সিজার (ককটেইল)

সিজার কিংবা ব্লাডি সিজার এক প্রকার কানাডীয় ককটেইল যা সাধারনত সেখানকার লোকেরা খেয়ে থাকে। এটির মধ্যে সাধারণত ভোডকা, ক্লামেটো ( টমেটো জুস এবং ঝিনুক জুস এর মিশ্রণ), হট সস এবং ওরসেস্টারশায়ার সস থাকে। বেশি পরিমাণে বরফ এবং শাকসবজি দিয়ে মোড়ানো গ্লাসে সিজার পরিবেশন করা হয়। গ্লাসটি সাধারণত চুন এবং শাকসবজি দিয়ে খুব সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। ব্লাডি মেরি এবং সিজারের মধ্যে পার্থক্যকারী বস্তুটি হচ্ছে ঝিনুকের জুস। ককটেইল টিকে মাইচেলাডা সাথেও তুলনা করা যায়, কারণ ভোডকা ছাড়া অন্যান্য সব উপাদান প্রায় একই এই দুটি ককটেইল এর মধ্যে।

সিজার
ধরণMixed drink
মদের ধরণ
পরিবেশনশিলাখন্ডে
সাজসজ্জা

শাকসবজির ডাঁটা এবং চুনের কীলক

Standard drinkware
Highball glass
Commonly used ingredients
  • ৭ oz. ক্লামেটো জুস
  • ১–১.৫ oz. ভোডকা
  • ২ চা চামচ হট সস
  • ৪ চা চামচ ওরসেস্টারশায়ার সস
  • লবণাক্ত শাকসবজি
  • ফ্রেস গুঁড়ো মশলা
  • চুন
  • ১ টি তাজা শাকসবজির খাস্তা
প্রস্তুতকরণশাকসবজি এবং চুন দিয়ে সজানো গ্লাস

১৯৬৯ সালে ক্যালগেরি, আলবেরতা শহরে একটি নতুন ইতালীয় রেস্তোরাঁর উদ্বোধন উপলক্ষে রেস্টুরেন্ট মালিক ওয়াল্টার চেল সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কার করে। এটি খুব দ্রুত কানাডায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। কানাডায় প্রতি বছর এখন প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন সিজার খাওয়া হয়। এবং এর থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো অনেক ভিন্ন ভিন্ন ককটেইল তৈরি হচ্ছে। যদিও কানাডার বাইরে এটি এখনোও প্রচলিত নয়।

উৎপত্তি

সিজার ১৯৬৯ সালে ক্যালগেরি, আলবের্তা শহরের ক্যালগেরি ইন (বর্তমান ওয়েস্টিন হোটেল) রেস্টুরেন্ট মালিক ওয়াল্টার চেল কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়। নতুন ইতালীয় রেস্টুরেন্ট ক্যালগেরি ইন-এর উদ্বোধনকালে তাকে একটি অনন্য পানীয় তৈরি করতে বলা হলে তিনি এটি তৈরি করে।[১] সে ভোডকার সাথে ঝিনুক জুস, টমেটো জুস, ওরসেস্টারশায়ার সস এবং অন্যান্য মশলা মিশ্রিত করে[২] যা অনেকটাই ব্লাডি মেরির মত হয়, কিন্তু স্বাদে একদম ভিন্ন এক ককটেইল প্রস্তুত হয়।[৩]

চেল জানায় ইতালি থেকে মূলত সে এটি তৈরির অনুপ্রেরণা পায়। তিনি ভেনিসে এরকম কিছু খেয়েছিল, সেখানে তারা সেমাইের সাথে টমেটো সস এবং ঝিনুক মিশ্রিত করে 'স্পাগেত্তি আল্লে ভোঙ্গলে' (ঝিনুকসহ স্পাগেত্তি) নামক খাবার পরিবেশন করে। এটি খাবার পর তার মনে হয়েছে যে ঝিনুক এবং টমেটোর মিশ্রনে একটি অনন্য পানীয় তৈরি করা সম্ভব। এবং সে ঝিনুক সিদ্ধ করে সুস্বাদু পানীয় তৈরি করে এবং তা অন্যান্য উপকরনের সাথে মেশায়।[৪]

চেল-এর নাতনীর কথানুযায়ী, তার ইতালীয় পূর্বপুরুষ এর নাম দেয় "সিজার"।[২] ব্লাডি মেরি নামক পানীয় থেকে এটি আলাদা করতে "ব্লাডি সিজার" নামটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু চেল বলে, রেস্টুরেন্টে তার কিছু রেগুলার কাস্টোমার ছিলো। সিজার এর পরিপূর্ণতা দিতে যে তিন মাস সময় লেগেছিল সে সময় সে প্রতিদিন তাদের এটি পরিবেশন করতো এবং মন্তব্য শুনতো। এরাই মূলত চেল কে অনুপ্রেরণা দিয়েছে সিজার তৈরিতে। একজন নিয়মিত ইংরেজ কাস্টোমার একসময় বলেছিল, "ওয়েটার, দ্যাটস এ ড্যাম গুড ব্লাডি সিজার"।[৪]

জনপ্রিয়তা

চেল বলে, রেস্টুরেন্ট সমর্থকদের কাছে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৪] এটি প্রস্তুত করার পর মাত্র ৫ বছরেই সিজার ক্যালগেরির সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হয়ে ওঠে।[৫] পূর্ব থেকে পশ্চিম কানাডা পর্যন্ত খুব দ্রুতই এটি ছড়িয়ে পড়ে।[৪] ২০০৯ সালে পানীয়টির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এটিকে কানাডার জাতীয় পানীয় করার জন্য আবেদন করা হয়[৬] ক্যালগরি শহরের মেয়র ডেভ ব্রনকনিয়ার ২০০৯ সালের ১৩ মে পানীয়টির ৪০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করে এবং দিনটিকে শহরের সিজার দিবস ঘোষণা করা হয়।[৭]

ঠিক যে সময় সিজার আবিষ্কৃত হয় ঐ একই সময়ে দ্যা মট'স কোম্পানি স্বাধীনভাবে ক্লামেটোর (ঝিনুক এবং টমেটো জুস এর মিশ্রণ) উন্নতিসাধন করতেছিল। প্রথমদিকে ক্লামেটোর বিক্রি একদম কম ছিল, ১৯৭০ সালে মাত্র ৫০০ বক্স ক্লামেটো বিক্রি হয়েছিল।[৩] কিন্তু পরবর্তীতে মট-এর ডিস্ট্রিবিউটর-রা চেল এর পানীয় এর সন্ধান পেলে ক্লামেটো এর বিক্রি দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৮] ১৯৭৪ সালের মধ্যে কানাডায় ৭০% ক্লামেটো শুধুমাত্র সিজার বিক্রির জন্য বিক্রি হতো, যখন অর্ধেক ক্লামেটো পশ্চিম কানাডায় বিক্রি হত।[৪] মট'স এর মতে সিজার কানাডার সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়, প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন সিজার প্রতিবছর খাওয়া হয়।[৯]

কানাডার বাইরে সিজার তেমন পরিচিত নয়। আমেরিকায় শুধুমাত্র কানাডার বর্ডারের পাশাপাশি এলাকার বারগুলোতে সিজার পাওয়া যায়।[৪] অন্যত্র বার এর পরিবেশকরা ব্লাডি মেরি পরিবেশন করে।[১০] ইউরোপের কিছু যায়গায় এটি পাওয়া যায়। কিন্তু যেখানেই বেশি পরিমাণে কানাডীয় বসবাস করে সেখানেই এটি পাওয়া যায়।[১১] কানাডার বাইরে এটি ছদ্মনামেও বিক্রি করা হয়।[৮] ঝিনুক-টমেটো জুস প্রস্তুতকারীরা মনে করেছে 'ক্লাম ব্যারিয়ার' নামে যা বিক্রি করা হয় সেটি তাদের পানীয় এর ক্ষতি করছে। তারা দেখছেন, আমেরিকান-রা এটা ভেবে ভয় পাচ্ছেন যে এই পানীয়তে অতিরিক্ত পরিমাণে ঝিনুক রয়েছে।.[১২]

'হ্যংওভার কিউর' হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়।[১৩] যদিও এটার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।[১৪] ১৯৮৫ সালে ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো কর্তৃক এক গবেষণায় বলা হয়, এসপিরিন গ্রহণ করার সময় সিজার পান করলে পাকস্থলী এসপিরিন ঘটিত রোগ থেকে প্রতিরক্ষিত থাকে।[১৫]

প্রস্তুতি এবং প্রকারভেদ

সিজারের সাধারণ প্রস্তুতি হল- ১-১^১/২ oz ভোডকা, দুই চা চামচ হট সস, তিন চা চামচ লবণ ও গোলমরিচ গুড়ো, চার চা চামচ ওরসেস্টারশায়ার সস, ৪-৬ oz ক্লামেটো এবং এটাকে বরফের সাথে পরিবেশন করা হয়।[৬] উপকরণগুলো শাকসবজি ও অন্যান্য মশলার সাথে গ্লাসের উপরে ঢালা হয়। গ্লাসটি শাকসবজি ও চুন দ্বারা সুন্দর ভাবে সাজানো থাকে। সিজার একটি অসাধারণ পানীয় এবং খাওয়ার পূর্বে এর মিশ্রনটি কিছুক্ষণের জন্য রেখে দেয়া হয়।[১০]

টাবাস্কো সস এটির একটি সংস্করণ[৪] যা সজিনা দ্বারা প্রস্তুত করা হয়, যদিও এটি চেল এর আসল উপকরণ দ্বারা প্রস্তুত করা হয় না।[৩] ভোডকার যায়গায় মাঝে মাঝে গিন, টাকুলা কিংবা রাম মিশ্রণ করা হয়। কিন্তু ক্লামেটো কখনোও পরিবর্তন করা হয় না।[৩] ভোডকার পরিবর্তে বিয়ার মিশ্রিত করে যে পানীয় তৈরি করা হয় তাকে 'রেড আই'[৯] বলে এবং এলকোহল ছাড়া এটিকে 'ভার্জিন সিজার' বলে।[১৬] দ্যা টরেন্টো ইন্সটিটিউট অফ বারটেন্ডিং কানাডার বিভিন্ন যায়গায় 'সিজার স্কুল' পরিচালনা করে যেখানে সিজার এর বিভিন্ন মিশ্রণ তৈরির পদ্ধতি শেখানো হয়।[১৭]

মট'স প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড আন্তর্জাতিক সেলফিস উতসবে "বেস্ট সিজার ইন টাউন" প্রতিযোগিতা জিতে।[১৮] ২০০৯ সালের ককটেইল টির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কানাডাজুড়ে সিজার এর বিভিন্ন সংস্করণ তৈরির প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্করণ হলো- "সিজার উইথ ম্যাপল স্যুপ" ও "সিজার উইথ ব্যাকন-ইনফিউজড ভোডকা"।[১০]

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:Canadian cuisine

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী