সুরেখা সিকরি
সুরেখা সিকরি (১৯ এপ্রিল ১৯৪৫ - ১৬ জুলাই ২০২১) একজন ভারতীয় মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেত্রী। হিন্দি মঞ্চের প্রবীণ এই অভিনেত্রী ১৯৭৮ সালে রাজনৈতিক নাট্যধর্মী কিস্সা কুরসি কা চলচ্চিত্র দিয়ে বড় পর্দায় অভিষিক্ত হন এবং পরে অসংখ্য হিন্দি ও মালয়ালম চলচ্চিত্রে এবং ভারতীয় সোপ অপেরায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। সিক্রি তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।
সুরেখা সিকরি | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৬ জুলাই ২০২১ | (বয়স ৭৬)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
কর্মজীবন | ১৯৭৮-২০২১ |
দাম্পত্য সঙ্গী | হেমন্ত রেগে |
সন্তান | রাহুল সিকরি |
আত্মীয় | নাসিরুদ্দিন শাহ (ভগ্নীপতি) |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (৩ বার) ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (১ বার) |
সিকরি তমস (১৯৮৭) ও মাম্মো (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। হিন্দি মঞ্চনাটকে তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৯ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি রাত্রিকালীন সোপ অপেরা বালিকা বধূ-এ অভিনয় করেন ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ইন্ডিয়ান টেলি অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ইন্ডিয়ান টেলি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। সাম্প্রতিককালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাধাই হো (২০১৮) চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের নিকট প্রশংসিত হয়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে তার তৃতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন,[১] এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও স্ক্রিন পুরস্কার লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সিকরি নতুন দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার শৈশব কাটে আলমোরা ও নৈনিতালে। তার পিতা বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন এবং তার মাতা একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তার সৎবোন মনরা সিকরি নাসিরুদ্দিন শাহের প্রথম স্ত্রী। ফলে নাসিরুদ্দিন সুরেখার ভগ্নীপতি। নাসিরুদ্দিন ও মনরার কন্যা হিবা শাহ তার বোনঝি। হিবা বালিকা বধূ টেলিভিশন ধারাবাহিকে তার মাসীর যুবতী বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।[২]
সিকরি জিইসি, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি ১৯৬৮ সালে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে নাট্যতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এনএসডি রিপার্টরি কোম্পানি এক দশকের বেশি সময় কাজ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন।[৩]
কর্মজীবন
সিকরির চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৭৮ সালে রাজনৈতিক নাট্যধর্মী কিস্সা কুরসি কা দিয়ে। তিনি তমস (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তার প্রথম শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৪] মাম্মো (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি তার দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৪]
পরবর্তীকালে তিনি বলিউডে জুবেদা, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার, ও রেইনকোট চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন। টেলিভিশনে তিনি এক থা রাজা এক থি রানী, পরদেশ মেঁ হ্যায় মেরা দিল, মা এক্সচেঞ্জ, সাত ফেরে এবং বালিকা বধূ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন।[৩]
২০১৮ সালে অমিত শর্মার বাধাই হো চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের নিকট প্রশংসিত হয়। ২৯ কোটি রুপী নির্মাণ ব্যয়ের চলচ্চিত্রটি ২২১ কোটি রুপী আয় করে ২০১৮ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।[৪] এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আয়োজনে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে তার তৃতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৫][৬] এছাড়া এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার[৭] ও স্ক্রিন পুরস্কার লাভ করেন।[৮]
ব্যক্তিগত জীবন
সুরেখা সিকরি হেমন্ত রেগের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র রাহুল সিকরি একজন চিত্রশিল্পী। ২০০৯ সালের ২০শে অক্টোবর তার স্বামী হেমন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৯]
সিকরি ২০২১ সালের ১৬ই জুলাই ৭৫ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এর পূর্বে দুবার মস্তিস্কের স্ট্রোকের আক্রান্ত হয়ে সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছিলেন।[১০][১১]
চলচ্চিত্রের তালিকা
চলচ্চিত্র
- কিস্সা কুরসি কা (১৯৭৮) - মীরা
- অনাদি অনন্ত (১৯৮৬)
- তমস (১৯৮৬)
- সলিম লাংড়ে পে মাত রো (১৯৮৯) - আমিনা
- পরিণতি (১৯৮৯) - গণেশের স্ত্রী
- নজর (১৯৯০) - বুয়া
- কারামতি কোট (১৯৯৩) - বৃদ্ধা
- লিটল বুদ্ধা (১৯৯৩) - সোনালি
- মাম্মো (১৯৯৪) - ফ্যায়জি
- নাসিম (১৯৯৫)
- সরদারি বেগম (১৯৯৬) - ইদবাল বাঈ
- জন্মদিনম (১৯৯৮, মালয়ালম চলচ্চিত্র) - আম্মা
- সরফরোশ (১৯৯৯) - সুলতানের মা (বিশেষ উপস্থিতি)
- দিল্লাগি (১৯৯৯) - করণ
- কটন ম্যারি (১৯৯৯) - গোয়েন
- হরি-ভরি (২০০০) - হাসিনা
- জুবেদা (২০০১) - ফ্যায়জি
- দেহম (২০০১) - ওমের মা
- কালি সালওয়ার (২০০২) - আনোয়ারি
- মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার (২০০৩) - নাজমা খান
- রঘু রোমিও (২০০৩) - মা
- রেইনকোট (২০০৪) - মনোজের মা
- তুমসা নহিঁ দেখা (২০০৪) - দক্ষের দাদী
- জো বোলে সো নিহাল (২০০৫) - মিসেস বলবন্ত সিং (নিহালের মা)
- হামকো দিওয়ানা কর গয়ে (২০০৬)
- দেব.ডি (২০০৯) - বাসযাত্রী
- স্নিফ (২০১৭) - বেইব
- বাধাই হো (২০১৮) - দুর্গা দেবী কৌশিক
- শির কোরমা (২০২০)
- গৌস্ট স্টোরিজ (২০২০)