পশ্চিম |
৩৯ | প্রমথনাথ রায় | উন্নয়ন ও পরিকল্পনা মন্ত্রক | কালীগঞ্জ |
৪০ | আবু নাসের খান চৌধুরী | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক | সুজাপুর |
৪১ | মনোজ চক্রবর্তী | সংসদীয়-বিষয়ক মন্ত্রক | বহরমপুর |
৪২ | সুনীলচন্দ্র তিরকে | খাদ্য সুরক্ষা মন্ত্রক | ফাঁসিদেওয়া |
৪৩ | সাবিনা ইয়াসমিন | শ্রম মন্ত্রক | মোথাবাড়ি |