বাল্যবিবাহ নিরোধক আইন
বাল্যবিবাহ নিরোধক আইন ব্রিটিশ ভারত্ ২8 শে সেপ্টেম্বর তারিখে ১৯২৯ সালে পাস করা হয়। এই আইনে উল্লেখ আছে মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স ১৪ বছর এবং ছেলেরা ১৮ বছর বয়সের বাতিল করে মেয়েদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর বয়স করা হয়েছে। এটি শরদ আইন হিসাবে খুব পরিচিত। এই আইনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন হার্বিলাস সারদা। উত্থাপনের ছয় মাস পরে এটি ১ এপ্রিল ১৯৩০ সালে কার্যকর হয় এবং এটি শুধু হিন্দুদের নয়, সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের জন্য প্রযোজ্য।[১][২][৩] এটি ভারতের সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের একটি ফল ছিল।[৪] ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শক্তিশালী বিরোধী আসা সত্ত্বেও আইনটি ভারতীয় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সর্বাধিক ভারতীয়দের দ্বারা গৃহীত হয়। ব্রিটিশ সরকার তাদের অনুগত হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলির কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ের কারণে এটি বাস্তবায়ন করেছিল।[৫]
বাল্যবিবাহ নিরোধক আইন, ১৯২৯ Child Marriage Restraint Act | |
---|---|
ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল | |
দীর্ঘ শিরোনাম
| |
কার্যকারী এলাকা | পুরো ভারত |
প্রণয়নকারী | ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল |
প্রণয়নকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ |
প্রবর্তনের তারিখ | ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ |
অবস্থা: বলবৎ |
আইন প্রক্রিয়া
প্রথমের দিকে এই আইনটি ভারতীয় বিধান সভাতে উপস্থাপিত হয় এবং পরাজিত হয়। ১৯২৭ সালে রায় সাহেব হরবিলাস সারদা কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে হিন্দু বাল্য বিয়ে বিল উত্থাপন করেন। বিশ্বব্যাংকের চাপের মুখে ভারত ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিকামী সামাজিক সংস্কারপন্থীরা সরকার কেন্দ্রীয় প্রদেশের প্রধান সদস্য স্যার মরোপন্ত বিশ্বনাথ জোশি নেতৃত্বে সম্মতি কমিটির নামে একটি নির্বাচিত কমিটিতে বিলটি উল্লেখ করে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন আর্কোট রামসামী মুদালিয়ার, খান বাহাদুর মাথুক, মিয়ান ইমাম বাকশ কাদু, মিসেস ও বরিয়ী বিদন, রমেশ্বরী নেহরু, সত্যেন্দ্র চন্দ্র মিত্র, ঠাকুর দাস ভাগভা, মৌলভী মুহাম্মদ ইয়াকুব, মিয়ান স্যার মুহাম্মদ শাহ নওয়াজ এবং এম. ডি সাগানে সচিব ছিলেন।[৬]
অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স, নারী ভারতীয় সমিতি ও নারীর জাতীয় পরিষদ তাদের সদস্যদের মাধ্যমে বিবাহের বয়স বাড়ানোর পক্ষে এবং জোশী কমিটির সম্মতির পক্ষে যুক্তি তৈরি করে। মুসলিম মহিলারাও বিবাহের বয়স সীমা বাড়ানোর পক্ষে জোশী কমিটির কাছে তাদের মতামত পেশ করে এমনকি তারা জানতেন যে মুসলিম ওলেমা দ্বারা বিরোধিতা সম্মুখীন হতে হবে।
জোশী কমিটি ১৯২৯ সালের ২০ জুন তার রিপোর্ট পেশ করে এবং ১৯২৯ সালের ২8 সেপ্টেম্বর ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল দ্বারা আইনটি পাস করা হয় এবং ১ লা এপ্রিল ১৯৩০ সালে সমগ্র ব্রিটিশ ভারত পর্যন্ত আইন প্রণয়ন করে।
গুরুত্ব
বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন হলো সামাজিক সংস্কারের সমস্যা, যা ভারতে সংগঠিত মহিলাদের দ্বারা গৃহীত হয়েছিল। এই আইন বাস্তবায়ন হওয়ার ফলে যুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক পিটিশন ডিভাইস ব্যবহার এবং এই প্রক্রিয়া রাজনীতিতে অবদান রাখেন।[৭]
অল ইন্ডিয়া ওমেন এ্যাসোসিয়েশন বিলটিকে সমর্থন করে এবং বযস্তবায়নের জন্য রাজনীতিবিদদের চাপ দিতে থাকে। সেসময় একটি স্লোগানে মুখরির হয় 'সারদা বিলের বিরোধিতা করলে, পৃথিবী তোমাকে উপহাস করবে'। গান্ধী তার বক্তৃতায় বাল্য বিয়ের নিন্দা করেন ও ধাক্কা জানান। এই আইনের ফলে ভারতে নারীদের প্রাচীন শাস্ত্রের বিরোধ হয়। তারা ঘোষণা করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রণয়ন শুরু করবে, পুরুষ প্রভাব মুক্ত থাকবে। এছারাও এই আইন নারীর সংগঠন উদার নারীবাদকে সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।[৮]
যদিও এটি ভারতের নারী আন্দোলনের জন্য একটি বিজয়, কিন্তু আইন প্রযোগে অনেকটাই ব্যর্থ ছিল। দুই বছর পাঁচ মাসে এটি একটি সক্রিয় বিল ছিল, ৪৭৩ টি মামলা ছিল, যার মধ্যে মাত্র ১৬৭ সফল হয়েছিল। এই তালিকাটি ২০৭ ধারাবাহিকতার সাথে চলে, যার মধ্যে ৯৮ টি মামলা ১৯৩২ সালের আগস্টে মুলতুবি করা হয়। ১৬৭ টি সফল মামলাগুলির মধ্যে কেবল ১৭ বা তারও বেশি অকার্যকর থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঞ্জাব এবং যুক্ত প্রদেশগুলিতে ছিল।
যাইহোক, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ঔপনিবেশিক সময়ের এই আইনটি একটি মৃত পত্র ছিল।[৯] জওহরলাল নেহেরু মতে, এটি আইন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার সচেতনতা প্রচারের জন্য কিছুই করেনি, বিশেষত ভারতের ছোট শহরগুলিতে এবং গ্রামগুলিতে।