নেপাল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নির্বাসন

নেপাল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নির্বাসন হলো ২০শ শতাব্দীর প্রথমাংশে রাণা শাসনামলে থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণ অবদমিত করার জন্য গৃহীত একটি পদক্ষেপ। কাঠমান্ডু থেকে দুইবার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বহিষ্কৃত হয়, প্রথমবার ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে।

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাসিত পাঁচজন বৌদ্ধের দল
প্রজ্ঞানন্দ, মহাপ্রজ্ঞা এবং শাক্যানন্দ, কালিম্পং, আনুমানিক ১৯৩৫
ধম্মালোক ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাসিত হন

বহিষ্কৃত ভিক্ষুরা ১৪শ শতকের পর নেপালে থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভিক্ষুদের প্রথম দল ছিলেন। তারা প্রায় পাঁচ শতক পূর্বে নেপাল থেকে হারিয়ে যাওয়া থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ আন্দোলনের অগ্রদূত ছিলেন। এই সন্ন্যাসীদের অধিকাংশ নেওয়ার জাতিভুক্ত ছিলেন। নেওয়ারদের ঐতিহ্যগত বৌদ্ধধর্ম বজ্রযান ভিত্তিক। রাণা রাজপরিবার একই সাথে বৌদ্ধ ধর্ম এবং নেওয়ারদের মাতৃভাষা নেপাল ভাষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শাসকেরা ভিক্ষুদের কর্মকাণ্ড এবং তাদের উঠতি জনপ্রিয়তাকে রাজপরিবারের ক্ষমতার জন্য বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করে। যখন পুলিশি তৎপরতা এবং কারাবাস ভিক্ষুদের অবদমিত করতে সক্ষম হয় না, তখন ভিক্ষুদের নির্বাসনের আদেশ দেওয়া হয়।

ভিক্ষুদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল নতুন বিশ্বাস প্রচার, হিন্দুদের ধর্মান্তরণ, পারিবারিক জীবনে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা এবং সে অনুসারে নারীদের উদ্বুদ্ধকরণ ও নেওয়ারি বা নেপাল ভাষায় গ্রন্থ লেখা ও প্রকাশ।[১][২]

১৯২৬ এর নির্বাসন

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে নেপাল থেকে তিব্বতীয় গুরু শেরিং নোরবু এবং তার শিষ্য পাঁচজন ভিক্ষুকে নির্বাসনাদেশ দেওয়া হয়। এই পাঁচজন ভিক্ষু তাদের ধর্মনাম বৌদ্ধ ঋষি মহাপ্রজ্ঞা, মহাবীর্য্য, মহাচন্দ্র, মহাকান্তি এবং মহাজ্ঞান নামে পরিচিত ছিলেন। এই ভিক্ষুরা তিব্বতীয় রীতির বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত ছিলেন।

সরকার মহাপ্রজ্ঞার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ ও কাঠমান্ডুর আশেপাশে ভিক্ষা করার জন্য অভিযুক্ত করে। পুলিশ ভিক্ষুদের আটক করে এবং জেরা করতে থাকে। মামলাটি প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শমশের জঙ্গ বাহাদুর রানার নিকট পৌঁছায়, যিনি তাদের নির্বাসনের আদেশ দেন। তিনি তাদের সংস্থানের জন্য কিছু সময় দেওয়া হয় এবং সাথে শর্ত দেওয়া হয় যে, তাদের থানায় রাত কাটাতে হবে। এরপর তাদের ভারত সীমান্ত পর্যন্ত পুলিশের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়। পাঁচজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং তাদের শিক্ষক প্রথমে ভারতের বুদ্ধগয়ায় পৌঁছায়। এরপর তারা বার্মা কিংবা তিব্বতে ছটিয়ে পড়েন।[৩]

১৯৪৪ এর নির্বাসন

১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আরও আটজনকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নির্বাসিত আটজনের ধর্মনাম হলো প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির, ধম্মালোক মহাস্থবির, সুবোধানন্দ, প্রজ্ঞারশ্মি, প্রজ্ঞারস, আজ্ঞা ধম্ম এবং কুমার কাশ্যপ মহাস্থবির[৪] এবার তাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের হিন্দুধর্ম ত্যাগে ইন্ধন দান এবং নেপাল ভাষায় লেখার অভিযোগ আনা হয়। ভিক্ষুদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ শমশের জঙ্গ বাহাদুর রানার সামনে হাজির করা হয় এবং তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধের শর্তে রাজি হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। শর্তে রাজি না হওয়ায় তাদের নেপাল থেকে নিষ্কাশনের হুকুম জারি করা হয়।[৫]

ভিক্ষুরা নেপাল থেকে বের হয়ে প্রথমে ভারতের কুশীনগর এবং সেখান থেকে সারনাথে গমন করেন। সেখানে তারা ধর্মোদয় সভা নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার এবং নির্বাসিত অবস্থায় একটি ধর্মীয় সাহিত্যভিত্তিক সাময়িকী প্রকাশ করবে। এই ভিক্ষুদের কয়েকজন ভারতে অবস্থান করেন এবং বাকিরা তিব্বত, ভুটানশ্রীলঙ্কায় স্থানান্তরিত হন।[৬] ভাজুরত্ন কংসকার নামক একজন কালিম্পংভিত্তিক নেপালি বণিক নির্বাসিত অবস্থায় তাদের অন্যতম বৃহত্তর সহায়ক ছিলেন।

নেপালে প্রত্যাবর্তন

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীলঙ্কা থেকে একদল শুভেচ্ছাদূত কাঠমান্ডু ভ্রমণ করেন এবং ভিক্ষুদের পক্ষে সরকারকে অনুরোধ জানায়। প্রতিনিধিদল গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে নেপালে তার মতাবলম্বীদের ধর্মকর্মের স্বাধীনতা প্রদান করা উচিত বলে জোর প্রদান করে। এ প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং ভিক্ষুরা নেপালে প্রত্যাবর্তন করে সেখানে বৌদ্ধধর্মের প্রসারে আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হন।[৩][৭]

১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের একটি অভ্যুত্থানের ফলে রাণা শাসকেরা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে নেপালে বৌদ্ধদের ওপর নিপীড়নও বন্ধ হয়।[৮][৯]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন