মাতিলদা
মাতিলদা ব্রিটিশ লেখক রুয়াল দাল কর্তৃক রচিত বই। এটি ১৯৮৮ সালে লন্ডনের জোনাথন কেপ কর্তৃক প্রকাশিত হয়, এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩২ এবং অঙ্কনশৈলী করে কুইনটিন ব্ল্যাক। পরবর্তীতে এটি শ্রুতিবই হিসাবে প্রকাশিত হয়, যেটিতে কন্ঠ দেন অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট, ড্যানিয়েল ডিভিটো; পরবর্তীতে একই নামে ১৯৯৬ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।[১][২][৩][৪]
লেখক | রুয়াল দাল |
---|---|
অঙ্কনশিল্পী | কুইন্টিন ব্ল্যাক |
দেশ | যুক্তরাজ্য |
ভাষা | ইংরেজি |
ধরন | শিশু সাহিত্য, ফ্যান্টাসি |
প্রকাশিত | ১ অক্টোবর ১৯৮৮ |
২০১২ সালে স্কুল লাইব্রেরী জার্নাল কর্তৃক করা একটি জরিপে মাতিলদা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ৩০টি বইয়ের একটি নির্বাচিত হয়।[৫]
উপন্যাসের সারমর্ম
এই গল্পের পুরো ঘটনা আবর্তিত হয়েছে ছোট গ্রাম বাকিংহ্যামশায়ারের মাতিলদা ওয়ার্মউডকে নিয়ে। মাতিলদা মাত্র সাড়ে ৫ বছরের বালিকা। কিন্তু এই বয়সেই তার চলনে বলনে চলে আসে প্রাপ্তবয়স্কদের মত আচরণ। কিন্তু সে প্রায়সই তার পিতামাতা কর্তৃক উৎপীড়িত হয়। তারা জানেনই না, একটি ছোট বালিকার সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়। এরকম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয় মাতিলদা তার বাবা-মাকে শিক্ষা দেওয়ার ফন্দি আটতে থাকে। তার বাবার মাথার টুপিতে সে আঠা লাগিয়ে দেয়, যাতে করে একবার টুপি মাথায় পরলে তা আর সহজে খোলা না যায়। মাতিলদা তার বন্ধুর কাছ থেকে তার (মাতিলদা) এক সপ্তাহের জমানো টাকা দেওয়ার চুক্তিতে এক রাতের জন্য কথা বলা তোতা নিয়ে আসে। এরপর সে তোতাকে চিমনীতে লুকিয়ে রাখে। তোতার কন্ঠস্বর শুনে পরিবারের সব সদস্য ভয় পেয়ে যায়। তারা মনে করে ঘরে কোনো ভুত এসেছে এবং তার বাবা যাতে ভুল করে চুলে যাতে বিদঘুটে রঙ লাগায়, গোপনে সে ব্যবস্থা করে। মাতিলদা ৪ বছর বয়স থেকে নানারকম বই পড়া শুরু করে। বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা জেনিফার হানি মাতিলদার বন্ধু হয়ে উঠেন। তিনি বাচ্চা প্রডিজি মাতিলদাকে দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যান। তিনি অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন, মাতিলদা ইচ্ছামত গুণ করতে পারে, এবং এই অল্প বয়সেই মোটামোটা বই পরতে পারে। অথচ মাতিলদার ভাষ্যমতে, এইসব কিছু সে কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে শিখেছে। শিক্ষিকা জেনিফার মাতিলদাকে উপরের শ্রেণিতে স্থানান্তরিত করার জন্য বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা আগাথা ক্রাঞ্চবুলের সাথে কথা বলেন। কিন্তু ক্রাঞ্চবুল শিক্ষিকা জেনির এই আবেদন নাকচ করে দেন। পুরো শিশুতোষ উপন্যাসে এই প্রধান শিক্ষিকাই প্রধান খলনায়ক, যিনি খুবই অত্যাচারী ছিলেন। উপায়ন্তর না দেখে শিক্ষিকা জেনিফার মাতিলদার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে যান। কিন্তু তারা দুজনেই মাতিলদার ব্যাপারে শিক্ষিকাকে হতাশ করে ফিরিয়ে দেন।
মাতিলদার সাথে জেনির সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়। ছোট মাতিলদা অবাক হয়ে দেখতে থাকে, ক্রাঞ্চবুল শিক্ষার্থীদের কঠোরভাবে শাস্তি দিতে থাকে। তার শাস্তির মাত্রা এতটাই তীব্র যে, তা শুনতেও অতিরঞ্জিত মনে হয়। যার ফলে ছোট বাচ্চাদের কথা, তাদের বাবা-মা বিশ্বাস করত না। মাতিলদার সহপাঠী ল্যাভেন্ডার মিস ক্রাঞ্চবুলের জগের পানিতে মজা করে একটি গোসাপ রেখে দেয়। অধ্যক্ষা পানি পান করার জন্য জগ থেকে পানি ঢালতেই তা গ্লাসে পরে। আতঙ্কে হতবিহ্বল অধ্যক্ষা কে এই কাজ করেছে বুঝতে না পেরে অযাচিতভাবে মাতিলদাকে তীব্র ভাষায় গালিগালাজ করেন। মাতিলদা রাগে ক্ষোভে ভিতরে ভিতরে ফুসতে থাকে। সে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের মনেই গ্লাসটিকে অধ্যক্ষের গায়ে পরতে বলে, এবং হঠাৎ করে গ্লাসটির গোসাপ গ্লাসটিকে নিয়ে অধ্যক্ষের গায়ে ছলকে পরে। এভাবেই উপন্যাসে মাতিলদার আশ্চর্য এই টেলিকিনেসিস (কোনো কিছু স্পর্শ না করে তাকে নাড়ানো) নামক ক্ষমতা আছে বলে মাতিলদা নিজেই বুঝতে পারে।
মাতিলদা নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে জ্ঞাত হবার পরে সিদ্ধান্ত নেয়, সে এই ব্যাপারে শিক্ষিকা জেনিফারকে অবহিত করবে। মাতিলদাকে শিক্ষিকা জেনি তার জরাজীর্ণ কটেজে নিয়ে যান, মাতিলদার ব্যাপারে ভালোভাবে বুঝবেন বলে। কিন্তু একজন শিক্ষিকা হবার পরেও কেন জেনির আর্থিক এই করুণ দশা তা নিয়ে ছোট মাতিলদার মাথায় রাজ্যের প্রশ্ন এসে ভীড় করে। সে নানানরকম প্রশ্ন করায় শিক্ষিকা জেনিফার তার এই করুণ দশার কারণ সম্বন্ধে বলেন। তিনি বলেন, ছোট বেলায় তার মা মারা যাওয়ায় তার আপন খালাকে জেনিফারের বাবা নিয়ে আসেন। যাতে করে জেনিফারের দেখভাল করা যায়, কিন্তু সেই খালা ছিলেন অত্যাচারী এবং নানাভাবে তার উপর অত্যাচার করত। এরমধ্যে রহস্যজনক ভাবে জেনিফারের বাবা আত্মহত্যা করেন, আর সব সম্পত্তি জেনিফারের খালা আত্মসাৎ করেন। জেনিফার জানায় সে খালা আর কেও নন, বরং এই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিস ক্রাঞ্চবুল। শিক্ষিকা জানায়, যেহেতু ছোট থেকে তার ভরণপোষণ ক্রাঞ্চবুল করেছে, তাই ঋণ হিসাবে তার উপর বিরাট মাপের ঋণের বোঝা চাপায়, যার ফলে যে টাকা মাস শেষে শিক্ষিকা হিসেবে তিনি পান, তার প্রায় পুরোটাই চলে যায়, সে টাকা পরিশোধ করতে। মিস জেনিফার হানির জন্য মাতিলদা কিছু করার প্রত্যয়ে মনে মনে পরিকল্পনা আটে। মিস ক্রাঞ্চবুলের পরবর্তীতে পাঠদান করার সময় সে তার টেলিকিনেসিস ক্ষমতা প্রয়োগ করে চককে শূন্যে ভাসমান করে ফেলে এবং ব্ল্যাকবোর্ডের উপর চক দিয়ে লিখতে থাকে। বোর্ডের উপর চক দিয়ে শিক্ষিকা জেনিফারের বাবার নাম উল্লেখ করা হয়, এবং অধ্যক্ষা ক্রাঞ্চবুলকে বলা হয়, তিনি অশরীরি আত্মা হিসেবে তার উপর নজর রাখছেন। অধ্যক্ষা যিনি জেনিফারের খালা, তাকে সকল সম্পত্তি জেনিফারকে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আতঙ্কে ভীত ক্রাঞ্চবুল পালিয়ে যান এবং শিক্ষিকা জেনিফার আইনজীবী কর্তৃক প্রাপ্ত চিঠিতে জানতে পারে, তার পিতার সমস্ত সম্পদের উইল উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাকে ফেরত দেওয়া হবে। অধ্যক্ষার অনুপস্থিতির জন্য মিস্টার ট্রিবলি নামক একজন চমৎকার ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ের পরবর্তী অধ্যক্ষ করা হয়। মাতিলদাকে উচ্চতর শ্রেণিতে প্রমোশন দিয়ে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে সে তার টেলিকিনেসিস ক্ষমতা আর ব্যবহার করতে পারছিল না, যার ব্যাখ্যা হিসেবে শিক্ষিকা জেনিফার বলেন, যেহেতু এখন তাকে উচ্চতর শ্রেণিতে আরো বেশি পড়াশুনায় মনোযোগী হতে হচ্ছে তাই তার পক্ষে এই ক্ষমতা আর প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাতিলদা নিয়মিতই শিক্ষিকা জেনিফারের বাসায় যেত, কিন্তু একদিন তার বাবা-মা স্পেনে পালিয়ে যেতে উদ্যত হন। কারণ মাতিলদার বাবা চোরাই গাড়ির ব্যবসা করতেন, তাই পুলিশ থেকে বাচঁতেই তার এই পরিকল্পনা। মাতিলদা শিক্ষিকা জেনিফারের কাছে থাকতেই ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং এই প্রস্তাবে তার বাবা-মা রাজিও হন। মাতিলদা ও শিক্ষিকা জেনিফার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। আর গল্পের এখানেই শুভ সমাপ্তি হয়।
মিস্টার ওয়ার্মউড (মাতিলদার বাবা) নামক চরিত্রটি বাকিংহ্যামশায়ারের রোয়াল দালের গ্রামের বাড়ি গ্রেট মিসেনডেনের কোনো বাস্তব ব্যক্তির আচরণের উপর ভিত্তি করেই লেখক তৈরী করেছিলেন।[৬]
তথ্যসূত্র
টেমপ্লেট:Roald Dahlটেমপ্লেট:BILBY Younger Readers Awardটেমপ্লেট:Matilda