অলিখিত সংবিধান

অলিখিত সংবিধান হচ্ছে এমন এক ধরনের সংবিধান যেখানে মৌলিক বিধানগুলো সাধারণত প্রথা, রীতিনীতি, নজির এবং বিভিন্ন সংবিধি ও আইনি উপকরণ রূপে বিরাজ করে।[১] সাধারণত বিচার বিভাগ, সরকারি কমিটি বা আইন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য পড়ার মাধ্যমে এই ধরনের সংবিধানের একটি বোঝাপড়া পাওয়া যায়। একটি অলিখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থায়, এই সকল উপাদানসমূহ সরকারের উপর বাধ্যতামূলক এবং সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার জন্য আদালত, আইনপ্রণেতাআমলাতন্ত্র কর্তৃক স্বীকৃত হতে পারে (বা নাও হতে পারে)। যাইহোক, একটি অলিখিত সংবিধানের সকল উপাদান সাধারণত বিভিন্ন সরকারি নথিতে লেখা থাকে, যদিও একটি একক নথিতে সংকলিত হয় না।

একটি অলিখিত সংবিধানের সুবিধা হলো এটি স্থিতিস্থাপক, কালের প্রেক্ষিতে অভিযোজনযোগ্য ও সহজে সংশোধনযোগ্য, এ. ভি. ডাইসি অলিখিত সংবিধানকে একটি রাজনৈতিক "সত্ত্বার সবচেয়ে সহজ শাসনতন্ত্র" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[২] তবে এই ধরনের সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা হলো যে সংবিধানের মৌলিক বিধানসমূহ গঠনকারী রীতিনীতি ও প্রথাসমূহের ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধি ও ব্যাখ্যার কারণে বিতর্ক তৈরি হতে পারে।

অলিখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থায়, সরকারের নিকট উদীয়মান কোনো নতুন পরিস্থিতি বা সমস্যা রুল বা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।[১] একটি লিখিত সংবিধানের বিপরীতে, এই ধরনের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সাংবিধানিক আইন তৈরির জন্য কোনো বিশেষ পদ্ধতি নেই এবং এটি অন্যান্য আইনের থেকে স্বভাবতই উচ্চতর হয় না। অলিখিত সংবিধানের অধিকারী একটি দেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে এমন কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্ত নেই যেখানে সেই দেশের সরকারের সাংবিধানিক মূলনীতিসমূহ আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত হয়েছিল; এর পরিবর্তে, দেশটির ইতিহাস জুড়ে উদ্ভূত রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির প্রভাবে সংবিধান বিকশিত হয়।[৩]

একটি সম্পূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হলে, একটি লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য হলো একটি সীমারেখা।[১] যেকোনো লিখিত সংবিধান একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সম্পূরক আইন ও প্রথাগত অনুশীলনের সঙ্গে আচ্ছাদিত হয়। বিপরীতভাবে, দীর্ঘ সময় যাবত একটি অসংহিতাবদ্ধ ব্যবস্থায় পালিত রীতিনীতি ও অনুশীলনসমূহ একটি লিখিত সংবিধানে বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে যুক্ত করা যেতে পারে, উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিদের জন্য দুই মেয়াদের সীমার ক্ষেত্রটি ধরা যেতে পারে। ফ্র‍্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাব্দী যাবত সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাষ্ট্রপতি দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় ছিলেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাধ্যতামূলক দে জুরি হিসেবে লিখিত সংবিধানে এই আইনটি সংযোজন করা হয়েছিল।

বর্তমানে ব্যবহৃত অলিখিত সংবিধান

নিম্নোক্ত রাষ্ট্রগুলোর অলিখিত সংবিধান রয়েছে:

অলিখিতধরনএই ধরনের সংবিধান বিশিষ্ট রাষ্ট্র
সম্পূর্ণ অলিখিত  ইসরায়েল
 সান মারিনো
 সৌদি আরব
আংশিক লিখিত (কিছু নথিপত্রে)  কানাডা
 চীন
 নিউজিল্যান্ড
 যুক্তরাজ্য

ইসরায়েল

ইসরায়েলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ১৯৪৮ সালের ২ অক্টোবরের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নেসেটের অসংলগ্ন মতপার্থক্যের কারণে, কোনো সম্পূর্ণ লিখিত সংবিধান এখনও প্রণীত হয় নি। তবে বেশ কিছু মৌলিক নীতি রয়েছে।

কানাডা

যদিও কানাডায় সাংবিধানিক আইন রয়েছে,[৪] তবুও সাংবিধানিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অলিখিত। কানাডার সংবিধানের প্রস্তাবনাও একে "নীতিগতভাবে যুক্তরাজ্যের অনুরূপ" বলে ঘোষণা করা হয়েছে (উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যেরটিও অলিখিত)।[৪] এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে ও প্রদেশগুলোতে প্রযোজ্য,[৫] যদিও উভয়েরই তাদের অধীনস্থ এলাকার মধ্যে তাদের নিজস্ব সংশোধনী কার্যকর করার ক্ষমতা রয়েছে। আজ অবধি শুধুমাত্র ব্রিটিশ কলাম্বিয়া একটি লিখিত প্রাদেশিক সংবিধান প্রণয়ন করেছে, যদিও অন্যান্য প্রদেশের ভূমিকা ও ক্ষমতাসমূহ সংবিধান আইন, ১৮৬৭-এর ধারা ৯৩-এ উল্লেখ করা হয়েছে এবং বিশেষ প্রদেশগুলোর সাথে মোকাবিলা করার জন্য এটির সংশোধনীর মাধ্যমে ম্যানিটোবা আইন এবং নিউফাউন্ডল্যান্ড আইন পাস করা হয়েছে।

চীন

আইন তাত্ত্বিক জিয়াং শিগং-সহ কিছু চীনা শিক্ষাবিদ যুক্তি দিয়েছেন যে চীনের একটি লিখিত ও অলিখিত উভয় ধরনের সংবিধানই কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক নেতৃত্বের উপর ভিত্তি করে রয়েছে।[৬]

নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের কোনো একক সাংবিধানিক দলিল নেই।[৭][৮] এটিকে কখনো কখনো একটি "অলিখিত সংবিধান" হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যদিও নিউজিল্যান্ডের সংবিধান প্রকৃতপক্ষে লিখিত ও অলিখিত উভয় উৎসের সমন্বয়।[৯][১০] সাংবিধানিক আইনের ক্ষেত্রে সংবিধান আইন ১৯৮৬[৯]-এর পাশাপাশি অন্যান্য বিধিমালা, কাউন্সিলের আদেশ, পত্রের পেটেন্ট, আদালতের সিদ্ধান্ত, ওয়াইতাঙ্গি চুক্তির নীতিমালাসমূহ[৭][১১] এবং অলিখিত প্রথা ও কনভেনশনের সংকলনের একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে, "সংবিধান" বলা যেতে পারে এমন কোনো সংজ্ঞায়িত দলিল নেই। কারণ যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিপ্লব, সরকারের পতন বা রাজতন্ত্রের উৎখাতের মতো ঘটনাতে হঠাৎ পরিবর্তন হয় নি বরং সময়ের সাথে বিকশিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ক্রমাগত সংসদের অধিনিয়ম ও আদালতের রায় দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে একটি সাংবিধানিক কোডের সবচেয়ে কাছাকাছি আসা দলিলটি হলো ১৭০৭-এর ইউনিয়ন চুক্তি।

একটি অলিখিত সংবিধান থাকার কারণে, যুক্তরাজ্যেরঅনেক আইন সাংবিধানিক বিধিমালার সংকলনে সংযুক্ত করা হয়েছে, যেমন সংসদ আইন ১৯১১ ও ১৯৪৯, তথ্যের অধিকার আইন ২০০০, মানবাধিকার আইন ১৯৯৮ এবং সংসদ ভাঙন ও আহ্বান আইন ২০২২। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক বিধিমালাসমূহ একটি একক দলিলে লিপিবদ্ধ নেই।[১২]

সান মারিনো

সান মারিনোর বেশ কিছু দলিল রয়েছে যা এর সংবিধান তৈরি করে, যেগুলোর কয়েকটি শতাব্দী স্থায়ী। এই দলিলসমূহের মধ্যে ১৬০০ সালের বিধিমালা ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রের ছয়টি বই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি এখনো অবধি টিকে থাকা বিশ্বের প্রাচীনতম সংবিধান।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের কোনো আইনগতভাবে বাঁধানো লিখিত সংবিধান নেই।[১৩] ১৯৬০ সালে বাদশাহ ফয়সাল ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কুরআনকে সৌদি আরবের সংবিধান হিসেবে ঘোষণা করেন। যাইহোক, ১৯৯২ সালে রাজকীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান-সদৃশ সৌদি আরবের মৌলিক আইন গৃহীত হয়েছিল।[১৪]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন