ওঁ

হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের প্রতীক

ওঁ বা ওঁ-কার (বাংলা উচ্চারণ: [om], ; দেবনাগরী: ॐ) হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের পবিত্রতম ও সর্বজনীন প্রতীক, পবিত্র শব্দ বা মন্ত্র। এটি হিন্দু দর্শনের সর্বোচ্চ ঈশ্বর পরম ব্রহ্মের বাচক।[১] এই ধর্মের প্রতিটি সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিকটেই এটি পবিত্র বলে গণ্য।

বাংলা লিপিতে ওঁ-কার।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ওঁ-কার "সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।"[২] রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন, "...ওঁ হইতে ‘ওঁ শিব’, ‘ওঁ কালী’, ‘ওঁ কৃষ্ণ হয়েছেন।"[৩] ওঁ-কার বৌদ্ধ ও জৈনদেরও একটি পবিত্র প্রতীক। শিখ সম্প্রদায়ও এটিকে সম্মান করেন। এই প্রতীকের দেবনাগরী রূপ ॐ, চীনা রূপ 唵, এবং তিব্বতীয় রূপ ༀ।[৪] এটি ওঙ্কার, প্রণব বা ত্র্যক্ষর নামেও পরিচিত।

ব্যুৎপত্তি

ওঁ শব্দটি সংস্কৃত ‘অব’ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যা একাধারে ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রযোজ্য। এই ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী ওঁ-কার এমন এক শক্তি যা সর্বজ্ঞ, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা, অমঙ্গল থেকে রক্ষাকর্তা, ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী, অজ্ঞাননাশক ও জ্ঞানপ্রদাতা।[৫] ওঁ-কারকে ত্র্যক্ষরও বলা হয়, কারণ ওঁ তিনটি মাত্রাযুক্ত – "-কার", "উ-কার" ও "ম-কার"। "অ-কার", "আপ্তি" বা "আদিমত্ত্ব" অর্থাৎ প্রারম্ভের প্রতীক। "উ-কার" "উৎকর্ষ" বা "অভেদত্ব"-এর প্রতীক। "ম-কার", "মিতি" বা "অপীতি" অর্থাৎ লয়ের প্রতীক।[৬] অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সংঘটনকারী ঈশ্বরের প্রতীক।[৫]

"প্রণব" শব্দের আক্ষরিক অর্থ, "যা উচ্চারণ করে স্তব করা হয়"। [৭] এর অপর অর্থ, "যা চিরনূতন"। [৪]

গুরুত্ব ও ব্যাখ্যা

ওঁ-কার ঈশ্বরের সকল নামের প্রতিনিধিস্বরূপ ও তার শ্রেষ্ঠ নাম।[১৮] বেদ, উপনিষদ, গীতা ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্রে সর্বত্রই ওঁ-কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অথর্ববেদের গোপথব্রাহ্মণের একটি কাহিনি অনুসারে দেবরাজ ইন্দ্র ওঁ-কারের সহায়তায় দৈত্যদের পরাস্ত করেন। এই কাহিনির অন্তর্নিহিত অর্থ, ওঁ-কারের বারংবার উচ্চারণে মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তি জয় করতে সমর্থ হয়।[৫] কঠোপনিষদ মতে, ওঁ-কার পরব্রহ্ম। [১৯] মুণ্ডক উপনিষদে ওঁ-কার অবলম্বনে ঈশ্বরোপাসনার কথা বলা হয়েছে।[২০] শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, তিনি সকল অক্ষরের মধ্যে ওঁ-কার। মৃত্যুকালে ওঁ-কারের উচ্চারণে পরম সত্য লাভ হয়।[২১] পতঞ্জলির যোগসূত্র-এ ওঁ-কারকে ঈশ্বরের প্রতীক বলে বর্ণিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ওঁ-কারের স্মরণ ও উচ্চারণে সমাধি লাভ করা যায়।

ব্যবহার

ধর্মীয় চিহ্ন হলেও ব্যবহারিক জীবনে ওঁ-কারের প্রয়োগ আরও ব্যাপক। প্রত্যেকটি মন্ত্র ওঁ-কার দিয়ে শুরু হয়। চিঠিপত্রের শুরুতেও কেউ কেউ ওঁ-কার লিখে থাকেন। মন্দির, ঠাকুরঘর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানের প্রতীকচিহ্ন রূপেও ওঁ-কার ব্যবহৃত হয়। আজকাল ট্যাটু হিসাবেও এটি জনপ্রিয়। এছাড়া যোগাসনেও ওঁ বা ওম শব্দ ব্যবহার করা হয়।

পাদটীকা

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ