আবদুল্লাহ ইবনে উবাই

বনু খাজরাজ গোত্রের প্রধান
(আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই (আরবি: عبد الله بن أبي بن سلول; মৃত্যু: ৬৩১), যিনি মাতামহের সূত্রে ইবনে সালুল নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন বনু খাজরাজ গোত্রের প্রধান এবং মদিনার একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। মুহাম্মাদ (সাঃ) মদিনায় আসার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, যদিও তার ধর্মান্তরিত হওয়ার বিশ্বস্ততা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে তার বারংবার দ্বন্দ্ব্বের কারণে ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে তাকে একজন মুনাফিক (ভণ্ড, প্রতারক) এবং মুনাফিকদের সর্দার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[১]

মদিনায় সামাজিক অবস্থান

ইবনে উবাই বনু খাজরাজ গোত্রের দলনেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তৎকালীন সময়ে বনু খজরাজ গোত্র বনু আউস গোত্রের সাথে দ্বন্দ্ব্বে লিপ্ত ছিল। ফিজার যুদ্ধের সময়ে প্রথম দিনের যুদ্ধে ইবনে উবাই খাজরাজ গোত্রের একটি অংশের নেতৃত্ব দেন, কিন্তু দ্বিতীয় দিনে তিনি সরে আসেন। এরপর অন্য আরেক নেতার সাথে ইহুদি জিম্মিদের হত্যার বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়ার কারণে বুয়াস যুদ্ধেও তিনি যোগ দেন নি।[১][২] উক্ত দ্বন্দ্ব্বের সময় বনু কায়নুকা গোত্রের কিছু ইহুদি বন্ধু তার জীবন রক্ষা করেন, যা তিনি এভাবে বলতেন : "গাড়িবহরে সজ্জিত ৩০০ সেনা, সাথে আরও ৪০০ জন খালি হাতে, তারা হাদাইক এবং বোয়াসের ময়দানে আমাকে প্রকৃত শত্রু থেকে রক্ষা করেছে।"[৩][৪]

ইবনে উবাই এই গোত্রীয় শত্রুতা মেটানোর জন্য তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন [২] এবং এই দুই গোত্রের শত্রুতার আংশিক মিটমাট করতে সক্ষম হন। এ কারণে এ উভয় গোত্রই তার নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেয়।[৫]ইসলামের পূর্বে মদিনায় তিনি উচ্চ সামাজিক মর্যাদা অর্জন করেছিলেন, এবং তার সমর্থকরা তাকে রাজা বানানোরও পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমনের কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারে নি।[১][৬] গোত্রে গোত্রে বিবাদ তখনো পরিপূর্ণভাবে মিটছিল না, এ কারণে কিছু মদিনাবাসী বিকল্প কোনো বিরোধ নিষ্পত্তিকারকের সন্ধান করছিল এবং সে কারণেই তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)কে নিয়ে আসে, যার ধর্মপ্রচারের কারণে ইতোমধ্যেই তিনি তার বাসস্থান মক্কায় সুপরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।[৫] আল্লাহ কর্তৃক প্রতিশ্রুত বার্তাবাহক হিসেবে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনে জনমনে ইবনে উবাইয়ের প্রভাব নিমিষেই মিলিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনা ইবনে উবাইয়ের মনে ঈর্ষার জন্ম দেয়, কিন্তু সে তার শান্তিপূর্ণ আচার ব্যবহারের মাধ্যমে সকলের কাছে তা গোপন রাখে। সবকিছুর পরও ইবনে উবাইয়ের মর্যাদা আগের মতোই অক্ষুণ্ণ থাকে।[৫][৭]

ইসলাম গ্রহণ

মদিনায় মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রবেশ করার পর স্থানীয় আরব জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ ইসলাম গ্রহণ করে। ইবনে উবাইও এর সাথে মানিয়ে নিল (ম্যাক্সিম রবিন্সনের মতে) এই ভেবে যে, এর বিরোধিতা করার চেয়ে এতে যোগদান করাই অধিক বুদ্ধিমানের কাজ হবে।[৬] অনেকের মতে সে হিজরতের পরপর সা'দ ইবনে মুয়াজের সাথে একই সময়ে ইসলাম গ্রহণ করে।[৮] ইসলামের ঐতিহ্যগত ইতিহাসে ইবনে উবাইয়ের ধর্মান্তরিত হওয়াকে প্রতারণা বলে মনে করা হয় এবং তাকে মুনাফিকদের সর্দার হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।[১][৯][১০] রবিন্সনের মতে, ইহুদিদের সাথে যোগাযোগ থাকার ফলে ইবনে উবাইর মনে একেশ্বরবাদের প্রতি আগ্রহ জন্মে, এবং সম্ভবত এ কারণেই সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।"[১১]

মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বিরোধিতা করার কারণে , ইবনে উবাই প্রকাশ্যে ও গোপনে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপহাসকারীদের নেতা হয়ে উঠল এবং মদিনায় মুসলিমদের আগমনের ফলে আগত বিপদ ও বিভ্রান্তি নিয়ে অভিযোগ করতে লাগল।[৫] ইবনে ইসহাক লিখেছেন, কিছুসংখ্যক আনসার সাহাবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এরকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করতে রাজি ছিলেন না, তারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করলেও অন্তরে বিশ্বাসঘাতকতা লুকিয়ে রেখেছিল, এবং এ কারণে সে সময়েই তারা প্রতারক বা মুনাফিক বলে পরিচিত ছিল।ইসলাম বিরোধী প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম মুরের মতে, ইবনে উবাই মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রোষানলে পতিত লোকজনের পক্ষে থাকার কারণে ইসলামের প্রথাগত ইতিহাসে তাকে নেতিবাচকরূপে প্রদর্শন করা হয়েছে।[১২]

সেনা অভিযানসমূহ

বনু কায়নুকা

ইহুদিদের বনু কাইনুকা গোত্র ছিল পেশায় কর্মকার, স্বর্ণকার ও তৈজসপত্র নির্মাতা। বদর যুদ্ধের কিছুদিন পর তাদের বাজারে এক মুসলিম মেয়ে এক ইহুদি স্বর্ণের দোকানে একটি কাজে গিয়েছিল। ঐ মুসলিম মহিলা যখন ঐ দোকানে গিয়েছিলেন তখন ঐ ইহুদি কর্মচারী মুসলিম মহিলাটির মুখ খুলতে বলে। কিন্তু মহিলাটি তার মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় মহিলাটি যখন স্বর্ণের দোকানের একটি চেয়ারে বসে তখন ইহুদি কর্মচারীটি ওই মহিলার পোশাকে পেরেক মেরে চেয়ারের সাথে আটকে দেয়, ফলে উঠতে গিয়ে ঐ মহিলার জামা ছিঁড়ে সারা শরীর অনাবৃত হয়ে যায়। মুসলিম মহিলার আর্তনাদ শুনে এক মুসলিম পথচারী এটা দেখে খেপে গিয়ে ঐ ইহুদি কর্মচারীকে হত্যা করেন, এরপর ইহুদি কর্মচারীর পক্ষের লোকেরা সবাই মিলে ঐ মুসলমানকে হত্যা করে ফেলে।[১৩][১৪]:১২২[১৫]

উক্ত ঘটনার ফলে, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে, মুসলিমগণ ইহুদি গোত্র বনু কায়নুকার উপর আক্রমণ চালায়, এবং ১৫ দিন তাদেরকে অবরোধ করে রাখার পর অবশেষে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, ইবনে উবাই তখন বনু কায়নুকার সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্কে আবদ্ধ থাকায় মুহাম্মাদের কাছে তাদের শাস্তি লঘু করার জন্য আবেদন করেন।[১] মুহাম্মাদ উত্তরে বলেন, আমাকে যেতে দাও। ইবনে উবাই তাতে উত্তর দিলেন :

"কক্ষনো না […] আমি ততক্ষণ আপনাকে যেতে দেবো না যতক্ষণ না আপনি আমার বন্ধুদের প্রতি অণুকম্পা প্রদর্শন করেন; গাড়িবহরে অস্ত্রসহ সজ্জিত ৩০০ জন সেনা এবং নীরস্ত্র ৪০০ জন লোক, -- এরা হাদাইক ও বুয়াসের ময়দানে আমাকে প্রতিটি বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। এদেরকে কি আপনি একদিনেই মেরে ফেলবেন, হে মুহাম্মাদ ? আমি তো এমন এক ব্যক্তি যে কিনা আমার জন্য ভাগ্যের পরিহাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি।"[৩]

এতে মুহাম্মাদ তার অণুরোধ গ্রহণ করলেন, এবং বনু কায়নুকাকে শহর ছেড়ে চলে যাবার জন্য তিন দিনের সময় দিলেন।[১৬]

ইবনে উবাইয়ের শেষের উক্তিটি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। রবিনসনের বিবেচনায় এটি ছিল মুহাম্মাদের উপর ইবনে উবাইয়ের হুমকি,[১৬] অপরদিকে উইলিয়াম মন্টগোমেরি ওয়াট মনে করেন যে, ইবনে উবাই মক্কা থেকে আসন্ন আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে একটি উপযুক্ত যোদ্ধাবাহিনী হিসেবে মুহাম্মাদের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।[১]

মুসলিমগণ এই ঘটনাটিকেও ঐতিহ্যগতভাবে ইবনে উবাইয়ের কুটিলতার আরেকটি প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন, কারণ ইসলামের গণ্ডিতে প্রবেশ করেও ইবনে উবাই তার অতীতের গোত্রীয় ও ব্যক্তিগত আনুগত্যের দায়িত্বকে সম্পূর্ণরূপে ছাড়তে পারে নি।[১৭] পরিশেষে, ইবনে উবাই বনু কায়নুকাকে রক্ষা করতে না পারলেও তাদের জন্য মুহাম্মাদের কাছে করুণা প্রদর্শনের আবেদন করেন। তার আবেদনে এটি প্রতীয়মান হয় যে মুহাম্মাদ হয়ত তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়েছিলেন, যে আদেশ তিনি এরপরে বনু কুরায়জার জন্যেও দিয়েছিলেন, কিন্তু ইবনে উবাইয়ের মধ্যস্থতার পর তাদের শাস্তি লঘু করে তাদেরকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করা হয় মাত্র এবং তাদের সহায়-সম্পত্তি সাথে নিয়ে যাওয়ারও অণুমতি দেওয়া হয়।[৪]

উহুদের যুদ্ধ

মুহাম্মাদের সাথে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় মক্কার পরবর্তী আক্রমণ সম্পর্কে সলাপরামর্শকালে ইবনে উবাই মুহাম্মাদের "স্বয়ং মদিনার দুর্গসমূহ থেকেই প্রতিরক্ষা করার" মূল পরকল্পনাকে সমর্থন করেন এবং বলেন :

"আমাদের শহর অক্ষত, বহিঃশক্তির আক্রমণ হতে মুক্ত। আমরা কখনোই আমাদের শত্রুদের সাথে বিবাদে জড়াতে চাই নি, কিন্তু তবুও দেয়ালের ভেতর বসে থেকে আমরা তাঁদেরকে নাজেহাল করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। কুরাইশদের একলাই ছেড়ে দেওয়া হোক। যদি তারা এভাবেই থাকে, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। যখন তাঁদের সময় শেষ হয়ে আসবে, তখন তাঁদের পরিকল্পনা হতাশাজনক এবং ব্যর্থ বলেই প্রমাণিত হবে।"[১৮]

কিছু তরুণ মুসলিম, সে সময়ে, এর বিরোধিতা করে বলেন মদিনার বাইরেই মক্কাবাসীর সাথে লড়াই করা উচিত। উক্ত তরুণদের কথায় রাজি হয়ে মুহাম্মদ সেভাবেই যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করেন।

আল-ওয়াকিদির বক্তব্য অনুযায়ী, ইবনে উবাইও ৩০০ জন নিজস্ব সৈন্য এবং সাথে তার বাদবাকি ইহুদি মিত্রদের সাথে নিয়ে তাদের সাথে যেতে লাগলেন, কিন্তু মুহাম্মাদ তাকে নির্দেশ দিলেন যে সে যেন উক্ত "মূর্তিপূজক/চাটুকার ইহুদিদের" ফেরত পাঠায়। ইবনে উবাই তার লোকজনকে মদিনার দুর্গে ফেরত পাঠালে মুহাম্মাদ পুনরায় যাত্রা শুরু করলেন।[১][১৮] ইসলামী বর্ণনানুসারে, তার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তিনি এই বলে রাগ দেখিয়েছিলেন যে : "আমি জানি না কেন আমদের নিজেদেরকেই সেখানে গিয়ে মরতে হবে।"[১৯] আরও ধারণা করা হয় যে, ইবনে উবাইও মদিনাকে অথবা নিজ সম্পদকে রক্ষা করার জন্য মদিনায় ফিরে গিয়েছিলেন।[১৮][২০] ওয়াটের বর্ণনা অনুসারে, সুরা ৩:১৬৬ এ ইবনে উবাইয়ের আল্লাহ ও মুহাম্মাদের প্রতি বিশ্বাসের অভাব এবং কাপুরুষতাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[১][২১]

মুহাম্মাদ ৭০০ জন সৈন্য নিয়ে কুরাইশদের ৩০০০ জন সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হলেন। কুরাইশগণ "মুহাম্মদকে হত্যা করা এবং মদিনা দখল করা" এই দুই পরিকল্পনার কোনোটিতেই সফল হল না। রডিনসন বলেন, সে সময় পরাজিত বিধ্বস্ত মুসলিমদেরকে মক্কাবাসী পুনরায় আক্রমণ করতে চায় নি।[২২]

বনু নাদির

বনু নাদের ছিল মদিনার ইহুদিদের মাঝে সবচেয়ে বড় গোত্র। তাদের মূল ব্যবসা ছিল খেজুর উৎপাদন। ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে একটা সংঘর্ষে মুসলমান এবং ইহুদি বনু নাদের গোত্রের উভয়পক্ষের লোকজনের দ্বারা বনু কেলাব গোত্রের দুইজনের নিহত হবার ঘটনায় ক্ষতিপূরণের একটা অংশ বনু নাদেরেরও বহন করা উচিত এই দাবী নিয়ে মুহাম্মাদ বনু নাদির গোত্রের গোত্রপতিদের কাছে আলোচনা করার জন্য গেলে বনু নাদের গোত্রের লোকজন মুহাম্মাদকে বলে আপনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, আমরা নিজেরা আলোচনা করে তারপর আপনাকে জানাচ্ছি। মুহাম্মাদ তখন তাদের একটি ঘরের দেওয়াল সংলগ্ন জায়গায় বসে ছিলেন। সেই সময় বনু নাদির গোত্রের ইহুদিরা ঐ ঘরের ছাদ থেকে একটি বড় পাথর ফেলে মুহাম্মাদকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ঠিক সেই সময় ফেরেশতা জিবরাঈল মুহাম্মাদকে বনু নাদির গোত্রের এই পরিকল্পনা জানিয়ে দেয়। মুহাম্মাদ সাথে সাথে সেখান থেকে উঠে গিয়ে পরে মদিনায় চলে যান। তারপর একটানা ৬ দিন ৬ রাত অবরোধ করে রাখার পর বনু নাদির গোত্রের ইহুদিরা মুহাম্মাদের কাছে ক্ষমা চায়। বনু কায়নুকা গোত্রের মতো বনু নাদির গোত্রের সকল ইহুদিদেরকে মুহাম্মাদ এই শর্তে ক্ষমা করে দেন যে তারা মদিনা থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে যাবে। উক্ত ঘটনার পুরো বর্ণনা কুরআনের সুরা হাশরে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইবনে উবাই মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে বনু নাদির নামক এই ইহুদি গোত্রের সাথেও চক্রান্তে জড়িত ছিলেন। ইবনে ইসহাক বলেন যে, মুহাম্মাদ উক্ত গোত্রটিকে দশ দিনের মধ্যে মদিনা শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন এবং "মদিনার কিছু অবিশ্বাসী লোক বনু নাদিরের কাছে চিঠি পাঠাল, যাতে লেখা ছিল : 'সাবধান হও আর নিজেদেরকে রক্ষা কর; আমরা তোমাদেরকে মুহাম্মাদের কাছে সমর্পণ করব না। যদি তোমাদের আক্রমণ করা হয় তবে আমরা তোমাদের সাথে লড়ব আর যদি তোমাদের ফেরত পাঠানো হয় তবে আমরা তোমাদের সাথে যাব।'" একটি সূত্রে বলা হয় ইবনে উবাইও সেই সকল লোকদের মধ্যে একজন ছিলেন। ওয়াকিদি বলেন যে শুরুতে ইবনে উবাই তাদের সাথে একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছুতে চেয়েছিলেন, এবং তাবারি বলেন যে আবদুল্লাহ মুহাম্মাদকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দোষারোপ করে এবং সাহায্য প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বনু নাদিরকে চলে যেতে বাধা দেয়।[২৩] এরপরেও, ইবনে উবাইয়ের প্রতিশ্রুত সাহায্যের বাস্তবায়নের কোনো রূপ চিহ্ন না পেয়ে বনু নাদির গোত্র আত্মসমর্পণ করে এবং মুহাম্মাদ তাদের মদিনা শহর থেকে বহিষ্কার করেন।[২৪][২৫]

ওয়াট এই ঘটনাকে প্রথম উদাহরণ বলে মনে করেন, যেখানে ইবনে উবাই মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে গিয়ে বাচনিকভাবে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন, এবং তা পরবর্তী দুই বছর ধরে অব্যাহত ছিল।[১]

বনু মুস্তালিক অভিযান চলাকালের সমালোচনা

মুহাম্মাদ জামাদিউস সানির অবশিষ্টাংশ এবং রজব মাস মদিনায় অতীবাহিত করলেন। তারপর ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ ৬ষ্ঠ হিজরির শা’বান মাসে খাজায়া গোত্রের বনু মুস্তালিক শাখার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। ইবনে উবাইও এই অভিযানে মুহাম্মাদের সাথে অংশগ্রহণ করেন।

এক সময় মুহাম্মাদ জানতে পারলেন যে, বুন মুসতালিক গোত্র তাঁর সৈন্য সমাবেশ করছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হারেস ইবনে আবু দিরার যিনি মুহাম্মাদ এর অন্যতম স্ত্রী জুয়াইরিয়ার পিতা। এ খবর পেয়েই মুহাম্মাদ সৈন্য সামন্ত নিয়ে তাদের মুকাবিলায় বেরুলেন। মুরাইসি নামক ঝরনার কিনারে তাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হলো। আল্লাহ বনু মুস্তালিককে পরাজিত করলেন। তাদের বহু লোক নিহত হলো। মুহাম্মাদ তাদের সন্তান, নারী ও সম্পদ গণিমত হিসেবে গণ্য করলেন।

বনু কালব ইবনে আউফ গোত্রের হিশাব ইবনে সুবাবা নামক জনৈক মুসলিম এতে নিহত হলেন। তাঁকে শত্রুপক্ষীয় মনে করে উবাদা ইবনে সমিতের দলভুক্ত জনৈক আনসারী সাহাবী ভুলক্রমে হত্যা করেন।

ঝরনার কিনারে অবস্থানকালেই মুসলমানদের মধ্যে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটল। জাহজাহ ইবনে মাসউদ নামক বনু গিফারের এক বেদুঈন ক্রীতদাস ব্যক্তিকে উমার ইবনুল খাত্তাব তাঁর ঘোড়া রাখার জন্য মজুর হিসাবে নিয়োগ করেন। পানি নিয়ে খাজরাজ গোত্রের সিনান ইবনে আবার জুহানির সাথে তার ঝগড়া হয় এবং ক্রমে ঝগড়া মারামারিতে রূপান্তরিত হয়। তখন জুহানি চিৎকার করে ডাকলো “হে আনসারগণ, বাঁচাও।” জাহজাহও চিৎকার করে বললো, “হে মুহাজিরগণ, আমাকে বাঁচাও।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুল তখন তার গোত্রের একদল লোকের সাথে অবস্থান করছিল। কিশোর জায়িদ ইবনে আরকামও সেই দলের মধ্যে ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই চিৎকার শুনে উত্তেজিত হয়ে বলল, তারা কি শেষ পর্যন্ত এমন কাণ্ড ঘটাল ? ওরাতো আমাদের মাঝে থেকেই দল ভারী করে অহমিকায় মেতে উঠেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের ও মুহাজিরদের অবস্থা সেই প্রবাদ বাক্যের মতোই গড়াচ্ছে যে, ‘নিজের কুকুরকে খাইয়ে দাইয়ে মোটাসোটা বানাও, দেখবে একদিন সে তোমাকেই কেটে খাবে।’ আল্লাহর কসম, এবার যদি আমরা মদিনায় ফিরে যাই তাহলে সবলরা দুর্বলদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেবে।” তারপর তার স্বগোত্রীয়দের বলতে লাগল, “তোমার নিজেদের কী সর্বনাশ করেছ, এখন দেখ। ওদেরকে এ দেশে ঠাঁই দিয়েছ। তোমাদের সম্পদের ভাগ দিয়েছ। ওদের প্রতি অমন বদান্যতা যদি না দেখাতে তাহলে ওরা অন্যত্র যেতে বাধ্য হতো।” মুরের ভাষায়,

"আমাদের মাঝে এই আগন্তুকদেরকে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে তোমরা নিজেরাই নিজেদের উপর এই বিপদ ডেকে এনেছ। আমরা মদিনায় ফিরে গেলে নিশ্চয়ই সবলরা দুর্বলদের বহিষ্কার করে দেবে!"[২৬]

ওয়াট বলেন ইবনে উবাইর এই কথার উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে মুহাম্মদের কর্তৃত্বকে সবার কাছে খাটো করা, যেন এতে লোকজন মুহাম্মাদ কে বহিষ্কার করার কথা ভাবতে শুরু করে।[১]

জায়িদ ইবনে আরকাম এসব কথাবার্তা শুনে মুহাম্মাদ কে জানালেন। এ সময় তিনি সবেমাত্র শত্রুকে পরাস্ত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তিনি যখন এই খবর শুনলেন তখন তার কাছে উমর ইবনুল খাত্তাব উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, “আব্বাদ ইবনে বিশরকে নির্দেশ দিন তাকে যমের ঘরে পাঠাক।” মুহাম্মাদ বললেন, “উমর আমি যদি তা করি তাহলে লোকেরা বলবে যে,মুহাম্মাদ নিজেই তার সহচরদের হত্যা করছে। তা করা যায় না। তবে তুমি এখনই এখান থেকে রওনা হবার নির্দেশ জানিয়ে দাও।” যে সময় এ নির্দেশ দেওয়া হলো সে সময় সাধারণত মুহাম্মাদ কোথাও রওনা হতেন না। তথাপি সবাই রওনা হলো। এছাড়া ইবনে উবাইয়ের নিজ পুত্র আবদুল্লাহও মুহাম্মাদ এর কাছে নিজের পিতাকে হত্যার আবেদন জানিয়ে অণুরোধ করেছিল।[২৬][২৭][২৮]

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুল যখন জানতে পারল যে জায়িদ ইবনে আরকাম তার কথাগুলো মুহাম্মাদ বলে দিয়েছেন, তখন সে মুহাম্মাদের কাছে ছুটে গিয়ে কসম খেয়ে বলতে লাগল, “জায়িদ যা বলেছে, আমি সে সব কথা বলি নি।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যেহেতু স্বগোত্রে খুবই সম্মানিত লোক বলে গণ্য হত তাই মুহাম্মাদের নিকট যেসব আনসারী সাহাবী ছিলেন তারা বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, জায়িদ হয়ত ভুল শুনেছে এবং সে যা বলেছে তা হয়ত পুরোপুরি মনে রাখতে পারে নি।” এভাবে তারা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের প্রতি একটু সৌজন্য দেখালেন এবং তাকে বাঁচিয়ে দিলেন।

মুহাম্মাদ রওনা হলেন, তার সাথে উসায়েদ ইবনে হুদাইস দেখা করলেন। তাকে সালাম ও অভিবাদন পূর্বক বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি বড়ই অসুবিধাজনক সময়ে যাত্রা করেছেন। সাধারণত এরকম সময়ে আপনি কোথাও যাত্রা করেন না।” মুহাম্মাদ বললেন, “তোমাদের সঙ্গী লোকটি কি বলেছে তা শোন নি?” তিনি বললেন, “কোন্ সঙ্গী ?” মুহাম্মাদ বললেন, “আবদুল্লাহ ইবনে উবাই।” উসায়েদ বললেন, “সে কী বলেছে ?” মুহাম্মাদ বললেন, “তার ধারণা, সে যদি মদিনায় ফিরে যেতে পারে তাহলে সবলরা দুর্বলদেরকে সেখান থেকে বের করে দেবে।” উসায়েদ বলল, “হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ইচ্ছা করলে তাকে আমরা বের করে দিতে পারি। সত্যই সে অত্যন্ত হীন ও নীচ। আর আপনি পরাক্রান্ত।” তিনি আরো বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, তার প্রতি একটু নমনীয় হোন। আল্লাহর কসম, আপনাকে আল্লাহ আমাদের এমন সময় এনে দিয়েছেন যখন তার গোত্র তাকে মুকুট পরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাই সে মনে করে, আপনি তার থেকে একটা রাজ্য কেড়ে নিয়েছেন।”

মুহাম্মাদ সে সময় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদের ঝুঁকি এড়াতে সেইদিনেই যুদ্ধের জন্য পুনরায় যাত্রা শুরু করেন। তিনি তার সাহাবীদের সাথে নিয়ে একদিন একরাত ধরে পথ চললেন। পথে প্রচণ্ড রৌদ্রে তাদের অসহনীয় কষ্ট হতে লাগল। তাই এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলেন। লোকেরা মাটিতে নামতেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। আগের দিন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথায় লোকদের ভেতর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই মুহাম্মাদ এভাবে অসময়ে যাত্রা করেছিলেন। বিশ্রাম শেষে মুহাম্মাদ পুনরায় সদলবলে যাত্রা শুরু করলেন। হিজাজের মধ্য দিয়ে যাত্রাকালে তিনি একটি ঝরনার কাছে যাত্রাবিরতি করলেন। সে স্থানটার নাম বাক্কা। সেখান থেকে পুনরায় যখন যাত্রা শুরু হলো তখন মুসলমানদের উপর দিয়ে হঠাৎ একটা কষ্টদায়ক ভীতিপ্রদ বাতাস বয়ে গেল। মুহাম্মাদ বললেন, “এ বাতাসকে তোমরা ভয় পেয়ো না। একটা মস্তবড় কাফিরের মৃত্যু ঘটেছে। সে জন্যই এ বাতাস।” মদিনায় ফিরে দেখেন বনু কাইনুকা গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি রিফায়া ইবনে জায়িদ ঐ দিনই মারা গেছে। সে ছিল মুনাফিকদের আশ্রয়স্থল তথা কুমন্ত্রণাদাতা।

কুরআনের সুরা মুনাফিকুন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার মতো লোকদের সম্পর্কেই।[২৯] জায়িদ ইবনে আরকামের কানে হাত রেখে বললেন, “এই ব্যক্তি তার কানের সাহায্যে আল্লাহর ওয়াদা পালন করেছে।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের পুত্র আবদুল্লাহ তার পিতার ব্যাপারটা জানতে পেরে মুহাম্মাদ কে বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি শুনেছি, আপনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে তার বৈরী কথাবার্তার জন্য হত্যা করতে ইচ্ছুক। যদি সত্যিই আপনি ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে নির্দেশ দিন আমি তার মাথা আপনার কাছে পৌঁছিয়ে দিই। আল্লাহর কসম, খাজরাজ গোত্র জানে যে, ঐ গোত্রে আমার চেয়ে পিতৃভক্ত লোক আর নেই। আমার আশঙ্কা হয় যে, আপনি আমার পিতাকে হত্যার জন্য কাউকে নির্দেশ দেবেন। আর সে তাকে হত্যা করবে, তখন আমার পিতৃহত্নাকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখে হয়ত আমার প্রবৃত্তি কুপ্ররোচনা দিয়ে আমাকে অসহিষ্ণু করে তুলবে। ফলে তাকে হত্যা করে আমি জাহান্নামে যেতে বাধ্য হব। কেননা সেক্ষেত্রে আমি একজন কাফিরের বদলায় একজন মু’মিনকে হত্যার দায়ে দোষী হব।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “না সে যতদিন আমাদের সাথে থাকে ততদিন তার প্রতি আমরা নমনীয় থাকব এবং ভালো ব্যবহার করব।”

এরপর থেকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যখনই কোনো অঘটন ঘটাত, তার গোত্রের লোকেরাই তাকে শায়েস্তা করত। তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করত এবং পাকড়াও করত। এই অবস্থা জেনে একদিন মুহাম্মাদ উমর ইবনুল খাত্তাবকে বললেন, “উমর, পরিস্থির পরিবর্তনটা দেখছ তো ? তুমি যেদিন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলে সেদিন যদি তাকে হত্যা করতাম তাহলে অনেকেই নাক সিটকাত। কিন্তু আজ যদি তাকে হত্যার নির্দেশ দিই তাহলে সেদিন যারা নাক সিটকাত তারাই আজ তাকে হত্যা করবে।” উমর বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি জানি আল্লাহর রাসুল এর সিদ্ধান্ত আমার সিদ্ধান্তের চাইতে অধিক কল্যাণকর।”

এরপর একই বছর মার্চ মাসে, মুহাম্মাদ এর স্ত্রী আয়িশার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে অভিযোগ আনা হল এবং তখন ইবনে উবাই ছিলেন তাদের মধ্যে একজন যারা এই গুজবটি রটিয়ে বেড়াচ্ছিল।[২৬][৩০][৩১] আওস গোত্রের একজন নেতা অপবাদ রটনাকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য অণুমতি প্রার্থনা করেন, কিন্তু খাজরাজ গোত্র এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। মুহাম্মাদ আয়িশার সতীত্ব সম্পর্কে ঐশী নিশ্চয়তা প্রদানকারী আয়াত নাজিল হওয়ার খবর সবাইকে জানানোর পর প্রত্যেক অপবাদকারীকে আশিটি বেত্রাঘাতের শাস্তি দিলেন, কিন্তু ইবনে উবাইকে কোনো শাস্তি দিলেন না।[২৬]

অন্তিমকাল

ওয়াটের মতে, ৬২৭ সালের পর ইবনে উবাইয়ের বিরোধিতার তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা পাওয়া যায় নি। ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে সে মুহাম্মাদ এর সাথে হুদায়বিয়ায় যাত্রা করেছিল।[১] রুডই প্যারেটের ভাষ্যমতে, মুহাম্মাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীটি সে সময় মুহাম্মাদের পক্ষে এসে পড়ল।[৩২] ৬৩০ সালে মুহাম্মাদ তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলে ইবনে উবাই তাবুক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদানকারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। মুসলিম সেনাবাহিনী তাবুকের পথে যাত্রা শুরু করলে ইবনে উবাই গোপনে তার লোকজন নিয়ে সেনাদল থেকে পালিয়ে গিয়ে মদিনায় ফিরে আসে। অনেকে বলেন, তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুহাম্মাদ এর অণুমতিতেই সে যুদ্ধ ছেড়ে চলে এসেছিল। মুহাম্মাদ তাবুক থেকে ফিরে আসার পর, যারা যুদ্ধের সমালোচনা করেছিল এবং যুদ্ধে না গিয়ে মদিনায় থেকে গিয়েছিল তাদেরকে তিরস্কার করে সুরা তওবার ৮১ তম আয়াত অবতীর্ণ হয়।৯:৮১.[১২]

তাবুক থেকে ফিরে আসার পর ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা যায়। তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ নবীর সেবায় হাজির হয়ে কাফনে ব্যবহারের জন্য তার কোর্তা চাইলে তিনি কোর্তা দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ তাকেই জানাজার নামাজ পড়াবার জন্য অণুরোধ করলেন। তিনি এ জন্যও তৈরি হয়ে গেলেন। হযরত উমর বারবার এ মর্মে আবেদন জানাতে লাগলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি এমন ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়াবেন যে অমুক অমুক কাজ করেছে ? কিন্তু তিনি তার এ সমস্ত কথা শুনেও মুচকি হাসতে লাগলেন৷ এমনকি তার মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেও ইতস্তত করলেন না। এরপর মুহাম্মাদ তার জানাজার সালাত আদায় করেন এবং ফিরে আসেন।[১২] এর কিছুক্ষণ পরেই সুরা বারাআতের (সুরা তওবার) এ দুটি আয়াত নাজিল হল :

"তাদের কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তার জানাজার সালাত আদায় করবেন না। এমতাবস্থায় যে তারা ফাসিক।"

— (আয়াত : ৮৪)৯:৮৪

এ আয়াতগুলো নাজিল হবার পর নবী নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে কোনো জানাজার শরিক হবার জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি প্রথমে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। জিজ্ঞেস করতেন, সে কেমন ছিল৷ যদি জানতে পারতেন সে অসৎ চরিত্রের অধিকারী ছিল, তাহলে তার পরিবারের লোকদের বলে দিতেন, তোমরা যেভাবে চাও একে দাফন করে দিতে পারো।

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই কয়েকজন কন্যা এবং আবদুল্লাহ নামের একটি পুত্রসন্তান রেখে যায়, যারা সকলেই সারাজীবন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হয়ে ছিলেন।[১]

আরও দেখুন

টীকা

তথ্যসূত্র

  • Watt, William Montgomery। "'Abd Allah b. Ubayy"। P.J. Bearman, Th. Bianquis, C.E. Bosworth, E. van Donzel and W.P. Heinrichs। Encyclopaedia of Islam Online। Brill Academic Publishers। ISSN 1573-3912। 
  • Rodinson, Maxime (২০০২)। Muhammad: Prophet of Islam। Tauris Parke Paperbacks। আইএসবিএন 1-86064-827-4 
  • Glubb, John Bagot (২০০২) [1970]। The Life and Times of Muhammad। Hodder & Stoughton। আইএসবিএন 0-8154-1176-6 
  • al-Mubarakpuri, Saif-ur-Rahman (২০০২)। Ar-Raheeq Al-Makhtum ("The Sealed Nectar")। Riyadh: Darussalam publishers.। আইএসবিএন 1-59144-071-8 
🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন