শাহবাগ থানা
শাহবাগ বা শাহবাগ় (আ-ধ্ব-ব: [ˈʃabag]) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের একটি কেন্দ্রবর্তী এলাকা। এই নামে একটি পুলিশ অধিক্ষেত্র রয়েছে যার সদর দপ্তর শাহবাগ থানা। এটি ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।[১]। "শাহবাগ মোড়" বলতে পূর্ব-পশ্চিমে এলিফ্যান্ট রোড ও মাওলানা ভাসানী এভিন্যূ এবং উত্তর-দক্ষিণে ময়মনসিংহ রোড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের চৌরাস্তা বোঝায়। এখানে একদা অবস্থিত শাহবাগ হোটেল এর সূত্রে এই এলাকার নাম হয়েছে শাহবাগ। শাহবাগ হোটেলটি বতর্মানে একটি চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়।
![]() মানচিত্র | |
প্রশাসন | |
---|---|
ওয়ার্ড | ৫১, ৫২, ৫৩ |
সংসদীয় এলাকা | ঢাকা-১০ (রমনা-তেজগাঁও) |
পৌর সংস্থা | ঢাকা সিটি কর্পোরেশন |
স্থানাংক | ২৩°৪৪'১৮" N, ৯০°২৩'৪৫" E |
র্যাব এলাকা | র্যাব ৩ |
উপাত্ত | |
![]() ঢাকা শহরে শাহবাগের অবস্থান | |
স্থাপিত | ২০০৪* |
ক্ষেত্রফল | ১৭.৪ বর্গকিলোমিটার* |
জনসংখ্যা | ১১২,০০০* |
সদর দপ্তর | শাহবাগ মোড় |
নিকটবর্তী থানা | লালবাগ থানা, ধানমন্ডি থানা, রমনা থানা, কোতোয়ালী থানা, পল্টন থানা, নিউ মার্কেট থানা* |
ওয়েবসাইট | শাহবাগের উপরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবপেইজ |
* ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী |
শাহবাগ এলাকাটি পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মধ্যকার সীমানায় অবস্থিত। এই এলাকার পত্তন হয় ১৭শ শতকে মোগল শাসনামলে, যখন পুরান ঢাকা ছিলো সুবাহ বাংলার রাজধানী এবং মসলিন বাণিজ্যের কেন্দ্র। শাহবাগের আদি নাম ছিলো "বাগ-ই-বাদশাহী" (ফার্সি: রাজার বাগান)। তবে পরবর্তীতে এটি সংক্ষিপ্ত নাম শাহ (ফার্সি:شاه, রাজা) বাগ (ফার্সি: باغ, বাগান) নামে পরিচিতি লাভ করে। [২] মোগল আমলের অবসানের পরে এটি পরিত্যক্ত হয়, তবে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে এই এলাকার চারপাশে নির্মিত হয় অনেক অট্টালিকা এবং ব্রিটিশ শাসনের স্থানীয় কেন্দ্র হিসাবে নতুন ঢাকার বিস্তারের সাথে সাথে শাহবাগ আবার গুরুত্ব লাভ করে।
শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত, যাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,যা বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ এবং সর্বপ্রাচীন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। শাহবাগে রয়েছে বেশ কিছু বাজার ও মার্কেট এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে শাহবাগ এলাকা বিভিন্ন উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিবছর ধুম ধামের সাথে বাংলা নববর্ষ ও বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
শাহবাগের অনেক পুকুর, দালান কোঠা এবং বাগান অনেক কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গায়ক শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছে। থানা এলাকার মধ্যখানে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় ইতিহাসের অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৯০৫ সালের নিখিল ভারতীয় মুসলমান শিক্ষা সম্মেলন, যা পরবর্তীতে নিখিল ভারত মুসলিম লীগে পরিণত হয়। যারা ভারত বিভাগ এবং পাকিস্তানকে রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন; ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য গড়া ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, যা জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়। এখানেই শেখ মুজিবুর রহমান মার্চ ৭, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছে থেকে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন এবং এখানেই পরবর্তীকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। তখন থেকেই এ স্থান ছাত্র ও অন্য সম্প্রদায়ের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তোলার মঞ্চে পরিণত হয়েছে।[৩][৪][৫]
ইতিহাস
যদিও ঢাকা শহরের পত্তন হয়েছিল সপ্তম শতাব্দীর দিকে,[৬] কিন্তু শাহবাগে শহুরে স্থাপনার প্রমাণ পাওয়া যায় কিছু স্মৃতিস্তম্ভ থেকে, সেগুলো ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের পরের। সেসময় মুঘল সম্রাট ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং শাহবাগের বাগান গড়ে তোলেন। এসকল স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে রয়েছে ঢাকা গেট, যা বর্তমানে শাহবাগে বাংলা একাডেমীর কাছে অবস্থিত। স্তম্ভটি বাংলার মুঘল সুবাদার মীর জুমলা তৈরি করেছিলেন, যিনি ১৬৬০ সাল থেকে ১৬৬৩ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৭] মরিয়ম সালেহা মসজিদ', নীলক্ষেত-বাবুপুরা তে অবস্থিত একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মুঘল ধাঁচের মসজিদ, যা নির্মাণ করা হয়েছিল ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে।[৮] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের মুসা খানের মসজিদ, যা ১৭ শতকে তৈরি বলে মনে করা হয়।[৯] এবং খাজা শাহবাজের মসজিদ-মাজার,[১০] যা ঢাকা হাই কোর্টের পিছনে অবস্থিত এবং ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে খাজা শাহবাজ কর্তৃক নির্মিত। খাজা শাহবাজ ছিলেন রাজ প্রতিনিধি এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মুহাম্মদ আজমের সময়কালীন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বা সওদাগর।[১১]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/3d/Tomb_Of_Hazi_Shahabaz.A.M.R..jpg/220px-Tomb_Of_Hazi_Shahabaz.A.M.R..jpg)
মুঘল শাসনের পতনের সাথে সাথে শাহবাগের বাগানগুলো অযত্ন ও অবহেলার শিকার হয়। ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে যখন প্রাদেশিক রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয় তখন এ সম্পত্তির মালিক হন নায়েব নাযিম, যিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের প্রতিনিধি এবং পূর্ব বাংলার প্রদেশিক ডেপুটি-গভর্নর ছিলেন। ১৭৫৭ সাল থেকে ঢাকায় ব্রিটিশ শাসন শুরু হলেও, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জেলা প্রশাসক গ্রিফিথ কুকের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের বাগান গুলো ১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত টিকে ছিল।।[১২] ঢাকার আর্মেনী সম্প্রদায়ের নেতা পি. আরাতুন এই কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।[১৩] ১৮৩০ সালে জেলা কালেক্টর হেনরি ওয়াল্টারের ঢাকা শহর উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত ঢাকা কমিটির বিচক্ষণতায় শাহবাগ সহ রমনা এলাকাকে ঢাকা শহরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৪] প্রায় এক যুগ পরে, ঢাকার নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা এবং নবাব খাজা আব্দুল গনির পিতা নবাব আলিমুল্লাহ, শাহবাগের জমিদারী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছ থেকে কিনে নেন। ১৮৬৮ সালে তার মৃত্যুর পর এ সম্পত্তি তার দৌহিত্র স্যার নবাব খাজা আহসানুল্লাহর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০ শতকের শুরুর দিকে আহসানুল্লাহর পুত্র, স্যার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ শাহবাগের বাগানকে ছোট দুই ভাগে ভাগ করে বাগানগুলোর হারানো সৌন্দর্যের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। বর্তমানে যা শাহবাগ এবং পরিবাগ নামে রয়েছে। আহসানুল্লাহর এক কন্যা পরিবানুর নামে এ নামকরণ করা হয়।[১৫]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6e/Ramna-racecourse-dacca1875.jpg/220px-Ramna-racecourse-dacca1875.jpg)
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা পূর্ব বাংলার নতুন প্রাদেশিক রাজধানী হওয়ায়, পুরো ঢাকা, বিশেষ করে নবনির্মিত ফুলার রোডের (পূর্ব বাংলার প্রথম প্রতিনিধি গভর্নর স্যার মাম্পফিল্ড ফুলার এর নামে নামাঙ্কিত) পাশ দিয়ে দ্রুত ইউরোপীয় ধাঁচের দালান কোঠা তৈরি হতে থাকে। এ সময়েই ঢাকার শাহবাগে প্রথম চিড়িয়াখানা চালু হয়।[১৬][১৭]
১৯৪৭ সালে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের পত্তনের পর, ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হয়। এসময় অনেক নতুন নতুন ইমারত তৈরি হতে থাকে। এর মধ্যে ১৯৬০ সালের বাংলাদেশ বেতার অফিস[১৮] (তৎকালীন পাকিস্তান রেডিও), জাতীয় বেতার কেন্দ্র, ঢাকা রেস-কোর্স (বর্তমানে অপ্রচলিত) সহ পূর্ব বাংলার দ্বিতীয় বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র অন্যতম। মার্চ ৭, ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান শাহবাগের কাছে এই রমনা রেসকোর্সের ময়দান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর পাকিস্তান ব্যুরো প্রধান আর্নল্ড জেইটলিন ও ওয়াশিংটন পোষ্ট এর রিপোর্টার ডেভিড গ্রীনওয়ে সহ অনেক বিদেশী সাংবাদিক শাহবাগ মোড়ের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে হোটেল শেরাটন) অবস্থান নেন। হোটেলটিকে নিরপেক্ষ এলাকা ঘোষণা করা সত্ত্বেও[১৯][২০][২১] পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং মুক্তি বাহিনী দুই পক্ষেরই হামলার শিকার হয়।[২২][২৩] যুদ্ধ শেষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান হিসেবে প্রথমে পছন্দ করা হলেও পরবর্তীকালে আত্মসমর্পণের জন্য রমনা পার্কের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জায়গায় স্থান নির্বাচন করা হয়।[২২]
পৌর নকশা
স্থাপনাসমূহ |
---|
বিএসএমএমইউ | বারডেম |
হোটেল শেরাটন | চারুকলা ইনস্টিটিউট |
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর |
কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী |
বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ এবং কবরস্থান | আইবিএ, ডিইউ |
ঢাকা ক্লাব | শিশু পার্ক |
টেনিস ফেডারেশন| পুলিশ কন্ট্রোল রুম |
৪.২ বর্গকিলোমিটার (১.৬ মা২) এলাকা এবং ২০০৬ সালের জরীপ অনুযায়ী প্রায় ১১২,০০০ মানুষের বাসস্থান[২৪] শাহবাগ মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১.৫ থেকে ১৩ মিটার (৫ থেকে ৪৩ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।[২৫] ঢাকার অন্যান্য স্থানের মত এখানকার গড় তাপমাত্রা ২৫ °সে (৭৭ °ফা) এবং মাসিক তাপমাত্রা জানুয়ারিতে ১৮ °সে (৬৪ °ফা) এবং আগস্টে ২৯ °সে (৮৪ °ফা) এর মধ্যে ওঠানামা করে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০% ভাগ যার পরিমাণ ১,৮৫৪ মিমি (৭৩ ইঞ্চি) বর্ষিত হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
শাহবাগ এবং তার সংলগ্ন এলাকা আকৃতিতে প্রায় আয়তাকার , যা পূর্বে রমনা পার্ক থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বিস্তৃত; পশ্চিমে সোনারগাঁও রোড পর্যন্ত; দক্ষিণে ফুলার রোড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়[২৬] থেকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান (পূর্বে রমনা রেসকোর্স) এবং উত্তরে মিন্টু রোড, হোটেল শেরাটন এবং ডায়াবেটিক হাসপাতাল পর্যন্ত বিস্তৃত।
শাহবাগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ছাড়াও রয়েছে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অথোরিটি সাবস্টেশন। তিন নেতার সমাধিস্থল- বাঙালি রাজনীতিবিদ এ. কে. ফজলুল হক(১৮৭৩-১৯৬২), পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩), এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন (১৮৯৪-১৯৬৪) সবগুলোই শাহবাগে অবস্থিত। শাহবাগ মোড় এবং শাহবাগ থানায় আরও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা হলঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বুয়েট, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এডমিনিস্ট্রেশন একাডেমী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ[২৭]), দেশের একমাত্র সরকারি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা ইনস্টিটিউট, আইবিএ, আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট, উদয়ন বিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল। আরও যে সকল সরকারি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী এবং শিশু একাডেমী, শিশুদের জাতীয় একাডেমি।
শাহবাগ মোড় অত্র এলাকার কেন্দ্রবিন্দু যেখানে প্রচুর উল্লেখযোগ্য স্থাপনা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হোটেল শেরাটন [২৮] (সাবেক হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, তৎকালীন ঢাকার দ্বিতীয় পাঁচ তারকা হোটেল); শহরের সবচেয়ে পুরাতন ও বৃহৎ ঢাকা ক্লাব যা ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত, জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স, শিশুপার্ক (ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন শিশু পার্ক, এখানে সপ্তাহে ১ দিন সুবিধাবঞ্চিত ও অসচ্ছল শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।), ঢাকার প্রথম বার সাকুরা বার এবং প্রথম আউটডোর বার পীকক বার শাহবাগেই অবস্থিত। ফার্মগেট, গুলিস্তান, মহাখালী এবং মগবাজারের মত শাহবাগ চৌরাস্তাটি ঢাকার জন-পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/5e/BRTC_double_decker_bus_03652.jpg/220px-BRTC_double_decker_bus_03652.jpg)
এই থানায় রয়েছে বেশ কিছু হাসপাতাল, যা বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সেবার জন্য মূল গন্তব্য। শাহবাগের মোড়ে রয়েছে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ডিএবি[২৯]) , আরও রয়েছে বারডেম (বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিক ডিজঅর্ডার গবেষণা ও পুনর্বাসন সংস্থা) এবং বারডেম হাসপাতালের পাশেই আছে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল কার্ডিয়াক হাসপাতাল, যা ডিএবি (ড্যাব) , এবং বার্ডেমের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আরও যে সব সুযোগ সুবিধা এ এলাকায় আছে তার মধ্যে শাহবাগ মোড়ের বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি) এবং শাহবাগের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
শাহবাগ দুটো প্রধান বাস রুটের সংযোগস্থলে অবস্থিত- গুলিস্তান থেকে মিরপুর এবং মতিঝিল থেকে উত্তরা; শাহবাগের মোড় ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু বলা যেতে পারে, যেখানে বিশেষ করে নগর বাস সার্ভিসগুলোতে বহু লোক ঢাকার সবস্থানে যাতায়াত করেন।[৩০][৩১] শাহবাগের মোড় ঢাকা মাত্র কয়েকটি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের মধ্যে অন্যতম। শাহবাগের রাস্তাটিতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী যান সাইকেল-রিকশা মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩২]
ঐতিহাসিক দালান কোঠা
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/a0/Nawab%27s_Shahbagh_Garden_dhaka_1904_02.jpg/220px-Nawab%27s_Shahbagh_Garden_dhaka_1904_02.jpg)
উনিশ শতকে ঢাকার নবাব পরিবারের তৈরি বেশ কিছু দালান কোঠা শাহবাগে বিদ্যমান। এ সকল দালান কোঠার কথা শুধু মাত্র ঢাকার ইতিহাসেই নয়, গুরুত্বের সাথে বঙ্গ এবং ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসেও লেখা রয়েছে।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/0c/%E0%A6%87%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4_%E0%A6%AE%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B2.png/220px-%E0%A6%87%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4_%E0%A6%AE%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B2.png)
নবাব পরিবারের জনপ্রিয় দালানগুলোর মধ্যে ছিল ইশরাত মঞ্জিল। মূলত, বাইজিদের (বাইজিদের মধ্যে পিয়ারী বাই, ওয়ামু বাই, আবেদী বাই খুবই জনপ্রিয় ছিল) নাচার জন্য নাচঘর হিসেবে ব্যবহৃত হত, পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে এ দালানটি নিখিল ভারত মুসলমান শিক্ষা সম্মেলনের স্থান হিসেবে পরিণত হয়, যাতে প্রায় ৪,০০০ অংশগ্রহণকারী অংশ নেয়। ১৯১২ সালে সংগঠনটি খাজা সলিমুল্লাহের নেতৃত্বে আবার সভা ডাকেন এবং তারা ভিক্টোরি অফ ইন্ডিয়া চার্লস হারডিঞ্জ এর সাথে দেখা করেন। ইসরাত মঞ্জিল পুনঃনির্মাণ করে হোটেল শাহবাগ (ইংরেজ স্থপতি এডোয়ার্ড হাইক্স এবং রোনাল্ড ম্যাক্কোনেলের নকশায়) করা হয়, যা ঢাকার প্রথম প্রধান আন্তর্জাতিক হোটেল। ১৯৬৫ সালে ভবনটি ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট-গ্রাজুয়েটে মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (IPGMR) অধিগ্রহণ করে এবং পরর্তীতে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) দ্বারা অধিগৃহীত হয়।[১৭]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/9/96/Shahbagh-garden1904.jpg/220px-Shahbagh-garden1904.jpg)
আরেকটি নবাব দালান হল জলসাঘর। তৈরি হয়েছিল নবাবদের স্ক্যাটিং এবং বলনাচের স্থান হিসেবে, পরবর্তীতে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষকদের খাওয়া এবং আড্ডার স্থান হিসেবে পরিণত হয় এবং নামকরণ করা হয় মধুর ক্যান্টিন বলে। ১৯৬০ এর শেষের দিকে মধুর ক্যান্টিন পরিণত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের একটি মিলনস্থান হিসেবে, যার একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ এবং অন্যদিকে আইবিএ রয়েছে। মধুর ক্যান্টিন শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতীক হয়ে এখনো বিদ্যমান।[১৭][৩৩]
নিশাত মঞ্জিল তৈরি করা হয়েছিল নবাবদের আস্তাবল এবং ক্লাব হাউস হিসেবে, এবং তৎকালীন কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আপ্যায়নস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে লর্ড ডাফরিন, লর্ড কারমাইকেল (বাংলার গভর্নর), স্যার স্টুয়ার্ট ব্যালে (বাংলার লে. গভর্নর), স্যার চার্লস ইলিয়ট (বাংলার লে. গভর্নর) এবং জন উডবার্ন (বাংলার লে. গভর্নর) অন্যতম।
খাজা সলিমুল্লাহ তার বোন পরি বানুর স্মরণে তৈরি করেছিলেন নবাবদের পরিবাগ হাউস। পরবর্তীতে পরিবারের খারাপ সময় তার পুত্র নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ এখানে অনেক বছর বসবাস করেছিলেন। এখানকার হাম্মাম (গোসল) এবং হাওয়াখানা (সবুজ ঘর) বিংশ শতাব্দীর বিস্ময়কর কীর্তি হিসেবে মনে করা হয়।[১৫]
অত্র এলাকায় নবাবদের সবচেয়ে পুরাতন ভবন ছিল সুজাতপুর প্যালেস, যা পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব-বাংলার গভর্নরের বাসভবনে রূপান্তর করা হয়। আরও পরে এটি বাংলাদেশে, বাংলা ভাষা বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমীতে পরিবর্তিত হয়। প্যালেসের বেশ কিছু এলাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলন কেন্দ্রের [৩৪][৩৫] জন্য হস্তান্তর করা হয়। ১৯৭০ সালে এটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংস্কৃতি
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/54/Shahbag_Square%2C_Dhaka.jpg/220px-Shahbag_Square%2C_Dhaka.jpg)
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব হিসেবে।[৩৬] সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পহেলা ফাল্গুন প্রতিবছর গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি পড়ে।[৩৭] ১৯৬০ এর শেষের দিকে শাহবাগ থেকে উদ্ভাবিত বসন্ত উৎসব এখন ঢাকা শহরের একটি বৃহৎ উৎসবে পরিণত হয়েছে। মুখে অঙ্কন, হলুদ জামা পরা এবং স্থানীয় মেলা সহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ উৎসব পালন করা হয় এবং একই প্রক্রিয়ায় ভ্যালেন্টাইন দিবসও উদ্যাপন করা হয়। শাহবাগ পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের মূল কেন্দ্র। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকার অধিবাসীরা এই দিনটিকে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরূপে পালন করতেন। উৎসবের অন্যান্য ঐতিহ্য যথা: বৈশাখি শোভাযাত্রা এবং বৈশাখি মেলার সূচনা করে যথাক্রমে চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমি। রমনা বটমূলে ভোরবেলা গান করার প্রথা শুরু করে ছায়ানট সঙ্গীত স্কুল।
বাংলাদেশের বৃহত্তম বইমেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রত্যেক বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে শাহবাগের বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র উৎসব- স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব প্রতি বছর গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গনে পালিত হয়। চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ফোরামের কার্যালয় রয়েছে আজিজ মার্কেটে।
২০০১ সালে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন চলাকালে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ১০ ব্যক্তিকে হত্যা এবং ৫০ জনকে আহত করে। ইসলামপন্থী জঙ্গী গ্রুপ হরকাতুল জিহাদকে উক্ত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।(আরও দেখুন রমনা বটমূলে গ্রেনেড বিস্ফোরণ)
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায় জনগণের প্রত্যাশামতো না হওয়ায় কিছু ব্লগার আর অনলাইন একটিভিস্টের ডাকে শাহবাগে শুরু হয় এক গণ-আন্দোলন। একটানা চলা এ গণজাগরণের স্ফুলিঙ্গ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার পরে আপিল আইন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। সে সমাবেশ থেকে এ জায়গার নামকরণ করা হয় 'প্রজন্ম চত্বর'।
২০১৮ সালের এপ্রিলে সিভিল সার্ভিসসহ সব সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়।[৩৮]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
৯০°২৩.৭৫′ পূর্ব / ২৩.৭৩৮৩° উত্তর ৯০.৩৯৫৮৩° পূর্ব