আরওয়াইবি রঙ মডেল

ছাপাখানা ও অংকন কাজে ব্যবহৃত রঙ মডেল

আরওয়াইবি (রেড-ইয়োলো-ব্লু বা লালহলুদনীল) রঙনামের সংক্ষিপ্তরূপ) বিভাজক রঙমিশ্রণে ব্যবহৃত রঙসমূহের একটি ঐতিহাসিক সেট, যা মূল রঙের সেট হিসেবেও বহুল-ব্যবহৃত। প্রাথমিকভাবে এটি শিল্প ও নকশা শেখাতে, বিশেষত চিত্রকর্মে কাজে লাগানো হয়।

আরওয়াইবি মূল রঙসমূহের মিশ্রণ

আধুনিক বৈজ্ঞানিক রঙতত্ত্বের বহু পূর্বে আরওয়াইবি প্রচলিত হয়ছে। এই মডেলের লাল-হলুদ-নীলের বদলে আধুনিক তত্ত্বানুসারে বিস্তৃততম পরিসরে উচ্চ-ক্রোমাবিশিষ্ট রঙের সবচেয়ে যথাযথ সেট হলো সায়ান, ম্যাজেন্টা ও হলুদ[১]

বর্ণ চাকতি

আরওয়াইবি বর্ণ চাকতি
আরওয়াইবি রঙ তারকা

আরওয়াইবি (লাল-হলুদ-নীল) হলো শিল্পীর আদর্শ বর্ণ চাকতির জন্য প্রাথমিক তিনটি বর্ণ বা ত্রয়ী। গৌণ রঙ পার্পল-কমলা-সবুজ (কখনো বলা হয় বেগুনি-কমলা-সবুজ) দিয়ে হয় আরেকটি ত্রয়ী। বর্ণ চাকতিতে সমদূরবর্তী তিনটি রঙ নিয়ে ত্রয়ী গঠন করা হয়। অন্যান্য সাধারণ বর্ণ চাকতিতে দেখানো হয় আলো মডেল (আরজিবি) এবং কালি মডেল (সিএমওয়াইকে)

ইতিহাস

১৬১৩ সালের আরওয়াইবি রঙ স্কীম, ফ্রান্সিস্কাস আগুলোনিয়াসের আঁকা। এখানে মূল রঙ হলুদ (flavus), লাল (rubeus), এবং নীল (caeruleus) সাজানো হয়েছে সাদা (albus) এবং কালোর (niger) মাঝখানে, সাথে প্রতি দুটি মূলের সংযোগে কমলা (aureus), সবুজ (viridis), এবং পার্পল (purpureus)।
ক্লউড বেটেটের ১৭০৮ সালের রঙবৃত্তে আধুনিক আরওয়াইবি রঙবৃত্তের মতো মূল ও গৌণ রঙের বিন্যাস ব্যবহৃত হয়েছে।
লে ব্লনের ১৭২৫ সালের বর্ণনায় কালি ছাপানো সম্পর্কে লাল, হলুদ এবং নীল রঙ মেশানোর পদ্ধতি।

আরওয়াইবি রঙত্রয়ীর প্রথম নজির পাওয়া যায় বেলজীয় গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস্কাস আগুলোনিয়াসের (১৫৬৭-১৬১৭) লেখায়,[২] যদিও তিনি রঙগুলোকে বর্ণ চাকতিতে সাজাননি।

আইজাক নিউটন তার আলোক পরীক্ষায় বুঝতে পারেন যে, মূল রঙগুলো মিশিয়ে অন্যান্য রঙ তৈরি করা সম্ভব। তার অপটিক্স বইয়ে, এই মূল রঙগুলোর জ্যামিতিক সম্পর্ক দেখানোর জন্য তিনি একটি বর্ণ চাকতি প্রকাশ করেন। এই ছকটি পরবর্তীতে লোকেরা এটিকে কণার সাথে গুলিয়ে ফেলে।[৩] অবশ্য নিউটন সংযোজী এবং বিভাজক রঙমিশ্রণের পার্থক্যও জানতেন না।[৪]

১৭২৫ সালে জ্যাকব ক্রিস্টোফ লে ব্লন ছাপার কাজে আরওয়াইবি মডেল ব্যবহার করেন।

১৮শ শতকে, আরওয়াইবি মূল রঙসমূহ হয়ে ওঠে রঙদর্শনের তত্ত্বগুলোর ভিত্তি, যেমন মৌলিক সেন্সরি বৈশিষ্ট্যসমূহ যেগুলো সব ভৌত রঙের এবং সমভাবে কণা/রঞ্জকের ভৌত মিশ্রণের আলোক-উপলব্ধিতে বিদ্যমান। এসব তত্ত্বকে বর্ধিত করে ১৮শ শতকে রঙের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ে বিভিন্নরকম পরীক্ষা, বিশেষত "পরিপূরক" বা বিপরীত রঙের মধ্যে বৈসাদৃশ্য যার সৃষ্টি করে রঙের আফটারইমেজ এবং রঙিন আলোর বিষম ছায়ায়। এসব ধারণা এবং বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্তসার নিয়ে তৈরি হয় রঙতত্ত্বের দুটি প্রামাণ্য ডকুমেন্ট: থিওরি অফ কালারস (১৮১০) লেখক জার্মান কবি ও মন্ত্রী জন ভন গ্যোটে এবং দ্য ল' অফ সাইমালটেনাস কালার কনট্রাস্ট (১৮৩৯) লেখক ফরাসী শিল্পরসায়নবিদ মাইকেল-ইউজিন শেভ্রেউল।

শিল্পীরা বহুদিন ধরে তাদের প্যালেটে তিনটি আরওয়াইবি মূলের চেয়ে বেশি রঙ ব্যবহার করতেন এবং একসময় তারা লাল, হলুদ, নীল ও সবুজ চারটি রঙকে মূল রঙ হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন।[৫] লাল, হলুদ, নীল ও সবুজকে এখনো ব্যাপকভাবে চারটি মনস্তাত্ত্বিক মূল রঙ বলে ভাবা হয়,[৬] যদিও মাঝেমধ্যে লাল, হলুদ ও নীলকে তিনটি মনস্তাত্ত্বিক মূল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়,[৭] কখনোবা সাথে কালো ও সাদাকে চতুর্থ ও পঞ্চম হিসেবে।[৮]

সিএমওয়াইকে মুদ্রণে ব্যবহৃত সায়ান, ম্যাজেন্টা ও হলুদ রঙে বলা হয় যথাক্রমে "প্রসেস নীল", "প্রসেস লাল" ও "প্রসেস হলুদ"।

জর্জ ফিল্ডের ক্রোমাটোগ্রাফি; অর এ ট্রিটিজ অন কালারস অযান্ড পিগমেন্টস: অ্যান্ড অফ দেয়ার পাওয়ারস ইন পেইন্টিং বই থেকে একটি আরওয়াইধি বর্ণছক, লালকে ম্যাজেন্টার কাছে এবং সবুজকে সায়ানের কাছে দেখানো হয়েছে, ছাপার সময় যেমনটি হয়।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন