পোইগায় আলবর
পোইগাই আলবর ছিলেন দক্ষিণ ভারত-এর বারোজন অলবর সাধুদের মধ্যে একজন। আলবরগন হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ততার জন্য প্রখ্যাত।অলবর এর শ্লোকগুলি নালায়রা দিব্য প্রবন্ধম -এ সংকলিত হয়েছে যেখানে একশ আটটি মন্দিরকে দিব্য দেশম হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। পোইগাই হল তিন জন প্রধান আলবর-এর মধ্যে একজন, বাকি দু'জন হলেন ভুথাথ আলবর এবং পেয়ালবর, যাদেরকে সম্মিলিতভাবে মুতালামালবরগাল বলা হয়। মনে করা হয়, দৈব কৃপায় পোইগায়ালবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পোইগাই শতাধিক শ্লোক রচনা করেছিলেন যেগুলিকে মুতাল তিরুবান্ততি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর রচনাটি অন্তাতি শৈলীতে রচিত যেখানে শ্লোকের শেষ অক্ষরটি পরবর্তী প্রথম শ্লোকের অক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
পোইগাই আলবর | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ৪২০৩ খ্রিস্টপূর্ব,[১][২] কাঞ্চীপুরমের নিকটে তিরুবেক্কা |
ধর্ম | Hinduism |
দর্শন | বৈষ্ণবধর্ম ভক্তি |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
সাহিত্যকর্ম | মুতাল তিরুবন্ততি |
ঐতিহ্যগত বিবরণ অনুসারে, প্রথম তিনজন আলবর-এর সময়কাল দ্বাপর যুগ অর্থাৎ ৪২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে অন্তর্গত। হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, পোইগাইকে তিরুবেক্কা-এ যধোতকারি মন্দিরের কাছে একটি ছোট পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল। তামিল ভাষায়, ছোট পুকুরকে "পোইগাই" বলা হয়, এবং যেহেতু তাকে একটি পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল, তাই তার নাম হয়েছে পোইগাই।
কিংবদন্তি অনুসারে, তিনজন আলবর একবার তিরুকোবিলুরে বৃষ্টির সময় একটি ছোট অন্ধকার ঘরে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। তারা তাদের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তির অস্তিত্ব অনুভব করলেন। তারা জানতে পেরেছিলেন, সেই চতুর্থ ব্যক্তিটি হলেন দেবতা বিষ্ণু। পোইগাই আলবর অবিচ্ছিন্নভাবে তাঁর মুখ দেখতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তিনি কেবল দেবতার বিদ্যুতশিখার ন্যায় জ্যোতি দেখতে পান।সেই উজ্জ্বল জ্যোতি পুনর্বার দর্শন করার লক্ষ্যে তিনি অবিলম্বে জ্যোতির্ময় দেবমূর্তির দেহে আলোর দর্শন কামনা করে শতাধিক গান রচনা করেন। বাকি দুজনও বিষ্ণুকে নিয়ে একশত গান রচনা করতে থাকেন। এই প্রাচীনতম সাধুদের রচনাসম্ভার বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক এবং ধর্মতাত্ত্বিক ধারণাগুলিতে অবদান রেখেছিল। তিনজন শৈব নায়নমারদের সাথে তারা দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চলের শাসক পল্লব রাজাদের প্রভাবিত করেছিল, যার ফলে তথাকার ধর্মীয় ভূখণ্ড বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম, হিন্দুধর্মের দুটি সম্প্রদায়ে বিভাজিত হয়।
অলবর
"অলবর" শব্দের অর্থ "যিনি ঈশ্বরের অগণিত গুণসমুদ্রের গভীরে অবগাহন করেন"। অলবরদের বিষ্ণুর দ্বাদশ উচ্চকোটির ভক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা ৫ম থেকে ৮ম শতাব্দীতে বৈষ্ণবধর্মকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন। অলবর সাধুদের তামিল ভাষায় রচিত প্রেম ও ভক্তিগীতিগুলি নালায়ীরা দিব্য প্রবন্ধম নামে সংকলিত হয়েছে। এখানে ৪০০০টি শ্লোক রয়েছে। এতে ১০৮টি দিব্য দেশম্ তথা বিষ্ণু মন্দিরকে তাদের রচিত গানের মাধ্যমে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। [৩][৪] অলবরগণ ছিলেন বিভিন্ন বর্ণের অন্তর্গত। ঐতিহ্য অনুসারে, পোইগাই, ভুথ,পেয়ালবর, ভক্তিসার ছিলেন ঋষিপুত্র, তোণ্ডারাড়ি, মথুরকবি, বিষ্ণুচিত্ত ও অন্ডাল ব্রাহ্মণ বর্ণভুক্ত ছিলেন, কুলশেখর ক্ষত্রিয় বর্ণের, নম্মালবর কৃষক পরিবার, তিরুপ্পানার পানার সম্প্রদায় এবং তিরুমঙ্গায়ালবর কল্বর সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।গরুড়বাহন পণ্ডিতের (খ্রিস্টাব্দ ১১ শতক) 'দিব্য সুরি চরিত', পিনবরাগিয়া পেরুমল জিয়ার 'গুরুপরম্পরাপ্রবরম্', কোবিল কান্দাদাই আপ্পনের 'পেরিয়া তিরু মুদি আদাইভু', পিল্লাইয়ের 'যতীন্দ্র প্রণব প্রবরম্', লোকম জিয়া'র 'দিব্য প্রবন্ধম-এর ভাষ্য', 'গুরু পরম্পরা(গুরুগণের ক্রমাণুক্রমিক ধারা)' গ্রন্থ, মন্দিরের সংস্কৃতি এবং শিলালিপিতে আলবরদের কর্মের বিশদ বিবরণ প্রদান করা হয়েছে। এই গ্রন্থগুলি অনুসারে, অলবরগণ বিষ্ণুর পার্ষদ ও অস্ত্রের অবতার বলে পরিগণিত। পোইগাই অলবরকে পাঞ্চজন্য শঙ্খ, কৌমুদকীর অবতাররূপে পে-অলবর, ভুতথকে নন্দক তলোয়ার ,ভক্তিসারকে সুদর্শন চক্র, নম্মালবরকে বিষ্বকসেন, মধুরকবিকে বৈনতেয় গরুড়, পেরিয়ালবরকে বৈকুন্ঠবাসী গরুড়, অণ্ডালকে ভূদেবী, বনমালার (বিষ্ণুর গলমাল্য) অবতার তোণ্ডারাড়িপ্পোড়ি, শ্রীবৎসের অবতার তিরুপ্পানালবর এবং তিরুমঙ্গাই আলবারকে শাঙ্গর্ধনুর (রামের ধনুক) অবতার হিসেবে দেখা হয়। প্রবন্ধম-এর গীতিগুলি দক্ষিণ ভারতের সমস্ত বিষ্ণু মন্দিরে প্রতিদিন এবং বিবিধ উৎসবে নিয়মিত গাওয়া হয়।[৪][৫] মনবলা মামুনিগল-এর ঐতিহাসিক বিবরণ অনুসারে, প্রথম তিনজন আল্বর অর্থাৎ পোইগাই, ভুতথ এবং পে দ্বাপরের (খ্রিস্টপূর্ব ৪২০০ সালের আগে) অন্তর্গত। ইতিহাস এবং ঐতিহাসিকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এই ত্রয়ী দ্বাদশ আলবরদের মধ্যে প্রাচীন।[৩][৪][৬][৭][৮]
তিনজন শৈব নায়নমারদের সাথে তারা দক্ষিণ ভারতীয় রাজাদের প্রভাবিত করেছিলেন। তারা একটি ভক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন, এর ফলে এই অঞ্চলে বৌদ্ধ, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম এই দুটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভূগোল পরিবর্তিত হয়। আলবরগণের ভাগবত ধর্মের প্রচারে ভারতের দুটি মহাকাব্য যথা রামায়ণ এবং মহাভারত এর প্রভাব লক্ষ্যণীয়।[৯] আলবরগণ সমগ্র অঞ্চলে "বৈষ্ণববাদ" ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন।[১০] কতিপয় আলবর এর চরিত ধর্মতাত্ত্বিক নাথমুনি {(৮২৪-৯২৪ খ্রিস্টাব্দ) দশম শতকের একজন বৈষ্ণব} দ্বারা সংকলিত হয়েছিল।তিনি আলবরদের রচনাগুলোকে "তামিল বেদ" বলে আখ্যায়িত করেছেন।[১১][১২]
জীবনের প্রথমার্ধ
তিরুভেক্কায় যধোতকারি মন্দিরের কাছে একটি ছোট পুকুরে পোইগাইকে পাওয়া গিয়েছিল।[১৩] তামিল ভাষায়, একটি ছোট পুকুরকে বলা হয় পোইগাই, এবং যেহেতু তাকে একটি পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল, তাই তার নাম হয়েছে পোইগাই। কাঞ্চিপুরমে দেব-সরোবর হ্রদের ভিতরে একটি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরে সরযোগীর একটি মূর্তি একটি স্থির ভঙ্গিতে ধ্যানরত হয়ে চোখ বন্ধ করে স্থিত। শৈশব থেকেই, পোইগাই বিষ্ণুর প্রতি গভীর অনুগত ছিলেন। তিনি সমস্ত বৈষ্ণব বক্তৃতা আয়ত্ত করেছিলেন এবং বৈষ্ণব ঐতিহ্য অনুসরণ করেছিলেন। তিনি বিভিন্নভাবে অয়োনিগী, সরো-যোগী, কাসার-যোগী, পোইগাই-পিরান, সরবোর মুনীন্দ্র এবং পদ্ম-মুনি নামে বিখ্যাত ছিলেন।[১৪][১৫][১৬]
তামিলகைதை சேர் பூம்பொழில் சூழ் கச்சி நகர் வந்துதித்த
படிவிளங்கச் செய்தான் பரிந்து
பொய்கைப் பிரான் கவிஞர் போரேறு - வையத்து
அடியவர்கள் வாழ அருந்தமிழ் நூற்றந்ததிকাঞ্চি নামটি এসেছে ব্রহ্মা থেকে যিনি 'কা' নামে পরিচিত; তারা এই ক্ষেত্রমে ভগবানের আরাধনা করতেন। সেই বিখ্যাত শহরে, একটি পদ্ম পুকুরের মধ্যে একটি পদ্ম ফুলে, তিরুবোনম (শ্রাবণম) নক্ষত্র সময়ে যা স্বয়ং ঈশ্বরের নক্ষত্র, পোইগাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি অপূর্ব মুতাল তিরুবন্ততি পশুরাম দান করেছেন যা একটি প্রদীপের মতো মনের অন্ধকার দূর করে এবং আত্মাকে উন্নত করে।[৭][১৭]
রচনা
হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, বিষ্ণু থিরুক্কোইলুরে মুতাল আলবরের (প্রথম তিনজস আলবর ) কাছে আবির্ভূত হন। দিনের বেলা ছিল, কিন্তু অন্ধকার হয়ে গেল এবং প্রবল বৃষ্টি শুরু হল। বিচরণকারী পোইগাই আলবর একটি ছোট জায়গা খুঁজে পেয়েছিলেন যেখানে একজনের শুয়ে থাকার জায়গা রয়েছে। ভুথাথ আলবর সেখানে অবস্থানের জায়গা খুঁজতে এসে পৌঁছায় এবং পোইগাই আলবর তাকে বসতে বলে, এবং দুজনে একসাথে বসে যায়। এর মধ্যে, পেই আলবরও একই জায়গায় এসেছিলেন কারণ তিনজনই জায়গার অভাবে দাঁড়াতে পছন্দ করেছিলেন। অন্ধকার ঘন হয়ে উঠল এবং ছোট ঘরের ভিতরে তারা একে অপরকে দেখতে পেল না। এরই মধ্যে, তারা অনুভব করলো যে একজন চতুর্থ ব্যক্তিও তাদের মধ্যে তার পথ ধরেছে। তিন আলবর বিদ্যুতের মতো আলো দেখে বুঝতে পারলেন যে চতুর্থ ব্যক্তিটির একটি মোহনীয় মুখ রয়েছে যা মহৎ ও ঐশ্বরিক। ত্রয়ী অবিলম্বে বুঝতে পারে যে বিষ্ণুই তাদের মধ্যে অবস্থিত ছিলেন।[ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] পোইগাই আলবর অবিরাম বিষ্ণুর মুখ দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কেবল বিদ্যুতের জ্বলন্ত আলো দেখতে পান। আলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে শত শত গান রচনা করেন যাতে পৃথিবী সমুদ্রের মতো ঘি ভর্তি একটি বড় পাত্র হতে পারে যেখানে সূর্য জ্বলন্ত প্রদীপ হতে পারে।[৪][৭][১২]
তামিলவையம் தகளியா வார்கடலே நெய்யாக
இடராழி நீங்குகவே என்று
வெய்ய கதிரோன் விளக்காக - செய்ய
சுடர் ஆழியான் அடிக்கே சுட்டினேன் சொல் மாலைপৃথিবীতে পাত্র , পূর্ণ সমুদ্রকে ঘি , প্রখর রশ্মিকে আলোকিত প্রদীপ মনে করে, আমি তাঁর পায়ের জন্য বাক্যরূপ মালা গেঁথেছি যিনি লাল জ্বলন্ত চক্র ধারণ করেন যাতে দুঃখ সমুদ্র থেকে মুক্তি লাভ হয়।
গানটিকে অন্ধকার দূর করার জন্য এবং তার সীমাহীন জ্ঞান এবং শক্তির জন্য প্রার্থনা করার উপায় হিসেবে আলবর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা হিসাবেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভুথথ আলবরও তাঁর প্রতি প্রবল প্রেমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রদীপ জ্বালানোর কল্পনা করে ১০০টি গান গেয়েছিলেন। পেয়ালবর আরও ১০০টি গান গেয়েছেন যেখানে তিনি ঐশ্বরিক মুখের মোহনীয় আকর্ষণ এবং চক্র ও শঙ্খ দ্বারা সজ্জিত নারায়ণের সংসর্গ ও তাঁর ঐশ্বরিক সহধর্মিণী দেবী লক্ষ্মীকে বর্ণনা করেছেন।[৭][১৮]
পোইগাই শতাধিক শ্লোক রচনা করেছিলেন যেগুলিকে মুতাল তিরুবন্ততি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।[১৯] পোইগাইয়ের রচনাটি অন্ততি শৈলীতে তৈরি করা হয়েছিল। অন্ত শব্দের অর্থ শেষ এবং আদি অর্থ শুরু। অন্ততি শৈলীতে প্রতিটি শ্লোকের সমাপ্তি শব্দ বা উচ্চারণটি পরবর্তী শ্লোকের প্রারম্ভিক শব্দ হিসেবে থাকে এবং শততম শ্লোকের শেষ শব্দটি প্রথম স্তবকের শুরুতে পরিণত হয়, যার ফলে একশ শ্লোককে শ্লোকের প্রকৃত মালা হয়ে যায়। এই প্রাচীনতম সাধুদের রচনা বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক এবং ধর্মতাত্ত্বিক ধারণাগুলিতে অবদান রেখেছিল।[১৮] ত্রয়ীর শ্লোকগুলি নারায়ণকে (বিষ্ণুর অপর নাম) সর্বোচ্চ দেবতা এবং তারা প্রায়শই বিষ্ণুর অবতার ত্রিবিক্রম এবং কৃষ্ণকে উল্লেখ করেছে।[২০][২১]
শ্রদ্ধা প্রদর্শন
দেব সরোবরম্ নামক যথোথকারি পেরুমাল মন্দির পুকুরে পোইগাইকে উৎসর্গিত একটি উপাসনালয় রয়েছে যেখানে তার মূর্তি হেলান দেওয়া ভঙ্গিতে চিত্রিত করা হয়েছে।[৩][২২] পোইগাই এক শ্লোকে শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দির, একটিতে তিরুপারকাদল, দশটিতে তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির, দুটিতে তিরুবিক্রমা পেরুমাল মন্দির, দুটিতে বৈকুণ্ঠ এবং চারটি শ্লোকে তিরুবেক্কাকে শ্রদ্ধা করেছেন।[২৩] আলবর উৎসব হল তিরুবেক্কার ইয়াথোথকারিস্বামী মন্দিরে তামিল ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে সাধকের জন্ম তারিখের দিন বার্ষিক উদযাপিত একটি উৎসব।[২৪]
মঙ্গলসসনম
নালায়িরা দিব্যা প্রবন্ধমে তাঁর ২০টি পশুরম রয়েছে। তিনি ছয়টি মন্দিরের গুণগান গেয়েছেন।[২৫]
ক্র.নং | মন্দিরের নাম | অবস্থান | ছবি | পশুরামের সংখ্যা | অধিষ্ঠিত দেবতা | নোট/বিশ্বাস |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | শ্রীরঙ্গম | শ্রীরঙ্গম, ত্রিচি জেলা তামিলনাড়ু ১০°৫১′৪৫″ উত্তর ৭৮°৪১′২৩″ পূর্ব / ১০.৮৬২৫° উত্তর ৭৮.৬৮৯৭২২° পূর্ব | ১ | রঙ্গনায়গী রঙ্গনাথর (পেরিয়া পেরুমল) | শ্রীরঙ্গম মন্দিরটি প্রায়শই বিশ্বের বৃহত্তম কার্যকরী হিন্দু মন্দির হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। আজও বৃহত্তর আঙ্কোর ওয়াট বৃহত্তম বিদ্যমান মন্দির। মন্দিরটি 156 একর (631,000 m 2 ) এলাকা জুড়ে 4,116m (10,710 ফুট) পরিধি সহ ভারতের বৃহত্তম মন্দির এবং বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় কমপ্লেক্সগুলির মধ্যে একটি।[২৬][২৭] তামিল মারগালি (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাসে চলাকালীন বার্ষিক ২১-দিনের উৎসবটি ১ মিলিয়ন দর্শককে আকর্ষণ করে।[২৮] | |
২ | তিরুভেক্কা ।[২৯] | ১২°৪৯′২৬″ উত্তর ৭৯°৪২′৪৩″ পূর্ব / ১২.৮২৪° উত্তর ৭৯.৭১২° পূর্ব | ৪ | কোমলবল্লী যথোথকারি পেরুমল | তিরুভেক্কা বা ইয়াথোথকারি পেরুমল মন্দিরকে কাঞ্চিপুরমের তিনটি প্রাচীনতম বিষ্ণু মন্দিরের মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে পল্লবদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়, পরবর্তীতে মধ্যযুগীয় চোল এবং বিজয়নগর রাজাদের অবদানে সমৃদ্ধ হয়। মন্দিরের দেয়ালে তিনটি শিলালিপি রয়েছে, দুটি কুলোথুঙ্গা চোল প্রথম (১০৭০-১১২০ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালের এবং একটি রাজাধিরাজা চোলের (১০১৮-৫৪ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালের। মন্দিরে রঙ্গনাথের একটি বিরল মূর্তি রয়েছে যা তার বাম হাতে স্থিত আছে, তা অন্য মন্দির থেকে ভিন্ন, এখানে তিনি তার ডানদিকে অবস্থান করছেন। পোইগাই আলবর এই মন্দিরের পদ্ম পুকুরে জন্মগ্রহণ করেন।[৩০] | |
৩ | থিরুকোভিলুর ।[৩১] | ১১°৫৮′০১″ উত্তর ৭৯°১২′০৭″ পূর্ব / ১১.৯৬৬৯৪৪° উত্তর ৭৯.২০১৯৪৪° পূর্ব | ২ | পুংগোথাই উলাগালান্থ পেরুমল মন্দির | উলাগালান্থ পেরুমাল মন্দিরটি মধ্যযুগীয় চোলদের দ্বারা নির্মিত বলে মনে করা হয়, পরবর্তীতে বিজয়নগর রাজা এবং মাদুরাই নায়কদের অবদানে সমৃদ্ধ হয়। মন্দিরটি ৫ একর (২০,০০০ মি২) এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং একটি মন্দির টাওয়ার রয়েছে যা তামিলনাড়ুর তৃতীয় উচ্চতম। এর উচ্চতা ১৯২ ফু (৫৯ মি) দীর্ঘ। হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, অসুর রাজা বলির দর্প চূর্ণ করতে এখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিষ্ণুর বামন অবতার। মন্দিরটিকে সেই জায়গা বলে মনে করা হয় যেখানে প্রথম তিন আলবর, বৈষ্ণব সাধক, যথা, পোইগাই আলবর, ভুথাথালবর এবং পেয়ালবর মোক্ষ লাভ করেছিলেন। মন্দিরটি পঞ্চকান্ন (কৃষ্ণারণ্য) ক্ষেত্রমের মধ্যে একটি। পঞ্চকান্ন বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের সাথে যুক্ত পাঁচটি পবিত্র মন্দির।[৩২] | |
৪ | পরমপদম | স্বর্গীয় | ২ | লক্ষ্মী বিষ্ণু | বৈকুণ্ঠ হল বিষ্ণুর স্বর্গীয় আবাস[৩৩] যিনি হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা এবং বৈষ্ণবধর্মের ঐতিহ্যের সর্বোচ্চ সত্তা।[৩৪][৩৫] বৈকুণ্ঠ হল বিষ্ণু, তাঁর সহধর্মিণী দেবী লক্ষ্মী অন্যান্য মুক্তিপ্রাপ্ত আত্মা যারা মোক্ষ লাভ করেছে তাদের একান্ত আবাস। তারা অনন্তকালের জন্য পরম সত্তার সঙ্গে বিশুদ্ধ আনন্দ উপভোগ তথা সুখ অনুভব করে ধন্য হয়। | |
৫ | তিরুপথি | ১৩°০৮′৩৫″ উত্তর ৭৯°৫৪′২৫″ পূর্ব / ১৩.১৪৩° উত্তর ৭৯.৯০৭° পূর্ব | ১০ | আলামেলুমাঙ্গা ভেঙ্কটেশ্বর | বেঙ্কটেশ্বর মন্দির হল ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের চিত্তুর জেলার তিরুপতিতে তিরুমালা নামক পাহাড়ি শহরে অবস্থিত একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত বৈষ্ণব মন্দির। মন্দিরটি বিষ্ণুর অবতার ভগবান শ্রী বেঙ্কটেশ্বরকে উৎসর্গ করা হয়েছে যিনি কলিযুগের সমস্যা থেকে মানবজাতিকে বাঁচাতে সেখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। তাই স্থানটিকে কলিযুগ বৈকুণ্ঠম বলা হয় পেয়েছে এবং এখানে ভগবানকে 'কলিযুগ প্রত্যক্ষ দৈবম' বলা হয়েছে। মন্দিরটি তিরুমালা মন্দির, তিরুপতি মন্দির, তিরুপতি বালাজি মন্দিরের মতো অন্যান্য নামেও পরিচিত। ভগবান বেঙ্কটেশ্বর আরও বহু নামে পরিচিত: বালাজি, গোবিন্দ এবং শ্রীনিবাস।[৩৬] তিরুমালা পাহাড় শেষাচলম্ পর্বতমালার অংশ। পাহাড়গুলি ৮৫৩ মিটার (২,৭৯৯ ফু) সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত। মন্দিরটি দ্রাবিড় স্থাপত্যে নির্মিত এবং ৩০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া সময়ের মধ্যে নির্মিত বলে মনে করা হয়। গর্ভগৃহকে বলা হয় আনন্দ নিলয়ম। প্রাপ্ত অনুদান এবং সম্পদের দিক থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মন্দির।[৩৭][৩৮][৩৯] মন্দিরটি প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ তীর্থযাত্রী দ্বারা পরিদর্শন করা হয় (বার্ষিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ), বিশেষ উপলক্ষ এবং উৎসব যেমন বার্ষিক ব্রহ্ম উৎসবে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা ৫০০,০০০ পর্যন্ত বেড়ে যায় যা এটিকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা পবিত্র স্থান করে তোলে।[৪০] | |
৬ | তিরুপ্পাকাদল | স্বর্গীয় | ১ | লক্ষ্মী বিষ্ণু | হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্বে, তিরুপ্পাকাডাল (দুধের মহাসাগর) সাতটি মহাসাগরের কেন্দ্র থেকে পঞ্চমতম। এটি ক্রৌঞ্চ নামে পরিচিত মহাদেশটিকে ঘিরে রয়েছে।[৪১] হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবতারা এবং অসুর এক সহস্রাব্দ ধরে সমুদ্র মন্থন করে অমৃত প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে একসাথে কাজ করেছিলেন।[৪২] প্রাচীন হিন্দু কিংবদন্তির একটি অংশ পুরাণের সমুদ্র মন্থন অধ্যায়ে এটির কথা বলা হয়েছে। এটি সেই জায়গা যেখানে বিষ্ণু তার সহধর্মিণী লক্ষ্মীর সাথে শেষনাগের উপর হেলান দিয়ে বসেন। |