সুনিতা উইলিয়ামস
সুনিতা উইলিয়ামস (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫) হচ্ছেন একজন মার্কিন মহাকাশচারী ও নৌবাহিনী কর্মকর্তা।[১] তাকে অভিযান ১৪ এবং অভিযান ১৫ এর সদস্য হিসাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।[২][৩] তিনি মহিলা মহাকাশচারীদের মধ্য সর্বাপেক্ষা দীর্ঘসময় (৩২১ দিন) মহাকাশ উড়ার রেকর্ড অর্জন করেছেন।[৪][৫] নাসার সর্বসাধারনের জন্য একজন প্রাতিষ্ঠানিক মুখপাত্র হিসেবে কলবার্ট রিপোর্টে উপস্থিত হয়ে আইএসএস এর নোড ৩ এর নাম ঘোষণা করার জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।[৬] ২০১২ সালে, তিনি অভিযান ২৯ এ ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং তারপরে অভিযান ৩৩ এর কমান্ডার হিসাবে কাজ করেছেন।
সুনিতা উইলিয়ামস | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ইউক্লিড, ওহিও | ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫
অবস্থা | সক্রিয় |
জাতীয়তা | মার্কিন |
পেশা | পরীক্ষক পাইলট |
মহাকাশযাত্রা | |
নাসা নভোচারী | |
ক্রম | টেমপ্লেট:Dodseal ক্যাপ্টেন, ইউএসএন |
মহাকাশে অবস্থানকাল | ৩২১ দিন ১৭ ঘন্টা ১৫ মিনিট |
মনোনয়ক | নাসা মহাকাশচারী দল ১৭ |
সর্বমোট অভিযান | ৭ |
সর্বমোট অভিযানের সময়কাল | ৫০ ঘন্টা ৪০ মিনিট |
অভিযান | STS-116/১১৭ (অভিযান ১৪/১৫), Soyuz TMA-05M (অভিযান ৩২/৩৩), বোয়িং ক্রুড ফ্লাইট টেস্ট |
অভিযানের প্রতীক | ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() |
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
সুনিতা ওহাইও-এর ইউক্লিডে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দিপক পান্ডে, একজন ভারতীয়-আমেরিকান স্নায়ুতন্ত্রবিদ। এবং মাতা উরসুলিন বনি পান্ডে। যিনি ম্যাসাচুসেটসের ফ্যালমাউথে বসবাস করেন। তিন সন্তানের মধ্যে তিনি হলেন সবার ছোট। তার ভাই জে থমাস চার বছরের বড় এবং তার বোন দিনা আনাদ তিন বছরের বড়। সুনিতার পিতার পরিবার ভারতের গুজরাতের বাসিন্দা।[৭]
সুনিতা ১৯৮৩ সালে নিডহাম হাই স্কুল থেকে স্নাতক হন। তিনি ১৯৮৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটস নেভাল একাডেমি থেকে ভৌত বিজ্ঞানে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ডিগ্রি এবং ১৯৯৫ সালে ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৮]
সামরিক কর্মজীবন
১৯৮৭ এর মে মাসে উইলিয়ামস যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল অ্যাকাডেমি থেকে উত্তীর্ন হয়ে ইউ এস নেভি তে একজন অ্যাসাইন হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি নৌ-বায়ু সেনার পদ লাভ করেন এবং ১৯৯৩ এ নেভাল টেস্ট পাইলট স্কুল থেকে স্নাতক হন।[১]
নাসা কর্মজীবন
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/3b/Sunita_Williams_astronaut_spacewalk.jpg/220px-Sunita_Williams_astronaut_spacewalk.jpg)
জুন ১৯৯৮ এ নাসা কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে উইলিয়ামস অগাস্ট ১৯৯৮ এ তার প্রশিক্ষণ শুরু করেন।[১] তার মহাকাশচারী প্রার্থির প্রশিক্ষণের অন্তর্গত ছিল, পারিপার্শ্বিকের উপর উপদেশাবলী ও ভ্রমণ এবং অসংখ্য বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উপদেশাবলী, শাটেল (অল্প সময়ের ব্যবধানে চলাচলকারী যান) ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের নিয়মাবলীর উপর গভীর নির্দেশিকা, শারীরবৃত্তিয় প্রশিক্ষণ ও গ্রাউন্ড স্কুলে টি-৩৮ উড়ানোর প্রশিক্ষণ এবং জল ও নিঃসঙ্গ স্থানে জীবন-রক্ষার উপায়ের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি। তিনি ক্যাথরিন থর্নটনকে, (যিনি পূর্বে তিনবার মহাকাশে পদচারনা করেছেন এবং সর্বাপেক্ষা অধিক মহাকাশ পদচারনাকারী মহিলা) টপকে যান। পরে পেগী হুইটসন তাকে অধিক মহাকাশ পদচারনায় পেছনে ফেলে দেন। প্রশিক্ষণ ও মাননির্ধারণ কালে উইলিয়ামস আইএসএস-এ রাশিয়ার সহযোগ-স্বরূপ মস্কোর রাশিয়ান স্পেস এজেন্সী তে আইএসএস-এ প্রেরিত প্রথম এক্সপিডিশন এর কুশলীদের সঙ্গে কাজ করেন। এক্সপিডিশন-১ প্রত্যবর্তনের পর উইলিয়ামস রোবোটিক্স শাখায় আইএসএস রোবোটিক্স আর্ম এবং তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্পেশাল পার্পাস ডেক্সটারাস ম্যানিপুলেটরের উপর কাজ করেন। তিনি এনইইমো ২ অভিযানের একজন কুশলী সদস্য ছিলেন এবং জলতলে জলজ প্রানির বাসস্থানে ২০০২ সালের মে মাসে ন'দিন কাটান।[১][৯]
মহাকাশ উড়ানের অভিজ্ঞতা
এসটিএস-১১৬
এক্সপিডিশন-১৪ এর কুশলীদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য ৯ই ডিসেম্বর, ২০০৬ তে উইলিয়ামসকে শাটেল (ফেরি) ডিস্কভারী করে এসটিএস-১১৬-এর সাহায্যে ইন্টারন্যাশনল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। এপ্রিল ২০০৭ এ এক্সপিডিশন-১৫ এ পরিবর্তনের জন্য রুশ কুশলী সদস্যদের ফিরিয়ে আনা হয়।
অভিযান (এক্সপিডিশন) ১৪ এবং ১৫
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/e/eb/ISS-14_Williams_Marathon.jpg/220px-ISS-14_Williams_Marathon.jpg)
"ডিস্কভারি", তে উৎক্ষেপনের পর উইলিয়ামস তার পনি টেল টি লক্স অফ লাভ-এর উদ্দেশ্যে দান করেন। চুল কাটার কাজটি সহ-নভোশ্চর জোয়ান হিগগিনবোথামের দ্বারা সংঘটিত হয় এবং পনিটেল টি এসটিএস-১১৬ এর সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়।[১০]
এসটিএস-১১৬ অভিযানের অষ্টম দিনে উইলিয়ামস তাঁর প্রথম যানের বাইরের কাজটি করেন। তিনি ৩১ জানুয়ারি, ৪ ফেব্রুয়ারি এবং ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ এ মাইকেল লোপেজ, অ্যালেগ্রিয়ার সঙ্গে আইএসএস থেকে তিনবার মহাকাশে পদচারনা সম্পূর্ণ করেন। এই হাটাচলার ঘটানাগুলোর কোন একটিতে একটা ক্যামেরা খুলে গিয়ে মহাকাশে ভেসে যায়। এর কারণ সম্ভবত ক্যামেরাটা যে যন্ত্রের দ্বারা আটকানো হয়, সেটা খারাপ হয়ে যায়। উইলিয়ামস কিছু বুঝে উঠতে পারার পূর্বেই, এই ঘটনাটি ঘটে।[১১]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/e/e7/Astronauts_Joan_Higginbotham_%28STS-116%29_and_Sunita_Williams_%28Expedition_14%29_on_the_International_Space_Station.jpg/230px-Astronauts_Joan_Higginbotham_%28STS-116%29_and_Sunita_Williams_%28Expedition_14%29_on_the_International_Space_Station.jpg)
তৃতীয় মহাকাশ পদচারনা কালে উইলিয়ামস মহাকাশ কেন্দ্রের বাইরে ৬ ঘন্টা ৪০ মিনিট কাটান এবং ন'দিনে তিন বার মহাকাশে পদচারনা সম্পূর্ণ করেন। তার চারবার মহাকাশ পদচারনা করতে ২৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট সময় লাগে। এর ফলে তিনি দীর্ঘতম মহাকাশ পদচারনায় ক্যাথরিন সি. থর্টনটনের রেকর্ডকে ছাপিয়ে যান।[১][৫] ১৮ই ডিসেম্বর, ২০০৭ এ এক্সপিডিশন ১৬ থেকে চতুর্থ মহাকাশ পদচারনাকালীন পেগী হুইটসন সর্বমোট ইভিএ টাইম ৩২ ঘন্টা ৩৬ মিনিট স্থায়ী হয়ে করে উইলিয়ামস কে টপকে যান।[১২][১৩] ১৬ই এপ্রিল, ২০০৭ এ একজন মহাকাশচারী হিসেবে তিনি প্রথম কক্ষপথে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেন।[১৪] উইলিয়ামস ২০০৭ বস্টন ম্যারাথন দৌড়টি চার ঘন্টা ২৪ মিনিটে সম্পূর্ণ করেন।[১৫][১৬][১৭]
শোনা যায় তার দৌড়ের সময় অন্য কুশলী সদস্যরা তাকে উৎসাহ যোগান এবং কমলালেবু উপহার দেন। উইলিয়ামসের বোন, ডায়না পান্ডে ও সহ-নভোচর কারেন এল. নাইবার্গ সেই সময় পৃথিবীতে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন এবং অভিযান নিয়ন্ত্রন কক্ষের মাধ্যমে উইলিয়ামস তাঁদের গতিবিধির খবরা-খবর নিচ্ছিলেন। ২০০৮ সালে উইলিয়ামস আবার বস্টন ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/14/Sunita_Williams_and_Ljubica_Jelu%C5%A1i%C4%8D_2009_%282%29.jpg/220px-Sunita_Williams_and_Ljubica_Jelu%C5%A1i%C4%8D_2009_%282%29.jpg)
সুনিতা টেক্সাসের একজন ফেডারেল পুলিশ অফিসার মাইকেল জে. উইলিয়ামসকে বিয়ে করেছেন। দুজনের বিয়ে হয়েছে ২০ আগে, দুজনেই তাদের কেরিয়ারের প্রথম দিকে হেলিকপ্টার উড়েছিল। তারা টেক্সাসের উপশহর হিউস্টনে এক সাথে থাকে। তার একটি পোষা জ্যাক রাসেল টেরিয়ার ছিল যার নাম গর্বি যেটি তার সাথে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ডগ হুইস্পারার টেলিভিশন শোতে ১২ নভেম্বর, ২০১০-এ প্রদর্শিত হয়েছিল।[১৮] ২০১২ সালে, সুনিতা আহমেদাবাদ থেকে একটি মেয়েকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।[১৯]
উইলিয়ামস হিন্দুধর্ম পালন করেন। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে, তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভগবদ্গীতার একটি অনুলিপি নিয়ে যান। জুলাই ২০১২ সালে, তিনি সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ ওঁ এবং উপনিষদের একটি অনুলিপি নিয়ে যান।[২০] ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে, সুনীতা ভারতের গুজরাটের সবরমতী আশ্রম এবং তার পৈতৃক গ্রাম ঝুলসান পরিদর্শন করেন। তিনি ওয়ার্ল্ড গুজরাটি সোসাইটি দ্বারা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিশ্ব প্রতিভা পুরস্কারে ভূষিত হন,[২১] ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পুরস্কার প্রদানের জন্য ভারতীয় নাগরিক ছিলেন না। ২০০৭ সালে ৪ অক্টোবর উইলিয়ামস আমেরিকান দূতাবাস স্কুলে বক্তৃতা করেন এবং তারপর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সাথে দেখা করেন।[২২] উইলিয়ামসও বহুবার স্লোভেনিয়া সফর করেছেন।[২৩] ২০১৪ সালের অক্টোবরে তিনি লুব্লজানার অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি ভেগা পরিদর্শন করেছিলেন।[২৪][২৫] উইলিয়ামস তার ভারতীয় ও স্লোভেনিয়ার ঐতিহ্য উদযাপনে একটি সামোসা এবং কার্নিওলান সসেজ মহাকাশে নিয়ে গেছেন।[২৩]
২০১৭ সালে জুনে নিডহাম পাবলিক স্কুল কমিটি উইলিয়ামসের নামে শহরের নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণের পক্ষে ভোট দেয়।[২৬] ২০২০ সালের মে মাসে, উইলিয়ামস ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ভারতের দূতাবাস, ওয়াশিংটন, ডিসি- তে স্টুডেন্ট হাব দ্বারা আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সাক্ষাত্কারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০০,০০০ এরও বেশি ভারতীয় এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সম্বোধন করেছিলেন।[২৭]
সুনিতা সোসাইটি অফ এক্সপেরিমেন্টাল টেস্ট পাইলটের সদস্য।[২৮]
সন্মান ও পুরস্কার
- নৌবাহিনীর প্রশংসা পদক
- নৌবাহিনী ও মেরিন কর্পস অ্যাচিভমেন্ট মেডেল
- মানবিক সেবা পদক
- নাসার স্পেসফ্লাইট মেডেল
- পদক "মহাকাশ অনুসন্ধানে যোগ্যতার জন্য" , রাশিয়া সরকার (২০১১)
- পদ্মভূষণ, ভারত সরকার (২০০৮) [২৯]
- অনারারি ডক্টরেট, গুজরাট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (২০১৩) [৩০]
- মেধা জন্য গোল্ডেন অর্ডার, স্লোভেনিয়া সরকার (২০১৩) [৩১]
- সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিশ্ব প্রতিভা পুরস্কার
আরও দেখুন
- এশিয়ান মার্কিনদের তালিকা
- নারী মহাকাশচারীদের তালিকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)
- NASA biography of Sunita Williams ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ এপ্রিল ২০২২ তারিখে August 2018
- Take a tour in ISS with Sunita Williams November 2012
- Pics: Sunita Williams' journey home and beyond
পূর্বসূরী গেনাডি পাডালকা | আইএসএস অভিযান কমান্ডার ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর ২০২২ | উত্তরসূরী কেভিন ফোর্ড |