থেরবাদ

বৌদ্ধধর্মের শাখা, প্রাচীনতম বিদ্যমান সম্প্রদায়

থেরবাদ (/ˌtɛrəˈvɑːdə/; পালি শব্দ; আক্ষরিক অর্থ: "স্থবিরদের (প্রাচীনপন্থী) সম্প্রদায়")[১][২] হল বৌদ্ধধর্মের এখনও বিদ্যমান সম্প্রদায়গুলির মধ্যে প্রাচীনতম।[১][২] গৌতম বুদ্ধের শিক্ষার একটি নিজস্ব সংস্করণ তাঁরা পালি ভাষায় রচিত তিপিটক গ্রন্থে সংরক্ষণ করেন।[১][২] পালি তিপিটক গ্রন্থটিই কোনও ধ্রুপদি ভারতীয় ভাষায় অদ্যাবধি সংরক্ষিত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্য বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ। এই ভাষাটিই থেরবাদ সম্প্রদায়ের পবিত্র ভাষা[২]লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা.[৩] তমরাশতীয় সম্প্রদায়ের একটি পাঠও এই গ্রন্থের অন্তর্গত।[৪]

থাইল্যান্ডের সিরকিট বাঁধের ধারে ধ্যানমগ্ন থেরবাদী সন্ন্যাসী।
মানচিত্রে তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, পূর্বদক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তিনটি প্রধান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অবস্থান।

এক সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে থেরবাদীরা তাঁদের সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ ধম্ম সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।[web ১] থেরবাদ সম্প্রদায় মতবাদ ও সন্ন্যাস প্রথার নিয়মানুবর্তিতার ব্যাপারে রক্ষণশীল। এখানেই মহাযানবজ্রযান সম্প্রদায়ের তাঁদের প্রধান পার্থক্য।[৫] ১৯শ শতাব্দীতে ধ্যান অনুশীলন পুনঃপ্রবর্তিত হয় এবং সেই সময় থেকে প্রথাগত থেরবাদী দেশগুলিতে এবং পাশ্চাত্যে জনসাধারণের মধ্যে তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে।[web ১]

শ্রীলঙ্কায় থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম একটি স্বতন্ত্র আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায় হিসাবে পূর্ণতা অর্জন করে এবং তারপরে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।[৬] এই সম্প্রদায় কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাথাইল্যান্ডের প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়। ভারত, বাংলাদেশ, চীন, নেপালভিয়েতনামের একটি সংখ্যালঘু অংশও এই মতবাদে অনুসারী। এছাড়া সারা বিশ্বে এই সকল গোষ্ঠীর অভিবাসীরা এবং ধর্মান্তরিতরাও থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুশীলন করেন। বৌদ্ধ আধুনিকতাবাদ, বিপশ্যনা আন্দোলন ও থাই অরণ্য প্রথা এই মতবাদেরই সমসাময়িক প্রকাশ।

ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে বৌদ্ধধর্মের গোড়া পত্তন হয়। সে সময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান নির্দেশক ছিলেন স্বয়ং  গৌতম বুদ্ধ। পরবর্তীতে বুদ্ধপ্রদত্ত বাণী ও নির্দেশনার সংকলনে তৈরি হয় বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ  ত্রিপিটক। ত্রিপিটক পালি ভাষায় রচিত। এতে বৌদ্ধ ধর্মদর্শন ছাড়াও বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধারক ও বাহক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জীবনাচারের প্রতিটি বিষয়ের নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত আছে। পালি ত্রিপিটকে বর্ণিত আদি ও মৌলিক বৌদ্ধ ধর্মাচার ও দর্শনকেই বলা হয় থেরবাদ।

ক্রমবিকাশ

বৌদ্ধধর্মের ক্রমবিকাশের ধারাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের পূর্ব পর্যন্ত সাড়ে পাচঁশ বছর প্রথম অধ্যায়; খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে সপ্তম শতক পর্যন্ত দ্বিতীয় অধ্যায় এবং অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত তৃতীয় অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ের  বৌদ্ধধর্ম ছিল পূর্ণাঙ্গ থেরবাদ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে  মহাযান বৌদ্ধ দর্শনের উদ্ভব হয়। এ সময় সংস্কৃতসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত পালি ত্রিপিটকের খন্ডিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এতে মূল ত্রিপিটকে বর্ণিত বিনয়ের চিরাচরিত কঠোর নিয়মাবলি বহুলাংশে শিথিল করা হয়। এ শিথিলকৃত ধারার বিনয়-অনুসারিগণ বা মহাযানপন্থিগণ থেরবাদকে রক্ষণশীল বৌদ্ধধর্ম, স্থবিরবাদ নামে আখ্যায়িত করেন। দ্বিবিধ ধারার এ বৌদ্ধ মতাদর্শে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। অনিত্য-দুঃখ-অনাত্ম, চতুরার্য সত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ এবং শীল-সমাধি-প্রজ্ঞার অনুশীলনে পরম শান্তি ‘নির্বাণ’ লাভের সাধনা থেরবাদ ও মহাযান উভয় মতবাদেই অনুসৃত হয়। শুধু আচার-অনুষ্ঠানের দিক থেকে এ দুই মতবাদে কিছুটা বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

শিক্ষা

থেরবাদ বৌদ্ধধর্মানুসারিগণ বুদ্ধের প্রদর্শিত নীতি-আদর্শ অনুসারে নিজের অন্তঃকরণ হতে অবিদ্যা, তৃষ্ণা ও মোহ ধ্বংস করে শমথ ও বিদর্শন ভাবনায় (ধ্যান) পূর্ণতা অর্জনপূর্বক নির্বাণ লাভ এবং নির্বাণোত্তর বুদ্ধস্থানে উন্নীত হওয়ার সাধনা করে। অপরদিকে মহাযানপন্থিগণ বুদ্ধের  বোধিসত্ত্ব জীবনের আদর্শকেই বিশেষভাবে অনুশীলন করে। তারা তিন রকমের পারমিসমূহের পূর্ণতাপূর্বক সর্ব জীবের দুঃখ নিরাকরণের লক্ষ্যে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ, এমনকি নিজের জীবন ও কুশলকর্মার্জিত পুণ্যফলও পরহিতে বিতরণের প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে নিরবচ্ছিন্ন কর্মসাধনার দ্বারা নির্বাণ লাভ এবং তদনন্তর সম্যক সম্বুদ্ধত্বে উপনীত হওয়ার সাধনা করে। মহাযান সংস্কৃতিতে আনুষ্ঠানিকতা কম, কিন্তু থেরবাদে বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতা বিদ্যমান।

বাংলাদেশে থেরবাদ

সপ্তম-অষ্টম শতকে বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে মহাযানের প্রচলন ছিল বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের বাঙালি ও উপজাতীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় বিশুদ্ধ থেরবাদ বৌদ্ধধর্মেরই অনুশীলন করেন। শুধু এ একটি মাত্র মতাদর্শই বাংলাদেশের সর্ব অঞ্চলের বৌদ্ধদের মধ্যে বিরাজিত। তাই বাংলাদেশের বৌদ্ধদের বলা হয় থেরবাদী বৌদ্ধ।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

মুদ্রিত সূত্র

  • last Buswell, Robert, সম্পাদক (২০০৪), Encyclopedia of Buddhism, MacMillan 
  • Chapman, David (২০১১), Theravāda reinvents meditation 
  • Crosby, Kate (২০১৩), Theravada Buddhism: Continuity, Diversity, and Identity, Wiley-Blackwell 
  • Dutt, Nalinaksha (১৯৯৮), Buddhist Sects in India, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited 
  • Gombrich, Richard F. (১৯৯৬), Theravāda Buddhism. A Social History from Ancient Benares to Modern Colombo, London and New York: Routledge 
  • Gombrich, Richard F. (১৯৯৭), How Buddhism Began. The Conditioned Genesis of the Early Teachings, New Delhi: Munshiram Manoharlal Publishers Pvt. Ltd. 
  • Gomez, Luis O. (১৯৯১), Purifying Gold: The Metaphor of Effort and Intuition in Buddhist Thought and Practice. In: Peter N. Gregory (editor)(1991), Sudden and Gradual. Approaches to Enlightenment in Chinese Thought, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited 
  • Gunaratana, Henepola (১৯৯৪), The Path of Serenity and Insight, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited 
  • Kalupahana, David J. (১৯৯৪), A history of Buddhist philosophy, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited 
  • McMahan, David L. (২০০৮), The Making of Buddhist Modernism, Oxford University Press, আইএসবিএন 9780195183276 
  • Nyanaponika (১৯৯৮), Het hart van boeddhistische meditatie (The heart of Buddhist Meditation), Asoka 
  • Polak, Grzegorz (২০১১), Reexamining Jhana: Towards a Critical Reconstruction of Early Buddhist Soteriology, UMCS 
  • Salgado, Nirmala S. (নভেম্বর ২০১৩)। Buddhist Nuns and Gendered Practice: In Search of the Female Renunciant। OUP। আইএসবিএন 978-0-19-976001-5 
  • Tuchrello, William P. (n.d.), The Society and Its Environment. (Religion: Historical Background section), Federal Research Division, Library of Congress 
  • Tiyavanich, K. (১৯৯৭), Forest Recollections: Wandering Monks in Twentieth-Century Thailand, University of Hawaii Press 
  • Warder, A.K. (২০০০), Indian Buddhism, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers 

ওয়েব সূত্র

বহিঃসংযোগ

Theravada

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ