পূর্ব পাঞ্জাব
পূর্ব পাঞ্জাব (১৯৫০ সাল থেকে পাঞ্জাব হিসাবে পরিচিত) ছিল ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান থাকা ভারতের একটি প্রদেশ (প্রথমদিকে) তথা রাজ্য (শেষদিকে)। ১৯৪৭ সালে পাঞ্জাব ভাগ তথা ভারত ভাগের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের যেসব অঞ্চল ভারতে যুক্ত হয় সেই অংশ নিয়ে এই প্রদেশ গঠন করা হয়। ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ কমিশন পুরনো পাঞ্জাবের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমাঞ্চল পাকিস্তানে যুক্ত করে পশ্চিম পাঞ্জাব গঠন করা হয় (পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় পাঞ্জাব প্রদেশ) এবং বেশিরভাগ হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব অংশ ভারতে যুক্ত করে এই প্রদেশ গঠন করা হয়।
পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশ (১৯৪৭-১৯৫০) পাঞ্জাব রাজ্য (১৯৫০-১৯৬৬) | |||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভারতের প্রাক্তন রাজ্য | |||||||||||||||||
১৯৪৭–১৯৬৬ | |||||||||||||||||
১৯৫৬ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ভারতের পাঞ্জাব রাজ্য | |||||||||||||||||
রাজধানী | শিমলা (১৯৪৭–১৯৫৩)[১] চণ্ডীগড় (১৯৫৩–১৯৬৬)[১] | ||||||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৯৪৭ | ||||||||||||||||
• পেপসু পাঞ্জাবে একীভূত হয় | ১৯৫৬ | ||||||||||||||||
• বিলুপ্ত | ১৯৬৬ | ||||||||||||||||
| |||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | পাঞ্জাব চণ্ডীগড় হরিয়ানা হিমাচল প্রদেশ |
ইতিহাস
ভারত ভাগ
ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের বিভক্ত হওয়ার সাথে সাথে তৎকালীন পাঞ্জাব প্রদেশটি যুক্তরাজ্যের সংসদ কর্তৃক পাস হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৩৫ সালে প্রণীত ভারত শাসন আইনের অধীনে গঠিত এই প্রদেশটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে পশ্চিম পাঞ্জাব এবং পূর্ব পাঞ্জাব হিসেবে দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। [২] পাঞ্জাব অঞ্চলের দেশীয় রাজ্য (যা ব্রিটিশদের মালিকানা ছিল না, তাই ব্রিটিশরা তাকে ভাগ করতে পারে নি) বাহাওয়ালপুর রাজ্য ব্যতীত (এটি পাকিস্তান অধিরাজ্যে যোগদান করে) বাকি সবগুলো একীভুত হয়ে পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (পেপসু) হিসেবে ভারত অধিরাজ্যে যোগদান করে। পাঞ্জাব প্রদেশের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য রাজ্যগুলোকে একত্রিত করে ১৯৪৮ সালের ১৫ এপ্রিলে হিমাচল প্রদেশ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে হিমাচল প্রদেশকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
রাজ্যের নাম পরিবর্তন
১৯৫০ সালে কার্যকর হওয়া ভারতের সংবিধানে "পূর্ব পাঞ্জাব" প্রদেশটির নাম পরিবর্তন করে "পাঞ্জাব" রাজ্য রাখা হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ভারতীয় রাজ্য পুনর্গঠন
১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইনের অধীনে পেপসু একটি পুনর্গঠিত পাঞ্জাব রাজ্যে একীভূত হয়।
পাঞ্জাবি সুবা আন্দোলন
১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বরে আরও একবার পুনর্গঠন করা হয়। সেবার ১৯৫৬ সালে গঠিত পাঞ্জাব রাজ্যটিকে ভাষার ভিত্তিতে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। হিন্দি-ভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে বর্তমান ভারতের হরিয়ানা রাজ্য এবং পাঞ্জাবি-ভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে বর্তমান পাঞ্জাব রাজ্য গঠন করা হয়।[৩][৪] অন্যদিকে তৎকালীন পাঞ্জাব (পূর্ব পাঞ্জাব) প্রদেশের রাজধানী চণ্ডীগড়কে উভয় রাজ্যের রাজধানী হিসেবে একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। একই সময়ে, সোলান ও নালাগ্রহ সহ পতিয়ালার পূর্ব অঞ্চল এবং পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়নের কিছু অংশ হিমাচল প্রদেশে স্থানান্তরিত হয়।
পূর্ব পাঞ্জাবের ধর্ম
ভারতের ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুসারে ভারতের বর্তমান পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চন্ডীগড় নিয়ে গঠিত পূর্ব পাঞ্জাবের জনসংখ্যা ৬,১্১৪,৮৫২ জন। পূর্ব পাঞ্জাব অঞ্চলে হিন্দুরা ৪,০্৩৪,৬০৫ জনসংখ্যা (৬৫.৯৪%) নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৭৪৬৬৭৩১ জনসংখ্যা (২৮.৬২%) নিয়ে শিখরা এই অঞ্চলের বৃহত্তম সংখ্যালঘু। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যা ২৫,১৮,১৫৯ (৪.১২%) আর অবশিষ্ট ৭,৯৫,৩৫৭ (১.৩%) জনসংখ্যা খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অনুসারী। বর্তমান পাঞ্জাবে শিখরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, অন্যদিকে হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং চণ্ডীগড়ে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আধুনিক ব্যবহার
রাজ্যের নাম হিসাবে "পূর্ব পাঞ্জাব" শব্দটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ভারতে "পূর্ব পাঞ্জাব" শব্দটি দ্বারা প্রায়ই ভারতের বর্তমান পাঞ্জাব রাজ্যের পূর্ব অংশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাকিস্তানেও কখনও কখনও শব্দটি দ্বারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্ব অংশ বোঝালেও পাকিস্তানিরা প্রায়ই বর্তমান ভারতীয় পাঞ্জাবকে "পূর্ব পাঞ্জাব" হিসাবে উল্লেখ করে থাকে। [৫] অর্থাৎ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত পাঞ্জাব অঞ্চলকে আলাদা করতে দুই দেশেই পূর্ব পাঞ্জাব ও পশ্চিম পাঞ্জাব শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়।