কাজী সালাউদ্দিন

স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ফুটবলার

কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন (জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩; কাজী সালাহউদ্দীন নামে সুপরিচিত) হলেন একজন বাংলাদেশী সাবেক পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সালাহউদ্দীন তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় ঢাকা আবাহনী এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে একজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন।[৩]

কাজী মো. সালাহউদ্দীন
২০১৩ সালে সালাহউদ্দীন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামকাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন
জন্ম (1953-09-23) ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩ (বয়স ৭০)
জন্ম স্থানঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
উচ্চতা১.৬৮ মিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থানআক্রমণভাগের খেলোয়াড়
যুব পর্যায়
১৯৬৬গামা স্পোর্টস এসোসিয়েশন
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছরদলম্যাচ(গোল)
১৯৬৮দিলকুশা ক্লাব১৮(১৪)
১৯৬৯ওয়ারী২৪(১৮)
১৯৭০ঢাকা মোহামেডান(০)
১৯৭২–১৯৭৫ঢাকা আবাহনী৪৩(৪০)
১৯৭৫–১৯৭৬ক্যারোলাইন হিল১৮(০)
১৯৭৬–১৯৮৪ঢাকা আবাহনী১০৩(৮১)
মোট২০৪(১৫৩[১])
জাতীয় দল
১৯৭১স্বাধীন বাংলা১০(৪)
১৯৭৩–১৯৮৩বাংলাদেশ৩১[২](৮)
পরিচালিত দল
১৯৮৫–১৯৮৭ঢাকা আবাহনী
১৯৮৫–১৯৮৮বাংলাদেশ
১৯৯২–১৯৯৪ঢাকা আবাহনী
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

পরিচিতি

কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন ১৯৫৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলাধীন রাজাপুর-এ। পিতা কাজী মুহাম্মাদ শফি। মাতা সিমকি শফি। পিতা ব্যাবসায়িক সুবিধার্থে ঢাকায় বসবাস করতেন। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন সালাহউদ্দীন। তার ডাকনাম তূর্য।

১৯৬৮ সালে, দিলকুশা ক্লাবের যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে সালাহউদ্দীন ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এই দলের হয়ে খেলার মাধ্যমেই তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে, ওয়ারীর হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি মাত্র ১ মৌসুম অতিবাহিত করেছিলেন; ওয়ারীর হয়ে তিনি ২৪ ম্যাচে ১৮টি গোল করেছিলেন। অতঃপর ১৯৭০ সালে ঢাকা মোহামেডানে যোগদান করেছিলেন। ঢাকা মোহামেডানেও মাত্র ১ মৌসুম অতিবাহিত করার পর বাংলাদেশী ক্লাব ঢাকা আবাহনীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে তিনি ৪৩ ম্যাচে ৪০টি গোল করেছিলেন। পরবর্তীকালে, ১৯৭৫–৭৬ মৌসুমে, তিনি হংকংয়ের ক্লাব ক্যারোলাইন হিলে যোগদান করার মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরে পেশাদার লীগে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন;[৪] সেখানে তিনি ১৮ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সর্বশেষ ১৯৭৬–৭৭ মৌসুমে, তিনি ক্যারোলাইন হিল হতে বাংলাদেশী ক্লাব ঢাকা আবাহনীতে যোগদান করেছিলেন; ঢাকা আবাহনীর হয়ে ৮ মৌসুম খেলার পর তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একজন ফুটবল যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে খেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে, সালাহউদ্দীন বাংলাদেশ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন; বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তিনি সর্বমোট ৩১ ম্যাচে ৮টি গোল করেছিলেন।[৫]

খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর ১৯৮৫ সালে, সালাহউদ্দীন বাংলাদেশী ফুটবল ক্লাব ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে ম্যানেজার হিসেবে ফুটবল জগতে অভিষেক করেন; ঢাকা আবাহনীর হয়ে ২ মৌসুম ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে প্রায় ৩ বছর হিসেবে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৯২–৯৩ মৌসুমে তিনি পুনরায় ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন; দ্বিতীয়বারেও তিনি ২ মৌসুম দলটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

দলগতভাবে, খেলোয়াড় হিসেবে সালাহউদ্দীন সর্বমোট ৭টি শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন, যার সবগুলো তিনি ঢাকা আবাহনীর হয়ে জয়লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে, ম্যানেজার হিসেবে, সর্বমোট ২টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন, যেগুলো হচ্ছে ঢাকা আবাহনীর হয়ে ঢাকা লীগ শিরোপা।

প্রারম্ভিক জীবন

কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ১৯৫৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ঢাকার এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই তার শৈশব অতিবাহিত করেছেন। তার বাবার নাম কে এম শফি, যিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তার মাতার নাম সিমকী শফি, যিনি একজন গৃহিনী ছিলেন। তার একজন বোন এবং দুইজন ভাই রয়েছে। স্কুলে পড়াশুনাকালীন অ্যাথলেটিক্সের সাথে জড়িয়ে পরেন। তিনি সপ্তম শ্রেণীতে থাকাকালীন তিনি তার স্কুলের ফুটবল দলের জন্য নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি তার দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। তিনি বিএএফ শাহীন কলেজে পড়াশুনা করেছেন, যেখান থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা প্রদান করেছেন। অতঃপর তিনি ঢাকা কলেজে এবং পরিশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।[৬]

আন্তর্জাতিক ফুটবল

১৯৭১ সালের শুরুর দিকে সালাউদ্দিন ঢাকার হয়ে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে পশ্চিম পাকিস্তানে যান। টুর্নামেন্ট শেষে তাকে পাকিস্তানের জন্য শিবিরে যোগডান করার জন্য ডাকা হয়। তবে তিনি উক্ত শিবিরে অংশগ্রহণ না করে ২০শে মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অপারেশন সার্চলাইট নামক পরিকল্পিত সামরিক অভিযান শুরু হলে তিনি মাত্র পাঁচ দিনের জন্য ঢাকায় ফিরে আসেন।[৭] সালাউদ্দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করায় তার পরিবার তাকে লন্ডনে যেতে বলেছিল। তবে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে তার পিতা সম্মতক্রমে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলা পৌঁছে যান, যেখানে তিনি গেরিলা সৈন্যদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের ফুটবল খেলোয়াড়দের একটি দল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা একজন ফটো সাংবাদিকের কাছ থেকে শোনেন, যারা ভারতে যুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে এবং সচেতনতা বাড়াতে খেলছে। কলকাতা থেকে আসা এই সাংবাদিক তাকে দলের হয়ে খেলতে রাজি করান এবং যুদ্ধের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। সালাউদ্দিন উক্ত দলের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি মালবাহী বিমানে করে কলকাতায় যান। কলকাতায় তিনি ঢাকা থেকে আগত তার অনেক সতীর্থদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং কলকাতার শীর্ষ দল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দলের হয়ে প্রথম ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। কূটনৈতিক কারণে মোহনবাগান "গোশত্য পাল একাদশ" নামটি ব্যবহার করেছিল। সালাউদ্দিন তার দলের সাথে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অর্থ সংগ্রহ এবং বাংলাদেশের প্রতি জনসমর্থন সৃষ্টির জন্য খেলতে থাকেন।[৬]

১৯৭৩ সালে, সালাউদ্দিন মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে মেরদেকা কাপের ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক করেছিলেন।

ম্যানেজার

ফুটবল খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর ১৯৮৫ সালে তার সাবেক ক্লাব ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাধ্যমে কাজী সালাউদ্দিন তার জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেন। তার অধীনে ঢাকা আবাহনী ১৯৮৫ জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের ফুটবল লীগের শিরোপা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। একই বছরে সালাউদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয় দলেরও ম্যানেজার পদে নিযুক্ত হন। সালাউদ্দিন ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা আবাহনীরহয়ে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের পর সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ম্যানেজারের পদ সরে দাঁড়ান। কিছুদিন বিরতির পর ১৯৯২ সালাউদ্দিন পুনরায় ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজারের পদ গ্রহণ করেন, তবে মাত্র ২ মৌসুম পর তিনি উক্ত পদ হতে পদত্যাগ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৭২ সালে, সালাউদ্দিন ইমা সালাউদ্দিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের উভয়ের একটি কন্যাসন্তান এবং একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

পুরুষ্কার

  1. প্রথম আলো ক্রীড়া পুরুষ্কার (২০২৩)
  2. শেখ কামাল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড
  3. স্বাধীনতা পুরস্কার

পরিসংখ্যান

আন্তর্জাতিক গোল

গোলতারিখমাঠপ্রতিপক্ষস্কোরফলাফলপ্রতিযোগিতাসূত্র
২৬ জুলাই ১৯৭৩মালয়েশিয়া  থাইল্যান্ড২–২মেরদেকা কাপ[৫]
১৯৭৩  সিঙ্গাপুর১–১[৫]
১৯৭৫মালয়েশিয়া  বার্মা১–৭মেরদেকা কাপ[৫]
 থাইল্যান্ড১–১[৫]
৪ আগস্ট ১৯৭৫  হংকং১–৯[৫]
১০ জানুয়ারি ১৯৭৯ঢাকা, বাংলাদেশ  কাতার১–৩১৯৮০ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব[৫]
১৬ জানুয়ারি ১৯৭৯  আফগানিস্তান৩–২[৫]
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮০সাবাহ আল সালিম স্টেডিয়াম, কুয়েত সিটি, কুয়েত  উত্তর কোরিয়া–৩২–৩১৯৮০ এএফসি এশিয়ান কাপ[৫]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন