মাইসিনীয় গ্রিস |
Alternative names | মাইসিনীয় সভ্যতা |
---|
সময় | ব্রোঞ্জ যুগ |
---|
তারিখ | প্রায় ১৬০০ - ১১০০ খ্রিস্টপূর্ব |
---|
টাইপ সাইট | মাইসিনি |
---|
প্রধান স্থান | পাইলোস, তিরিনোস, মিদেয়া, অরকোমেনোস, ইয়োলকোস |
---|
বৈশিষ্ট্য | - প্রাসাদভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতি
|
---|
পূর্বসূরী | মিনোয়ান সভ্যতা |
---|
উত্তরসূরী | গ্রিক অন্ধকার যুগ |
---|
মাইসিনীয় গ্রিস (বা মাইসিনীয় সভ্যতা) প্রাচীন গ্রিসের ব্রোঞ্জ যুগের সর্বশেষ পর্যায়। ১৬০০-১১০০ খ্রিস্টপূর্ব জুড়ে এর স্থায়িত্ব। গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে এটিই প্রথম উন্নত এবং স্বতন্ত্র গ্রিক সভ্যতা। প্রাসাদ-প্রকরভিত্তিক রাজ্য, নগরভিত্তিক কাঠামো, শিল্পকর্ম এবং লিখনপদ্ধতির দ্বারা তা প্রতীয়মান হয়।[১][২] এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাইট আরগোলিদ-এ অবস্থিত মাইসিনি। ক্ষমতার অন্যান্য কেন্দ্র যেগুলির উত্থান ঘটে সেগুলি হল পাইলোস, তিরিনোস, মিদেয়া, অর্কোমেনোস, থিবিস, এথেন্স এবং ইয়োলকোস। মাইসিনীয় এবং এর থেকে অনুপ্রাণিত বসতি এপিরুস, মেসিডোনিয়া, এজিয়ান সাগর-এর দ্বীপ, এশিয়া মাইনরের উপকূল, লেভান্ত, সাইপ্রাস এবং ইতালিতেও গড়ে উঠতে দেখা গেছে।
মাইসিনীয় গ্রিকরা প্রকৌশল, স্থাপত্যবিদ্যা এবং সামরিক কাঠামোতে বেশ কিছু উদ্ভাবন আনে। তাছাড়া ভূমধ্যসাগরের সুবিস্তৃত এলাকা জুড়ে বাণিজ্য চালু রাখা মাইসিনীয় অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক ছিল। এদের শব্দাংশ-ভিত্তিক লিখনপদ্ধতি লিনিয়ার বি ইন্দো-ইউরোপীয় গ্রিক ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন, এবং পরবর্তী অলিম্পিক দেব-দেবীর কয়েকজন তখনই গ্রিকদের ধর্মে পাওয়া যায়। মাইসিনীয় গ্রিসে যোদ্ধা অভিজাতদের আধিপত্য ছিল। বিভিন্ন প্রাসাদকেন্দ্রিক রাজ্য মিলে গড়ে ওঠা এই সমাজব্যবস্থায় কঠো শ্রেণিবিন্যাস, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো স্থাপন করে। সমাজের মূলে ছিল রাজা, যাকে বলা হত ওয়ানাক্স।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ব্রোঞ্জ যুগের পতনের সাথে সাথে মাইসিনীয় গ্রিসের বিলুপ্তি ঘটে। তারপর গ্রিসের অন্ধকার যুগের সূচনা হয়, যে সময়ের লিখিত কোনও নথিপত্র মেলেনি। এই অভ্যন্তরীণ কালের পর প্রাচীন গ্রিস যুগ শুরু হয়। পরবর্তী এই যুগে প্রাসাদকেন্দ্রিক ব্যবস্থা থেকে বিকেন্দ্রীভূত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। প্রচুর পরিমাণে লৌহ ধাতুর ব্যবহারও শুরু হয়। এই সভ্যতার বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব দাঁড়া করানো হয়েছে, এরমধ্যে অন্যতম ডোরিয়ান আক্রমণ এবং "সমুদ্র-বাসিন্দা"-দের প্রভাব। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনও কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মাইসিনীয় যুগ বিভিন্ন গ্রিক সাহিত্য এবং পুরাণের পটভূমিকা, যেমন ট্রোজান বিষয়ক মহাকাব্য।[৩]
কালানুক্রম
গ্রিক মূল ভূখণ্ডে ব্রোঞ্জ যুগকে আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ "হেলাডিক যুগ" বলে থাকেন। গ্রিক ভাষায় গ্রিসের নাম হেলাস থেকে এই নামের উৎপত্তি। হেলাডিক যুগ তিন উপযুগে বিভক্ত: আদি হেলাডিক যুগ (প্রায় ২৯০০-২০০০ খ্রিস্টপূর্ব) ধাতর ব্যবহার এবং প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামাজিক কাঠামোর উন্নতির সময়। মধ্য হেলাডিক যুগ (প্রায় ২০০০-১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব) তুলনামূলক ধীরগতির উন্নতির সময়। পরিশেষে, বিলম্বিত হেলাডিক যুগ (প্রায় ১৬৫০-১০৫০ খ্রিস্টপূর্ব) মোটামুটি মাইসিনীয় গ্রিসের সমসাময়িক।[২]
বিলম্বিত হেলাডিক যুগকে আরও তিনটি উপশাখায় ভাগ করা হয়। এর প্রথম দুইটি আদি মাইসিনীয় গ্রিসের সমসাময়ীক (প্রায় ১৬৫০-১৪২৫ খ্রিস্টপূর্ব)। তৃতীয় উপশাখা (প্রায় ১৪২৫-১০৫০ খ্রিস্টপূর্ব) মাইসিনীয় সভ্যতার বৃদ্ধি, পতন এবং বিলুপ্তির কাল। গ্রিসে ব্রোঞ্জ যুগ থেকে লৌহ যুগে পদার্পণের সময়কে সাব-মাইসিনীয় (প্রায় ১০৫০-১০০০ খ্রিস্টপূর্ব) বলা হয়।[২]
পরিচয়
খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকে ফিনিশীয় লিপি থেকে গৃহীত একটি বর্ণমালায় লেখা গ্রিক ভাষা পাওয়া যায়। মাইসিনীয় লিনিয়ার বি লিখন পদ্ধতির পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের ইন্দো-ইউরোপীয় গ্রিক ভাষার সাথে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের মধ্যে গ্রিক ভাষার যোগসূত্র স্থাপিত হয়। উপরন্তু, মাইসিনীয় সভ্যতার পতনের পর গ্রিসে বসবাসরত জনপদগুলি যে নৃতাত্ত্বিকভাবে এর সাথে সম্পর্কিত, তা-ও বোঝা যায়। সর্বোপরি, লিনিয়ার বি পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে এজিয়ান অঞ্চলে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আবির্ভাব সূচিত হয়, যা আশেপাশের পূর্বতন প্রচলিত কোনও ভাষার সাথে মেলে না। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে রচিত মহাকাব্য ইলিয়াদে কবি হোমার মাইসিনীয় গ্রিসের অধিবাসীদের বেশ কিছু নামে সম্বোধন করেছেন।
ট্রয় আক্রমণকারী গ্রিক যোদ্ধা বোঝাতে হোমার যেসব নাম ব্যবহার করেছেন সেগুলি হল আখায়ান, দানান এবং আর্গিভে। ক্রেত দ্বীপের ক্নোসোস অঞ্চলে ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বের লিনিয়ার বি-তে লেখা একটি বিচ্ছিন্ন উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে লেখা আ-কা-উই-জা-দে খুব সম্ভব গ্রিক মূল ভূখণ্ডের মাইসিনীয় (আখায়ান) রাজ্যের কথা বুঝিয়েছে।
তথ্যসূত্র