নারীবাদ

প্রাপ্তবয়স্কা ও অপ্রাপ্তবয়স্কা নারীদের সমানাধিকারসহ লৈঙ্গিক (জেন্ডার) সমতার সংজ্ঞা নির্ধার

নারীবাদ বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভূত একটি আন্দোলন যা নারীর ক্ষমতায়ন, ভোটদানের অধিকার এবং নারী পুরুষ সমান এই দাবী থেকে শুরু হয়।

জাতীয় মহিলা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত ঢাকায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস সমাবেশ, ৮ মার্চ ২০০৫ বাংলাদেশ।

কালের পরিক্রমায় অনেক নারীবাদী আন্দোলন এবং আদর্শ তৈরী হয়েছে যেগুলোর প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী এবং লক্ষ্য উপস্থাপন করে। এর মাঝে কতগুলো ধারা সমালোচিত হয়েছে যেমন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন বা বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন যেগুলোকে বলা হয় যে, এগুলো শুধু সাদাদের, মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরে। এই সমালোচনা থেকে পরবর্তীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কেন্দ্রীক নারীবাদের সূচনা হয় যার মাঝে কালো নারীবাদ এবং ইন্টারসেকশনাল নারীবাদ অন্তর্ভুক্ত। [১]

ইতিহাস

১৯১২ খ্রিঃ ৬ই মে নিউ ইয়র্ক সিটির রাস্তায় নারীর ভোটাধিকারের দাবীতে পদযাত্রা

১৮৩৭ খ্রিঃ ফরাসি দার্শনিক ও ইউটোপীয় সমাজবাদী চার্লস ফুরিয়ে প্রথম 'নারীবাদ' শব্দটির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।[২] "নারীবাদ" (feminism) এবং "নারীবাদী" (feminist) শব্দদুটি ফ্রান্সনেদারল্যান্ডসে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ এ[৩], যুক্তরাজ্যে ১৮৯০ এ, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ এ।[৪][৫] অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী "নারীবাদী" শব্দের উৎপত্তিকাল ১৮৫২[৬] এবং "নারীবাদ" শব্দের ক্ষেত্রে তা ১৮৯৫।[৭] সময়কাল, সংস্কৃতি ও দেশভেদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নারীবাদীরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করেছেন। অধিকাংশ পাশ্চাত্য নারীবাদী ঐতিহাসিক মনে করেন যে যে সমস্ত আন্দোলন নারীর অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করেছে তাদের সব কয়টিকেই নারীবাদী হিসেবে গণ্য করা উচিত; তারা নিজেদেরকে ঐ নামে চিহ্নিত না করলেও এর অন্যথা হয় না।[৮][৯][১০][১১][১২][১৩] অন্য ঐতিহাসিকরা মনে করেন 'নারীবাদী' শব্দটি শুধু আধুনিক নারীবাদী আন্দোলন ও তার উত্তরসূরি আন্দোলনগুলোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই দ্বিতীয় দলের ঐতিহাসিকরা পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোকে চিহ্নিত করতে "উপনারীবাদ" কথাটির অবতারণা করেছেন।[১৪]

আধুনিক পাশ্চাত্য নারীবাদী আন্দোলনের ইতিহাস তিনটি "তরঙ্গ"-এ বিভক্ত।[১৫][১৬] নির্দিষ্ট কিছু নারীবাদী লক্ষ্যের এক একটি আঙ্গিক নিয়ে এক একটি ঢেউ কাজ করেছে। প্রথম ঢেউ-এর সময়ে, অর্থাৎ ঊনবিংশ শতক ও বিংশ শতকের প্রথম ভাগে নারীর ভোটাধিকার অর্জনের উপর জোর দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ঢেউ বলতে ১৯৬০ এর দশকে নারীমুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া মতাদর্শ ও কর্মসূচীসমূহকে বোঝায়। এই সময়ে নারীর সামাজিক ও আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়। তৃতীয় তরঙ্গ হল দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ১৯৯০ এর দশক থেকে শুরু হওয়া একটি ভিন্ন অভিমুখী ধারাবাহিকতা।[১৭] এই পর্যায়ে লিঙ্গনির্ভর প্রথাগত সামাজিক মূল্যবোধের একাধিক আমূল পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে ও হচ্ছে।

উনিশ শতক এবং উনিশ শতকের শুরুর দিক

উনিশ শতকের শুরুর দিকের কতগুলো কার্যকলাপের ধারাবাহিকতাকে নারীবাদের প্রথম ঢেউ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে চুক্তির সম অধিকার, বিবাহ, বাচ্চার দেখভাল এবং নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নিয়ে আন্দোলন চলছিলো। উনিশ শতকের শেষের দিকে এ আন্দোলন নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন, বিশেষভাবে নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়, যদিও কিছু নারীবাদীগণ তখনো নারীদের লিঙ্গগত, পুনরুৎপাদনমূলক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন.[১৮]

এমিলিন পাঙ্ঘরস্ট তার বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে ক্রমাগত ভ্রমণ করতে থাকেন এবং ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। ছবিটি নিউইয়র্কে বক্তৃতা দেয়ার সময় তোলা।

এছাড়াও এ শতকের শেষের দিকে ব্রিটেনের অস্ট্রেলিয়ান উপনিবেশগুলোতে নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলন ছড়িয়ে পরে। যেসব উপনিবেশ নিউজিল্যান্ডের স্ব-শাসিত অবস্থায় ছিলো, সেগুলোতে ১৮৯৩ সালে নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয় এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ১৮৯৫ সালে নারীদের ভোটাধিকার এবং পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার দেয়। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া ১৯০২ সালে নারীদের ভোটাধিকার প্রবর্তন করে।.[১৯][২০]

নেদারল্যান্ডে, উইলহেলমিনা ড্রুকার (১৮৪৭-১৯২৫) তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক এবং নারীবাদী সংগঠনের সাহায্যে ভোটাধিকার এবং সম অধিকারের জন্য সফলভাবে আন্দোলন করেন।

ব্রিটেনে ভোটাধিকার আন্দোলনকারীরা নারীদের ভোট দেয়ার অধিকারের সপক্ষে প্রচার শুরু করে। ১৯১৮ সালে রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপল অ্যাক্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়সী নারী যাদের সম্পত্তি আছে তাদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। ১৯২১ সালে এই আইন সংশোধন করে ২১ বছরের বয়সী সকল নারীর জন্য ভোটাধিকার প্রবর্তন করা হয়।[২১] এমিলিন পাঙ্ঘরস্ট ছিলেন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যাক্টিভিস্ট, যাকে টাইম পত্রিকা একুশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, " তিনি আমাদের সময়ের নারীদের সম্পর্কে ধারণা দেন এবং সমাজকে ঝাঁকি দিয়ে এমন অবস্থানে নিয়ে গেছেন যেখান থেকে পিছু ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই।"[২২]

যুক্তরাষ্ট্রে তালিকায় লুক্রেশিয়া মট, এলিজাবেথ ক্যাডি স্টানটোন, সুসান বি এন্থনি এর নাম উল্লেখযোগ্য। তারা সকলেই ভোটাধিকার আন্দোলনের পূর্বে দাস প্রথা বিলোপে সংগ্রাম করেছেন। তারা কুকার এর আত্মিক সমতার ধর্মতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন, যেখানে নারী এবং পুরুষকে ঈশ্বরের অধীনে সমান হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।[২৩] ১৯১৯ সালের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৯ তম সংশোধনীর সাথে সাথে নারীবাদের প্রথম ঢেউ শেষ হয়েছে বলে মনে করা হয়, কেননা এ সংশোধনীতে নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। এরপরে নারীবাদীরা নারীবাদের দ্বিতীয় ঢেউ এর যুগে প্রবেশ করেন যেখানে সামাজিক ও সংস্কৃতিগত বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অসমতার বিষয়গুলো সামনে আসে।[১৮][২৪][২৫][২৬][২৭]

বিশ শতকের মধ্যভাগ

বিশ শতকের মধ্যভাগে এসেও দেখা যায় ইউরোপের অনেক দেশেই নারীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার অর্জন করতে পারেনি। এইসব দেশে তখনো নারীবাদীরা ভোটাধিকার নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যায়। সুইজারল্যান্ডের নারীরা ১৯৭১ সালের ফেডারেই ইলেকশনে এসে ভোটাধিকার প্রাপ্ত হয়।[২৮] লিশটেন্সটাইনে নারীদের ভোটাধিকার গণভোট-১৯৮৪ অনুষ্ঠিত হবার পরে নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়।

ভোটাধিকারের পাশা পাশি নারীবাদীরা পারিবারিক আইন সংশোধনের জন্য লড়াই করতে থাকে। যদিও বিশ শতকের হাওয়া যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে লাগতে শুরু করে, তারপরেও নারীরা খুব কম অধিকারই চর্চা করতে পারছিলো। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ফ্রান্সে বিবাহিত নারীদের ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাজে যোগদান করার অধিকার ছিলো না।[২৯][৩০]

এছাড়াও নারীবাদীরা ধর্ষণ আইনে " বৈবাহিক অব্যাহতি" তুলে নেয়ার জন্য লড়াই করছিলেন।[৩১] এ আন্দোলনকে নারীবাদের প্রথম ঢেউ এ ভল্টারাইন ডি ক্লেয়ার, ভিক্টোরিয়া উডহাল এবং এলিজাবেথ ক্লার্ক এলমি প্রমুখ নারীবাদীদের 'বৈবাহিক ধর্ষণ' কে অপরাধ হিসেবে আইন করার যে প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিলো তার পরবর্তী ধাপ হিসেবে দেখা হয় কেননা এ প্রয়াস উনিশ শতকে ব্যর্থ হয়েছিলো।[৩২][৩৩] এখনো পর্যন্ত শুধু পশ্চিমা গুটিকয়েক দেশের নারীরাই এ অধিকার ভোগ করে, কিন্তু পুরো পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই নারীদের এ অধিকার নেই। [৩৪]

নারীবাদী,ও লেখিকা বেল হুক্স‌ অক্টোবর ২০১৪

ফরাসী দার্শনিক সিমোন দ্যা বোভোয়ার ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত তার দ্বিতীয় লিঙ্গ বইয়ে নারীবাদের অনেক প্রশ্নের সমাধান মার্কসীয় অস্তিত্ববাদ এর আলোকে ব্যাখ্যা করেন। [৩৫] এই বইটিতে তিনি নারীবাদীদের দৃষ্টিতে অন্যায় তুলে ধরেন। নারীবাদের দ্বিতীয় ঢেউ কে ১৯৬০ এর দশকে শুরু হওয়া নারীবাদী আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় যা ভোটাধিকার পরবর্তী অন্যান্য অধিকার যেমন জেন্ডার অসমতা[১৮] নিয়ে কাজ করে। [৩৬] এছাড়াও এসময় সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অসমতা দূরীকরণে কাজ করা হয়। নারীদের প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যাগুলো যে রাজনৈতিক এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সৃষ্ট সে ধারণা প্রচার পায়। এ ধারণাকে ব্যাখ্যা করতে সক্রিয় নারীবাদী এবং লেখিকা "ক্যারল হ্যানিসচ" "পারসোনাল ইজ পলিটিকাল" কথাটি তুলে ধরেন যা পরবর্তীকালে নারীবাদের দ্বিতীয় ঢেউ এর সমার্থক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।[৩৭][৩৮]

বিশ শতকের শেষ এবং একুশ শতকের শুরু

নারীবাদের তৃতীয় ঢেউ

১৯৯০ এর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে নারীবাদের তৃতীয় ঢেউয়ের ছোঁয়া লাগে যা দ্বিতীয় ঢেউ এর সময়কালীন উদ্যোগ এবং সংগ্রামগুলোর পরবর্তী ধাপ হিসেবে দেখা হয়। তারপরেও কিছু স্বতন্ত্রতা যেমন সেক্সুয়ালিটি, নারীদের হেটেরসেক্সুয়ালিটি কে প্রশ্নবিদ্ধ করা এমনকি সেক্সুয়ালিটি কে নারীদের ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরা, ইত্যাদির মাধ্যমে নারীবাদের তৃতীয় ঢেউ চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া নারীবাদের তৃতীয় ঢেউ এ দ্বিতীয় ঢেউয়ের অস্তিত্ববাদী দার্শনিকদের নারীত্ব এর সংজ্ঞাকে 'মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাদা নারীদের অভিজ্ঞতার' উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয় ঢেউ নারীবাদের "স্থানীয় রাজনীতি" উপর গুরুত্বারোপ করে, দ্বিতীয় ঢেউ এ শুরু হওয়া কোনটি নারীদের জন্য ভালো অথবা নয় এধরনের ধারণাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং জেন্ডার এবং সেক্সুয়ালিটির পোস্ট-স্ট্রাকচারালিস্ট ব্যাখ্যাদান করার প্রবণতা তৈরি করে।[৩৯][৪০][৪১] এসময় নারীবাদী নেত্রীগণ যেমন, গ্লোরিয়া অ্যাযাল্ডা, বেল হুকস, সেলা স্যান্ডোভাল, চেরী মোগারা, অ্যাড্রে লর্ড, ম্যক্সিন হং কিংস্টন, যারা দ্বিতীয় ঢেউয়ের নারীবাদী হিসেবে বিশেষ পরিচিত, তারা অন্যান্য নারীবাদীদের (সাদা নয়) সাথে একত্রিত হয়ে নারীবাদের ভিতরে বর্ণবাদ সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করার জন্য মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছিলেন।[৪০][৪২] এছাড়াও তৃতীয় ঢেউ এ বিভিন্ন নারীবাদের পার্থক্য, সমাজে নারী এবং পুরুষের ভিন্নতা, জেন্ডার ভূমিকার পার্থক্য এসব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়।

স্ট্যান্ডপয়েন্ট

স্ট্যান্ডপয়েন্ট তত্ব নারীবাদী তাত্ত্বিকদের তাত্ত্বিক ভিত্তি যেখানে বলা হয় ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান তার জ্ঞান আরোহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তি দেয়া যে, বিদ্যমান গবেষণা এবং তত্ত্বগুলো নারী এবং নারীবাদী আন্দোলন গুরুত্বহীন হিসেবে উপস্থাপন করে এবং পক্ষপাত-শূন্য হিসেবে তুলে ধরেছে বলে দাবি করে।[৪৩] বর্ণবাদ, শ্রেণিবাদ,হোমোফোবিয়া উপনিবেশবাদ কীভাবে লিঙ্গবৈষম্যকে প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য ১৯৮০ এর দশক থেকেই স্ট্যান্ডপয়েন্ট নারীবাদীগণ বলে আসছেন যে, নারীবাদী আন্দোলনে আন্তর্জাতিক সমস্যা (যেমন ধর্ষণ,অজাচার, পতিতাবৃত্তি) এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে সৃষ্ট সমস্যা (যেমন আফ্রিকায় ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন, আরব বা মধ্যপ্রাচ্যে নারীদের সামাজিক বাধা, উন্নত বিশ্বে গ্লাস সিলিং) নিয়ে কাজ করা দরকার। [৪৪]

উত্তর-নারীবাদ

উত্তর নারীবাদ প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয় ১৯৮০ এর দশকের পর থেকে শুরু হওয়া কতগুলো দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করতে। এই মতাদর্শে বিশ্বাসীরা ঠিক "নারীবাদ বিরোধী" নন, তবে বিশ্বাস করেন যে, নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের বিষয়গুলো অর্জন করাই যুক্তিযুক্ত। এরা নারীবাদের তৃতীয় তরঙ্গের বিষয়গুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এই প্রত্যয়টি প্রথমে যারা দ্বিতীয় তরঙ্গের বিষয়গুলোর প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলো, তাদের বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যয়টি দ্বারা একগুচ্ছ তত্ব এবং তাত্ত্বিকদের নির্দেশ করা হয় যারা কিনা নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের পরের ধারা নারীবাদী চিন্তা এবং তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছেন।[৪৫] উত্তর নারীবাদে বিশ্বাসীরা এটাও বলে থাকেন যে, নারীবাদ এখন আর আর প্রাসঙ্গিক নয়।[৪৬] অ্যামেলিয়া জোন্স লিখেছেন যে, ১৯৮০ এবং নব্বই এর দশকের যেসব উত্তর নারীবাদ সম্পর্কিত লেখনী পাওয়া যায় সেগুলোতে দ্বিতীয় ঢেউ মনোলিথিক এনটিটি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।[৪৭]উত্তর নারীবাদে বিশ্বাসী ডরোথী চান "অনুযোগ লিপি" তৈরী করেন যেখানে তিনি - "নারীবাদীরা এখনো জেন্ডার সমতা এর জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন যখন কিনা জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েই গেছে" উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেন," অনেক নারীবাদীই এখন এই অভিযোগ করেন যে, অধিকার এবং সমতার জন্য যে লড়াই তারা করেছেন এখন সেগুলোকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।"[৪৮]

তত্ত্ব

নারীবাদী তত্ত্ব হলো নারীবাদকে তাত্ত্বিক এবং দার্শনিক রূপ দেয়ার প্রয়াস। এটি জ্ঞানের অনেকগুলি শাখা যেমন নৃবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, উইমেন স্টাডিজ, নারীবাদী সাহিত্য সমালোচনা,[৪৯][৫০] শিল্প ইতিহাস,[৫১] মনোসমীক্ষণ[৫২] এবং দর্শন কে ঘিরে গড়ে উঠেছে।[৫৩][৫৪] নারীবাদী তত্ত্ব লিঙ্গবৈষম্যকে বোঝার চেষ্টা করে এবং জেন্ডার রাজনীতি, ক্ষমতার সম্পর্ক ও সেক্সুয়ালিটির উপর গুরুত্ব দেয়। এই সামাজিক এবং রাজনৈতিক জটিল সম্পর্কগুলো ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি নারীবাদী তত্ত্ব নারীদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে। স্টেরিওটাইপিং, লৈঙ্গিক ভাবে আপত্তিকরণ), নিপীড়ন, এবং পুরুষতন্ত্র এই বিষয়গুলো নারীবাদী তত্বে প্রতিপাদ্য হয়।[৫৫][৫৬]

মিলের ভূমিকা

বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল দেখতে পান যে, নারীসংক্রান্ত বিষয়াবলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি নারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লিখতে শুরু করেন। এপ্রেক্ষিতে তিনি প্রারম্ভিক নারীবাদী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। ১৮৬১ সালে লিখিত ও ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত দ্য সাবজেকশন অব উইমেন শীর্ষক নিবন্ধে নারীদের বৈধভাবে বশীভূতকরণ বিষয়টিকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করেন। এরফলে তা সঠিকভাবে সমতাবিধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে।[৫৭]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

প্রবন্ধ

তালিকা

টুলস

মাল্টিমিডিয়া ও দস্তাবেজ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ