এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক

এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক (ইংরেজি: Angels on horseback) বেকন (শুকরের মাংস) দ্বারা আবৃত ঝিনুক দ্বারা তৈরি একধরনের রুচিকর এবং ঝাল মশলাদার খাদ্য। এই খাদ্যটি সাধারণত রুটির উপরে রেখে কানাপি বা ছোট খাদ্য (এক কামড়ে খাওয়া যায় এমন) হিসেবে পরিবেশিত হয়ে থাকে।[২]

এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক
কাঠি ও ভাজা এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক
প্রকারছোট খাদ্য, মুখরোচক অথবা মসলাদার
পরিবেশনগরম
প্রধান উপকরণঝিনুক, বেকন
খাদ্য শক্তি
(প্রতি পরিবেশনায়)
১৬০~[১] কিলো-ক্যালরি কিলোক্যালরি

এই খাদ্যটি সাধারণ চুলায় শুকরের মাংসের উপর খোলা ঝিনুক পুড়িয়ে করে তৈরি করা হয়। এঞ্জেলস অফ হর্সব্যাকে বৈচিত্র্য আনার জন্য বর্তমানে এগুলো একসাথে করে ভাঁজা হয়। স্বাদ অনুযায়ী এগুলো রুটির সাথে অথবা স্কিউয়ার (এক ধরনের লম্বা কাঠি) তে করে অন্যান্য মশলা বা সম্পূরক খাদ্যের সাথে পরিবেশন করা হয়। অনেকেই ভুল করে এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক কে ফল দিয়ে তৈরি একই রকমের ডেভিলস অন হর্সব্যাক-এর প্রতিশব্দ বলে মনে করেন, যদিও এদুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শ্রেণীবিন্যাস

এঞ্জেলস অন হর্স ব্যাক রুচিবর্ধক, কানাপি (এক কামড়ে খাওয়া যায় এমন ) বা মশলাদার খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। রুটির উপরে রেখে পরিবেশন করলে এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক কানাপি (এক কামড়ে খাওয়ায় এমন) খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।[২] ইংল্যান্ডে মশলাদার খাবার সাধারণত মিষ্টি খাবারের পরে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। নোনতা বা মশলাদার খাবার পরিবেশনের অর্থ হলো মদ পরিবেশনের আগে স্বাদবোধ পরিষ্কার করা।[৩] ১৯০৫ সালে প্রকাশিত কনস্ট্যান্স পিল রচিত রন্ধনবিষয়ক গ্রন্থ স্যাভোরি'জ সিম্পলিফায়েড-এ এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক মশলাদার খাদ্য হিসেবে উল্লেখিত আছে।[৪]

এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক কে ডেভিলস অন হর্সব্যাক এর সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। যদিও পরের খাদ্যটি একই ভাবে তৈরি, তবে সেটা তৈরি হয় ফল দিয়ে, বিশেষ করে আলুবোখারা এবং খেজুর দিয়ে।[৫] ডেভিলস অন হর্সব্যাক এর রন্ধনপ্রণালীর উন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন এখনও চলছে, তবে জনপ্রিয় হলো ফলগুলো কনিয়াক এবং আরমানাক এ নিমজ্জিত করে রাখা।[৫] মার্কিন এবং ব্রিটিশ রন্ধনবিদগণ এই দুই খাদ্য এর মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করেছেন, যাদের মধ্যে আছেন মার্থা ষ্টুয়ার্ট ও মার্টিন ব্লুনস।[৫] রন্ধন বিষয়ক লেখক জন আইটো একই কথা বলেছেন তবে তিনি দেখিয়েছেন যে নাম দুটি অদলবদল করে লেখা হয়।[৬][৭] অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে শিকাগো ট্রিবিউন-এর একটি রচনায় জেমস বিয়ার্ড দাবী করেছেন যে এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক মুড়ানোর জন্য হ্যাম ব্যবহার করা হয়, যদি বেকন ব্যবহার করা হয় তবে সেটি হয়ে যায় ডেভিলস অন হর্সব্যাক।[৮]

ইতিহাস

এই খাদ্যের উৎপত্তি অস্পষ্ট। তবে নামটি মনে হয় ফরাসী anges à cheval থেকে এসেছে।[৯] যেখানে পরী (এঞ্জেল) / ঝিনুক অথবা বেকন / ঘোড়ার কোন তাৎপর্যপূর্ণ সংযোগ নেই।[২] অক্সফোর্ড ইংলিশ অভিধান এবং অন্যান্য সূত্রানুযায়ী এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত মিসেস বীটন'স বুক অফ হাউজহোল্ড ম্যানেজমেন্ট বইতে।[৯][১০] যদিও ১৮৮২ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত এক সংবাদপত্রে সংক্ষিপ্ত রন্ধনপ্রণালী সহ এর উল্লেখ পাওয়া যায়।[১১]

যুক্তরাষ্ট্রে এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক-এর খোঁজ পাওয়া যায় আঠারো-শত নব্বই দশকের মধ্য ভাগ থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত।[১২][১৩][১৪] সবচেয়ে পুরাতন তথ্যসূত্র হলো ১৮৯৬ সালের নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রচনা, যেখানে খাদ্যটিকে রুচিবর্ধক বা এপিটাইজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং খাদ্যটির জন্য জার্মান সম্রাটের রদ্ধনবিদ বা সেফ উরবেইন ডুবোইসকে কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে। এই রচনানুযায়ী এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক ছিলো মোড়ানো, গোল মরিচের গুঁড়া ছিটানো এবং তাপে সিদ্ধ করা। রচনায় এই খাদ্যটি লেবু এবং পুদিনা পাতা সহযোগে পরিবেশনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু রুটি (টোষ্ট) এর কোন উল্লেখ নেই।[১৫] ১৯৩০ এর দশকে এটিকে পিকনিক মেনুর অংশ বলে সুপারিশ করা হয়েছে।[১৬] আবার ১৯৪৮ সালে এটিকে উল্লেখ করা হয়েছে রুচিবর্ধক হিসেবে।[১৭] পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রগুলো আগ্রহ সহকারে এই খাদ্যটি নিয়ে ফিচার করে। শিকাগো ট্রিবিউন এ প্রকাশিত হয় 'ফর ওয়েষ্টার ট্রিট, ট্রাই এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক; দে আর ডেলিক্টেবল এপিটাইজার সানডে মেনু'[১৮] এবং "দিজ এঞ্জেলেস অন হর্সব্যাক আর ওয়েষ্টারস"।[১৯] লস এঞ্জেলেস টাইমস ও এটি নিয়ে ফিচার প্রকাশ করে।[২০]

ষাটের দশকে ওয়াশিংটন ডি.সি.তে এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কেনেডি প্রশাসনের সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কে. এস. ব্রুস এর স্ত্রী এভানজেলিন ব্রুস, যিনি তার সান্ধ্যকালীন পার্টির জন্য পরিচিত ছিলেন,[২১] নিয়মিতই এই খাদ্যটি পরিবেশন করতেন। গসিপ কলামিস্ট লিজ স্মিথ জানান "কখনও কখনও ঝিনুক গুলি ছিলো কাচা, কখনও বেকন দিয়ে মুড়িয়ে ভাজা হতো। একসময় মিসেস ব্রুস এটিকে এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক বলে বলেন",[২২] যদিও তখন পর্যন্ত নামটি খুব একটা পরিচিত ছিল না। আশির দশকে শিকাগো ট্রিবিউন একটি রচনা প্রকাশ করে যাতে খাদ্যটিকে 'ঔৎসুক্য জাগানিয়া' বলে সম্বোধন করে এবং জানায় যুক্তরাষ্ট্রে এটি খুব সাধারণ খাবার নয়।[২৩]

১৯৯০ এর পরের প্রকাশনাগুলো এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক কে শখের খাদ্য এবং সুখাদ্য হিসেবে আলোচনায় নিয়ে আসে। ঝিনুক উত্তর আমেরিকায় সুখাদ্য হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর থেকে '১০০১ ফুডস টু ডাই ফর' এ এটিকে শখের খাদ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[২৪]দ্য ডাইনার স ডিকশনারি; ওয়ার্ডস অরিজিন অফ ফুড এন্ড ড্রিংক এ উল্লেখ করা হয়েছে যে ঝিনুক খাওয়ার বিলাসিতা শেষপর্যন্ত ঝিনুকের বদলে সসেজ এ পরিবর্তিত হয়।[৬]

প্রস্তুত প্রণালী

সর্বোত্তম রন্ধনপ্রণালী মতে খোলা ঝিনুক বেকন দিয়ে মুড়িয়ে ওভেনে ৩ মিনিট করে সিদ্ধ করতে হয়।[২৫] ১৯০২ সালের এক রন্ধনপ্রণালী অনুযায়ী কাঠিতে (স্কিউয়ার) ঝিনুক এবং বেকন নিয়ে মাখন দিয়ে ভাজতে হয়।[২৬] এই খাদ্যটি প্রায়ই টোষ্টের সাথে পরিবেশন করা হয়, যদিও এটি কাঠিতে তৈরি করা হয় হয় এবং সিদ্ধ করা হয়। এটি সরাসরি কাঠি থেকেও খাওয়া যায়।[১৫]

এঞ্জেলস অন হর্সব্যাক প্রস্তুত প্রণালী এবং পরিবেশনায় নানা বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। ফেঙ্গ সুই ফুড অনুযায়ী এটি প্রস্তুত করা হয় খোলা ঝিনুক বেকন দিয়ে মুড়িয়ে ককটেল ষ্টিক দিয়ে গেঁথে ভাজা হয় এবং লেবুর রসে ভিজিয়ে পরিবেশন করা হয়।[২৭] জোয়ানা প্রুসের বই সিডিউসড বাই বেকনে এঞ্জেলস এন্ড ডেভিলস নামে একটি প্রস্তুত প্রণালী আছে যেখানে বলা হয়েছে "সামান্য একটু লাল মরিচের সস এর স্বাদ ঝালে পরিবর্তিত করে ফেলে।[২৮] দ্য উইজার্ড অফ ফুড'স এসাইক্লোপেডিয়া অফ কিচেন এন্ড কুকিং সিক্রেটস এর লেখক মাইলস বাডের লেবু অথবা হল্যান্ড এর সস দিয়ে এঞ্জলস অন হর্সব্যাক পরিবেশনের কথা বলেছেন।[২৯] এক ইতালীয় রন্ধনপ্রণালী অনুযায়ী বেকনের বদলে প্রাউটো (ইতালীয় হ্যাম) ব্যবহারের কথা বলা আছে।[৩০]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন