মল্লক্রীড়া
মল্লক্রীড়া বলতে দূর পাল্লার হাঁটা (হন্টন), স্বল্প ও দূরপাল্লার দৌড়, লাফ (লম্ফন), ও ছোঁড়া (নিক্ষেপ) - এই চার ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমষ্টিকে বোঝায়।[১] ইংরেজিতে এগুলিকে একত্রে অ্যাথলেটিকস বলে। দৌড়ের প্রতিযোগিতাগুলিকে আলাদা করে বাংলায় দৌড়বাজি বলা হয়। মল্লক্রীড়াগুলিতে অংশ নিতে শারীরিক বল, দক্ষতা, সহ্যক্ষমতা ও ক্ষিপ্রতার পরিচয় দিতে হয়। মল্লক্রীড়া তকমার অধীনে দুই ডজনের মত আলাদা আলাদা প্রতিযোগিতা বা ইভেন্ট আয়োজিত হতে পারে। এই প্রতিযোগিতাগুলি সাধারণ উন্মুক্ত বহিরাঙ্গনে একটি ডিম্বাকৃতির ক্ষেত্রে আয়োজিত হয়। দৌড় প্রতিযোগিতাগুলি ডিম্বাকৃতি ক্ষেত্রকে ঘিরে রাখা ৪০০ মিটার দীর্ঘ ও দাগকাটা বিশেষ উপবৃত্তাকার পথ বা ট্র্যাকের উপরে সম্পন্ন করা হয়। পথগুলি মিহি অঙ্গারের আস্তরণ দিয়ে নির্মাণ করা হয় (ইংরেজিতে সিন্ডার ট্র্যাক Cinder Track); ক্ষেত্রবিশেষে ইটের গুঁড়ার আস্তরও দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে লাফ (লম্ফ) ও ছোঁড়া (নিক্ষেপ) প্রতিযোগিতাগুলি ট্র্যাকের পরিসীমার ভেতরের মাঠে আয়োজন করা হয়। শীতপ্রধান দেশে বিশেষ স্থাপনা বা ভবনের অভ্যন্তরে মলক্রীড়ার সুবিধা থাকে। যারা মল্লক্রীড়ায় অংশ নেন, তাদেরকে "মল্লক্রীড়াবিদ" (ইংরেজিতে অ্যাথলেট) বলে। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন নামক সংস্থাটি ক্রীড়াটির আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সর্বোচ্চ ক্রীড়া পরিচালনা সংস্থা | আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন (আইএএএফ IAAF) |
---|---|
বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
মিশ্রিত লিঙ্গ | হ্যাঁ |
ধরন | বহিরঙ্গন বা অভ্যন্তরীণ |
প্রচলন | |
অলিম্পিক | অভিষেকমূলক ১৯৯৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতা থেকে বর্তমান পর্যন্ত |
প্যারালিম্পিক | অভিষেকমূলক ১৯৬০ গ্রীষ্মকালীন প্যারালিম্পিক প্রতিযোগিতা (প্রতিবন্ধীদের জন্য) থেকে বর্তমান পর্যন্ত |
মল্লক্রীড়া প্রাচীনকালে সম্ভবত গ্রিসে প্রচলিত ছিল। মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে আধুনিক মল্লক্রীড়ার মত বিশেষ মাঠে খেলা হত। তবে আধুনিক মল্লক্রীড়ার আবির্ভাব ঘটে ১৯শ শতকে এসে এবং বেশিরভাগ দেশেই এর প্রচলন ঘটে। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (১৮৬৩ সালে) ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মল্লক্রীড়াবিদেরা মল্লক্রীড়ার ক্লাব বা দল গঠন করা হয়। আধুনিক অলিম্পিক প্রতিযোগিতা মল্লক্রীড়াকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। বর্তমানে বিশ্বের সমস্ত জাতি বা রাষ্ট্র মল্লক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলিতে তাদের ক্রীড়াবিদদেরকে প্রেরণ করে থাকে।
মল্লক্রীড়ার অন্তর্ভুক্ত ভিন্ন ভিন্ন প্রায় দুই ডজনেরও বেশি ক্রীড়া কর্মকাণ্ড বা ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে ১০০ মিটার দৌড়, ২০০ মিটার দৌড়, ৪০০ মিটার দৌড়, ৮০০ মিটার দৌড়, ১৫০০ মিটার দৌড়, ৫০০০ মিটার দৌড় ও ১০০০০ মিটার দৌড়; ১১০ মিটার হার্ডলস (প্রতিবন্ধক) দৌড় ও ৪০০ মিটার হার্ডল (প্রতিবন্ধক) দৌড়; ৩০০০ মিটার বহুপ্রতিবন্ধক দৌড় (স্টিপল চেইস);এবং ৪০০ মিটার রিলে (ধারাবাহিক দলগত) দৌড় ও ১৫০০ মিটার রিলে দৌড়। মাঠের ক্রীড়াগুলির মধ্যে আছে উচ্চলম্ফ, পোল ভল্ট (লাঠি লম্ফ), দীর্ঘ লম্ফ, শটপুট (গোলক নিক্ষেপ), চাকতি নিক্ষেপ (ডিসকাস থ্রো), হাতুড়ি নিক্ষেপ (হ্যামার থ্রো) এবং বর্শা নিক্ষেপ (জ্যাভেলিন থ্রো)। ১০টি ভিন্ন ক্রীড়ার সমন্বয়ে গঠিত ডেকাথলন ("১০টি প্রতিযোগিতা") -ও আয়োজন করা হয়। মহিলারা প্রায় একই ক্রীড়াগুলিতে অংশ নেয়। কেবল ১১০ মিটার হার্ডলসের পরিবর্তে ১০০ মিটার এবং ডেকাথলনের পরিবর্তে হেপ্টাথলন (৭টি ক্রীড়ার সমন্বয়) প্রতিযোগিতাতে অংশ নেন। মহিলারা ২০ হাজার মিটার এবং পুরুষেরা ৫০ হাজার হাঁটার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
ইতিহাস
প্রাচীন
দৌড়, হাঁটা, লাফানো এবং নিক্ষেপের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সব খেলার মধ্যে প্রাচীনতম এবং তাদের শিকড় অনেক পুরোনো।