ক্রিস্পার বংশাণু সম্পাদনা
ক্রিস্পার বংশাণু সম্পাদনা (CRISPR gene editing) বংশাণু প্রকৌশল ও আণবিক জীববিজ্ঞান ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি কৌশল যার সাহায্যে জীবিত জীবসমূহের বংশাণুসমগ্র পরিবর্তন করা সম্ভব। এই কৌশলটি ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে অবস্থিত ক্রিস্পার-ক্যাস৯ ভাইরাসরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি সরলীকৃত রূপ। ক্যাস৯ নিউক্লিয়েজকে একটি কৃত্রিম পরিচালক আরএনএ-এর সাথে যূথবদ্ধ করে কোনও কোষের ভেতরে অনুপ্রবিষ্ট করিয়ে ঐ কোষের বংশাণুসমগ্রটিকে একটি উদ্দীষ্ট অবস্থানে কর্তন করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে বিদ্যমান বংশাণুসমূহকে অপসারণ এবং/কিংবা নতুন বংশাণু জীবন্ত অবস্থায় যোগ করা সম্ভব।[১]
এই কৌশলটিকে জৈবপ্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞান ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়, কারণ এর মাধ্যমে জীবন্ত অবস্থাতেই অত্যন্ত সুক্ষ্মতার সাথে, সাশ্রয়ীভাবে ও অনায়াসে বংশাণুসমগ্রগুলিকে সম্পাদনা করা সম্ভব। এই প্রযুক্তিটিকে নতুন ঔষধ, কৃষিদ্রব্য, বংশাণুগতভাবে পরিবর্তিত জীব সৃষ্টিকরণ কিংবা রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু ও কীটপতঙ্গদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বংশগতীয় রোগসমূহের চিকিৎসার পাশাপাশি দেহকোষীয় পরিব্যক্তির ফলে সৃষ্ট রোগ যেমন কর্কটরোগ বা ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও এটি ব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা আছে। তবে মানব ভ্রূণকোষের বংশাণু পরিবর্তনে এই কৌশলের প্রয়োগ অত্যন্ত বিতর্কিত।
ক্রিস্পার বংশাণু সম্পাদনা কৌশল উদ্ভাবনের জন্য মার্কিন বিজ্ঞানী জেনিফার ডাউডনা এবং ফরাসি বিজ্ঞানী এমানুয়েল শারপঁতিয়েকে ২০২০ সাকে রসায়নে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।[২] এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত আণবিক জীববিজ্ঞানী জর্জ চার্চ, চীনা-বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ফেং চাং ও ফরাসি-বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী রোদল্ফ বারঁগু, ফ্রান্সের বিজ্ঞানী ফিলিপ অর্ভাত এবং লিথুয়ানিয়ার বিজ্ঞানী ভির্গিনিউস শিক্শনিস এই প্রযুক্তির উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।