পার্সিমন

পার্সিমন (ভারতে হিন্দি ভাষায় তেন্ডু, আকমল বা স্বর্ণাম্র নামে পরিচিত) হল হলুদ, কমলা বা লাল রঙের ডায়োস্পাইরোস গণের বিভিন্ন প্রজাতির একটি ভোজ্য মিষ্টি ফল। এটি অনেকটা টম্যাটোর আকারের ১.৫ সেমি হতে ৯ সেমি (০.৫ থেকে ১৫ ইঞ্চি) বৃত্তাকার আকৃতির হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে প্রায় ৭৫০ প্রজা‌তির পা‌র্সিমন উৎপা‌দিত হয়। অ‌ধিকাংশ পার্সিমনই বীজশূন্য। তবে কিছু কিছু প্রজা‌তির এই ফল বীজযুক্ত হয়ে থাকে। উচ্চ পু‌ষ্টিমানে সমৃদ্ধ পার্সিমন ফলে প্রজা‌তিভেদে শর্করার প‌রিমাণ ১৯-৩৩%, হজম‌যোগ্য আঁশ ৪% ছাড়াও পর্যাপ্ত প‌রিমাণে বি‌ভিন্ন ধরনের ভিটা‌মিন এবং খ‌নিজ পদার্থ যেমন, পটাশিয়াম বিদ্যমান। চর্বির পরিমাণ নিতান্তই কম। ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস-এ ভরপুর ফলটি আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ সহ বহু রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।[১] জাপানে ফলটি জাতীয় ফল হিসাবে স্বীকৃত।[২][৩]

পার্সিমন
Persimmon
পার্সিমন ফল- পুরো এবং অর্ধেক
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ:উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন:সপুষ্পক উদ্ভিদ
পরিবার:এবেনাসি
গণ:ডায়োস্পাইরোস
প্রজাতি:Diospyros kaki
দ্বিপদী নাম
Diospyros melanoxylon
Diospyros kaki(জাপা‌ন)
Diospyros virginiana (আমেরিকা)
Diospyros digyna (কালো রঙ-মে‌ক্সিকো)
Diospyros peregrina(ভারতীয়)

Diospyros (roxb) melanoxylon
পার্সিমন ফলের বীজ

"পারসিমন" ফলের স্বাদে খেঁজুর ও আলুবখরা থাকার কারণে ইংরাজীতে ডেট-প্লামও বলা হয়। ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের যে অঞ্চলে জন্মায় সেগুলি হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চল হওয়ায় স্থানীয়ভাবে হিন্দিতে তেন্ডু নামে পরিচিত। বাংলায় পরিচিতি বিলিতি গাব হিসাবে।

উদ্ভিদ ও ফলের বর্ণনা

টমেটো সদৃশ পার্সিমনকে সাধারণত বেরি হিসাবে গণ্য করা না হলেও আকারগতভাবে ফলটি আসলে বেরি জাতীয়। ডায়োস্পাইরোস কাকি প্রজাতির পার্সিমনের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আমেরিকান ও ভারতীয় প্রজাতির গাছ সাধারণত ৪.৫ থেকে ১৮ মিটার (অর্থাৎ ১৫ থেকে ৬৯ ফুট) উচ্চতার এবং গোলাকার শীর্ষের হয়ে থাকে। জাপানের পার্সিমন গাছ ৪ - ১০ মিটার উচ্চতার হয়ে থাকে।[৪] এটি সাধারণত খাড়া অবস্থায় থাকে, তবে কখনও কখনও আঁকাবাঁকা হতে পারে বা উইলো চেহারারও হয়। গাছের পাতাগুলি ৭-১৫ সেন্টিমিটার (৩-৬ ইঞ্চি) লম্বা হয়[৪] উপরের পৃষ্ঠ চকচকে চামড়ার মত এবং  নীচের অংশ সিল্কি বাদামী রঙের।[৪] গাছের পাতা পর্ণমোচী এবং নীলাভ-সবুজ রঙের। তবে শরৎকালে  হলুদ, কমলা বা লাল হয়ে যায়।[৪]

পার্সিমন গাছ সাধারণত দ্বিবীজপত্রী,[৫] অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে উৎপন্ন হয়।[৪] কিছু গাছে অবশ্য পুরুষ ও স্ত্রী উভয় ধরনের ফুল থাকে এবং বিরল ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ ফুলও হতে পারে। পুরুষ ফুল গোলাপী হয়[৫] এবং একসঙ্গে তিনটি দেখা যায়।[৪] এদের চারটি আলাদা বৃতি, এক দলমণ্ডলে এবং দুটি সারিতে ২৪ টি পুংকেশর থাকে। স্ত্রী ফুল সাধারণত ক্রিমি-সাদা[৫] এবং এককভাবে দেখা যায়।[৪] তাদের একটি বড় বৃতি, চারটি ভাগের হলুদ রঙের দলমণ্ডলে আটটি অনুন্নত পুংকেশর এবং একটি গোলাকার ডিম্বাশয় থাকে।[৪] 'সম্পূর্ণ' ফুল এই দুটির মধ্যেকার একটি ক্রস।[৪][৫]

পার্সিমন ফল শরতের শেষের দিকে পাকতে শুরু করে এবং শীতকাল পর্যন্ত গাছে থাকে (সেপ্টেম্বর হতে ডিসেম্বর মাস)।[৫] প্রজাতি এবং বৈচিত্রের উপর নির্ভর করে পরিপক্ক ফল চকচকে হালকা হলুদ-কমলা থেকে গাঢ় লাল-কমলা পর্যন্ত হয়ে থাকে।[৪] ফলটি টম্যাটোর আকারের ১.৫ সেমি হতে ৯ সেমি (০.৫ থেকে ১৫ ইঞ্চি) বৃত্তাকার আকৃতির হয়ে থাকে।[৬] বৃতিটি সাধারণত ফলের সাথে লেগেই থাকে, কিন্তু ফল পাকলে সরানো যায়। পাকা ফল প্রধানত ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ উপাদানে সুক্রোজ সমৃদ্ধ এবং স্বাদে মিষ্ট হয়।[৭]কিন্তু কাঁচা অবস্থায় ফলটি সাধারণত কষা বা তিক্ত স্বাদের।

কৃষি উৎপাদন

ফলটির উৎপাদনের নিরিখে বিশ্বে প্রথম স্থান চীনের। তারপরের স্থান দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের।[৮] জাপানে ফলটি জাতীয় ফল হিসাবে স্বীকৃত।[২] উল্লেখ আছে এই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলায় জাপানের নাগাসাকিতে যে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয় সেখানেই পার্সিমন উদ্ভিদের কুঁড়িতেই ধ্বংসের পর প্রথম জীবনের সূচনা হয় এবং জাপানে এটি ‘কাকি’ নামে সুপরিচিত।[৯] দারুণ স্বাদ ও পুষ্টিকর ফলটির চাষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।[১০][১১]যদিও পার্সিমনের উৎপত্তি চীনে হয়েছে বলে মনে করা হয়, এক জাতের পার্সিমন উত্তর আমেরিকাতে প্রচুর উৎপন্ন হয়। এটি মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলের মধ্য-দক্ষিনে বিস্তৃত সমভূমিতে প্রতুল হলেও, উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ হিসাবে এটি জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যাপক উৎপাদন হয়।[১২] ভারতের এটি মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশের বিশেষ করে বিন্ধ্যাচল পাহাড়েও জন্মায়। এছাড়া হিমাচল প্রদেশের মানালি, কোসল প্রভৃতি স্থানে পাহাড়ের কোলে জন্মায়।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন