জনসংখ্যার শূন্য বৃদ্ধি

জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধি (অথবা রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট),[১] যাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে জেডপিজি বলা হয়, হলো জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ভারসাম্যের এমন পর্যায় যখন একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যার বৃদ্ধি বা হ্রাস কোনোটিই ঘটে না, যাকে আবার অনেকে সামাজিক লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।[২] কারো কারো মতে, পরিবেশের দীর্ঘস্থায়িত্ব অর্জনের জন্য, একটি উৎকৃষ্ট জনসংখ্যায় স্থিতিশীল হওয়ার পর, জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধি অর্জন সকল দেশ ও বিশ্বের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত।[৩] জনসংখ্যার বৃদ্ধি বা হ্রাস কোনোটিই হয়না এই কথাটির অর্থ হলো, যে পরিমাণ মানুষ জন্মগ্রহণ করবে সে পরিমাণ মানুষই আবার মৃত্যুবরণ করবে।[৪]

ইতিহাস

জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধির একটি অঘোষিত লক্ষ্য হলো প্রজনন ক্ষমতা প্রতিস্থাপণের স্তর(রিপ্লেসমেন্ট ফার্টিলিটি রেট) অর্জন করা, যা জনসংখ্যা স্থির রাখতে নারীপ্রতি গড় শিশুসংখ্যাকে নির্দেশ করে। এই সংখ্যা নির্ভর করে মৃত্যুর হার ও নবজাতক জন্মের লিঙ্গ অনুপাতের ওপর। এই সংখ্যা উন্নত দেশে ২.১ এর কাছ থেকে উন্নয়নশীল দেশে ৩.০ এর ওপর হতে পারে।[৫]

মার্কিন সমাজবিজ্ঞানীজনসংখ্যাতত্ত্ববিদ কিংসলে ডেভিসকে শব্দটি তৈরীর কৃতিত্ব[৬][৭] দেওয়া হলেও জর্জ স্টোলনিৎজ ১৬৯৩ সালের দিকে স্থির জনসংখ্যার ধারণাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।[৮] জেমস মিরলিস বিষয়টির একটি গাণিতিক বিবরণ দিয়েছিলেন।[৯]

১৯৬০ এর দশকের শেষে জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধি, পরিবেশবাদনারীবাদের সাথে দৃঢ় সংযোগ তৈরীর মাধ্যমে বিশিষ্ট রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এই আন্দোলনকারীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়, যারা বিশ্বাস করতো দূষণ, সহিংসতা, মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষয় এর মতো সমস্যাগুলোর জন্য ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাই দায়ী।[১০] দ্য পপ্যুলেশন বম্ব বইয়ের লেখক পল আর্লিচ, কানেকটিকাটের একজন উকিল রিচার্ড বাওয়ার্স এবং অধ্যাপক চার্লস রেমিংটন এই আন্দোলনের জনক হিসেবে কাজ করেন।[১১] আর্লিচ বলেছিলেনঃ "বছরের সেরা মাতা হওয়া উচিত একজন নির্বীজিত ও দুইজন পালিত সন্তানের অধিকারী নারীর।"

জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধি অর্জনের উপায়

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জনসংখ্যাতত্ত্ববিদ জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধিতে পৌঁছানোর কয়েকটি উপায়ের কথা বলেছেন।

জীববিজ্ঞানী অ্যালান ডি থর্নহিল এবং লেখক ড্যানিয়েল কুইন যুক্তি দিয়েছিলেন যে মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি খাদ্য সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল[১২] এবং জনসংখ্যার ক্রমবিকাশ শুধুমাত্র সম্পসারিত খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরীর মাধ্যমেই সম্ভব। ১৯৯৮ সালে, তারা "খাদ্য উৎপাদন এবং মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধি" শিরোনামে একটি ভিডিও তৈরী করেন, যেখানে তারা এর ব্যাখা প্রদান করেন।

কলোরডো বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার ইমিরেটাস অধ্যাপক অ্যালবার্ট বার্টলেট বলেন যে জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধি অর্জনে নিম্নলিখিত সুযোগগুলি বিদ্যমানঃ

১.স্বেচ্ছায় জন্ম এবং অভিবাসন সীমাবদ্ধকরণ;

২.জনসংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি না হওয়া অবধি বর্তমান পথে চলতে দেওয়া যেন জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে ওঠে;

৩.কিছুই না করা এবং রোগ, অনাহার, যুদ্ধ এবং মহামারীর মাধ্যমে প্রকৃতিকেই জনসখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে দেওয়া। মানুষ যদি সমস্যাটির সমাধান না করে তবে প্রকৃতি করবে।[১৩]

একইভাবে, আরেক বিশেষজ্ঞ জনসংখ্যাতত্ত্ববিদ জেসন ব্রেন্ট জনসংখ্যার শুন্য বৃদ্ধি অর্জনের তিনটি উপায়ের কথা বলেন, এগুলো হলোঃ

১.যুদ্ধের মাধ্যমে; গণবিধ্বংসী অস্ত্র, অনাহার, রোগ, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, জাতিগত নির্মূলকরণ, বন্দী-শিবির এবং কল্পনাতীত ভয়াবহতার মাধ্যমে, যখন মানবতা পৃথিবীর বহন ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে;

২.পৃথিবীর বহন ক্ষমতা অতিক্রম করার পূর্বেই মানবতার স্ব-কর্ম দ্বারা। যদি কোনও গোষ্ঠী বা এমনকি কোনও একক পরিবার তার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তবে পুরো প্রোগ্রামটিই ব্যর্থ হবে;

৩.পৃথিবীর বহন ক্ষমতা অতিক্রমের পূর্বে জোর করে জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ দ্বারা।[১৪]

চীনে

প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের জনসংখ্যা নিয়ে চীন জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। এটি মূলত চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নশীল জীবনযাত্রার ফলাফল। যদিও, অনেক জনসংখ্যাতত্ত্ববিদ এর কৃতিত্ব ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে প্রণীত চীনের পরিবার পরিকল্পনা নীতিকে দিয়ে থাকেন, যা দেরীতে বিবাহ ও সন্তানগ্রহণ এবং গর্ভনিরোধক ব্যবহার উৎসাহিত করেছিলো আর ১৯৮০ সাল থেকে অধিকাংশ শহুরে দম্পতিদের একটি সন্তান ও গ্রামীণ দম্পতিদের দুটি সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে ৮৭ কোটিতে দাঁড়ানোর কথা। ২০০৯ সালে বলা হয়েছিলো, চীন সরকার ভবিষ্যতে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেখার আশা করছে।[১৫] কিন্তু ২০১৩ এর নভেম্বরে, অজনপ্রিয়তা সত্ত্বেও এক সন্তান-নীতি শিথিলকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন