গ্রাফিন
গ্রাফিন (ইংরেজি: Graphene) এক ধরনের কার্বন, যা একটি সরু চাকতিরূপে বিরাজ করে, চাকতিটির ক্ষেত্রফল যত বড়ই হোক না কেন পুরুত্ব হয় মাত্র একটি পরমাণুর আকারের সমান। এক্ষেত্রে পরমাণুগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত হয় যে, একটি দ্বিমাত্রিক মৌচাকের মত আকৃতি গঠিত হয়। এটি কাচের মত স্বচ্ছ। ইস্পাতের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব মৌল ও যৌগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। প্লাস্টিকের মধ্যে শতকরা মাত্র ১ ভাগ গ্রাফিন মেশালে তা তড়িৎ সুপরিবাহীতে পরিণত হতে পারে। অনেকগুলো ন্যানোটিউবকে না মুড়িয়ে একের উপর আরেকটি রেখে দিলে যে কাঠামোটি গঠিত হয় স্থূলভাবে তার সাথে গ্রাফিনের তুলনা করা যেতে পারে।
২০০৪ সালে অক্টোবরে গ্রাফিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এটি আবিষ্কারের জন্য আন্দ্রেঁ গেইম এবং কনস্টানটিন নভোসেলভ ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[১]
ব্যবহারিতা
বিশ্বখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম সিলিকন ট্রানজিস্টারের বদলে গ্রাফিন ট্রানজিস্টারের উৎপাদন শুরু করেছে। গ্রাফিন তাপ সুপরিবাহী বলে সহজে তাপ ছেড়ে দিতে পারবে। ফলে, কম্পিউটার ঠান্ডা থাকবে। অ্যতন্ত স্বচ্ছ হওয়ায় গ্রাফিন ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মূল উপাদান হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে। সূক্ষতার কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় এর রেজ্যুলেশন হবে অনেক বেশি এবং ব্যবহার হবে অনেক সহজ। এ সমস্ত সুবিধার জন্য স্যামসাং বাজারে নিয়ে আসছে প্রিন্টেড গ্রাফিন ইলেকট্রোড যা মোবাইলের টাচ স্ক্রিনে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, গ্রাফিনের যৌগ গ্রাফিন অক্সাইড একটি অ্যান্টিব্যাক্টোরিয়াল। তাই, চীনে খাবার সংরক্ষণে এটি ব্যববহৃত হচ্ছে।
গ্রাফিনের আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত পদার্থসমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী। ফলে ভবিষ্যতে গাড়ি, উড়োজাহাজ এবং সোলার সেলে গ্রাফিন ব্যবহারের চিন্তা করছেন প্রকৌশলীরা। একই সঙ্গে গ্রাফিন অনেক হালকা। ফলে গ্রাফিন দিয়ে তৈরি যানের জ্বালানি-খরচও তুলনামূলক কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।