হরিশ-চন্দ্র
হরিশ-চন্দ্র মেহরোত্রা এফআরএস[২][৩] (১১ অক্টোবর ১৯২৩ - ১৬ অক্টোবর ১৯৮৩) ছিলেন একজন ভারতীয়-মার্কিন গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী। তার কাজ বীজগণিত, বিশ্লেষণ, জ্যামিতি এবং গোষ্ঠী তত্ত্বকে একটি মৌলিক পদ্ধতিতে সংযুক্ত করেছে। যার উপর ভিত্তি করে ডিফারেনশিয়াল জ্যামিতি এবং গাণিতিক পদার্থবিদ্যা থেকে শুরু করে সংখ্যাতত্ত্ব পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক কাজ করা হচ্ছে। তিনি গণিতের রিপ্রেজেন্ট থিওরি অর্থাৎ প্রতিনিধিত্ব তত্ত্বে মৌলিক কাজ করেছেন।[৪][৫]
হরিশ-চন্দ্র মেহরোত্রা | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৬ অক্টোবর ১৯৮৩ | (বয়স ৬০)
নাগরিকত্ব | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[১] |
মাতৃশিক্ষায়তন | এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ |
|
পুরস্কার | ফেলো অফ দ্য রয়েল সোসাইটি[২] বীজগণিতে কোল পুরস্কার(১৯৫৪) শ্রীনিবাস রামানুজন পদক |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | গণিত, পদার্থবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ |
|
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
হরিশ-চন্দ্র মেহরোত্রা ১৯২৩ সালের ১১ অক্টোবর কানপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[৬] হরিশ-চন্দ্রের পিতা চন্দ্র কিশোর উত্তর ভারতের একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং তার মা সত্যগতি শেঠ চন্দ্ররাণী ছিলেন একজন আইনজীবীর কন্যা। তাই বলা চলে হরিশ-চন্দ্রের প্রথম বছরগুলি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে অতিবাহিত হয়েছিল। তিনি কানপুরের বিএনএসডি কলেজ এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন।[৭] ১৯৪০ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর আরও পড়াশোনার জন্য বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স চলে যান। ১৯৪৫ সালে তিনি বেঙ্গালুরু ছেড়ে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন এবং পল ডির্যাকের[৭] অধীনে গবেষক ছাত্র হিসেবে কাজ শুরু করেন। কেমব্রিজে থাকাকালীন তিনি উলফগ্যাং পাউলির বক্তৃতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি পাউলির কাজের একটি ভুল ধরেন। সেই সময় থেকে পাউলির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই সময়ে তিনি গণিতের প্রতি ক্রমশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৪৭ সালে কেমব্রিজ থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
হরিশ-চন্দ্র ১৯৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান যেখানে তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৪৭ সাল থাকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি নিউ জার্সির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে অধ্যাপনার কাজ করেছেন। ১৯৪৯ সাল থাকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। ১৯৫০ সাল থাকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তার কার্মস্থল ছিল নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৩ সালে আবার ফিরে আসেন নিউ জার্সির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে। সেখানেই তিনি ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তার জীবনের দীর্ঘ কুড়ি বছর ছিলেন।
সম্মাননা এবং পুরস্কার
তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের সদস্য এবং রয়্যাল সোসাইটির একজন ফেলো। তিনি ১৯৫৪ সালে আমেরিকান ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির কোল পুরস্কারের প্রাপক ছিলেন। ১৯৭৪ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স একাডেমি তাকে শ্রীনিবাস রামানুজন পদক দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি ১৯৭৭ সালে পদ্মভূষণ লাভ করেন।[৮] ১৯৮১ সালে তাকে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়।
কানপুরের ভিএসএসডি কলেজের গণিত বিভাগ প্রতি বছর তার জন্মদিন বিভিন্নভাবে উদযাপন করে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কলেজ, ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং অধ্যাপকদের বক্তৃতা এবং হরিশ-চন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে ছাত্রদের পরিদর্শন।
ভারত সরকার তার নামানুসারে হরিশ-চন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নামকরণ করে। এটি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা এবং গণিতের জন্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান।
মৃত্যু
১৯৮৩ সালের ১৬ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটনে এই মহান ভারতীয়-মার্কিন গণিতবিদের মৃত্যু হয়।