স্থির তরঙ্গ
পদার্থবিজ্ঞানে স্থির তরঙ্গ, স্থানু তরঙ্গ বা কদাচিৎ দণ্ডায়মান তরঙ্গ বলতে এমন একটি তরঙ্গকে বোঝায় যেটি সময়ের সাপেক্ষে দোলিত হয় কিন্তু যার শীর্ষ বিস্তারের পার্শ্বচিত্রটি (peak amplitude profile) স্থান পরিবর্তন করে না। তরঙ্গের দোলনগুলির শীর্ষ বিস্তারগুলি স্থানের যেকোনও বিন্দুতে সময়ের সাথে অপরিবর্তনশীল থাকে এবং তরঙ্গের ব্যাপ্তি জুড়ে এর বিভিন্ন বিন্দুতে দোলনগুলি একই দশায় বিরাজ করে। যেসমস্ত অবস্থানে তরঙ্গের বিস্তারের পরম মান ন্যূনতম বা সর্বনিম্ন হয়, সেগুলিকে নিস্পন্দ বিন্দু বা গ্রন্থি বলে। এর বিপরীতে যেসব অবস্থানে তরঙ্গের বিস্তারের পরম মান সর্বোচ্চ হয়, সেগুলিকে প্রতিনিস্পন্দ বিন্দু বা প্রতিগ্রন্থি বলে।
স্থির তরঙ্গগুলি প্রথমে ১৮৩১ সালে বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের চোখে পড়েছিল। তিনি একটি স্পন্দনশীল পাত্রের মধ্যে রক্ষিত একটি তরল পদার্থের পৃষ্ঠতলে এই স্থির তরঙ্গগুলি পর্যবেক্ষণ করেন।[১][২] ১৮৬০ সালের দিকে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রান্ৎস মেলডে (জার্মান: Franz Melde) জার্মান ভাষাতে এগুলির নামকরণ করেন "ষ্টেএন্ডে ভেলে" (Stehende Welle) বা "ষ্টেভেলে" (Stehwelle) যার অর্থ দাঁড়ায় "দণ্ডায়মান বা স্থির তরঙ্গ"। মেলডে কম্পনশীল তারের মাধ্যমে সম্পাদিত তাঁর সুপরিচিত পরীক্ষাটিতে স্থির তরঙ্গের ঘটনাটি প্রদর্শন করেন।[৩][৪][৫][৬]
তরঙ্গ মাধ্যম যদি তরঙ্গের বিপরীত অভিমুখে স্থান পরিবর্তন করে, তাহলে স্থির তরঙ্গের ঘটনাটি ঘটতে পারে। আবার স্থিতিশীল মাধ্যমেও দুইটি বিপরীত অভিমুখী তরঙ্গের মধ্যে ব্যতিচারের কারণে স্থির তরঙ্গের সৃষ্টি হতে পারে। স্থির তরঙ্গের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল অনুনাদ নামক ঘটনাটি; এক্ষেত্রে একটি অনুনাদকের অভ্যন্তরে তরঙ্গগুলি সামনে-পিছনে প্রতিফলিত হবার সময় তাদের মধ্যে যে ব্যতিচার হয়, সেটির কম্পাঙ্ক অনুনাদকের অনুনাদী কম্পাঙ্কের সমান হলে স্থির তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
যদি সমান বিস্তারবিশিষ্ট তরঙ্গসমূহ একে অপরের বিপরীত অভিমুখে ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে গড়ে শক্তির নীট বিস্তারণ শূন্য হয়।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
- স্থির জলতরঙ্গ (ক্লাপোতি তরঙ্গ)