ওয়ারেন থমাস ফ্যারেল
ওয়ারেন থমাস ফ্যারেল (জন্ম জুন ২৬, ১৯৪৩) একজন আমেরিকান রাজনৈতিক বিজ্ঞানী, একটিভিস্ট বা সক্রিয় আন্দোলনকর্মী এবং পুরুষ ও নারী বিষয়ক সাতটি বইয়ের লেখক।
ওয়ারেন ফ্যারেল | |
---|---|
![]() ২০১৮ সালে ওয়ারেন ফ্যারেল | |
জন্ম | ওয়ারেন থমাস ফ্যারেল ২৬ জুন ১৯৪৩ কুইন্স, নিউ ইয়র্ক |
পেশা | গ্রন্থাকার |
জাতীয়তা | মার্কিনী |
নাগরিকত্ব | যুক্তরাষ্ট্র |
শিক্ষা |
|
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | এনওয়াইইউ, ইউসিএলএ, মন্তেক্লিয়ার স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় |
ধরন | মনস্তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞান রাজনীতি |
বিষয় | পুরুষ, নারী, পিতার বিভিন্ন বিষয়াবলী, লিঙ্গ, দম্পতির যোগাযোগ, শিশুর হেফাজতকরণ, বালকের নানাবিধ সঙ্কট। |
সাহিত্য আন্দোলন | নারীবাদী আন্দোলন পুরুষবাদী আন্দোলন পিতার আন্দোলন |
দাম্পত্যসঙ্গী | উরসুলা ফ্যারেল (বিবাহবিচ্ছেদ)লিজ ডাউলিং (২০০২ থেকে বর্তমান) |
সন্তান | দুইজন সৎ কন্যা |
ওয়েবসাইট | |
warrenfarrell |
ফ্যারেল প্রাথমিকভাবে ১৯৭০ সালে দ্বিতীয় তরঙ্গ নারীবাদের সমর্থক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন; তিনি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর উইমেন (নাও) এর নিউ ইয়র্ক সিটি বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন। যদিও আজ তাকে "পুরুষদের আন্দোলনের জনক" হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি জনসম্মুখে প্রচার করা শুরু করেন "পুরুষকে দোষারোপ করে যেমন কোন নারী আন্দোলন হওয়া উচিত নয়, একইভাবে নারীকে দোষারোপ করে কোন পুরুষ আন্দোলন নয়, বরং আন্দোলন হতে হবে একটি লিঙ্গ মুক্তি আন্দোলনের মত; যার ফলে নারী পুরুষের কাজের ক্ষেত্র এবং ভাবনা চিন্তা আলাদা হতে হবে; অতীতের এধরনের প্রথাগত ভূমিকা থেকে মুক্ত হয়ে ভবিষ্যতে তারা যেন আরো প্রগতিশীল এবং নারীশ-পুরুষ বৈষম্য হ্রাস করে নমনীয় হয়ে উঠে।"[১]
তার বইয়ে উঠে এসেছে ইতিহাস, আইন এবং সমাজ বিদ্যার নানা বিষয় (দ্য মিথ অব মেল পাওয়ার);[২] দম্পতির মধ্যকার যোগাযোগ (উইম্যান ক্যান্ট হিয়ার হোয়াট ম্যান ডোন্ট সেয়,[৩] এবং বাবা ও সন্তানের পুনর্মিলন);[৪] অর্থনীতি এবং কর্মজীবন নিয়ে (হোয়াই ম্যান আর্ন মোর);[৫] শিশুর মনোবিজ্ঞান এবং শিশুর তত্ত্বাবধান নিয়ে (ফাদার এন্ড চাইল্ড রিইউনিয়ন); এবং কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মনস্তত্ত্ব এবং সামজিকীকরণ (হোয়াই ম্যান আর দ্য ওয়ে দেয় আর,[৬] দ্য লিবার্টেড ম্যান[৭] এবং ডাস ফেমিনিজম ডিস্ক্রিমিনেট এগেন্সট ম্যান)।[৮] এইসব বই নারী এবং পুরুষ নিয়ে গবেষণার উপর ভিত্তি করে লিখা হয়েছে। ব্যত্যয় ঘটে নি তার ২০১৮ সালে প্রকাশিত বই দ্য বয় ক্রাইসিস এর ক্ষেত্রেও।[৯]
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
ফ্যারেল ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার তিন ভাইবোনের জ্যেষ্ঠ; তার পিতা একজন হিসাবরক্ষক এবং মা গৃহিণী।[১০] তিনি নিউ জার্সিতে বড় হয়েছেন।[১০] ফ্যারেল ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে নিউ জার্সির মিডল্যান্ড পার্ক হাই স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন [১১] যেখানে তিনি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।
ফ্যারেল ১৯৬৫ সালে মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে বি.এ.[১২] করেন। একজন কলেজ ছাত্র হিসেবে, ফ্যারেল ছাত্র-জাতীয় শিক্ষা এসোসিয়েশনের জাতীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন তাকে হোয়াইট হাউজে শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান।[১৩][১৪]
১৯৬৬ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ [১২] এবং ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[১২] এনওয়াইইউতে পিএইচডি সম্পন্ন করার সময় তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৭]
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো
ফ্যারেল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান; নারী অধ্যয়ন; সমাজবিজ্ঞান; রাষ্ট্রবিজ্ঞান; লিঙ্গ এবং পিতামাতার দায়িত্ব ও সন্তান প্রতিপালনের উপর ৫ টি কোর্স করিয়েছেন।[৪]
নারীবাদী ভিত্তি
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/16/Dr._Warren_Farrell_on_the_Mike_Douglas_Show%2C_circa_1976.jpg/220px-Dr._Warren_Farrell_on_the_Mike_Douglas_Show%2C_circa_1976.jpg)
১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে যখন নারী আন্দোলনের দ্বিতীয় তরঙ্গ বিকশিত হয়, তখন তার প্রতি ফ্যারেলের সমর্থন ছিল। এর ফলে সেই সময় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর উইমেন্স এর নিউ ইয়র্ক সিটি শাখা থেকে ফ্যারেলকে একটি পুরুষদের দল গঠন করতে অনুরোধ করা হয়। সেই দলটির সৃষ্টির প্রতিক্রিয়ায় আরও প্রায় ৩০০টি নারী ও পুরুষের দল গড়ে ওঠে, এবং তিনিই ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত চার বছর নিউ ইয়র্ক শহরের ন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর উইমেন এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের তালিকায় তিনবার নির্বাচিত হন।[১৫] ১৯৭৪ সালে ফ্যারেলের স্ত্রী একজন হোয়াইট হাউজ ফেলো হলে তিনি ন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর উইমেন ও রাটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকতার পেশা ত্যাগ করেন, এবং স্ত্রীর সাথে ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে বসবাস করেন।[১৫] পরবর্তিতে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[১৬]
ফ্যারেল তার নারীবাদী পর্যায়ে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য অপ-এড (মতামত সম্পাদকীয়) কলাম লিখতেন এবং প্রায়সই টুডে শো এবং ফিল ডোনাহুয়ে শোতে উপস্থিত হতেন, সেই সাথে তাকে পিপল, প্যারেড এবং আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে প্রদর্শন (ফিচার) করা হত। উল্লিখিত বিষয়গুলো, তার নারী ও পুরুষের দলগুলো (যেগুলোর একটিতে জন লেনন যোগ দিয়েছিলেন) তাকে তার প্রথম গ্রন্থ দ্য লিবারেটেড ম্যান (বাংলায় স্বাধীন পুরুষ) রচনা করতে অনুপ্রাণিত করে।[১৫] গ্রন্থটি নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রচনা করা হয়, এবং এটি একটি বিকল্প পারিবারিক ও কর্ম জীবনের ব্যবস্থা প্রস্তাব করে যেখানে কর্মজীবী নারীরা আরও ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে এবং পুরুষদেরকে যত্ন-প্রদানকারী (কেয়ার-গিভিং) হতে উৎসাহ প্রদান করবে। দ্য লিবারেটেড ম্যান ছিল নারী ও নারী অভিজ্ঞতাসমূহের জন্য পুরুষভিত্তিক সমান্তরালতার বিকাশ ঘটানোর ভিত্তিস্বরূপ: যেমন নারীর "সেক্স অবজেক্ট" ("যৌন সামগ্রী") হিসেবে অভিজ্ঞতার সমান্তরালে তিনি পুরুষের "সাকসেস অবজেক্ট" ("সাফল্য সামগ্রী") হিসেবে সমান্তরাল অভিজ্ঞতার ধারণা দেন।[১৫]
ফ্যারেল মানুষের মধ্যে বিপরীত লৈঙ্গিক ভূমিকার (রোল-রিভার্সাল) অভিজ্ঞতা তৈরির জন্যও পরিচিত ছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল উভয় লিঙ্গকেই বিপরীত লিঙ্গের "চামড়া ধারণ করিয়ে এক মাইল হাঁটানো"। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয় "পুরুষদের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা" এবং "রোল-রিভার্সাল ডেইট"।[১৭] পুরুষের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়, প্রত্যেক পুরুষকে নারীর জীবনের প্রতিটি "সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার" অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় যাকে নারীরা এড়িয়ে যেতে পারেনা। চোখাচোখি থেকে যৌন মিলন পর্যন্ত পুরুষকে "প্রত্যাখ্যাত হবার যে ১৫০টি ঝুঁকি বহন করে চলতে হয়" "রোল রিভার্সাল ডেটে" নারীদেরকে সেগুলোর থেকেই কয়েকটি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়।[১৮]
ব্যক্তিগত জীবন
ফ্যারেল গণিতবিদ এবং আইবিএমের কার্যনির্বাহী উরসুলাকে ১৬ বছর বয়সে বিবাহ করেন। বিবাহের ১০ বছর পর তিনি এবং উরসেই আলাদা হয়ে যান এবং পরবর্তীতে বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) ঘটান।[১৯][২০] ২০ বছর একা থাকার পর তিনি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের অগাস্টে লিজ ডাউলিংকে বিবাহ করেন।[১১] তার দুইজন সৎ কন্যা আছে।[১১] তারা ক্যালিফোর্নিয়ার মিল ভ্যালীতে বাস করেন।[২১]