কমলা (রং)

রঙ
(কমলা (বর্ণ) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কমলা হলো আলোর দৃশ্যমান বর্ণালীতে হলুদ এবং লাল এর মধ্যবর্তী একটি রঙ। প্রায় ৫৮৫ এবং ৬২০ ন্যানোমিটারের মধ্যে একটি প্রভাবশালী তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাথে আলো পর্যবেক্ষণ করার সময় মানবচক্ষুতে কমলা দৃশ্যমান হয়। কমলা রঙটি হলুদ এবং লাল রঙের মিশ্রণ দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। এর নামকরণ একটি ফলের নাম থেকে করা হয়েছে।

কমলা
 
বর্ণালি স্থানাঙ্ক
তরঙ্গদৈর্ঘ্য৫৯০–৬২০ nm
কম্পাঙ্ক৫০৫–৪৮০ THz
About these coordinates     রঙের স্থানাঙ্ক
হেক্স ট্রিপলেট#FF6600
sRGBB  (rgb)(255, 102, 0)
CMYKH   (c, m, y, k)(0, 60, 100, 0)
HSV       (h, s, v)(24°, 100%, 100%)
উৎসএইচটিএমএল রঙের তালিকা
B: [০-২৫৫] (বাইট)-এ নিয়মমাফিক
H: [০-১০০] (শত)-এ নিয়মমাফিক

গাজর, কুমড়ো, মিষ্টি আলু, কমলা এবং আরও অনেক ফল এবং শাক-সবজির কমলা রং ক্যারোটিন থেকে আসে, যা এক ধরনের আলোকসংশ্লিষ্ট রঞ্জক। গাছ সূর্য থেকে রাসায়নিক শক্তি গ্রহণ করে, এই রঞ্জক সূর্যের সেই আলোকশক্তিকে রূপান্তরিত করে গাছের উপযোগী করে তোলে। তেমনিভাবে, ক্লোরোফিল অপসারণের পর একইভাবে শরৎকালে পাতার বর্ণগুলি এই রঞ্জক থেকে আসে।

ইউরোপ এবং আমেরিকায় জরিপ করে দেখা যায় যে, কমলা রঙের সাথে বিনোদন, প্রথাবিরোধী, বহির্মুখীতা, আন্তরিকতা, আগুন, শক্তি, সক্রিয়তা, বিপদ, স্বাদ এবং সুবাস, শরৎ এবং অলহ্যালোটাইডের সংযুক্ততার পাশাপাশি এটি দীর্ঘদিন ধরে নেদারল্যান্ডস এবং হাউস অফ অরেঞ্জের জাতীয় রং ছিল। এটি খ্রিস্টান গণতন্ত্রের রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং বেশিরভাগ খ্রিস্টান গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক রং হিসাবেও কাজ করে।[১] এশিয়াতে এটি বৌদ্ধহিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী রঙ।[২]

প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে

ব্যাকরণ

ইংরেজিতে রং হিসাবে কমলা'কে (Orange) পাকা কমলা ফলের চেহারা অনুসারে নামকরণ করা হয়েছ।[৩] শব্দটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ pomme d'orange থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ফরাসি শব্দটি ইতালীয় শব্দ আরান্সির (arancia)[৪][৫] মতো আরবি নারাঞ্জ (نارنج) থেকে এসেছে যা সংস্কৃত শব্দ নারাং (नारङ्ग) থেকে উদ্ভূত।[৬]

এই শব্দটি ইংরেজিভাষী বিশ্বের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে ইংরেজি ভাষায় জাফরান ইতিমধ্যে বিদ্যমান ছিল।[৭] পূর্বে বিকল্প হিসাবে কমলা রঙের জিনিসগুলিকে কখনও কখনও লাল হিসাবে বর্ণনা করা হত, যেমন: লাল হরিণ, লাল চুল, লাল গ্রহ এবং রবিন রেডব্রেস্ট ইত্যাদি।

ইতিহাস এবং শিল্প

প্রাচীন মিশরে শিল্পীরা সমাধির চিত্র অঙ্কন সহ অন্যান্য কাজে রিয়েলগার নামক কমলা খনিজ রঞ্জক ব্যবহার করতো। পরবর্তীতে মধ্যযুগীয় শিল্পীরা পুঁথি রঙিন করতে এটি ব্যবহার করতো। এসব রঞ্জক প্রাচীন কালে হরিতাল নামক এক প্রকার খনিজ থেকে তৈরি করা হতো। হরিতাল রোমান সাম্রাজ্যের ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। হরিতাল আর্সেনিকযুক্ত এবং অত্যন্ত বিষাক্ত হওয়া সত্ত্বেও এটি চীনে ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হত। উড়ন্ত তীরের ফলায় বিষ প্রয়োগ করতেও এটি ব্যবহৃত হত। এর হলুদ-কমলা রঙের বর্ণের কারণে চীন এবং পশ্চিমা বিশ্বের আলকেমিস্টরা এর মাধ্যমে স্বর্ণ তৈরির চেষ্টা করতো।

১৫ শতকের শেষের দিকে কমলা রং ইউরোপে বিদ্যমান ছিল, তবে এর কোনো নাম ছিলনা; এটি কেবল হলুদ-লাল বলে পরিচিত ছিল। পর্তুগিজ বণিকরা ১৫ শতকের শেষভাগে এবং ১৬ শতকের গোড়ার দিকে এশিয়া থেকে প্রথম ইউরোপে কমলা গাছ নিয়ে যায় সংস্কৃত নারাঙ্গার সাথে, যা ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় ভাষার অংশ হয়ে উঠে: স্প্যানিশ ভাষায় "নারাঞ্জা", পর্তুগিজ ভাষায় "লারাঞ্জা" এবং ইংরেজিতে "অরেঞ্জ"।

বিজ্ঞান

প্রাকৃতিক কমলা উপাদান

গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, কমলা লেবু সহ অন্যান্য ফল ও সবজিতে ক্যারোটিন নামক একধরনে ফটোসিন্থেটিক রঞ্জক উপাদানের মাধ্যমে কমলা রং আসে। এই পিগমেন্ট বা রঞ্জক সূর্য থেকে আসা আলোকশক্তিকে গাছের জন্যে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ক্যারোটিন শব্দটি গাজরের ইংরেজি ক্যারোট থেকে এসেছে।[৮] ক্যারোটিনের কারণে শরতে গাছের পাতায় কমলা রঙের ছোঁয়া লাগে। ইংরেজিতে এই পাতাকে অটাম লিভস বলে। আবহাওয়া ঠান্ডা হতে শুরু করলে সবুজ ক্লোরোফিল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কমলা রং দেখা যায়।

১৮ শতকের পূর্বে এশিয়ায় গাজরের রং বেগুনি রঙের হতো৷ অন্যদিকে ইউরোপীয় গাজরের রং সাদা কিংবা কাল হতো। ওলন্দাজ কৃষকেরা কমলা রঙের গাজর তৈরি করতে সক্ষম হয়।[৯] ১৭২১ সালে সর্বপ্রথম লম্বা কমলা ওলন্দাজ গাজরের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই গাজরই আজকের দিনের কমলা হর্ন ক্যারোটের আদিপুরুষ। নেদারল্যান্ডসের হুর্ন শহরের নামে এই গাজরের নামকরণ করা হয়েছে।

ফুল

কমলা রঙের ফুল সাধারণত শরৎ-হেমন্তকালে দেখা যায়। এই সময় পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে পাকা ফসল ও পত্রপল্লবে কমলা রঙের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। ফটোসিন্থেটিক উপাদান ক্যারোটিনের কারণে ফুল, ফল, শাকসবজি, পাতায় কমলা রং হয়।

প্রাণী

খাবার

ফল, সব্জি, মশলা এবং অন্যান্য খাদ্য উপাদানে কমলা খুবই সাধারণ একটু রং। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে স্বাদ ও সুগন্ধের জন্যে কমলা রং গুরুত্বপূর্ণ একটা স্থান দখল করে আছে।[১০] কমলা রঙের খাবার মধ্যে আছে এপ্রিকট, আম, পিচফল, গাজর, চিঙড়িমাছ এবং স্যালমন মাছের ডিম। প্যারিকা, জাফরান, কারি পাউডারের সাহায্যে খাবারে কমলা রং আনা হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধানঈদুল আযহাঈদের নামাজকুরবানীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঈদ মোবারকক্লিওপেট্রাকোকা-কোলারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশমিয়া খলিফাআসসালামু আলাইকুমআবহাওয়া২০২৪ কোপা আমেরিকাদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪ওয়ালাইকুমুস-সালামসন্দীপ লামিছানেতানজিম হাসান সাকিববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকানির্জলা একাদশীকাজী নজরুল ইসলামচন্দ্রবোড়াশাকিব খানঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরস্বামী বিবেকানন্দভারতমহাত্মা গান্ধীঐশ্বর্যা রাইবাংলা ভাষাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহমুহাম্মাদএকাদশী