ডাইঅপ্টার

ডাইঅপ্টার লেন্স বা বক্র দর্পণের আলোক ক্ষমতার একক। এর মান মিটার এককে পরিমাপকৃত ফোকাস দূরত্বের ঠিক বিপরীত, অর্থাৎ ১ ডাইঅপ্টার = ১ মিটার−১। প্রকৃতপক্ষে এটি দৈর্ঘ্যের বিপরীত রাশির একক। উদাহরণস্বরূপ, ৩ ডাইঅপ্টার ক্ষমতার কোনো লেন্স সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছকে ১/৩ মিটার ফোকাস দূরত্বে অভিসৃত বা অপসৃত করে। সমতল জানালার কাচের আলোক ক্ষমতা শূন্য ডাইঅপ্টার এবং সঙ্গত কারণেই এটি আলোকরশ্মিগুচ্ছকে অভিসারী বা অপসারী করতে পারে না। দূরত্বের বিপরীত রাশি হিসেবে অন্যান্য ক্ষেত্রে, বিশেষত বক্রতার ব্যাসার্ধ ও অপটিক্যাল বীমের অভিসৃতি বা অপসৃতি নির্ণয়েও এর ব্যবহার রয়েছে।

ডাইঅপ্টারের উদাহরণ। ২৫ সেমি দৈর্ঘ্যের ফোকাল লেন্সের আলোর তীব্রতা ৪ ডাইঅপ্টার। যদি এটি +৪ না জমে তবে এটি -৪ ঘনীভূত হয় না।

ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তে আলোক ক্ষমতা ব্যবহারের প্রধান সুবিধা হলো- লেন্স তৈরির সমীকরণে বস্তুর দূরত্ব, প্রতিবিম্বের দূরত্ব ও ফোকাস দূরত্ব- সবগুলোই বিপরীত (ইনভার্স) আকারে থাকে। আরও সুবিধা হলো- কতগুলো অপেক্ষাকৃত পাতলা লেন্স কাছাকাছি স্থাপন করলে তাদের প্রকৃত ক্ষমতা স্ব স্ব লেন্সের ক্ষমতার যোগফলের প্রায় সমান হয়। অর্থাৎ, ২.০০ ডাইঅপ্টার ক্ষমতার একটি পাতলা লেন্সকে ০.৫০ ডাইঅপ্টারের অপর একটি পাতলা লেন্সের খুব কাছাকাছি রাখলে সম্মিলিত লেন্সের ফোকাস দূরত্ব একটি একক ২.৫০ ডাইঅপ্টার লেন্সের ফোকাস দূরত্বের প্রায় সমান হয়।

ডাইঅপ্টার একটি এসআই-মেট্রিক পদ্ধতি অনুসৃত একক হলেও আদর্শ (স্ট্যান্ডার্ড) এককের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে এর নাম বা প্রতীকও নেই, তাই আলোক ক্ষমতার একক হিসেবে ডাইঅপ্টারকে সরাসরি ইনভার্স মিটার (মিটার-১) রূপে প্রকাশ করা যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ ভাষায় ডাইঅপ্টার শব্দটিই অধিক প্রচলিত এবং জার্মান ইন্সটিটিউট ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের (ডিআইএন) মতো কিছু জাতীয় সংস্থা এককের নাম (ডাইঅপট্রি, ডাইঅপট্রিয়া প্রভৃতি) ও প্রতীক (dpt) নির্ধারণ করে দিয়েছে। চক্ষু গবেষণায় D প্রতীকটি বহুল ব্যবহৃত।

লেন্সকে মিটারে প্রকাশিত ফোকাস দূরত্বের বিপরীত রাশি দ্বারা চিহ্নিত করার ধারণা প্রথম দেন আলব্রেট নাগেল, ১৮৬৬ সালে।[১][২] পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ইয়োহানেস কেপলারের পূর্ব-ব্যবহৃত ডাইঅপট্রিস শব্দের উপর ভিত্তি করে ১৮৭২ সালে ফ্রান্সের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ফার্দিনান্দ মোনোয়ার ডাইঅপ্টার শব্দটি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।[৩][৪][৫]

দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি সংশোধন

আলোক ক্ষমতা যে প্রায় যোজনীয় (অর্থাৎ পরস্পর যোগ করা যায়)- এই বিষয়টির ফলশ্রুতিতেই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ত্রুটিপূর্ণ চোখের শুধু প্রয়োজনীয় লেন্সের ক্ষমতা নির্ধারণ করে দিলেই চলে, চোখ ও লেন্সের সমন্বয়ে সমগ্র ব্যবস্থার বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, কারও চোখে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা থাকলে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় যে আলোক ক্ষমতা যোগ করলে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে শুধু তা উল্লেখ করাই যথেষ্ট।

মানুষের ক্ষেত্রে বিশ্রামরত অবস্থায় চোখের মোট আলোক ক্ষমতা প্রায় ৬০ ডাইঅপ্টার।[৬][৭] এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৪০ ডাইঅপ্টার) যোগান দেয় কর্নিয়া এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ (২০ ডাইঅপ্টার) যোগান দেয় ক্রিস্টালাইন লেন্স।[৬]

উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব ধনাত্মক, তাই এর ক্ষমতাও ধনাত্মক। দূরদৃষ্টি (হাইপারোপিয়া বা হাইপারমেট্রোপিয়া) সংশোধনে এই লেন্স ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রেসবায়োপিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছের লেখা পড়ার অসুবিধা দূর করতেও উত্তল লেন্স ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত +১.০০ থেকে +৪.০০ ডাইঅপ্টারের উত্তল লেন্স বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে অবতল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব ঋণাত্মক, তাই ক্ষমতাও ঋণাত্মক। এটি ক্ষীণদৃষ্টির (মায়োপিয়া) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তীব্র নয় এমন ক্ষীণদৃষ্টি প্রতিকারে সচরাচর –০.৫০ থেকে –৩.০০ ডাইঅপ্টারের অবতল লেন্সের ব্যবহার দেখা যায়। চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার সময় সাধারণত ০.২৫ ডাইঅপ্টার ব্যবধানে লেন্সের ক্ষমতা হ্রাস-বৃদ্ধি করেন।

বক্রতা

বক্রতা পরিমাপের ক্ষেত্রেও ডাইঅপ্টার ব্যবহৃত হয়। এর মান মিটার এককে পরিমাপকৃত ব্যাসার্ধের ঠিক বিপরীত। উদাহরণস্বরূপ, ১/২ মিটার ব্যাসার্ধের কোনো বৃত্তের বক্রতার মান হবে ২ ডাইঅপ্টার। লেন্সের কোনো পৃষ্ঠের বক্রতা C এবং প্রতিসরণাঙ্ক n হলে, এর আলোক ক্ষমতা φ = (n − 1)C. যদি লেন্সের উভয় পৃষ্ঠ বক্র হয়, সেক্ষেত্রে লেন্সের ভিতরের দিকে বক্রতাকে ধনাত্মক ধরে বক্রতাগুলো যোগ করে দিতে হবে। লেন্সের পুরুত্ব এর কোনো একটি পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ অপেক্ষা যথেষ্ট ছোট হলে এ থেকে প্রায় সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। দর্পণের ক্ষেত্রে আলোক ক্ষমতা φ = 2C.

বিবর্ধন ক্ষমতার সাথে সম্পর্ক

একটি সাধারণ বিবর্ধক কাচের বিবর্ধন ক্ষমতা V এর সাথে বিবর্ধকটির আলোক ক্ষমতা φ এর সম্পর্ক নিম্নরূপ:

.

একজন স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির মানুষ তার চোখের নিকটে কোনো বিবর্ধক কাচ ধরলে যে বিবর্ধন দেখতে পান, তা প্রায় উপর্যুক্ত সমীকরণের অনুরূপ।

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জি

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন