সাইপ্রাস–ভারত সম্পর্ক
সাইপ্রাস-ভারত সম্পর্ক বলতে সাইপ্রাস ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নির্দেশ করা হয়। সাইপ্রাসের রাজধানীনিকোসিয়ায় ভারতের একটি দূতাবাস রয়েছে। নতুন দিল্লিতে সাইপ্রাস এর একটি দূতাবাস রয়েছে, যা বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভিয়েতনাম -এর জন্যও ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।[১]
সাইপ্রাস | ভারত |
---|
ইতিহাস
সাইপ্রাস এর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এর অধীনে থাকাকালীন সময়ে ভারত তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন দেয়। সাইপ্রাস স্বাধীন হওয়ার ২ বছর পর, ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে সাইপ্রাস এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।[২]
ভারতীয় সামরিক বাহিনী অনেক বার সাইপ্রাস -এ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে যোগ দেয়। ১৯৬৪ সালে সাইপ্রাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠনের পর থেকে তিনজন ভারতীয় জেনারেল সেখানে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২] লারনাকায় মেজর জেনারেল কোদানদেরা সুবাইয়া থিমাইয়া এর নামানুসারে একটি রাস্তার নামকরন করা হয়েছে, যিনি সেখানে ১৯৬৫ সালে সাইপ্রাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৬৬ সালে, সাইপ্রাস এর সরকার তার স্মরণে একটি সীলমোহর তৈরি করে।[৩]
সাইপ্রাস ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসামরিক পরমাণু চুক্তিকে সমর্থন করে। এছাড়াও, পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় সাইপ্রাস ভারতকে সমর্থন করে।[২]
প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ২০০২ সালে সাইপ্রাস সফর করেন। সাইপ্রাস ভারতের প্রার্থীদের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে সমর্থন করে।[২][৩] রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবীসিংহ পাটিল ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে সাইপ্রাস সফর করেন।[৪] সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি তাসোস পাপাদোপোলুস ২০০৬ সালে ভারত সফর করেন।[২]
সাইপ্রাস এর রাষ্ট্রপতি, গ্লফকোস ক্লেরিদেস এর স্ত্রী, ভারতীয় ইহুদি বংশভূত লিলা এরুলকার ভারতের আহমেদাবাদে জন্ম গ্রহণ করেন।[৩] তার পিতা, ডাক্তার আব্রাহাম এরুলকার ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী এর লন্ডনে থাকাকালীন তার চিকিৎসক ছিলেন। নিকোসিয়ায় যে রাস্তায় ভারতের দূতাবাস অবস্থিত সেই রাস্তার নামকরন ইন্দিরা গান্ধী এর নামানুসারে করা হয়েছে। ভারতে নতুন দিল্লির একটি মহাসড়কের নামকরণ আর্চবিশপ তৃতীয় মাকারিওস এর নামানুসারে করা হয়।[৩][৪]
অর্থনৈতিক সম্পর্ক
২০১৫ সালে, ভারতের-সাইপ্রাস এর মধ্যে মোট ৭৬.৫ মিলিয়ন ইউরোর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। সাইপ্রাস ৬৪.৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য আমদানি এবং ১১.১ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য ভারতের সাথে রপ্তানি করে।[৫] দুই দেশই একে অন্যের সাথে ইস্পাত এবং লোহার বাণিজ্য করে।[৩]
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে সাইপ্রাস মোট ক্রমবর্ধমান ৮.৩২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে সাইপ্রাস ভারতে অষ্টম সর্বোচ্চ এফডিআই বিনিয়োগকারীতে পরিণত হয়। এর অধিকাংশ নিমার্ণ এবং আসাবন শিল্পে বিনিয়োগ করা হয়।[৪]
দ্বিগুণ করারোপণ পরিহার চুক্তি
২০১৬ সালে, সাইপ্রাস এবং ভারতের মধ্যে দ্বিগুণ করারোপণ পরিহার চুক্তি সংশোধন করা হয়।[৬][৭]
সাইপ্রাসে ভারতীয়রা
২০১৫ সালের জুলাই মাসের হিসাব অনুসারে, প্রায় ২৭০০ জন ভারতীয় নাগরিক সাইপ্রাসে বসবাস করেন। এর প্রায় অর্ধেক প্রসাধনী শিল্পের সাথে জড়িত আছেন। এছাড়াও অনেকে কম্পিউটার প্রকৌশলী, সফটওয়্যার প্রোগ্রামার হিসেবে এবং অনেকে জাহাজ শিল্পের সাথে জড়িত আছেন। ২০১০-২০১১ থেকে সালের মধ্যে প্রায় ৯০০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী সাইপ্রাসে বেসরকারি কলেজসমুহে অধ্যায়ন, কিন্তু সাইপ্রাসের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা খন্ডকালীন চাকরি না পাওয়ায় ২০১৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ১০০ জনের কমে এসেছে দাড়িয়েছে।[৩]
সাম্প্রতিক অবস্থা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদী নিউ ইয়র্কে সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি, নিকোস আনাসতাসিয়াদেস এর সাথে সাক্ষাত করেন। সেখানে ভারত এবং সাইপ্রাস উভয় রাষ্ট্রে তাদের জনগনের লাভের জন্য বাণিজ্য এবং মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে সহমত হন।[৮] আঞ্চলিক অখন্ডতার বিষয়ে সাইপ্রাসকে সমর্থনে আশ্বস্ত করে ভারত।
আরো দেখুন
- সাইপ্রাসের বৈদেশিক সম্পর্ক
- ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক
- ভারত-ইউ সম্পর্ক