বিষয়বস্তুতে চলুন

শূন্য রান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শূন্য রান (ইংরেজি: Duck) একটি ক্রিকেটীয় পরিভাষা। যখন কোন ব্যাটসম্যান শূন্য রানে থাকা অবস্থায় ডিসমিসাল হন, তখন তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এটি ক্রিকেট খেলার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনারূপে বিবেচিত।

পরিভাষার উৎপত্তি

‘হাঁসের ডিম’ পরিভাষার সংক্ষিপ্ত রূপ এ পরিভাষাটি। হাঁসের ডিম পরিভাষাটি টেস্ট ক্রিকেট শুরু হবার অনেক পূর্ব থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছিল। ১৭ জুলাই, ১৮৬৬ তারিখে প্রিন্স অব ওয়েলস (ভবিষ্যতের সপ্তম এডওয়ার্ড) শূন্য রান তুললে সমসাময়িক এক সংবাদপত্রে তাকে উদ্দেশ্য করে লিখে যে, প্রিন্স একটি হাঁসের ডিম নিয়ে রয়্যাল প্যাভিলিয়ন থেকে অবসর নিয়েছেন।[১] এ নামকরণটির বিষয়ে নম্বর (০) শূন্যের আকারের সাথে জড়িত যা অনেকটাই হাঁসের ডিমের মতো দেখতে। কনসাইজ অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে অদ্যাবধি এ পরিভাষার বিকল্প হিসেবে হাঁসের ডিম ব্যবহার করছে।[২] আমেরিকায় সাধারণভাবে শূন্যজাতীয় যে-কোন ক্ষেত্রে রাজহাঁসের ডিম হিসেবে দেখানো হয়।

উল্লেখযোগ্য শূন্য রান

টেস্ট খেলায় প্রথম শূন্য রানের ঘটনা ঘটে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্টেই। মেলবোর্নে মার্চ, ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। জেমস লিলিহোয়াইটের বোলিংয়ে নেড গ্রিগরি, অ্যান্ড্রু গ্রীনউডের কটে পরিণত হন।[৩] জুলাই ২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী সাল পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক শূন্য রানের অধিকারী হচ্ছেন বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার কোর্টনি ওয়ালস। তিনি সর্বমোট ৪৩বার শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যেতে বাধ্য হন।[৪] তবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সামগ্রীকভাবে ১৫৬বার শূন্য রান পেয়েছেন ওরচেস্টারশায়ার ও ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় রেজ পার্কস[৫]

উচ্চ পর্যায়ের উদাহরণ হিসেবে ১৯৪৮ সালের অ্যাশেজ সিরিজে শূন্য রানের বিষয়টি টেস্টের ইতিহাসের অন্যতম বিষয়রূপে বিবেচিত হয়ে আসছে। ডন ব্র্যাডম্যান তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বশেষ টেস্টে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে তিনি এরিক হোলিসের বলে বোল্ড হলে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যান। এরফলে তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ১০১.৩৯ থেকে ৯৯.৯৪-এ চলে যায়। ঠিক ১০০ গড়ের জন্য তার প্রয়োজন ছিল মাত্র চার রানের। তবে ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। ফলে, ব্র্যাডম্যানকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিং করার জন্য আর প্রয়োজন হয়নি। আর যদি তিনি দ্বিতীয়বার মাঠে নামতেন, তাহলে তাকে কমপক্ষে ১০৪ রান কিংবা অপরাজিত চার রান করতে হতো ১০০ গড় ঠিক রাখার জন্যে।[৬]

১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়া দল ভারত সফরে যায়। সিরিজের প্রথম টেস্টে সমতাসূচক রানের পর ভারতীয় নিচেরসারির ব্যাটসম্যান মনিন্দর সিং গ্রেগ ম্যাথিউসের বলে চার বল মোকাবেলা করে এলবিডব্লিউ’র কবলে পড়েন। ফলশ্রুতিতে ঐ টেস্টটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় টাই টেস্টে রূপান্তরিত হয়।

ভারতীয় অল-রাউন্ডার অজিত আগরকর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাতবার ধারাবাহিকভাবে টেস্টে শূন্য লাভ করেন। এরফলে তিনি দূর্ভাগ্যজনকভাবে ‘বোম্বে ডাক’ ডাকনামে উপাধি লাভ করেন।[৭][৮]

আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে সংগৃহীত সর্বাধিক শূন্য রান সংগ্রহের অধিকারী ব্যাটসম্যান[৯]
অবস্থানখেলোয়াড় (দেশ)সময়কালখেলাইনিংসশূন্য রান
মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)১৯৯২-২০০১৪৯৫৩২৮৫৯
কোর্টনি ওয়ালশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)১৯৮৪-২০০১৩৩৭২৬৪৫৪
সনাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)১৯৮৯-২০০১৫৮৬৬৫১৫৩
গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)১৯৯৩-২০০৭৩৭৬২০৭৪৯
মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)১৯৯৭-২০১৫৬৫২৭২৫৪৭
ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (নিউজিল্যান্ড)১৯৯৭-২০১৫৪৪২৩৮৩৪৬
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)১৯৮৪-২০০৩৪৬০৪২৭৪৫
জহির খান (ভারত)২০০০-২০১৪৩০৯২৩২৪৪
শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)১৯৯২-২০০৭৩৩৯৩০৬৪৪
শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)১৯৯৬-২০১৮৫২৪৫০৮৪৪

প্রকারভেদ

নির্দিষ্ট ধরনের শূন্য রানের জন্য বেশ কিছু প্রকারভেদ প্রচলিত রয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ। এক অঞ্চলের পরিভাষা অন্য অঞ্চলে ভিন্ন অর্থের প্রয়োগ ঘটায়। এমনকি ইএসপিএন ক্রিকইনফো'র ধারাভাষ্যকার দল কিংবা ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটেও এ ভিন্নতা সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। কিছু পরিভাষায় কোন পটভূমি নেই।

  • প্রথম বল মোকাবেলা করে কোন খেলোয়াড় ডিসমিসাল হলে, ‘গোল্ডেন ডাক’ হিসেবে পরিগণনা করা হয়। এ পরিভাষাটি ক্রিকেট বিশ্বের সর্বত্র প্রচলিত।[১০]
  • গোল্ডেন ডাকের বর্ধিত রূপ হচ্ছে ‘সিলভার ডাক’[১১][১২] ও ‘ব্রোঞ্জ ডাক’।[১৩] দ্বিতীয় বল ও তৃতীয় বলে শূন্য রানে এ পরিভাষাগুলোর ব্যবহার হয়। ঐ শূন্য রানের কোন বিকল্প নাম নেই। এছাড়াও, গোল্ডেন ডাকের ন্যায় এ পরিভাষাগুলো সাধারণভাবে প্রচলিত নয়।
  • কোন বলের মুখোমুখি হবার পূর্বেই কোন ব্যাটসম্যান ডিসমিস হলে তিনি ‘ডায়মন্ড ডাক’ পেয়েছেন বলে চিত্রিত হন।[১৪][১৫][১৬][১৭] সাধারণতঃ নন-স্ট্রাইকিং অবস্থান থেকে রান আউটের শিকারে পরিণত হলেও স্ট্যাম্পিং কিংবা ওয়াইড ডেলিভারিতেও এ ধরনের আউট হতে পারে। তবে, এ পরিভাষাটি কিছু অঞ্চলে ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দলের ইনিংসের প্রথম বলেই ডিসমিস হলে তিনি ‘ডায়মন্ড ডাক’,[১৪][১৮] ‘প্লাটিনাম ডাক’[১৯] বা ‘রয়্যাল ডাক’ পেয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়।[১] এ পরিভাষাটিও অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
  • একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দলের ইনিংসের প্রথম বলেই মুখোমুখি না হওয়া স্বত্ত্বেও ডিসমিস হলে তিনি টাইটেনিয়াম ডাক পেয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়। তবে এ ধরনের ঘটনা খুবই দূর্লভ ও এ পরিভাষাটি সর্বত্র ব্যবহৃত হয় না।
  • একজন ব্যাটসম্যান যদি শূন্য রানে আউট হন ও ব্যাটিংকারী দলের ইনিংসের শেষে ঘটে তাহলে তিনি লাফিং ডাক পেয়েছেন।
  • কোন মৌসুমের প্রথম খেলায় কোন ব্যাটসম্যান নিজ দলের পক্ষে প্রথম বলেই শূন্য পেলে তিনি গোল্ডেন গুস পেয়েছেন।

পেয়ার

একই খেলার দুই ইনিংসের উভয়টিতেই যদি শূন্য রানে ডিসমিসাল হন তাহলে তিনি পেয়ার লাভ করেছেন বলে গণ্য করা হয়।[২০] কেননা ঐ দুইটি শূন্যকে দেখতে অনেকটা চশমার মতো। দীর্ঘ সময়ের খেলায় এ পরিভাষাটি মাঝে-মধ্যেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[২১] উভয় ইনিংসের প্রথম বলেই যদি দুইবার গোল্ডেন ডাকে ডিসমিসাল হয় তাহলে অসম্মানসূচক ‘কিং পেয়ার’ নামে অভিহিত করা হয়।[১০]

প্রাইমারি ক্লাব

এছাড়াও গোল্ডেন ডাক, প্রাইমারি নামে পরিচিত। ১৯৫৫ সালে কেন্টের বেকেনহাম ক্রিকেট ক্লাবের অনেক তরুণ সদস্য ঐ মৌসুমে প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, অন্ধ ক্রিকেটারদেরকে আর্থিক সহায়তায় একটি ক্লাব গঠন করা হয়। প্রাইমারি ক্লাবটি আন্তর্জাতিকভাবে আর্থিক সহায়তাকল্পে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও ক্লাবের অন্ধ ও আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদেরকে এ পর্যন্ত ১০০,০০০ পাউন্ড স্টার্লিং প্রদান করেছে। ক্লাবের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন সাবেক ইংরেজ টেস্ট ও কেন্টের ক্রিকেটার ডেরেক আন্ডারউড, এমবিই। যে-কোন স্তরের ক্রিকেটে প্রথম বলেই আউট হওয়া যে-কেউ এ ক্লাবের সদস্য হতে পারেন। টেস্ট খেলার শনিবার দিনে বিক্রিত টাই পরিধান করে ক্লাবের আর্থিক তহবিল বৃদ্ধি করা হয়।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন