আল রিয়াদ
আল রিয়াদ ( আরবি الرياض) একটি রিয়াদ ভিত্তিক, সরকারপন্থী সৌদি আরবের দৈনিক সংবাদপত্র। এর সহ পত্রিকা রিয়াদ ডেইলির ২০০৩ থেকে ১ জানুয়ারী ২০০৪ এর মধ্যে প্রচলিত ছিল।[৩] আল রিয়াদ নজদের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা।[৪] আল রিয়াদ হল প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র যা রিয়াদের প্রথম পত্রিকা যা আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল।[৫] ২০০১ সালে কাগজটির ১২১,০০০ কপি প্রচলন ছিল, এটি ছিল সৌদি আরবের পত্রিকার তৃতীয় সর্বাধিক বিক্রিত সংবাদপত্র।[৬] আল রিয়াদ আল ইয়ামামাহ প্রেস এষ্টাবলিশমেন্টের মালিকানাধীন এবং প্রকাশিত।[৭] কোম্পানিটি সাপ্তাহিক পত্রিকা আল ইয়ামামার প্রকাশ করে থাকে।[৮][৯]
ধরন | দৈনিক পত্রিকা |
---|---|
ফরম্যাট | ব্রডশীট |
মালিক | আল ইয়ামামাহ প্রেস |
প্রকাশক | আল ইয়ামামাহ প্রেস |
প্রধান সম্পাদক | তুর্কি আল সুদাইরি |
সহযোগী সম্পাদক | ইউসুফ আল কুওয়াইলিত (২০১২)[১] |
পরিচালনার সম্পাদক | নাওয়াল আল রাশেদ (মহিলা সেকশন)[২] |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১১ মে ১৯৬৫ |
রাজনৈতিক মতাদর্শ | সরকারপন্থী |
ভাষা | আরবি ভাষা |
সদর দপ্তর | রিয়াদ |
প্রচলন | ১,৫০,০০০ (২০১৭) |
ওসিএলসি নম্বর | ১২৫৯৩৪৯০ |
ওয়েবসাইট | আরবি ওয়েবসাইট ইংরেজি ওয়েবসাইট |
ইতিহাস এবং মালিকানা
এর প্রথম সংখ্যাটি সীমিত সংখ্যক পৃষ্ঠা সহ ১১ মে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।[৮] পরবর্তীতে, এটি ৫২ পৃষ্ঠার একটি দৈনিক প্রকাশনা হয়ে ওঠে, এরমধ্যে ৩২ পৃষ্ঠা রঙিন ছিলো,[৮] বর্তমানে পত্রিকাটির পাতার সংখ্যা ৮০-১০০ পৃষ্ঠা।[৫][৮] পত্রিকাটি ব্রডশীট ফরম্যাটে প্রকাশিত হয়।[৭]
আল রিয়াদ অন্যান্য দিক থেকেও অগ্রগামী। এটি প্রথম সৌদি পত্রিকা যা তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় ব্যঙ্গচিত্রকর আলি খার্জির অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্র অন্তর্ভুক্ত করে। এটা যুক্তিযুক্ত যে ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে এই ব্যঙ্গচিত্রের কারণে আল রিয়াদ পত্রিকা জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এর সাথেআল রিয়াদ পত্রিকা প্রথম সৌদি সংবাদপত্র যা মহিলা ব্যুরো খুলেছে।[১০]
রাজনৈতিক পন্থা
আল রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন, এবং এটি একটি বেসরকারি কোম্পানি প্রকাশ করছে।[১১][১২] যাইহোক, বিশ্ব সংবাদপত্র ও সংবাদ প্রকাশক সংস্থা রিয়াদের গভর্নর বাদশাহ সালমানের তার পদে থাকাকালীন পত্রিকাটাকে সরাসরি তার প্রভাবধীন বলে মনে থাকে।[১১] সংস্থাটি আল রিয়াদকে একটি আধা-সরকারি সংবাদপত্র হিসাবেও বিবেচনা করে।[১১] এটি আরও যুক্তিযুক্ত যে কাগজটি অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল মনোভাব উপস্থাপন করে এবং সৌদি অন্যান্য দৈনিক পত্রিকার মতো সৌদের রাজবংশের প্রশংসা করে।[১৩] যদিওআল রিয়াদকে সরকারপন্থী সংবাদপত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে এটা অপেক্ষাকৃত উদার মতামত প্রকাশ করে। উপরন্তু, এটি খুব প্রভাবশালী সম্পাদকীয় প্রকাশ করে, যদি কেউ বিভিন্ন বিষয়ে সৌদি সরকারী বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ভাল অন্তর্দৃষ্টি পেতে চায়।[১৪]
বিষয়বস্তু
আল রিয়াদ নিম্নলিখিত নিউজ ফিড নিযুক্ত করে: এএফপি আরবি, এএফপি স্পোর্টস, এপি, ডিপিএ আরবি, জিপিএ আরবি, কুয়েত সংবাদ সংস্থা আরবি, মেনা আরবি, কাতার সংবাদ সংস্থা আরবি, সৌদি প্রেস এজেন্সি আরবি, রয়টার্স আরবি, রয়টার্স চিত্র, রয়টার্স গ্রাফিক্স, আরএসএস সংবাদ, এবং পিআর নিউজওয়ার, জিএনএন নেটওয়ার্ক এবং সিএনএন ম্যাথিউস।[১৫] পত্রিকাটি রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্পর্কিত সংবাদকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে। এটি তার পাঠকদের খেলাধুলার খবরও প্রদান করে। এটি সৌদি আরবের কয়েকটি সংবাদপত্রের মধ্যে একটি, যা স্বাক্ষরবিহীন সম্পাদকীয় কলাম প্রকাশ করে।[১৬]
পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তুর্কি আল সুদাইরি ২০১১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তি দিয়েছিলো যে ইরান ইসরায়েলের চেয়েও সৌদি আরবের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক, কারণ পরবর্তীতে শত্রুতা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে আল রিয়াদের সহযোগী সম্পাদক ইউসুফ আল কুওয়াইলিত, সিরিয়ার বিদ্রোহ সম্পর্কে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং বলেছিলেন যে লাভরভ সিরিয়ায় সুন্নিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন বলে মনে হয় না। আল কুওয়াইলিত আরও দাবি করেছেন যে লাভরভ এই বিষয়ে শয়তানের পক্ষে ছিলেন।[১৭]
২০১৩ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদনান মানসুর প্রকাশ্যে যুক্তি দিয়েছিলেন যে আরব লীগের উচিত সিরিয়ার সদস্যপদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।[১৮] এই ঘোষণার পর, আল রিয়াদ মানসুরকে "সন্ত্রাসী আমাল আন্দোলনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী" হিসেবে বর্ণনা করেন কেননা লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরির সাথে মানসুরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যিনি আমাল আন্দোলনের একজন নেতা।[১৮] পত্রিকাটি আরও দাবি করেছে যে, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ একজন "সন্ত্রাসী"।[১৮]
প্রভাব এবং পাঠক
আল রিয়াদ পত্রিকা সৌদি আরবে প্রকাশিত একটি প্রধান দৈনিক সংবাদপত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। অন্যরা হল আল ওয়াতান, আল মদিনা এবং আল জাজিরা ।[১৩] আল রিয়াদ নজদে প্রভাব বিস্তারের জন্য আল জাজিরার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং প্রত্যেকেই ১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে অন্যের চেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী পত্রিকা বলে দাবি করে।[১০] স্থানীয় এবং আঞ্চলিক খবরের জন্য আল রিয়াদকে অন্যতম গ্রহণযোগ্য দৈনিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[১৬][১৯]
যেহেতু কাগজটি রিয়াদে সম্পাদিত এবং প্রকাশিত হয়েছে, তাই পত্রিকাটির লক্ষ্য সরকারী কর্মকর্তা, সামরিক কর্মকর্তা, পেশাদার, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠী।
বিশিষ্ট কলামিস্ট
পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তুর্কি আল সুদাইরি যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পদে রয়েছেন।[৮][১০] তিনি ২০০০ এর দশকে সৌদি আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদপত্র সম্পাদক হিসাবে বিবেচিত হতেন।[২০] তাকে সরকারপন্থী সম্পাদক হিসেবেও গণ্য করা হয়।[২১] আল সুদাইরি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি সাংবাদিক সমিতির (এসজেএ) চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ১৭ মে ২০১২ তারিখে তিনি আবার এই পদে নির্বাচিত হন।[২]
সুলতান আল বাজী যিনি আন্তর্জাতিক জনসংযোগ সমিতি-গালফ চ্যাপ্টারের (আইপিআরএ জিসি) নির্বাহী সহসভাপতি এবং আত্তারিক কমিউনিকেশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি পূর্বে আল রিয়াদের একজন রিপোর্টার এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন।[২২] আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল উকাইলি যিনি পূর্বে রয়্যাল প্রোটোকলের উপপ্রধান ছিলেন, তিনি পত্রিকাটির রাজনৈতিক ডেস্কে কাজ করতেন।[২৩]
প্রচলন এবং অফিস
১৯৭৫ সালে কাগজটি ২৫,০০০ কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে আল রিয়াদের আনুমানিক প্রচলন ছিল ১০০,০০০ থেকে ১২০,০০০ কপি।[১০] ২০০২ সালের হিসাবে, এর আনুমানিক প্রচলন ছিল ৯১,০০০ কপি।[২৪] ২০০৩ সালে এটির প্রচলন ছিলো ১৭০,০০০ কপি, যা দেশের বৃহত্তম সংবাদপত্র।[২৫] আরব সংস্কার বুলেটিন ২০০৪ সালে ১৭০,০০০ প্রচলন সংখ্যার হিসাব দেয়।[২৬] এর ২০০৬ এবং ২০৭ এর প্রচলন ১৫০,০০০ কপি ছিল বলে জানা গেছে।[৭][১১] গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট হাউস জানিয়েছে যে ২০০৯ সালে আল রিয়াদের বাজার অংশ প্রায় ৮.৩% অংশ।[১৯]
পত্রিকাটির একটি খুব চিত্তাকর্ষক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে পাঠকরা নিবন্ধগুলিতে মন্তব্য করতে পারেন।[১৪] ওয়েবসাইটটি ২০০৭ সালে সৌদি যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক আল জাজিরার পর দ্বিতীয় র্যাঙ্কে ডিজিটাল এক্সিলেন্স পুরস্কার জিতেছে।[২৭]
আল রিয়াদের একটি ইংরেজি ওয়েবসাইটও রয়েছে যা ২০১০ সালে মেনা অঞ্চলের পঞ্চাশটি ইংরেজি ভাষার অনলাইন সংবাদপত্রের মধ্যে সপ্তম শীর্ষ অনলাইন সংবাদপত্র।[২৮] ২০১১ সালে, এটি আবার শীর্ষ দশ অনলাইন সংবাদপত্রের মধ্যে ছিল, যার অবস্থান ছিল সপ্তম।[২৯]
পত্রিকাটির আরবি অনলাইন সংস্করণটি মেনা অঞ্চলে ২০১০ সালের জন্য পঞ্চম সর্বাধিক পরিদর্শন করা ওয়েবসাইট ছিল।[৩০] ২০১২ সালে, এটি আবার ১২৩.৯ মিলিয়ন হিট নিয়ে ফোর্বস মিডল ইস্টের দ্বারা মেনা অঞ্চলে পঞ্চম স্থানে স্থান পেয়েছিল।[৩১][৩২]
আল রিয়াদের কায়রো এবং বৈরুতে সম্পাদকীয় অফিস ছাড়াও অনেক সৌদি শহরে অফিস রয়েছে।[১৫]
আরো দেখুন
- সৌদি আরবের সংবাদপত্রের তালিকা
- সৌদি আরবের মিডিয়া