মুকুন্দরাম রায়

রাজা মুকুন্দরাম রায় হলেন বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম ।তিনি ছিলেন ভূষণা রাজ্যের একজন প্রভাবশালী হিন্দু রাজা । তাঁর রাজধানী ছিল ফতেজঙ্গপুর। রাজা মুকুন্দরাম রায় ভূষণাতে “ভূষণা সমাজ” তৈরি করেন। যা একটি মাহিষ্য সমাজ। তিনি নিজের রাজ‍্যের নামে গড়ে তোলেন বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ শ্রেণির “ভূষণা পটী”।[১]

রাজা মুকুন্দরাম রায়
ভূষণার রাজা
মৃত্যু১৫৯৯ খ্রীস্টাব্দ
গোপালগঞ্জ জেলা, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমানে বাংলাদেশ)
বংশধরসত্রাজিৎ রায়
ধর্মহিন্দু

ভূষণা দখল

মুকুন্দরামের ভূষণা রাজ্য আজকের মাগুরা জেলার মধুখালী উপজেলা, বৃহত্তর ফরিদপুর ও যশোর জেলার বেশ কিছু অংশ নিয়ে ছিল । মোগল আমলে ভূষণা ছিল সাতৈর পরগনার অধীনে।বাংলাতে তখন পাঠান-মোগল দ্বন্দ্ব চলছিল। ফতেয়াবাদের পাঠান শাসক মোরাদ খান মোগলদের বশ‍্যতা স্বীকার করে। মোরাদ খান ছিল তার মিত্র। মোরাদ খানের মৃত্যুর পর সিংহাসনে তার নাবালক পুত্র বসে। এসময় উড়িষ্যার কতলু খান মোরাদের রাজ‍্য আক্রমণ করে । রাজা মুকুন্দরাম মোরাদের নাবালক পুত্রদের হয়ে যুদ্ধ করেন। সম্রাট আকবরের রাজত্বের শেষকালে মীর্জা আজিজ কোকা ও রাজা টোডরমল বাংলাদেশে আসেন বিদ্রোহ দমন করতে । এ সময় মুকুন্দরাম ভূষণা জয় করে নেন। ১৫৮২ সালে রাজা টোডরমল তাকে ভূষণার রাজা বলে মেনে নেন। তিনি তাকে ফতেয়াবাদের অধিকাংশ এলাকার শাসনের অধিকার দেন। পরে তিনি নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন। তিনি শুধু নামে কিছু কর পাঠাতেন।আর অধীনতা স্বীকারের ভান করতেন।তিনি আসলে স্বাধীন ছিলেন।আকবরের রাজত্বের দিকে তিনি অন্যান্য ভুইয়াদের সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ গড়ে তোলেন।[২]

মোঘলদের সাথে যুদ্ধ

প্রথমে তিনি মোঘলদের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং তিনি তাদের কর দেয়া বন্ধ করেন।এরপর মোঘলদের সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হন। প্রতাপাদিত্য বা কেদার রায়ের রাজত্ব শেষ হলেও তিনি দমেন নি। মোঘলদের বিরুদ্ধে তিনি প্রায় সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন।

ফতেজঙ্গপুরের যুদ্ধ

পরবর্তীতে বাংলার মোগল শাসনকর্তা হন সায়দ খান । সে মুকুন্দরামকে ক্ষমতাচ‍ুত করে। এতে অপমানিত হয়ে মুকুন্দরাম মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ফতেজঙ্গপুরে তাদের মধ্যে খুব লড়াই হয়। কামানের শব্দ, ঘোড়াদের চিৎকার ও সৈন্যদের হুংকারে ভরে উঠেছিল পুরো এলাকা । এ যুদ্ধে জয় লাভ করেন রাজা মুকুন্দরাম।[৩]

রাজ্য হাতছাড়া

১৫৯৪ খ্রীস্টাব্দের এই সময় সম্রাট আকবর বাংলার সুবেদার হিসাবে মানসিংহকে পাঠায় ।তার সঙ্গে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠানো হয়।[৪]তিনি রাজধানী পৌঁছে বাংলার চর্তুদিকে সৈন্য পাঠান।  এ সময় সুবেদার মানসিংহের ছেলে হিম্মত সিংহ বিদ্রোহীদের দমন করতে অগ্রসর হয়।

১৫৯৫ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মোঘলরা ফরিদপুরের ভূষণা দখল করে।

প্রয়াণ

১৫৯৯ খ্রীস্টাব্দে পুনরায় মানসিংহ সেনাপতি হিম্মত সিংহকে রাজা মুকুন্দরাম রায়ের সাথে খিজিরপুর যুদ্ধের সময় পাঠান। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার ফতেহজিৎপুরে(বর্তমান মুকসুদপুর উপজেলাধীন) তাদের ভীষণ লড়াই হয়। এ যুদ্ধে রাজা মুকুন্দরাম রায় মৃত্যুবরণ করেন।

পরিবার ও বংশ

রাজা মুকুন্দরাম রায়ের ছয় পুত্র ছিল। তাদের মধ্যে রাজা সত্রাজিৎ রায় ।পিতৃভক্ত এই পুত্র পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মোঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু মোগলদের করা ষড়যন্ত্রে রাজা সত্রাজিৎ রায় প্রাণদন্ডে গত হন। তার বংশের রাজ গৌরব ও স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় তার মৃত্যুতে।[৫]

মুকুন্দরামের স্মৃতি বিজড়িত স্থান

মথুরাপুর দেউল
  • মথুরাপুর দেউল- ফরিদপুর জেলার মধুখালী শহরে অবস্থিত । এটি মূলভূমি থেকে প্রায় ৮০ ফুট উচু। এর উপরের অংশটি চাপা। এটি ১২ কোণ ও এক কোঠা বিশিষ্ট । বর্গ আকার ভূমির মাঝখানে এটি অবস্থিত । দেউলের আশেপাশের দেয়াল যুক্ত হয়ে বর্গাকৃতি তৈরি ক্রেছে।এটি ইট নির্মিত। এর গায়ে বিভিন্ন অলংকার, দেব-দেবী, জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত আছে। এর নির্মাণ কাজ নান্দনিক। দেউলের ভেতরে্র প্রকোষ্ঠ আছে। সেখানে যাবার দু’টি পথ। একটি পশ্চিমে ও অন্যটি দক্ষিণে । দক্ষিণের পথটি সাধারণত তালা মারা থাকে। মানসিংহ হিম্মত সিংহের শেষ স্মৃতিকে স্মরণীয় করতে এই দেউল নির্মাণ করেন।
  • শত্রুজিৎপুর -রাজা সত্রাজিৎ রায় এর বীরত্ব স্মরণ করে যশোরে একটি গ্রামের নাম “শত্রুজিৎপুর” রাখা হয়।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী