হিমাচল প্রদেশ

ভারতের একটি রাজ্য

হিমাচল প্রদেশ (হিন্দি: हिमाचल प्रदेश, /hɪˌmɑːəl prəˈdɛʃ/; হিন্দুস্তানি: [ɦɪˈmäːtʃəl pɾəˈd̪eːʃ] (); আক্ষ. "তুষারাবৃত পর্বত প্রদেশ") উত্তর ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এই রাজ্যের আয়তন ২১,৪৯৫ বর্গমাইল (৫৫,৬৭২ বর্গকিলোমিটার)।[৩] হিমাচল প্রদেশের উত্তর সীমায় কেন্দ্র শাসিত জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ রাজ্য; পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে পাঞ্জাব রাজ্য; দক্ষিণে হরিয়ানাউত্তরপ্রদেশ রাজ্য; দক্ষিণ-পূর্বে উত্তরাখণ্ড রাজ্য ও পূর্বে তিব্বত অবস্থিত। হিমাচল প্রদেশ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ তুষারাবৃত পর্বতসংকুল অঞ্চল[৪]

হিমাচল প্রদেশ
हिमाचल प्रदेश
রাজ্য
কিনার কৈলাশ
পার্বতী উপত্যকা কাছাকাছি তোশ
স্পিতিতে কী মঠ
সারাহানের ভীমকালী মন্দির
কল্প
শিমলা রাতে
হিমাচল প্রদেশের অফিসিয়াল সীলমোহর
সীলমোহর
দেশ ভারত
অঞ্চলউত্তর ভারত
প্রতিষ্ঠা২৫ জানুয়ারি, ১৯৭১
রাজ্যের রাজধানীশিমলা
ধর্মশালা(শীতকালে দ্বিতীয় রাজধানী)
সরকার
 • রাজ্যপালরাজেন্দ্র আরলেকর
 • মুখ্যমন্ত্রীজয় রাম ঠাকুর
আয়তন
 • মোট৫৫,৬৭৩ বর্গকিমি (২১,৪৯৫ বর্গমাইল)
এলাকার ক্রম১৭তম
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৬৮,৫৬,৫০৯
 • ক্রম১৭তম
ওয়েবসাইটwww.himachal.nic.in/welcome.asp
সারহান প্রাসাদ হিমাচল প্রদেশ
ভীমাকালী মন্দির,সারাহান

হিমাচল প্রদেশের অপর নাম দেবভূমি (দেবতাদের দেশ)। ঋগ্বৈদিক যুগের পূর্ব থেকেই এই অঞ্চলে ইন্দো-আর্য প্রভাব লক্ষিত হয়। অ্যাংলো-গোর্খা যুদ্ধের পর এই অঞ্চল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের অধীনস্থ হয়। পার্বত্য পাঞ্জাবের সিবা রাজ্য (Siba State of Punjab Hills) ব্যতীত এই অঞ্চলের অপরাপর অংশ প্রথম দিকে পাঞ্জাবের অন্তর্গত হয়। উল্লেখ্য সিবা রাজ্য ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত মহারাজা রঞ্জিত সিংহের শাসনাধীন ছিল।[৫] ১৯৫০ সালে হিমাচল একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষিত হয়। এরপর ১৯৭০ সালের হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন অনুযায়ী ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অষ্টাদশ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ রাজ্যে বহু স্বনামধন্য বোর্ডিং স্কুল অবস্থিত।

মাথাপিছু আয়ের হিসেব অনুযায়ী হিমাচল প্রদেশ ভারতের একটি প্রথম সারির রাজ্য। বরফগলা জলে পুষ্ট নদীর প্রাচুর্যের কারণে এই রাজ্য দিল্লি, পাঞ্জাবরাজস্থান রাজ্যকে প্রচুর পরিমাণে জলবিদ্যুৎ বিক্রয় করে থাকে। হিমাচল প্রদেশের অর্থনীতি জলবিদ্যুৎ, পর্যটন ও কৃষির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল।[৬]

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা হিমাচল প্রদেশের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ। অনুপাতের হিসেবে ভারতের এই রাজ্যেই হিন্দুদের সংখ্যা সর্বাধিক। ২০০৫ সালের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সমীক্ষা অনুসারে, কেরলের পর হিমাচল প্রদেশ ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক দুর্নীতিমুক্ত রাজ্য।[৭]

ইতিহাস

বর্তমানে হিমাচল প্রদেশ নামে পরিচিত ভূখণ্ডের প্রাচীন ইতিহাস খ্রিষ্টপূর্ব ২২৫০-১৭৫০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বিকশিত হয়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক।[৮] কৈলি, হালি, দাগি, ধৌগ্রি, দাসা, খাসা, কিন্নর ও কিরাত প্রভৃতি উপজাতিবর্গ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করছে। বৈদিক যুগে এই অঞ্চলে "জনপদ" নামে অভিহিত একাধিক ক্ষুদ্রকায় গণরাষ্ট্র অবস্থিত ছিল। পরবর্তীকালে এই রাষ্ট্রগুলি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।[৯] এরপর কিছুকাল হর্ষবর্ধনের শাসনাধীনে একত্রিত থাকার পর আবার এই অঞ্চল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। এই সব রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় ভূস্বামীরা। এই সকল ভূস্বামীদের অনেকেই ছিলেন রাজপুত রাজকুমার। এই রাজ্যগুলি ছিল স্বাধীন রাজ্য। পরে বিভিন্ন সময়ে মুসলমান আক্রমণকারীদের হাতে এই রাজ্যগুলি তাদের স্বাধীনতা হারায়।[৮] দশম শতাব্দীর প্রথম ভাগে মাহমুদ গজনভি কাংড়া জয় করেন। তৈমুর ও সিকন্দর লোদি রাজ্যের নিম্ন পার্বত্য অঞ্চলে সেনা অভিযান চালিয়েছিলেন। তারা এই অঞ্চলে একাধিক যুদ্ধে লিপ্ত হন ও বহু দুর্গ দখল করেন।[৮] মুঘল আমলে এই অঞ্চলের অনেক পার্বত্য রাজ্যই মুঘল সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়ে সম্রাটকে কর দানে সম্মত হয়েছিলেন।[১০]

সংসার চন্দ (১৭৬৫ -১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দ)

১৭৬৮ সালে যোদ্ধা উপজাতি গোর্খারা নেপালে ক্ষমতায় আসে।[৮] তারা তাদের সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করে রাজ্যসীমা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন।[৮] ধীরে ধীরে গোর্খারা সিরমৌরশিমলা দখল করে নেয়। অমর সিংহ থাপার নেতৃত্বে গোর্খারা কাংড়া আক্রমণ করে। ১৮০৬ সালে একাধিক স্থানীয় শাসকের সহায়তায় তারা কাংড়ার শাসক সংসার চন্দকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। যদিও গোর্খারা কাংড়া দুর্গ দখল করতে পারেনি। এই দুর্গটি ১৮০৯ সালে মহারাজা রঞ্জিত সিংহের অধিকারে আসে। পরাজিত হয়ে গোর্খারা দক্ষিণে রাজ্যবিস্তারে মনোযোগ দেয়। পরে রাজা রাম সিংহ রঞ্জিত সিংহকে পরাস্ত করে সিবা দুর্গ জয় করেছিলেন।[৮]

এর ফলে অ্যাংলো শিখ যুদ্ধের সূচনা হয়।তরাই অঞ্চলে ব্রিটিশদের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু হয়। এর পরে ব্রিটিশরা তাদের শতদ্রু-তীরবর্তী অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে।[৮] এরপর ব্রিটিশরাই ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের শাসনকর্তৃত্ব দখল করে নেয়।[৮] ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক নীতির প্রতিক্রিয়ায় ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হলেও হিমাচল অঞ্চলের অধিবাসীরা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেনি।[৮] বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ব্রিটিশদের সঙ্গে সহযোগিতাই করেছিল।[৮] কেউ কেউ আবার মহাবিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশদের সাহায্যও করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন চাম্বা, বিলাসপুর, ভাগল ও ধামীর শাসকেরা। বুশারের শাসকেরা অবশ্য ব্রিটিশ স্বার্থবিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।[৮]

১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র জারির পর পার্বত্য অঞ্চলের ব্রিটিশ শাসনক্ষেত্রগুলি ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে। চাম্বা, মান্ডি, বিলাসপুর প্রভৃতি রাজ্য ব্রিটিশ শাসনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ উন্নতিলাভ করে।[৮] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পার্বত্য রাজ্যগুলি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে সেনা ও রসদ উভয়ই সরবরাহ করে যুদ্ধের ব্রিটিশদের সাহায্য করে। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাংড়া, জসওয়ান, দাতারপুর, গুলের, নুরপুর, চাম্বা, সুকেত, মান্ডি, ও বিলাসপুর[৮]

স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালের ১৫ এপ্রিল হিমাচল প্রদেশ চিফ কমিশনার শাসিত প্রদেশের মর্যাদা পায়। এই প্রদেশটি শিমলার পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলাসমূহ এবং পূর্বতন পাঞ্জাব অঞ্চলের দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রবর্তিত হলে হিমাচল গ-শ্রেণির রাজ্যের মর্যাদা পায়। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর হিমাচল প্রদেশ একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়।[৮] ১৯৭০ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংসদে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন পাস হয়। এর পর ১৯৭১ সালের ২৫ জানুয়ারি হিমাচল প্রদেশ ভারতের অষ্টাদশ পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[৮]

ভূগোল ও জলবায়ু

হিমাচল প্রদেশের টপোগ্রাফিক মানচিত্র। রাজ্যের বেশিরভাগ অংশই পাহাড়ি।
রোহতাং পাস থেকে চন্দ্র, লাহৌল এবং স্পিতির উপনদী (এলিভ. ৩৯৮০ মি, বা ১৩০৫৮ ফুট)

হিমাচল হল পশ্চিম হিমালয়ের ৩০°২২′N ও ৩৩°১২′N অক্ষাংশ এবং ৭৫°৪৭′E ́ এবং ৭৯°০৪′E দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এটি ৫৫,৬৭৩ বর্গকিলোমিটার (২১,৪৯৫ মা) এলাকা জুড়ে একটি পাহাড়ি রাজ্য। জান্সকার রেঞ্জ রাজ্যের উত্তর-পূর্ব অংশে চলেগেছে এবং হিমালয় পর্বতমালার পূর্ব ও উত্তর অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে হিমালয়ের কম ধৌলাধর পীর পাঞ্জাল রেঞ্জ ও তাদের উপত্যকাগুলি বেশিরভাগ মূল অঞ্চল গঠন করে। বাইরের হিমালয়, বা শিবালিক রেঞ্জ, দক্ষিণ ও পশ্চিম হিমাচল প্রদেশ গঠন করে। শিলা হল হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ উচ্চতা ৭০২৫মি।[১১]

হিমাচলের নিষ্কাশন ব্যবস্থা নদী ও হিমবাহ উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত। হিমালয়ের নদীগুলি পুরো পর্বত শৃঙ্খলকে অতিক্রম করে। হিমাচল প্রদেশ সিন্ধু এবং গঙ্গা উভয় অববাহিকায় জল সরবরাহ করে।[১২] এই অঞ্চলের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা হল চন্দ্রভাগ বা চেনাব, রাবি, বিয়াস, সুতলজ এবং যমুনা । এই নদীগুলি অতিপ্রাচীন এবং তুষার ও বৃষ্টিপাত হয়। নদীগুলো প্রাকৃতিক গাছপালা দ্বারা বিস্তৃত ও সুরক্ষিত।[১২] পাঞ্জাবের পাঁচটি নদীর মধ্যে চারটি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, তিনটির উৎপত্তি এখানে।

উচ্চতার চরম তারতম্যের কারণে হিমাচলের জলবায়ুতে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। জলবায়ু দক্ষিণ অঞ্চলে উষ্ণ ও আর্দ্র উপক্রান্তীয় থেকে পরিবর্তিত হয়। উত্তর ও পূর্ব পর্বতশ্রেণীতে আরও উচ্চতাসহ ঠান্ডা, আলপাইন ও হিমবাহ আছে।[১৩] রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী ধর্মশালায়ে খুব ভারী বৃষ্টিপাত হয়। যখন লাহৌল ও স্পিতির মতো এলাকাগুলি ঠান্ডা ও প্রায় বৃষ্টিহীন থাকে। হিমাচলে তিনটি ঋতু আছে: গ্রীষ্ম, শীত ও বর্ষাকাল। গ্রীষ্মকাল এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং বেশিরভাগ অংশ খুব গরম হয় (আলপাইন অঞ্চল বাদে যেখানে হালকা গ্রীষ্ম হয়) গড় তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩২ °সে (৮২ থেকে ৯০ °ফা) এর মধ্যে থাকে । নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতকাল স্থায়ী হয়। আলপাইন এলাকায় তুষারপাত হয়। এই দূষণ ভারতের প্রায় সব রাজ্যের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। দূষণ রোধে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য উজ্জ্বলা যোজনা ও গৃহ সুবিধা প্রকল্প চালু করা হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ হিমাচল প্রদেশ ভারতের প্রথম ধূমপান মুক্ত রাজ্যে পরিণত হয় যার অর্থ সমগ্র রাজ্যে রান্না ঐতিহ্যগত চুলা থেকে মুক্ত।[১৪]

উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত

কুল্লুতে ইন্ডিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার ( টেরপসিফোন প্যারাডিসি)

হিমাচল প্রদেশ হল ভারতীয় হিমালয়ান অঞ্চলে (IHR) অবস্থিত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি। বিশ্বের জৈবিক বৈচিত্র্যের অন্যতম ধনী জলাধার। ২০০২ সালের IHR এর হিসাবে বন্য ঔষধি ভেষজগুলির বৃহৎ আকারের মজুদ রয়েছে এখানে। তবে দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে এর অনেক উচ্চ-মূল্যের জিন স্টককে বিপন্ন করছে। এটি মোকাবেলা করার জন্য, ২০০২ সালে 'হিমাচল প্রদেশে বিপন্ন ঔষধি উদ্ভিদের প্রজাতি' বিষয়ক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের চল্লিশজন বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৫]

কালো বুলবুল ( হাইপসিপেটিস লিউকোসেফালাস)

২০০৩ সালের ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, হিমাচল প্রদেশের ৬৬.৫২% এলাকা বনাঞ্চল হিসাবে আইনত সংজ্ঞায়িত করা হয়।[১৬] রাজ্যে গাছপালার উচ্চতা ও বৃষ্টিপাত দ্বারা নির্ধারিত হয়। রাজ্যটি ঔষধি ও সুগন্ধি গাছের উচ্চ বৈচিত্র্য দ্বারা সমৃদ্ধ।[১৭] রাজ্যের লাহৌল-স্পিতি অঞ্চল, একটি শীতল মরুভূমি হওয়ায় ফেরুলা জায়েশকেনা, হায়োসসায়ামাস নাইজার, ল্যান্সিয়া টিবেটিকা ও সসুরিয়া ব্র্যাক্টিয়াটা সহ ঔষধি মূল্যের অনন্য উদ্ভিদকে সমর্থন করে।[১৭][১৭]

হিমাচলকে দেশের ফলের বাটিও বলা হয়।[১৮] ফলের বাগানগুলি ব্যাপক। তৃণভূমি ও চারণভূমিকেও খাড়া ঢালে আঁকড়ে থাকতে দেখা যায়। শীতের মৌসুমের পরে পাহাড়ের ধারে ও বাগানগুলিতে বুনো ফুল ফোটে। তখন গ্ল্যাডিওলাস, কার্নেশন, গাঁদা,[১৯] গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, টিউলিপ এবং লিলির চাষ করা হয়। হিমাচল প্রদেশ হর্টিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেটিং অ্যান্ড প্রসেসিং কর্পোরেশন লিমিটেড (HPMC) একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা যা তাজা ও প্রক্রিয়াজাত ফল বাজারজাত করে।[২০]

হিমাচল প্রদেশে প্রায় ৪৬৩টি পাখি রয়েছে এবং ট্রাগোপান মেলানোসেফালাস হল হিমাচল প্রদেশের রাষ্ট্রীয় পাখি।[২১] ৭৭টি স্তন্যপায়ী, ৪৪টি সরীসৃপ এবং ৮০টি মাছের প্রজাতি আছে। হিমাচল প্রদেশে বর্তমানে পাঁচটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে।[২২] গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক, রাজ্যের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বনাঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত। পিন ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, ইন্দরকিল্লা, খিরগঙ্গা ও সিম্বলবারা হল রাজ্যের অন্যান্য জাতীয় উদ্যান[২২][২৩][২৪][২৫] রাজ্যে ৩০টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং ৩টি সংরক্ষণাগার রয়েছে।[২৫] হিমাচল প্রদেশের রাষ্ট্রীয় পাখি হল পশ্চিমী ট্রাগোপান। স্থানীয়ভাবে জুজুরানা নামে পরিচিত।[২৬] এটি বিশ্বের বিরল জীবন্ত তিতিরের একটি। রাষ্ট্রীয় প্রাণী হল স্নো লেপার্ড, যা জুজুরানের চেয়েও বিরল।[২৭]

সরকার

হিমাচল প্রদেশের হাইকোর্ট

হিমাচল প্রদেশের বিধানসভার কোনো প্রাক-সাংবিধানিক ইতিহাস নেই। রাষ্ট্র নিজেই স্বাধীনতা-উত্তর সৃষ্টি। এটি ১৫ এপ্রিল ১৯৪৮-এ ত্রিশটি পূর্ববর্তী রাজ্যের একীকরণ থেকে একটি কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত অঞ্চল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[২৮]

হিমাচল প্রদেশ একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সংসদীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসিত হয়। এটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যা অন্যান্য ভারতীয় রাজ্যের সাথে ভাগ করে নেয়। সর্বজনীনভাবে ভোটাধিকার বাসিন্দাদের দেওয়া হয়। আইনসভা নির্বাচিত সদস্য এবং বিশেষ পদাধিকারীদের নিয়ে গঠিত হয়। যেমন স্পিকার এবং ডেপুটি স্পীকার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। স্পিকারের অনুপস্থিতিতে বিধানসভার বৈঠকগুলি ডেপুটি স্পিকার দ্বারা সভাপতিত্ব করা হয়। হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালতের একটি ব্যবস্থা নিয়ে বিচার বিভাগ গঠিত হয়।

সিমলার টাউন হল

নির্বাহী কর্তৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের উপর ন্যস্ত থাকে। যদিও সরকার প্রধান রাজ্যপাল। রাজ্যপাল হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত রাজ্যের প্রধান। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে রাজ্যপাল কর্তৃক মন্ত্রী পরিষদ নিযুক্ত হন। মন্ত্রী পরিষদ আইনসভায় রিপোর্ট করে। বিধানসভার ৬৮ জন সদস্য (এমএলএ) সহ বিধানসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হয়।[২৯] বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়।পঞ্চায়েত নামে পরিচিত সহায়ক কর্তৃপক্ষ, যার জন্য স্থানীয় সংস্থার নির্বাচন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। তারা স্থানীয় বিষয়গুলি পরিচালনা করে।

২০১৭ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে, ভারতীয় জনতা পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ৬৮টি আসনের মধ্যে ৪৪টি আসন জিতেছিল। যেখানে কংগ্রেস মাত্র ২১টি আসন জিতেছিল। জয় রাম ঠাকুর[৩০] হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো[৩১] সিমলায় ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ শপথ নেন।

প্রশাসনিক বিভাগ

হিমাচল প্রদেশ রাজ্যটি[৩২] ১২টি জেলায় বিভক্ত।[৩৩] জেলাগুলি আরও ৭৩টি মহকুমা, ৭৮টি ব্লক এবং ১৭২টি তহসিলে বিভক্ত।[৩২]

বিভাগজেলাগুলি[৩৪]
কাংড়াচাম্বা, কাংড়া, উনা
মান্ডিবিলাসপুর, হামিরপুর, কুল্লু, লাহৌল এবং স্পিতি, মান্ডি
সিমলাকিন্নর, সিমলা, সিরমাউর, সোলান
প্রশাসনিক কাঠামো[৩৫]
বিভাগ
জেলাগুলি১২
তহসিল/উপ-তহসিল১৭২
উন্নয়নমূলক ব্লক৭৮
শহুরে স্থানীয় সংস্থা৫৪[৩৬]
শহরগুলো৫৯
গ্রাম পঞ্চায়েত৩২২৬
গ্রামগুলো২০৬৯০
থানাগুলো১৩০[৩৭]
লোকসভা আসন[৩৮]
রাজ্যসভার আসন
বিধানসভা নির্বাচনী এলাকা৬৮[৩৮]

অর্থনীতি

বর্তমান মূল্যে মোট রাষ্ট্রীয় দেশীয় পণ্য
বছরমোট রাজ্য দেশীয় পণ্য
১৯৮০৭৯৪
১৯৮৫১৩৭২
১৯৯০২৮১৫
১৯৯৫৬,৬৯৮
২০০০১৩৫৯০
২০০৫২৩০২৪
২০০৬২৫৪৩৫
২০১০৫৭৪৫২
২০১৩৮২,৫৮৫
২০১৪৯২,৫৮৯
২০১৫১০১১০৮
২০১৬১১০৫১১[৩৯]
২০১৭১২৪৫৭০[৪০]
২০১৮১৩৫,৯১৪[৪১]
২০২১১৭২১৭৪

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মত হিমাচল প্রদেশে পরিকল্পনার যুগ শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। প্রথম পরিকল্পনায় ৫২.৭ মিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়।[৪২] এই ব্যয়ের ৫০% এর বেশি পরিবহন এবং যোগাযোগের জন্য ব্যয় করা হয়। বিদ্যুৎ খাত মাত্র ৪.৬% ভাগ। যদিও তৃতীয় পরিকল্পনায় তা ক্রমাগতভাবে ৭%-এ উন্নীত হয়।[৪৩] কৃষি ও আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকলাপে ব্যয় প্রথম পরিকল্পনায় ১৪.৪% থেকে তৃতীয় পরিকল্পনায় ৩২%-এ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে চতুর্থ পরিকল্পনায় ২৪% থেকে দশম পরিকল্পনায় ১০%-এর কমতে থাকে।[৪৩] দশম পরিকল্পনায় জ্বালানি খাতে ব্যয় ছিল মোটের ২৪.২%।[৪৩]

মল রোড হল হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শহর সিমলার কেন্দ্রীয় ব্যবসায়িক জেলা।

২০০৫-০৬ এর জন্য মোট জিডিপি ধরা হয়েছিল ২৫৪ বিলিয়ন যা ২৩০ বিলিয়ন এর বিপরী। ২০০৪-০৫ সালে ১০.৫% বৃদ্ধি পায়।[৪৪] ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য জিডিপি ১.১১০ট্রিলিয়ন ধরা হয়।[৩৯] যা ২০১৫-১৭ সালে বেড়ে হয় ১.২৪৭ ট্রিলিয়ন। যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৮% হয়।[৪০] মাথাপিছু আয় ২০১৫-১৬ সালে বেড়ে ১৩০,০৬৭ হয়।[৩৯][৪০] রাজ্য সরকারের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অগ্রিম মোট জিডিপি এবং মাথাপিছু আয় যথাক্রমে ১.৩৫৯ ট্রিলিয়ন এবং ১৫৮৪৬২, হিসাবে উল্লেখ করা হয।[৪১] ২০১৮ সালের হিসাবে, হিমাচল হল ) সহ ভারতের ২২তম বৃহত্তম রাজ্য অর্থনীতি মোট দেশজ উৎপাদনে এবং ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে মাথাপিছু আয় ( ১,৬০,০০০ (US$ ১,৯৫৫.৭৩) ) ১৩তম-সর্বোচ্চ হয়।[৪৫]

হিমাচল প্রদেশ কেরালার পরে মানব উন্নয়ন সূচকে দেশের দ্বিতীয় সেরা রাজ্য হিসাবে স্থান পায়।[৪৬] বেকারত্ব মোকাবেলায় ভারত সরকারের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ হল জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (এনআরইজিএ)। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এনআরইজিএ-তে মহিলাদের অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০০৯-১০ সালের হিসাবে হিমাচল প্রদেশ মহিলা অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উচ্চস্থানে রয়েছে। নারীদের জন্য এনআরইজিএ (জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিম) কাজের ৪৬% ভাগ রেকর্ড করে। এটি ২০০৬-০৭ সালে রেকর্ডকৃত ১৩% থেকে অনেক বেশি।[৪৭]

কৃষি

টেরেস ফার্মিং রাজ্যে কৃষি কাজের সাধারণ অবস্থা।

রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ পণ্যের ৯.৪% জন্য কৃষি খাত।[৪৮] এটি হিমাচলের আয় ও কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস। হিমাচলের জনসংখ্যার প্রায় ৯০% সরাসরি কৃষির উপর নির্ভর করে। যা রাজ্যের মোট শ্রমিকের ৬২%।[৪৮] উৎপাদিত প্রধান খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, চালবার্লি। প্রধান ফসল হল ভুট্টা-গম, চাল-গম ও ভুট্টা-আলু-গম।[৪৯][৫০] রাজ্যের অন্যান্য ফসলের মধ্যে রয়েছে ডাল, ফল, শাকসবজি এবং তৈলবীজ।[৪৯] কাংড়া উপত্যকায় শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুহল সেচ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।[৫১] যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই কুহলগুলি উপত্যকার ছোট স্রোতে জলপ্রকল্পের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে।[৫২] ভূমি ব্যবহারের উদ্যোগ যেমন মিড-হিমালয়ান ওয়াটারশেড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, যার মধ্যে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ পুনরুদ্ধার প্রকল্প (এইচপিআরপি), বিশ্বের বৃহত্তম ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম) উদ্যোগ। কৃষি ফলন ও উৎপাদনশীলতা উন্নত করেছে এবং গ্রামীণ পরিবারের আয় বাড়িয়েছে।[৫৩]

হিমাচল প্রদেশের মানালিতে আপেলের ফুল ফুটেছে

আপেল হল রাজ্যের প্রধান অর্থকরী ফসল যা প্রধানত সিমলা, কিন্নর, কুল্লু, মান্ডি, চাম্বা এবং সিরমাউর ও লাহৌল-স্পিতির কিছু অংশে জন্মে । যার বার্ষিক গড় উৎপাদন পাঁচ লক্ষ টন এবং প্রতি হেক্টরে ৮ থেকে ১০ টন হয়।[৫৪] আপেল চাষ ফল ও ফসলের আওতাধীন মোট এলাকার ৪৯ শতাংশ এবং রাজ্যের মোট ফল উৎপাদনের ৮৫% যার আনুমানিক অর্থনীতি ৩৫০০ কোটি[৫৪] হিমাচল থেকে আপেল ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এমনকি অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়।[৫৫][৫৬] ২০১১-১২ সালে, আপেল চাষের মোট এলাকা ছিল ১০৪০০০ হেক্টর, যা ২০০০-০১ সালে ৯০৩৪৭ হেক্টর হয়।[৫৬] কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের অস্থায়ী অনুমান অনুসারে, হিমাচলের বার্ষিক আপেল উৎপাদন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৫৩,০০০ টন ছিল, যা জম্মু ও কাশ্মীরের পরে এটিকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আপেল উৎপাদনকারী রাজ্যে পরিণত করেছে।[৫৭] এছাড়াও রাজ্যটি ভারতে অন্যান্য ফলের যেমন এপ্রিকট, চেরি, পীচ, নাশপাতি, বরই এবং স্ট্রবেরি উৎপাদনকারীদের মধ্যে অন্যতম।

ধর্মশালায় চা বাগান

কাংড়া চা কাংড়া উপত্যকায় জন্মে। ১৮৪৯ সালে চা বাগান শুরু হয় এবং ১৯ শতকের শেষের দিকে চা সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে উৎপাদন শীর্ষে উঠে।[৫৮] ১৯০৫ সালের কাংড়া ভূমিকম্পের পর উৎপাদন তীব্রভাবে কমে যায় এবং ক্রমাগত হ্রাস পায়।[৫৯] ২০০৫ সালে চা ভৌগোলিক নির্দেশের মর্যাদা পায়।

বিদ্যুৎ

জলবিদ্যুৎ রাজ্যের আয়ের অন্যতম উৎস।[৬০] বিভিন্ন বহুবর্ষজীবী নদীর উপস্থিতির কারণে রাজ্যে প্রচুর জলবিদ্যুৎ সম্পদ হয়। অনেক উচ্চ-ক্ষমতার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে যা উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অন্যান্য রাজ্যে বিক্রি করা হয়, যেমন দিল্লি, পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গ[৬১] অন্যান্য রাজ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে যে আয় হয় তা রাজ্যের গ্রাহকদের ভর্তুকি হিসাবে সরবরাহ করা হয়।[৬২] হিমাচলের সমৃদ্ধ জলবিদ্যুৎ সম্পদের ফলে রাজ্যটি প্রায় সর্বজনীনভাবে বিদ্যুতায়িত হয়েছে এবং ২০০১ সালের হিসাবে প্রায় ৯৪.৮% বাড়ি বিদ্যুৎ প্রাপ্ত হয়েছে, যা জাতীয় গড় ৫৫.৯% ।[৬২] হিমাচলের হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার উৎপাদন অবশ্য এখনও পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি।[৬৩] রাজ্যের জন্য চিহ্নিত জলবিদ্যুৎ ক্ষমতা হল পাঁচটি নদী অববাহিকায় ২৭৪৩৬ মেগাওয়াট উৎপাদন।[৬১] ২০১৬ সালে জলবিদ্যুতের ক্ষমতা ছিল ১০৩৫১ মেগাওয়াট।[৬৩]

পর্যটন

বীর বিলিং-এ প্যারাগ্লাইডিং।

হিমাচল প্রদেশের পর্যটন রাজ্যের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে একটি প্রধান অবদানকারী। হিমালয় সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শিমলা, মানালি, ধর্মশালা, ডালহৌসি, চাম্বা, খাজ্জিয়ার, কুল্লু এবং কাসাউলির মতো পার্বত্য স্টেশনগুলি দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল।[৬৪] রাজ্যে শ্রী চামুন্ডা দেবী মন্দির, নয়না দেবী মন্দির, বজ্রেশ্বরী মাতার মন্দির, জ্বালা জি মন্দির, চিন্তপূর্ণি, বৈজনাথ মন্দির, ভীমকালী মন্দির, বিজলী মহাদেব এবং জাখু মন্দিরের মতো মন্দিরসহ অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থান রয়েছে।[৬৫] চাম্বা জেলার ভারমৌর অঞ্চলে অবস্থিত মণিমাহেশ হ্রদটি আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত বার্ষিক হিন্দু তীর্থযাত্রার স্থান; যা লক্ষ লক্ষ ভক্তকে আকর্ষণ করে।[৬৬] রাজ্যটিকে "দেব ভূমি" (আক্ষরিক অর্থে ঈশ্বরের আবাস ) হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। কারণ প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে এর উল্লেখ রয়েছে এবং রাজ্যে বিপুল সংখ্যক ঐতিহাসিক মন্দির রয়েছে।[৬৭]

খিরগঙ্গা হিমাচলের অন্যতম জনপ্রিয় এলাকা।

হিমাচল দুঃসাহসিক পর্যটনের জন্যও পরিচিত। যেমন সিমলায় আইস স্কেটিং, বীর বিলিং এবং সোলাং উপত্যকায় প্যারাগ্লাইডিং, কুল্লুতে রাফটিং, মানালিতে স্কিইং বা আকাশ ভ্রমণ, বিলাসপুরে নৌকাভ্রমণ এবং ঘোড়ায় চড়া এবং রাজ্যের বিভিন্ন অংশে মাছ ধরা[৬৮] সিমলা, রাজ্যের রাজধানী, এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক আইস-স্কেটিং রিঙ্কের আবাসস্থল।[৬৯] লাহৌল এবং স্পিতি জেলার স্পিতি উপত্যকা ৩,০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। যার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য অ্যাডভেঞ্চার সন্ধানকারীদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য। এই অঞ্চলে বিশ্বের প্রাচীনতম বৌদ্ধ মঠও রয়েছে।[৭০]

হিমাচল প্রদেশ ২০১৫ সালে ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবর ভারতে প্রথম প্যারাগ্লাইডিং বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল।[৭১][৭২] প্যারাগ্লাইডিং বিশ্বকাপের ভেন্যু ছিল বীর বিলিং, যা কাংড়া জেলার হিমাচলের কেন্দ্রস্থলে পর্যটন শহর ম্যাক্লিওড গঞ্জ থেকে ৭০ কিমি দূরে অবস্থিত। বীর বিলিং হিমাচলের অ্যারো স্পোর্টসের কেন্দ্র এবং প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য সেরা হিসাবে বিবেচিত।[৭১] বৌদ্ধ মঠ, উপজাতীয় গ্রামে ট্র্যাকিং এবং পর্বত বাইক চালানো অন্যান্য স্থানীয় সম্ভাবনাও রয়েছে।

যোগাযোগ

গাগল বিমানবন্দর

বিমানবন্দর

হিমাচলের কাংড়া, কুল্লু এবং সিমলা জেলায় তিনটি দেশীয় বিমানবন্দর রয়েছে।[৭৩] আকাশপথগুলি রাজ্যটিকে দিল্লি এবং চণ্ডীগড়ের সাথে সংযুক্ত করে।

  • ভুন্টার বিমানবন্দর কুল্লু জেলায়, জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬ মা)
  • গাগ্গাল বিমানবন্দর কাংড়া জেলায়, ধর্মশালায় জেলা সদর থেকেপ্রায় ১৫ কিলোমিটার (৯ মা) , যা কাংড়া থেকে প্রায় ১০  কিলোমিটার
  • সিমলা বিমানবন্দর : শহরের পশ্চিমে প্রায় ২১ কিলোমিটার (১৩ মা) ।

রেলওয়ে

কালকা-সিমলা রেলওয়ে

ব্রডগেজ লাইন

সমগ্র রাজ্যের একমাত্র ব্রড-গেজ রেললাইনটি অ্যাম এনডাউরা - উনা হিমাচল রেলওয়ে স্টেশনকে পাঞ্জাবের নানগাল ডাম এর সাথে সংযুক্ত করে এবং হিমাচল প্রদেশের দৌলতপুর পর্যন্ত চলে।[৭৪] এটি ১৯৯৯ সাল থেকে একটি বিদ্যুতায়িত এলাকা। পাঠানকোট-জলান্ধর সেকশনের উভয় পাশে কান্দরোরি (কেএনডিআই) স্টেশন সংলগ্ন লাইনের একটি ছোট অংশ, উত্তর রেলওয়ের ফিরোজপুর বিভাগের অধীনে আবার পাঞ্জাব যাওয়ার আগে হিমাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে।

ভবিষ্যত নির্মাণ:

  • উনা-হিমাচল - ধুন্দলা হয়ে হামিরপুর রেল প্রকল্প
  • ভানুপালি (পাঞ্জাব)-বিলাসপুর, হিমাচল প্রদেশ
  • চণ্ডীগড় -বাদ্দি
কাংড়া ভ্যালি রেলওয়ে

ন্যারো-গেজ লাইন

হিমাচল ন্যারোগেজ রেলওয়ের জন্য পরিচিত। এটি হল কালকা-শিমলা রেলওয়ে। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর অন্তর্ভুক্ত, এবং অন্যটি হল কাংড়া ভ্যালি রেলওয়ে।[৭৫] এই দুটি রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ২৫৯ কিলোমিটার (১৬১ মা)। কালকা-শিমলা রেলপথ অনেকগুলি টানেল এবং সেতুর মধ্য দিয়ে যায়। যখন পাঠানকোট-জোগিন্দরনগর পাহাড় এবং উপত্যকার গোলকধাঁধার মধ্য দিয়ে যায়। রাজ্যে চালু রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মোট রুট দৈর্ঘ্য হল ২৯৬.২৬ কিলোমিটার (১৮৪.০৯ মা)।[৭৬][৭৭][৭৮]

রাস্তা

কিন্নর এনএইচ ৫ এর একটি অংশ

পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। রাজ্যের ২৮,২০৮ কিলোমিটার (১৭,৫২৮ মা) ) রাস্তার নেটওয়ার্ক রয়েছে।[৭৯] আটটি জাতীয় মহাসড়ক (এনএইচ) সহ যা ১,২৩৪ কিলোমিটার (৭৬৭ মা) ) এবং ১৯টি রাজ্য মহাসড়ক যার মোট দৈর্ঘ্য ১,৬২৫ কিলোমিটার (১,০১০ মা)।[৭৯] হামিরপুর জেলায় সড়কের ঘনত্ব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।[৮০] তুষারপাত ও ভূমিধসের কারণে শীত ও বর্ষা মৌসুমে কিছু রাস্তা বন্ধ থাকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ৩১০০টিরও বেশি বহরের সাথে যুক্দ।[৮১] রাজ্যের অভ্যন্তরে গ্রামগুলির সাথে এবং বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য রুটে গুরুত্বপূর্ণ শহর ও শহরগুলির সাথে সংযোগকারী বাস পরিষেবাগুলি পরিচালনা করে৷ এছাড়াও, রাজ্যে প্রায় ৫০০০ বেসরকারি বাস চলাচল করে।[৮২]

জনসংখ্যা

জনসংখ্যা

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.±%
১৯০১১৯,২০,২৯৪—    
১৯১১১৮,৯৬,৯৪৪−১.২%
১৯২১১৯,২৮,২০৬+১.৬%
১৯৩১২০,২৯,১১৩+৫.২%
১৯৪১২২,৬৩,২৪৫+১১.৫%
১৯৫১২৩,৮৫,৯৮১+৫.৪%
১৯৬১২৮,১২,৪৬৩+১৭.৯%
১৯৭১৩৪,৬০,৪৩৪+২৩%
১৯৮১৪২,৮০,৮১৮+২৩.৭%
১৯৯১৫১,৭০,৮৭৭+২০.৮%
২০০১৬০,৭৭,৯০০+১৭.৫%
২০১১৬৮,৬৪,৬০২+১২.৯%

ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে হিমাচল প্রদেশের মোট জনসংখ্যা ৬৮৬৪৬০২ জন। ৩৪৮১৮৭৩ জন পুরুষ এবং ৩৩৮২৭২৯ জন মহিলা৷ হিমাচল প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০% সমন্বিত কোলিরা বৃহত্তম জাতি-গোষ্ঠী।[৮৩] এটি ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৫৭ শতাংশ, যা ১২.৮১ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করে৷[৮৪][৮৫] তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি যথাক্রমে জনসংখ্যার ২৫.১৯ শতাংশ এবং ৫.৭১ শতাংশ।[৮৬] লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৭২ জন মহিলাতে দাঁড়িয়েছে, যা ২০০১ সালে ৯৬৮ থেকে প্রান্তিক বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। শিশু লিঙ্গ অনুপাত ২০০১ সালে ৮৯৬ থেকে বেড়ে ২০১১ সালে ৯০৯ জন হয়েছে।[৮৭] ২০১৫ সালে মহিলা প্রতি মোট প্রজনন হার (TFR) দাঁড়িয়েছিল ১.৭, যা ভারতের সর্বনিম্নগুলির মধ্যে একটি।[৮৮]

কুল্লুতে একজন লোক, ঐতিহ্যবাহী হিমাচলি টুপি পরা।

আদমশুমারিতে, রাজ্যটি জনসংখ্যার তালিকায় ২১ তম স্থানে রয়েছে। তারপরে ত্রিপুরা ২২ তম স্থানে রয়েছে।[৯০] কাংড়া জেলা ১৫০৭২২৩ (২১.৯৮%), মান্ডি জেলা ৯৯৯৫১৮ (১৪.৫৮%), সিমলা জেলা ৮১৩৩৮৪ (১১.৮৬%), সোলান জেলা ৫৭৬৬৭০ (৮.৪১%), সিরমাউর জেলা ৫৩০১৬৪ (৭.৭৩%) উনা জেলা ৫২১০৫৭ (৭.৬০%), চাম্বা জেলা ৫১৮৮৪৪ (৭.৫৭%), হামিরপুর জেলা ৪৫৪২৯৩ (৬.৬৩%), কুল্লু জেলা ৪৩৭৪৭৪ (৬.৩৮%), বিলাসপুর জেলা ৩৮২০৫৬ (৫.৫৭%), কিন্নর জেলা, ৮৪২৯৮(১.২৩ %) এবং লাহাউল জেলা ৩১৫২৮ (০.৪৬%)।[৯১]

হিমাচল প্রদেশে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালে জন্মহার ও আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা ৫২.৬ (জাতীয় গড় ৪৯.৭ বছরের উপরে)। ২০১১-১৫ সময়ের জন্য (জাতীয় গড় ৬৮.৩ বছরের উপরে) যা ৭২.০ বছর।[৯২] ২০১০ সালে শিশুমৃত্যুর হার ৪০-এ দাঁড়িয়েছিল, এবং ১৯৭১ সালে জন্মহার ৩৭.৩ থেকে ২০১০ সালে ১৬.৯-এ নেমে এসেছে, যা ১৯৯৮ সালে ২৬.৫-এর জাতীয় গড়ের নীচে। ২০১০ সালে মৃত্যুর হার[৯৩] ৬.৯। হিমাচল প্রদেশের সাক্ষরতার হার ১৯৮১ এবং ২০১১ এর মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (ডান থেকে টেবিল দেখুন)। ২০১১ সালের হিসাবে সাক্ষরতার হার ৮৩.৭৮% সহ রাজ্যটি ভারতের অন্যতম সাক্ষর রাজ্য:১১৪

ভাষা

হিমাচল প্রদেশের সরকারী ভাষা হিন্দি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এ ভাষায় কথা বলে।[৯৪] সংস্কৃত রাজ্যের অতিরিক্ত সরকারী ভাষা।[৯৫] যদিও এটা বেশিরভাগই একাডেমিক এবং প্রতীকী প্রেক্ষাপটে সম্মুখীন হয়েছে। হিমাচল প্রদেশ সরকার এর ব্যাপক চর্চা এবং ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।[৯৬]

তবে বেশিরভাগ জনসংখ্যা স্থানীয়ভাবে অন্য পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষায় কথা বলে (স্থানীয়ভাবে হিমাচলি বা শুধু পাহাড়ি নামেও পরিচিত), ইন্দো-আর্য ভাষার একটি উপগোষ্ঠী রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ভাটিয়ালি, বিলাসপুরি, চাম্বেলি, চুরাহি, গাদ্দি, হিন্দুরি, কাংরি, কুল্লু, মহাসু পাহাড়ি, মান্দেলি, পাহাড়ি কিন্নৌরি, পাংওয়ালি, এবং সিরমাউরি। অতিরিক্ত ইন্দো-আর্য ভাষাগুলির মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবি (জনসংখ্যার ৪.৪% স্থানীয়), নেপালি (১.৩%), চিনালি, লাহুল লোহার এবং অন্যান্য। রাজ্যের কিছু অংশে কিন্নৌরি (১.২%), তিব্বতি (০.৩%), লাহুলি-স্পিতি ভাষা (০.১৬%), পাট্টানি (০.১২%), ভোটি কিন্নৌরি, চিটকুলি কিন্নৌরি, বুনান (বা) মত তিব্বত-বর্মন ভাষার ভাষাভাষীরা রয়েছে। গহরি, জাংশুং, কানাশি, শুমচো, স্পিতি ভাটি, সুনাম, তিনানি এবং টুকপা ভাষার লোকও আছে।[৯৭]

ধর্ম

হিমাচল প্রদেশে ধর্ম (২০১১)[৯৮]

  হিন্দুধর্ম (৯৫.১৭%)
  ইসলাম (২.১৮%)
  শিখ ধর্ম (১.১৬%)
  বৌদ্ধধর্ম (১.১৫%)
  জৈন ধর্ম (০.০৩%)
  অন্যান্য (০.২%)

হিন্দুধর্ম হিমাচল প্রদেশের প্রধান ধর্ম। মোট জনসংখ্যার ৯৫% এরও বেশি হিন্দু বিশ্বাসকে মেনে চলে এবং প্রধানত শৈবশাক্তধর্মের ঐতিহ্য অনুসরণ করে।[৯৯] যা সমানভাবে রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।[১০০] ভারতের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে হিমাচল প্রদেশে হিন্দু জনসংখ্যার সর্বাধিক অনুপাত রয়েছে।[১০১]

অন্যান্য ধর্ম হল ইসলাম, শিখ ধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম। মুসলমানরা প্রধানত সিরমাউর, চাম্বা, উনা এবং সোলান জেলায় কেন্দ্রীভূত। যেখানে তারা জনসংখ্যার ২.৫৩-৬.২৭%।[১০০] শিখরা বেশিরভাগই শহরে বাস করে এবং রাজ্যের জনসংখ্যার ১.১৬% গঠন করে। বৌদ্ধ ১.১৫%, তারা মূলত লাহৌল এবং স্পিতির স্থানীয় এবং উপজাতি, যেখানে তারা ৬২% সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং কিন্নর, যেখানে তারা ২১.৫% গঠন করে।[১০০]

সংস্কৃতি

হিমাচল প্রদেশ ছিল কয়েকটি রাজ্যের মধ্যে একটি যেগুলি মূলত তার কঠিন ভূখণ্ডের কারণে বাহ্যিক রীতিনীতি দ্বারা অস্পৃশ্য ছিল। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির ফলে রাষ্ট্র দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে।[১০২] হিমাচল প্রদেশ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো একটি বহুভাষিক রাজ্য। পাশ্চাত্য পাহাড়ি ভাষাগুলি হিমাচলি ভাষা নামেও পরিচিত। কাংরি, মান্দেলি, কুলভি, চাম্বেলি, ভরমৌরি এবং কিন্নৌরি রাজ্যে ব্যাপকভাবে কথা বলা হয়।[১০৩]

ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, মানালি

হিমাচল প্রদেশের প্রধান জাতিগোষ্ঠী হল রাজপুত, ব্রাহ্মণ, কানেট, কুলিন্দ, ঘের, রাও, রথী, ঠাকুর, কোলি, হোলি, চামার, দারাইন, রেহার, চানাল, লোহার, বারিস, দাগি, ঢাখি, তুরি, বাটওয়াল[১০৪]

হিমাচল তার হস্তশিল্পের জন্য সুপরিচিত। কার্পেট, চামড়ার কাজ, কুল্লু শাল, রঙিন কাংড়া, চাম্বা রুমাল, স্টোল, এমব্রয়ডারি করা ঘাসের পাদুকা (পুলান চপ্পল), রুপোর গয়না, ধাতব পাত্র, বোনা পশমী মোজা, পাট্টু, বেত ও বাঁশের ঝুড়ি ( উইকার এবং কাঠের কাজ) উল্লেখযোগ্য।[১০৫][১০৬][১০৭] সাম্প্রতিক সময়ে এসব হস্তশিল্পের চাহিদা দেশের ভেতরে ও বাইরে বেড়েছে।[১০৬]

কিব্বর গ্রাম, স্পিতি

বিভিন্ন রঙের ব্যান্ডের হিমাচলি টুপিগুলিও সুপরিচিত। স্থানীয় শিল্পকর্ম প্রায়শই হিমাচলি পরিচয়ের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।[১০৮] হিমাচলি ক্গটুপিলির রঙ দীর্ঘ সময়ের জন্য পার্বত্য রাজ্যে রাজনৈতিক আনুগত্যের একটি সূচক ছিল। বীরভদ্র সিং এর মতো কংগ্রেস দলের নেতারা সবুজ ব্যান্ডের সাথে টুপি পরেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি নেতা প্রেম কুমার ধুমাল মেরুন ব্যান্ডের সাথে একটি টুপি পরেছিলেন।[১০৯][১১০] রাজ্যের প্রাক্তনমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ছয়টি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দ্বিতীয়টি দু'বারের মুখ্যমন্ত্রী।[১১১] স্থানীয় সঙ্গীত এওনৃত্য রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও প্রতিফলিত করে। তাদের নাচ এওসঙ্গীতের মাধ্যমে,হিমাচললেরলোকেরা স্থানীয় উত্সব এবং অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে তাদের দেবতাদের প্রার্থনা করে।[১১২]

গাদ্দি যাযাবর

জাতীয় মেলা ও উত্সবগুলি ছাড়াও, আঞ্চলিক মেলা ও উত্সব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে মন্দির মেলা রয়েছে। যা হিমাচল প্রদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।[১১২][১১৩] কুল্লু দশেরা উৎসব জাতীয়ভাবে পরিচিত।[১১৪] পাঞ্জাবি ও তিব্বতি প্রভাব সহ উত্তর ভারতের বাকি অংশের মতো হিমাচলিদের প্রতিদিনের খাবারের মিল রয়েছে।[১১৫] মসুর ডাল ( চাওয়াল ), চাল ( চাওয়াল বা চাট ), শাকসবজি এবং চাপাতি (গমের ফ্ল্যাট রুটি) স্থানীয় জনগণের প্রধান খাদ্য।[১১৫] আংশিকভাবে রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে তাজা সবজির অভাবের কারণে ভারতের অন্যান্য স্থানের তুলনায় হিমাচল প্রদেশে আমিষ-নিরামিষ খাদ্য ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়।[১১৬]

হিমাচলি বিশেষত্ব অন্তর্ভুক্ত[১১৬][১১৭] :

হিমাচল প্রদেশের খুব বিখ্যাত খাবার হিমাচলি দম।

হলিস্ট, সিদ্দু, বাবরু, খাট্ট, মহানে, চান্না মাদ্রা সরসন কাসাগ, চাম্বা চুখ, (চৌক), ভাগজেরি, চাটনি তিলের।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

শিক্ষা

সিমলার ইন্দিরা গান্ধী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

স্বাধীনতার সময় হিমাচল প্রদেশের সাক্ষরতার হার ছিল ৮% – যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ।[১১৮] ২০১১ সাল নাগাদ সাক্ষরতার হার ৮২.৮%-এ উন্নীত হয়।[৮৪][১১৯] হিমাচলকে দেশের সবচেয়ে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে একটি বলা হয়। রাজ্যে ১০,০০০টিরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১,০০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৩০০টিরও বেশি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।[১২০] প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণের মাধ্যমে হিমাচল ভারতের প্রথম রাজ্য হয়ে উঠেছে যেটি প্রতিটি শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে তোলে।[১২১] শিক্ষার স্তরে দেশব্যাপী লিঙ্গ পক্ষপাতের ক্ষেত্রে হিমাচল প্রদেশ ব্যতিক্রম।[১২২] রাজ্যের নারী শিক্ষার হার প্রায় ৭৬%।[১২৩] এছাড়াও, প্রাথমিক স্তরে স্কুলে ভর্তি ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার প্রায় সর্বজনীন। যদিও উচ্চ স্তরের শিক্ষা লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যকে প্রতিফলিত করে। এখনও শিক্ষার ব্যবধান পূরণে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে।[১২৪] বিশেষ করে হামিরপুর জেলা উচ্চ সাক্ষরতার হারের জন্য আলাদা।[১২৫]

রাজ্য সরকার শিক্ষার জন্য রাজ্যের জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত ব্যয় করে রাজ্যে সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম ছয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়, শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়ন ব্যয়ের বেশিরভাগ পরিমাণগত সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরে রাজ্য সরকার শিক্ষার গুণগত উন্নতি এবং আধুনিকীকরণের উপর জোর দেয়।[১১৮] প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কর্মীদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়াসে[১১৮] ২০০১ সালে বিদ্যা উপাসক যোজনার মাধ্যমে ১০০০ টিরও বেশি শিক্ষক সহায়ক নিয়োগ করেছিল। সর্বশিক্ষা অভিযান হল প্রদেরশের সরকারের আরেকটি উদ্যোগ যা শুধুমাত্র সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যই নয় বরং সম্প্রদায়কে স্কুল পরিচালনায় নিয়োজিত করতে উৎসাহিত করে।[১২৬] ২০০৯ সালে চালু হওয়া রাষ্ট্রীয় মধ্যমিক শিক্ষা অভিযান, একটি অনুরূপ স্কিম কিন্তু মানসম্পন্ন মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করে।[১২৬]

সিমলায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি
আইআইটি মান্ডি ক্যাম্পাস, জানুয়ারী ২০২০

উচ্চ শিক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় রাজ্যে শিক্ষার[১২৫] যথেষ্ট উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। বাদ্দি ইউনিভার্সিটি অফ ইমার্জিং সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজিস, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি মান্ডি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট সিরমাউর, ইউনিভার্সিটি অফ হিমাচল প্রদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ হিমাচল প্রদেশ, ধর্মশালা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, হামিরপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি উনা, আলাখ প্রকাশ গয়াল বিশ্ববিদ্যালয়, মহারাজা অগ্রসেন বিশ্ববিদ্যালয়, হিমাচল প্রদেশ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। সিমলার ইন্দিরা গান্ধী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কাংড়ার ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ সরকারি মেডিকেল কলেজ, পাপ্রোলাতে রাজীব গান্ধী সরকারি স্নাতকোত্তর আয়ুর্বেদিক কলেজ এবং কুমারহাট্টির হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হল রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এগুলি ছাড়াও সিমলায় একটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে যা রাজ্যের প্রথম স্বীকৃত ডেন্টাল ইনস্টিটিউট।[১২৭]

রাজ্য সরকার রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার বিকাশের জন্য তিনটি বড় নার্সিং কলেজ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।[১২৫] সিএসকে হিমাচল প্রদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পালমপুর বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত পাহাড়ি কৃষি প্রতিষ্ঠান। ডঃ যশবন্ত সিং পারমার উদ্যান ও বনবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যানপালন, বনবিদ্যা এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় শিক্ষাদান, গবেষণা এবং সম্প্রসারণ শিক্ষা প্রদানের জন্য ভারতে একটি অনন্য বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। সুন্দরনগরে ২০০৬ সালে রাজ্য-চালিত জওহরলাল নেহেরু সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ উদ্বোধন করা হয়েছিল।[১২৫] হিমাচল প্রদেশ কাংড়ায় ফ্যাশন কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি) এর একটি ক্যাম্পাসও পরিচালনা করে।

রাজ্যের তথ্য

সূত্র: তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ।[১২৮]

এলাকা৫৫৬৭৩ কিমি
মোট জনসংখ্যা৭৭৮১২৪৪ জন
পুরুষ৩,৯৪৬,৬৪৬ জন
মহিলা৩,৮৩৪,৫৯৮ জন
জনসংখ্যা ঘনত্ব১২৩
লিঙ্গ অনুপাত৯৭২[৯০]
গ্রামীন অধিবাসি৬১৭৬০৫০
শহরের জনসংখ্যা৬৮৮,৫৫২[৮৭]
তফসিলি জাতির জনসংখ্যা১৭২৯২৫২
তফসিলি উপজাতি জনসংখ্যা৩৯২১২৬ জন
স্বাক্ষরতার হার৮৩.৭৮%[৮৭]
পুরুষ সাক্ষরতা৯০.৮৩%[৮৭]
মহিলা সাক্ষরতা৭৬.৬০%[৮৭]
রাজধানী
জেলাগুলি১২
উপ-বিভাগ৭১
তহসিল১৬৯
উপ-তহসিল৩৮
উন্নয়নমূলক ব্লক৭৮
শহরগুলো৫৯
পঞ্চায়েত৩২৪৩
পঞ্চায়েত সমিতি৭৭
জেলা পরিষদ১২
শহুরে স্থানীয় সংস্থা৫৯
নগর নিগম
নগর পরিষদ২৫
নগর পঞ্চায়েত২৩
আদমশুমারি গ্রাম২০৬৯০
জনবসতিপূর্ণ গ্রাম১৭৮৮২
স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান৩,৮৬৬
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান১৭০০০
মোটরযানযোগ্য রাস্তা৩৩৭২২কিমি
জাতীয় মহাসড়ক
চিহ্নিত জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাযমুনা, সাতলুজ, বিয়াস, রাভি, চেনাব এবং হিমুর্জা পাঁচটি নদী অববাহিকায় ২৩০০০.৪৩ মেগাওয়াট
সম্ভাব্য ব্যবহার১০,২৬৪ মেগাওয়াট[৩৯]
খাদ্যশস্য উৎপাদন১৫৭৯০০০ টন
সবজি উৎপাদন৯০০,০০০ টন
ফল উৎপাদন১,০২৭,০০০ টন
মাথাপিছু আয় ১৫৮,৪৬২ (২০১৭-১৮)[৪১]
সামাজিক নিরাপত্তা পেনশন২৩৭,২৫০ জন ব্যক্তি, বার্ষিক ব্যয়: ৬০০-মিলিয়ন এর বেশি।
শিল্প এলাকায় বিনিয়োগ ২৭৩,৮০বিলিয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ: ৩৩৭,৩৯১ এর বেশি
সরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে৮০,০০০

আরও দেখুন

  • হিমাচল প্রদেশের রূপরেখা

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ