মাধব আপ্তে
মাধবরাও লক্ষণরাও আপ্তে (ⓘ; মারাঠি: माधव आपटे; জন্ম: ৫ অক্টোবর, ১৯৩২ - মৃত্যু: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৩ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মাধব আপ্তে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
![]() ২০১৪ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে মাধব আপ্তে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সিসিআইয়ের সভাপতি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যক্তিগত বিবরণ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | মুম্বই, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ রাজ | ৫ অক্টোবর ১৯৩২|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল, মুম্বই, ভারত | (বয়স ৮৬)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আত্মীয়স্বজন | অরবিন্দ আপ্তে (ভ্রাতা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাসস্থান | মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়, এলফিনস্টোন মহাবিদ্যালয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ক্রিকেট তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৬৪) | ১৩ নভেম্বর ১৯৫২ বনাম পাকিস্তান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৮ মার্চ ১৯৫৩ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৮ জুন ২০১৯ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিং করতেন মাধব আপ্তে।
শৈশবকাল
চিতপবন ব্রাহ্মণ বংশীয় লক্ষণরাও আপ্তের সন্তান তিনি।[১] তার প্রপিতামহ পারিবারিক ব্যবসা টেক্সটাইল ও চিনির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[২] ভারত সরকার কর্তৃক চিলড্রেন্স একাডেমি রাষ্ট্রীয়করণের পূর্বে পড়াশোনা করেন। এরপর স্কটিশ প্রেসবাইটেরিয়ান হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেই ক্রিকেট খেলার প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি।[৩]
মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে কলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর এলফিনস্টন কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।[৪][৫] এলফিনস্টন কলেজে থাকাকালীন বিনু মানকড়ের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
১৯৪৮ সালে লেগ স্পিন বোলার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান মাধব আপ্তে।[৬] একই বছরে ওভালে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের শেষ ইনিংসে ১০০.০০ গড়ে রান তোলা থেকে বিরত রেখেছিলেন।[৭]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৯৫১ সালে ১৯ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজের সদস্যরূপে সফররত মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।[৮]
১৯৫১-৫২ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত মাধব আপ্তে’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৫২ সালে ২০ বছর বয়সে রঞ্জি ট্রফিতে প্রথমে খেলেন। আঘাতের কারণে বিজয় মার্চেন্টের স্থলাভিষিক্ত হন ও সৌরাষ্ট্র দলের মুখোমুখি হন তিনি।[৫][৯] রঞ্জি ট্রফির অভিষেক খেলাতেই সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে দূর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন। তার এ প্রতিভার স্বীকৃতিদানে দল নির্বাচকমণ্ডলী নিজস্ব প্রথম-শ্রেণীর দ্বিতীয় মৌসুমেই ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলার জন্যে জাতীয় দলে আহুত হন।[৮]
একই বছরে পঙ্কজ রায়ের পরিবর্তে বোম্বে দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান।[১০] এছাড়াও এক মৌসুমে বাংলা দলের পক্ষে খেলেন।[১১] ১৯৫৪ সালে একটিমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাধব আপ্তে। ১৩ নভেম্বর, ১৯৫২ তারিখে মুম্বইয়ে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৮ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০, অপরাজিত ১০ ও ৪২ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনের জন্যে তাকে ভারত দলে রাখা হয়। সেখানেও তিনি নয়ন মনোহর ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপন করেন।
১৯৫৩ সালে ভারতে দলের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। পোর্ট অব স্পেন টেস্টে অংশ নেন।[৩] পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই তিনি ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। ৬৪, ৫২, ৬৪, ৯, ০, অপরাজিত ১৬৩, ৩০, ৩০, ১৫ ও ৩৩ রান করেছিলেন। ৫১.১১ গড়ে ৪৬০ রান তুলেন। বিজয় হাজারে, বিনু মানকড়, পঙ্কজ রায় ও বিজয় মাঞ্জরেকারকে পিছনে ফেলে শীর্ষ রান সংগ্রাহক পলি উমরিগড়ের চেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। তন্মধ্যে, শতরানের ইনিংসটি পরাজয়ের সমূহ আশঙ্কাকে উপড়ে ড্রয়ের পথে নিয়ে যায়।
বিতর্কিত ভূমিকা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পলি উমরিগড়ের পর ভারত দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এরপর আর তাকে জাতীয় দলে ডাকা হয়নি। তার এ বাদ পড়ার বিষয়টি রহস্যাবৃত ও অমীমাংসিত ঘটনারূপে স্বীকৃত।[১২] মাধব আপ্তে’র জাতীয় দলে না থাকার ঘটনাটি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা জোচ্চুরি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে।
পরবর্তীকালে স্বীয় আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনের পর প্রধান দল নির্বাচক লালা অমরনাথ নতুন দিল্লিভিত্তিক তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোহিনূর মিলসের অংশীদার হবার প্রস্তাব দেন। তবে, তাঁর পিতা বিনীতভাবে তা নাকচ করে দেন। এরপর থেকে আপ্তেকে আর ভারত দলের পক্ষে খেলতে দেখা যায়নি। পরবর্তীতে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন ও ৩৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[৬] তবে, প্রথম-শ্রেণীর খেলায় নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছিলেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমের রঞ্জি ট্রফ্রিতে বোম্বে-মাদ্রাজের মধ্যকার চূড়ান্ত খেলায় সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন মাধব আপ্তে।[৮]
খেলার ধরন
ডানহাতে ব্যাটিং করতেন মাধব আপ্তে।[১৩] বেশ সঠিকমানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাতেন তিনি। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ডি. বি. দেওধর ও শচীন তেন্ডুলকরের সাথে খেলেছেন।[১৪]
প্রশাসনে অংশগ্রহণ
ডিসেম্বর, ১৯৮৩ সালে মাধব আপ্তেকে মুম্বইয়ের নগরপাল হিসেবে মনোনীত করা হয়।[১৫] ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়া ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন ও শচীন তেন্ডুলকরের সদস্যপদ প্রদান করেন।[৬][৮]
এছাড়াও, তিনি ক্লাবস লিজেন্ডস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।[১৬] ২০১৪ সালে ক্লাবটি আনন্দজী দোসা সহায়ক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে সাধারণের কাছে এর সহজপ্রাচ্যতা নিশ্চিত করেন।[১৭]
২০১৬ সালে বিতর্কিত লোধা কমিটির প্রতিবেদনে বিসিসিআইয়ের সহযোগী সদস্যপদের বিষয়ে ক্লাবের অংশগ্রহণের প্রস্তাবনার পর দাবী করা হয় যে, ইন্ডিয়া ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ফলে পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাবেক সদস্যরা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।[১৮] এছাড়াও তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আপ্তে গ্রুপের সভাপতি ছিলেন।[৪][১৯] ব্যবসায় জগতে তিনি মুম্বইয়ের চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১১ সালে ২৬তম স্পোর্টস্টার ট্রফির জন্যে মনোনীত হন।[২০] ২০১৫ সালে ৮২ বছর বয়সে স্বীয় আত্মজীবনীমূলক ‘এজ লাক উড হ্যাভ ইট’ শীর্ষক গ্রন্থ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সুনীল গাভাস্কারের হাত ধরে উন্মোচন ঘটান।[৬][১৪]
ব্যক্তিগত জীবন
মাধব আপ্তে’র কনিষ্ঠ ভ্রাতা অরবিন্দ আপ্তে ভারতের পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, মাধব আপ্তে বোম্বে, রাজস্থান ও ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[২১]
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তার সন্তান বমন আপ্তে ভারতের পক্ষে স্কোয়াশ ও মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন। তদ্বীয় কন্যা ব্যাডমিন্টনে আন্তঃবিদ্যালয় পর্যায়ে শিরোপাধারী।[৮]
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখের সকালে ৮৬ বছর বয়সে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মাধব আপ্তে’র দেহাবসান ঘটে।[২২]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
আরও পড়ুন
- Apte, Madhav (২০১৫)। As Luck Would Have It (1st সংস্করণ)। Mumbai: Global Cricket School।
- Apte, Madhav (২০১৬)। Daivayattam (Marathi ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Rajhans Prakashan। পৃষ্ঠা 300। আইএসবিএন 978-8174349460।
বহিঃসংযোগ
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে মাধব আপ্তে (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে মাধব আপ্তে (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)